বাজেটে সুরক্ষা পাবে দেশি মোটরসাইকেল

This page was last updated on 04-Jul-2024 12:51pm , By Shuvo Bangla

দেশে তৈরি মোটরসাইকেলের বাজার সুরক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে নতুন বাজেটে। এ লক্ষ্যে সিকেডি (বিযুক্ত অবস্থায়) মোটরসাইকেলের ওপর সম্পূরক শুল্কহার ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব এসেছে। যা আগামী বাজেট প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্তির কথা রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হলে সিকেডি মোটরসাইকেলের আমদানি ব্যয় বাড়বে। ফলে এসব মোটরসাইকেলের বিক্রয় মূল্য গড়ে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা বাড়তে পারে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসেবে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর ফলে অতিরিক্ত ৩০০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হবে।

বাজেটে সুরক্ষা পাবে দেশি মোটরসাইকেল

২০১১-১২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে উল্লেখ ছিল, 'দেশে বর্তমানে মোটরসাইকেল প্রস্তুতকারী ও সংযোজনকারী শিল্প গড়ে উঠেছে। এসব শিল্পের বিকাশে সম্পূর্ণ তৈরি মোটরসাইকেল আমদানিতে সম্পূরক শুল্কহার ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করা হয়েছে। তবে দেশে সংযোজন শিল্প থাকায় বিযুক্ত মোটরসাইকেল আমদানিতে পাঁচ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি প্রত্যাহারসহ অন্যান্য শুল্ক সমন্বয় করে সম্পূরক শুল্ক ৩০ শতাংশ ধার্য করা হলো।'

চলতি অর্থবছরেও বিযুক্ত মোটরসাইকেল আমদানিতে সম্পূরক শুল্কহার ৩০ শতাংশ বহাল রয়েছে। গত কয়েক বছরে এ হার বাড়ানোর জোরালো দাবি জানিয়ে আসছে দেশি মোটরসাইকেল শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। তাই আগামী অর্থবছরকে সামনে রেখে দেশি মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী একাধিক প্রতিষ্ঠান সম্পূরক শুল্কহার বাড়ানোর দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, অর্থ মন্ত্রণালয়, ট্যারিফ কমিশন এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) আবেদন করে।

এনবিআর সূত্র জানায়, আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হবে। সম্প্রতি এনবিআর ও এফবিসিসিআই আয়োজিত পরামর্শক কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, রাজস্ব ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে সম্পূরক শুল্ক থাকছে না। এতে দেশীয় শিল্পকে কঠিন প্রতিযোগিতায় পড়তে হবে। তাই এর মধ্যে স্থানীয় শিল্পে সক্ষমতা বাড়াতে হবে। যাতে আমদানিকৃত পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় হারিয়ে না যায়।

এনবিআর বাজেট প্রস্তুত কমিটির কর্মকর্তাদের বৈঠকেও দেশীয় শিল্পের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। এতে অর্থমন্ত্রীর নির্দেশ এবং মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী দেশীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর কর্মকর্তারা সিকেডি মোটরসাইকেল আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেন।

Also Read: ১৮০০ সিসির মোটরসাইকেল আসলো বাংলাদেশে

এ ছাড়া শিল্প মন্ত্রণালয় থেকেও স্থানীয় শিল্পে বিকাশের পক্ষে অবস্থান নেওয়া হয়। আসছে বছর থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্টিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে হোন্ডা কম্পানির দেশে মোটরসাইকেল উৎপাদনে যাওয়ার কথা রয়েছে। তারা ইতিমধ্যে কারখানা নির্মাণের জায়গা এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে।

শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ হোন্ডা নামের এ প্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ণ আধুনিক পদ্ধতিতে দেশে কারখানা নির্মাণ করে মোটরসাইকেল উৎপাদন করবে। এতে মোটরসাইকেল বাজারের বড় অংশের চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্ভুক্তিতে এনবিআর কর্মকর্তাদের তৈরি করা প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, বাংলাদেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মোটরসাইকেল প্রস্তুত এবং রপ্তানি করে থাকে। সংযোজনকারী কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান বিযুক্ত অবস্থায় কম দামে মোটরসাইকেল আমদানির পর সংযোজন করে বিপণন করছে। অন্যান্য যানবাহন আমদানিতে বিযুক্ত অবস্থায় আমদানির ক্ষেত্রে রংবিহীন অবস্থায় আমদানি করা হলেও বিযুক্ত মোটরসাইকেল আমদানিতে রং করা অবস্থায় আমদানির সুযোগ রয়েছে। এই সুবিধার অপব্যবহার করে কোনো ধরনের যন্ত্রাংশ দেশে উৎপাদন না করে মূলত পূর্ণাঙ্গ মোটরসাইকেল আমদানির পর সাধারণ কিছু প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংযোজন করে বাজারে ছাড়ছে। এতে দেশে তৈরি মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়ছে।

শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে তিন লাখ থেকে সাড়ে তিন লাখ মোটরসাইকেলের চাহিদা রয়েছে দেশে। প্রতিবছরই চাহিদা বাড়ছে। আগামী পাঁচ বছরে এ সংখ্যা পাঁচগুণ বাড়বে। এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় রাজস্ব পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। এতে আমদানিনির্ভরতা কমবে। দেশে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। গড়ে উঠবে নতুন কলকারখানা।