আজকের সেরা ৫ টি 150cc এয়ার কুলড ইঞ্জিন বাইকের তালিকা
This page was last updated on 28-Jul-2024 12:27pm , By Saleh Bangla
আমাদের দেশে 150cc বাইক হচ্ছে এখন পর্যন্ত বৈধভাবে প্রাপ্ত বাইকের সর্বোচ্চ সিসি। যদিও এখন ১৬৫ সিসি পর্যন্ত সীমা নির্ধারিত হলেও সেই সিসি সম্বলিত কোন বাইক আমাদের দেশে এখনো প্রবেশ করে নি। এই 150cc সকল বাইকের মধ্যে দাম অনুযায়ী একদম উচ্চ পর্যায়ের ওয়াটার কুলড এমন বাইকের চেয়ে এয়ার কুলড বাইক বেশি দেখা যায়। যেহেতু এয়ার কুলড বাইকের জনপ্রিয়তা বেশি তাই আজকে আমরা আমাদের নির্বাচিত সেরা ৫ টি 150cc এয়ার কুলড ইঞ্জিন বাইকের তালিকা উপস্থাপন করবো। চলুন আর দেরি না করে শুরু করা যাক।
হোন্ডা সিবি ট্রিগার
হোন্ডা কোম্পানিকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছুই নেই। বহু বছর আগে আমাদের দেশের বাইক মার্কেটের শুরুর লগ্ন থেকেই এই কোম্পানি তার বিশেষ উচ্চ অবস্থান ধরে রেখেছে। এই হোন্ডা কোম্পানি সারা দেশের অগণিত মানুষের মন জয় করে ফেলেছে তাদের পণ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা, স্থায়ীত্ব, কার্যক্ষমতা এবং মানসম্মত প্রস্তুতকরণ পদ্ধতি বজায় রাখার কারণে। হোন্ডার বাইকের ক্ষেত্রে দেখা যায় একই বাইক তিন পুরুষ ধরে চলে আসছে এবং তা এখনো মসৃণভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এই হোন্ডা কোম্পানির আরো একটি সুন্দর নির্মাণ হচ্ছে এই হোন্ডা সিবি ট্রিগার 150cc বাইক।
এই বাইকটির হেডলাইট এবং টেইল লাইট দেখতে খুব সুন্দর ও আকর্ষণীয়। বাইকটির তেলের ট্যাঙ্কও সুন্দরভাবে ডিজাইন করা যাতে কিছুটা ঢেই খেলানো ডিজাইন রয়েছে এবং এজয় সাথে উভয় পাশে হোন্ডার স্টিলের লোগো এবং কিট লাগানো থাকে যা বাইকটির সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করে। এরই সাথে এর পরিপূর্ণ ডিজিটাল মিটার একে আর সুন্দর করে তোলে । এর এক্সহস্ট পাইপের উপরে একটি একই রঙের মাফলার ব্যবহার করা হয় যা কিছুটা জ্বলজ্বলে হয়ে থাকে এবং এই বৈশিষ্ট্যটাও এই বাইকের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তুলেছে।
Also Read: Price of Honda CB Trigger
এই বাইকের দুটি ভার্শন রয়েছে যার মধ্যে একটিতে দু’পাশেই ডিস্ক ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে এবং আরেকটিতে সামনের দিকে ডিস্ক ব্রেক থাকলেও পেছনে ড্রাম ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে। এই বাইকে রয়েছে লম্বা আরামদায়ক সিট যা চালককে বাইক চালনার সময় আরামদায়ক অভিজ্ঞতার অধিকারী করবে। এই বাইকটির হান্ডেলবার এমনভাবে ও এমন স্থানে স্থাপন করা হয়েছে যে এর নিয়ন্ত্রণ অনেক বেশি সহজ হয়ে গেছে। বাইকটির সামনের দিকে রয়েছে টেলিস্কোপিক সাস্পেনশন এবং পিছনের দিকে রয়েছে উন্নতমানের মনোসাস্পেনশন যা বাইকের চালককে অনেক কম ঝাকিহীন চালনায় সাহায্য করে।
যে সকল ব্যক্তিগণ এমন একটি বাইক চান যাতে তারা ভাল মাইলেজ, যথেষ্ট গতি, লম্বা সময় স্থায়ীত্ব এবং আরামদায়ক একই সাথে থাকবে, এই বাইকটি বিশেষত তাদের জন্যে উপযোগী এবং নিঃসন্দেহে তাদের দরকার পূরণ করবে বলে আশা করা যায়।
ইয়ামাহা এফ জেড এস (এফ আই)
ইয়ামাহা সারা বিশ্বের সকল বাইক মার্কেটের বহুল জনপ্রিয় এবং ভাল স্থান অধিকার করে রাখা একটি কোম্পানী। এই কোম্পানীর অনেকগুলো বাইকই আমাদের দেশে ভাল জায়গা ধরে রেখেছে। তাদের মধ্যেই একটি হচ্ছে এই ইয়ামাহা এফ জেড এস এফ আই যা আমাদের দেশের বিশেষ করে তরূণ প্রজন্মের কাছে খুবই জনপ্রিয় ও পছন্দের একটি বাইক।
এই বাইকটি দেখতে খুবই সুন্দর, এতে যে হেডলাইট ও টেইল লাইট রয়েছে তা উভয়েই স্টাইলিশ এবং আকর্ষণীয়। এতে কিছুটা দুই ভাগে বিভক্ত সিট ব্যবহার করেছে ও ফুয়েল ট্যাঙ্ক অনেক সুন্দর করে ডিজাইন করা যাতে কিছু কিট এবং গ্রাফিক্সের ব্যবহার করা হয়েছে যা বাইকটির সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে অনেক ভূমিকা রাখে। পুরো বাইকটিতে স্নিগ্ধ ও কোমল রঙ ব্যবহার এবং আক্রমণাত্মক ডিজাইনের সংমিশ্রণ বাইকটিকে অন্য সকম বাইকের চেয়ে আলাদা করে তুলেছে।
Also Read: The Price of Yamaha FZs-Fi
এর সামনের দিকে ডিস্ক ব্রেক এবং পিছনের দিকে ড্রাম ব্রে ব্যবহার করা হয়েছে। এতে ৪ স্ট্রোক এয়ার কুলড এসওএইচসি ইঞ্জিন রয়েছে যা যথেষ্ট ভাল পরিমাণের শক্তি ও গতি উৎপাদনে সক্ষম। এর সামনের দিকে টেলিস্কোপিক সাসপেনশন এবং পিছনের দিকে মনোক্রস সাসপেনশন ব্যবহার করা হয়েছে যা রাইডারকে ঝামেলাহীন ভ্রমণ ও চালনার অভিজ্ঞতা অর্জনে সাহায্য করে। এর সামনের দিকে ১০০/৮০-১৭ সাইজ এবং পিছনের দিকে ১৪০/৬০-১৭ সাইজের চাকা ব্যবহার করা হয়েছে যা বাইকটিতে মাটি আকড়ে ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং রাইডারের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে। এতে ১২ লিটার জ্বালানী ধারণক্ষমতা রয়েছে এবং এর ওজন জ্বালানী ব্যতীত ১৩২ কিলোগ্রাম।
এই বাইকটি একই সাথে দ্রুত গতি উৎপন্ন করতে এবং যথা সময়ে ব্রেক করতে পারার আত্মবিশ্বাস প্রদানে অসাধারণ পারদর্শী। এই বাইকটিতেও কিক এবং সেলফ উভয় রকম স্টার্টার রয়েছে। যারা একই সাথে বাইকের লুক, ভাল নিয়ন্ত্রণ ও ব্যলান্সিং ক্ষমতা, মানসম্মত মাইলেজ, আরামদায়ক, দীর্ঘস্থায়ীত্ব ও ভরসাযোগ্যতা চান তারা চোখ বন্ধ করে বাইকটি কিনতে পারেন।
টিভিএস আপাচি আর টি আর ১৫০
১৫০ সিসি সকল বাইকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া ৫ টি বাইকের ১ টি হচ্ছে এই টিভিএস আর টি আর ১৫০। এই বাইকটি এয়ার কুলিং বাইকের মধ্যে থ্রটল রেস্পন্স এবং টপ স্পীডের জন্যে জনপ্রিয়। বাইকটিতে খুব সুন্দর ও আকর্ষণীয় হেড লাইট এবং টেইল লাইট রয়েছে যার মাঝে হেড লাইটের পার্কিং লাইটটিও আকর্ষণীয় এবং অন্যান্য বাইকের চেয়ে আলাদা। এতে রয়েছে স্টাইলিশ ফুয়েল ট্যাঙ্ক যাতে রয়েছে আলাদা ডিজাইনের কিট যা এর সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও এতে রয়েছে আকর্ষণীয় ইঞ্জিন গার্ড।
যদিও বাইকটি একটি স্ট্যান্ডার্ড 150cc বাইক তবে এর লুক এবং পার্ফরম্যান্স অনেকটাই আক্রমণাত্মক যা এর জনপ্রিয় হওয়ার মূল কারণ বলা যেতে পারে। এছাড়াও এর নিয়ন্ত্রণ এবং ভারসাম্য বজায় রাখার বৈশিষ্ট্য এবং আরামদায়ক চালনাও এর অন্যান্য আকর্ষণসমূহ। এতে রয়েছে চার স্ট্রোকের সিঙ্গেল সিলিন্ডার ১৫০ সিসি ইঞ্জিন যা খুবই দ্রুত উচ্চ গতি ও শক্তি উৎপন্ন করতে সক্ষম। কোম্পানী থেকে বলা হয়ে থাকে এই বাইকটি ০ থেকে ৬০ কিমি/ঘন্টা গতি ৬ সেকেন্ডে তুলতে সক্ষম।
Also Read: Specification of TVS Apache RTR
এই বাইকটিতে রয়েছে ৯০/৯০-১৭ সাইজের সম্মুখ চাকা এবং পিছনে রয়েছে ১১০/৮০-১৭ সাইজের চাকা। যা রাইডারের ব্যালেন্সিং এর আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলে। এর দু’রকম ভার্শন বিদ্যমান। একটিতে সামনে এবং পিছনে উভয় পাশেই ডিস্ক ব্রেক দেয়া হয়েছে এবং অন্যটিতে সামনে ডিস্ক ব্রেক এবং পিছনে ড্রাম ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে।
বাইকের সামনের দিকে টেলিস্কোপিক ফর্ক্স সাস্পেনশন এবং পিছনের দিকে মনোটিউব ইনভার্টেড গুয়াস-ফিলড শক্স সাস্পেনশন ব্যবহার করা হয়েছে। যা রাইডারকে অনেক কম ঝাকি অনুভূত হতে দিবে এবং আরামদায়ক ভ্রমণে সাহায্য করবে। এতে ৫ টি গিয়ার শিফটিং স্টেপ রয়েছে। এছাড়াও এতে সেলফ এবং কিক দু’রকম ভাবেই স্টার্ট করার ব্যবস্থা রয়েছে। যারা তাদের বাইকে আকর্ষণীয় লুক, আক্রমণাত্মক বৈশিষ্ট্য, আরামদায়ক অভিজ্ঞতা এবং মানসম্মত মাইলেজ চান এই বাইকটি সাধারণত তাদের জন্যে উপযোগী।
বাজাজ পালসার ১৫০
বাজাজ পালসার ১৫০ এক সময়ে বাংলাদেশে অনেকটা এক চেটিয়াভাবে 150cc বাইকের মার্কেতে রাজত্ব করেছিল যার ধারাবাহিকতায় এখনো এই বাইকটি মার্কেটে ভাল একটি অবস্থান ধরে রেখেছে। বাজাজও তাদের বাইকগুলোর দীর্ঘস্থায়ীত্ব, পার্ফরম্যান্স এবং পার্টস এর পর্যাপ্ততা দিয়ে আমাদের দেশের মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে। তারই একটি হচ্ছে এই বাজাজ পালসার।
বিয়ের উপঢৌকন থেকে শুরু করে শখ এবং প্রয়োজনীয় সকল ক্ষেত্রেই এই বাইকের চাহিদা পরিলক্ষিত হয়েছিল। যদিও এখন আরো অনেক উন্নত মানের বাইক বাজারে আসার ফলে আগের সেই এক চেটিয়া বাজারের মত অবস্থা নেই। তারপরেও তারা ভাল জায়গা ধরে রেখেছে। এই বাইকটিতে রয়েছে এমন এক ধরনের সুন্দর লুক যা সকল বয়সের সবার সাথে মানিয়ে যায়। এর হেড লাইট ও ব্যাক লাইট উভয়ই সুন্দর এবং অন্যান্য বাইকের চেয়ে আলাদা।
Also Read: the price of Bajaj Pulsar 150
বাইকটিতে গ্লোসি রঙের ব্যবহার করা হয় যা উজ্জ্বল আলোতে চকচকে একটা আকর্ষণীয় লুক দেয়। বাইকটিতে রয়েছে লম্বা আরামদায়ক সিট যা রাইডারের চালনার সময়কার আরাম নিশ্চিত করে। এর সামনের দিকে ডিস্ক ব্রেক এবং পিছনের দিকে ড্রাম ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে। বাইকটির সামনে রয়েছে টেলিস্কোপিক ফর্ক সাস্পেনশন এবং পিছনে রয়েছে ট্রিপল রেটেড স্প্রিং ফাইভ ওয়েস এডজাস্টেবল ট্রাভেল নাইট্রোক্স শক এবসরবার সাসপেনশন যা বাইকারের ভ্রমণকে ঝাঁকি ও ঝামেলামুক্ত রাখবে।
এই বাইকটি বিশেষত তাদের জন্যে যারা বহূল পরিচিত ব্র্যান্ডের দীর্ঘস্থায়ী, জ্বালানী সাশ্রয়ী, আরামদায়ক, স্পেয়ার পার্টসের সহজলভ্যতা ও সাশ্রয়ী মূল্য ও সুন্দর একটি বাইক চান।
হিরো হাংক
হিরো হাংক বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটি বাইক। বাইকটি এর পুরুষালি লুক এবং দ্রুত থ্রটল রেস্পন্সের কারণে সুপরিচিত। বাইকটি অন্যান্য সমশ্রেণীর বাইকের চেয়ে আকারে একটু বড়। বাইকটির হেড লাইট এবং টেইল লাইট উভয়ই সুন্দর ও আকর্ষণীয়। এছাড়াও এতে রয়েছে হালকা ঢেউ খেলানো লম্বা আরামদায়ক সিট। এর ট্যাংকের উপরে দুই পাশেই স্টীল দিয়ে হাংক লিখা থাকে যা বাইকটির সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করে।
বাইকটির ফুএল ট্যাংক এবং হেড লাইটের দুই পার্শ্বে কিছুটা গ্রাফিক্সের কারুকার্য যুক্ত করা হয়েছে সর্বশেষ বাইকটির সংস্করণে। এর এক্সহস্ট পাইপের উপরে সুন্দর গ্লোসি মাফলার দেয়া হয়েছে। বাইকটিতে ৪ স্ট্রোক সিঙ্গেল সিলিন্ডার ইঞ্জিন দেয়া হয়েছে যা ভাল পরিমাণের শক্তি ও টর্ক উতপন্ন করতে পারে। এছাড়া এর উচ্চ থ্রটল রেস্পন্সের পাশাপাশি ভাল মাইলেজ দেয়াটাও সকলের আকর্ষণের আরেকটি কারণ।
Also Read: The Latest Price of Hero Hunk
এই বাইকেও অন্যান্য 150cc বাইকের মত সেলফ এবং কিক উভয় রকম স্টার্টার রয়েছে। বাইকটির সামনে ৮০/১০০-১৮ সাইজ এবং পিছনে ১০০/৯০-১৮ সাইজের টায়ার রয়েছে। এতে দেয়া দুইটি টায়ারই বরাবরের মত টিউবলেস এবং এতে এলয় চাকাই দেয়া হয়েছে। এর পিছনের চাকাটিও বর্তমানের অন্যান্য বাইকের চেয়ে তুলনামূলক চিকন। এর আর একটি সমস্যা হচ্ছে যে এর স্পেয়ার পার্টস এর মূল্য তুলনামূলক বেশি। তবে বাইকটির ইঞ্জিন ওয়ারেন্টি ৫ বছর বা ৭০০০০ কিলোমিটার দেয়া হয়ে থাকে যা অন্যান্য কোম্পানীর তুলনায় দ্বিগুণ। এই বাইকটির হ্যান্ডেল বার ও সিটিং পজিশন এমনভাবে তৈরি যে এতে করে রাইডার খুব সহজ ও আরামদায়ক নিয়ন্ত্রণের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন।
এই বাইকটি সাধারণত যারা তাদের বাইকে সৌন্দর্য, ভাল মাইলেজ, আরামদায়ক বৈশিষ্ট্য ও দীর্ঘস্থায়ীত্ব একত্রে চান তাদের জন্য উপযোগী।