পাহাড়ের গল্প - সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রাম বাইকে
This page was last updated on 06-Jul-2024 04:58pm , By Shuvo Bangla
পাহাড়ের গল্প - সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রাম বাইকে
ডিসেম্বরের ১৬ তারিখের সকাল ৬টা থেকে ১৯ তারিখ রাত ১২.৪৫ জীবনের কিছু ভয়ংকরতম সুন্দর দিন পার করে আসলাম। এই ট্যুর এর পরিকল্পনা আমরা অনেকদিন আগে থেকেই করে আসছিলাম....কিন্তু প্লান করে আমার কিছু হয় না...নভেম্বর মাসে যখন এই প্লান করি তখন অতিউত্তেজনায় তটস্থ কিন্তুু সময় সেষ হয়ে যখন টুর এর তারিখ আসলো আমি দেখলাম যে আমি হয়ত জেতেই পারবো না...কারন আমার থিসিস জমা দেয়ার লাস্ট ডেট দিলো ২১ তারিখ।
তাই মনে মনে নিজেরে বুঝাইলাম যে বাবাধন এইবার ও তোমার কপালে পাহাড় ভ্রমন নাই....যাওয়ার আগের দিন ও আমি ওয়াসিফ ভাই কে বলসি যে যাব না...কিন্তুু ১৫ তারিখ রাতে চিন্তা করলাম নেই না হয় একটু রিস্ক কি আছে আর এই গেবনে ওয়াসিফ ভাইরে বললাম যাব কিন্তু ১৯ তারিখ যেভাবেই হোক আমাকে ঢাকায় থাকতেই হবে...
উনি আমাকে বল্লেন ভাই আমি যদি শারিরীক ভাবে ফিট থাকি আপনাকে নিয়ে আমি ঢাকায় ঢুকবোই(শারিরীক ভাবে ফিট না থাকা নিয়ে সংশয় এর কারন ছিল ১৯ তারিখে আমাদের ৫৫০ কি.মি. রাইড করা লাগবে যারর ২০০+ কিমি হবে পাহাড়ি রাস্তা)
যাই হোক সকল জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে ১৬ তারিখ সকাল ৬.৩০ এ রওনা হই এর ভিতর জানতে পারি জহির ভাই যাবেনা এবং আরেফিন ভাই ও যাবেনা,আর আমার মেলায় হারিয়ে যাওয়া আসিফ ভাই পারিবারিক ঝামেলায় গেলেন না। ৮ জন থেকে ৫ জন হয়েই আমরা শুরু করলাম এবং ঢাকা-চিটাগাং আমরা খুব দ্রুতই সেষ করলাম...
ওয়াসিফ ভাইয়ের টার্গেট ছিলো ৪ টার আগেই দিঘীনালা ক্যাম্প পার হতে হবে,আমরা তার অনেক আগেই পৌছে যাই...এবং দিঘীনালা ক্যাম্প থেকে সাজেক পর্যন্ত রাস্তার সৌন্দর্যর বর্ননা করতে জাওয়া আসলে বোকামি..এই বেপারটা আসলে দেখেই বুঝতে হয়...এক কথায় সাজেক অনেক সুন্দর।
সাজেক পর্ব সেষ করে আমরা রাঙামাটির দিকে রওনা দিলাম পরদিন ১১ টার আগে বা পরে,এই রাস্তাটা এত সুন্দর ছিল। রাঙামাটি ঢুকে আমরা এইদিন আশে পাশে ঘুরাঘুরি করে পরদিন বান্দরবন এর দিকে রওনা দিলাম..কাপ্তাই ব্রীজ পার হয়ে কাপ্তাই লেকের পাশ দিয়ে যখন যাচ্ছিলাম প্রত্যেকটা মুর্হুতকে জীবন্ত মনে হচ্ছিলো আর মনে মনে ভাবতেসিলাম আমার দেশ এত সুন্দর ।
দুইপাশের বিশাল পাহাড়ের মাঝ দিয়ে আমরা ফেরী পার হয়ে যখন ওই পাড় গেলাম এক ফোটা দু ফোটা করে বৃস্টি ঝুম বৃস্টি শুরু হয়ে গেলো এবং এই কন কনে পাহাড়ি ঠান্ডায় সাথে বৃস্টি উফফ কি মগা!!!!! ফিলিংস নিয়ে ভিজতে ভিজতে বান্দরবন পর্যটন মোটেল এ ঢুক্লাম..ব্রিস্টি কমার নাম নাই সবার মন খারাপ কারন অই দিন আমাদের মেঘলা নিলাচল দেখার কথা ছিলো...
কিছুক্ষন রেস্ট করার পর এই ব্রিস্টিতেই আমরা নিলাচল দেখতে বের হলাম এবং এই ব্রিস্টি ভেজা খাড়া পাহাড়ি রাস্তায় চালানোর সময় ভাবতেসিলাম ভুল করেও যদি পড়ে যাই তাইলে খাড়া উপ্রে। নিলাচল উঠে যখন মেঘগুলো আমায় ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছিল উফফফ গেবন হয় সুন্দর টাইপ ফিল হচ্ছিলো....
নিলাচলে ঘুরে আমরা বান্দরবনের স্থানীয় জনি ভাইয়ের চায়ের দাওয়াত নিতে গেলাম এবং উনি আমাদের সাংগু নদীর পাশে এক পাহাড়ে নিয়ে গেলেন যেখান থেকে পুরো বান্দরবন শহর দেখা যায়( এবং ভাই যেই রাস্তা দিয়ে নিয়ে গেসে পুরাই থক থকে কাদা আর মাটির রাস্তা তাও আবার পাহাড়ের) অইদিন সারা সন্ধ্যা জনি ভাই আমাদের বান্দরবন ঘুরালেন। শাওন ভাইয়ের বাইকের কিছু কাজ ছিলো তা শেষ করে জনি ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হোটেল এ ফিরলাম।
সেষ দিন খুব সকালে আমরা নিলগিরির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম এবং নীলগিরি পৌছে ঘুরাঘুরি শেষ করে থাঞ্চির দিকে রওনা দিলাম এবং নিল্গিরি থেকে থাঞ্চি হয়ে আলিকদম ( যা বাংলাদেশের সব থেকে উঁচুতম রাস্তা) এই রাস্তাটা ছিলো ভয়ংকরতম সুন্দর রাস্তা,থাঞ্চির থেকে আলিকদমের রাস্তার কিছু অংশ পুরাপুরি কাদাভরা ছিল যা পার হওয়া ছিলো খুবি বিপদজনক সব পার হয়ে আমরা জখন আলিকদম ডিম পাহাড়ের কাছে ডানে তাকিয়ে দেখে জমাট বাধা সাদা মেঘগুলো এভারেস্টের চুড়ার মত একটু দুরেই দাড়িয়ে আছে ...
ডিম পাহাড়ে উঠার আগে মনে রাস্তার কাছে সাজেক এর রাস্তা কিচ্ছু না কয়েকটা বাক এমন ছিলো ১ম গিয়ার থেকে ২য় গিয়ার দিতে পারি না এত খাড়া!!! যাই হোক খাড়া পাহাড়িরাস্তা নামার সময় আমি যখন সাম্নের ব্রেক ধরতেছিলাম কি জেন একটা কট কট করতেছে শুনলাম ভাব্লাম বালু টালু ঢুকসে আলিকদম বাজার থেকে যখন চকরিয়ার দিকে রওনা হলাম ভিষন বাকানো এক মোড় ঘুরতে যেয়ে দেখি আমার সামনের ব্রেক ধরেইনা এবং আমি পড়তে পড়তে বাচলাম বাইক থামায় দেখি আমার সামনের হাইড্রোলিক ব্রেক এর নাট খুলে পড়ে গেসে!!!!
তালহা ভাই সামনে ছিলো ডাক দিলাম,উনার পিছে পিছে ১৫ কিমি দূরে চকরিয়া বাজারে জেয়ে নাট লাগালাম। নাট লাগানোর পর কোনো কথা নাই খাড়া টান, চিটাগাং ঢুক্লাম ৬.৩০ টায় আর চিটাগাং এর জাম ঢাকার থেকেও জঘন্য, এই জাম পার হয়ে ৭ টায় দিকে রওনা হই এবং আল্লাহর অশেষ রহমতে ১২.৩০ টায় ঢাকায় ঢুকলাম।
অনেক কথা লিখে ফেললাম!!!আসলে যা লিখলাম এর থেকেও অনেক বেশি রোমাঞ্চকর ছিল এই টুর। ওয়াসিফ ভাই আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবোনা কারন আপনি না থাকলে এই টুরটাই হত না আর শাওন ভাই তালহা ভাই সালেহ ভাই আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ আমার কারনে শেষ দিন রিস্ক নিয়ে ঢাকায় ব্যাক করার জন্ন,আপ্নাদের উপহার হিসেবে এই এ্যালবামটা উৎসর্গ করলাম।
এ্যালবাম লিঙ্ক >> ক্লিক করুন এখানে
লিখেছেন - Sazzadur Rahman Sajib.