ছোট বাইক এ দূরপাল্লাঃ জাফলং

This page was last updated on 06-Jul-2024 09:15am , By Shuvo Bangla

ছোট বাইক এ দূরপাল্লাঃ জাফলং

দ্বিতীয় দিন ,( দেখুন প্রথম দিনের গল্প )  অর্থাৎ ২০ জুন সকালের খাবার খেয়ে রওনা হই জাফলং এর উদ্দেশ্যে । ঘড়ি তে তখন সকাল ৭ টা । কিন্তু এমন অঝোর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে যে মনে হয় ভুল করে ভোর ৫ টায় বের হয়েছি । রেইন কোট গুলো আমাদের অনেক সাহায্য করেছি । অগুলো ছাড়া কোথাও যাওয়া সম্ভব হত না । শুক্রবার হওয়ায় রাস্তায় তখনো ব্যাস্ততা শুরু হয়নি ।

৭.১৫র মধ্যেই আমরা তামাবিল রোড এ উঠি । রাস্তা বেশ ভালই । শহর থেকে একটু বাইরেই রাস্তার দু’পাশে দৃশ্য খুব সুন্দর , তার ওপর বৃষ্টি সব কিছু ধুয়ে ঝাঁ চকচকে করে দিয়েছে । অসাধারন দৃশ্য । বৃষ্টি আর দৃশ্য উপভোগ করতে করতে যাচ্ছিলাম আমরা । গতি খুব বেশি ছিলোনা । ৪৫-৫০ এমন । যাবার পথে বেশ অনেক জায়গায় বিরতি নেই । ছবি তোলা । চা খাওয়া ইত্যাদি কারনে ।

তামাবিল রোড

সিলেটের আসল সৌন্দর্য আমাদের সামনে আসে যখন আমরা গোয়াইন ঘাট এলাকায় আসি । আঁকাবাঁকা রাস্তা । পাশে পাহাড় । মেঘ এর জন্য বেশি দুরের কিছু দেখা জাচ্ছেনা । পাহাড়ের সবুজ , আকাশের নীল আর মেঘের রঙ মিলে অদ্ভুত সুন্দর একটা রঙ সৃষ্টি করেছে । এ যেন কল্পনার রঙ । পাহাড় গুলো থেকে ঝর্ণা পরছে । সাদা জলরাশি উন্মত্ত গতিতে নিচে নেমে আসছে ।

ভয়ানক সুন্দর দৃশ্য । পাহাড় গুলো ভারত এর , কিন্তু ভারত থেকে এই মোহনীও দৃশ্য টা দেখা যাবেনা । কারন পাহাড় এর এপাশে বাংলাদেশ ।আমরা দুজন যাদের দায়িত্ব স্টিয়ারিং এ ছিল তাদের সতর্ক থাকতে হয়েছে তারপরও মাঝে মাঝে বাইকের গতি কমিয়ে রাস্তার পাশের পাহাড়ের মাঝ খান থেকে ঝর্নার সৌন্দর্য উপভোগ করছিলাম, সে এক অদ্ভুত আবহ। ঝর্নার পানির মিষ্টি শব্দে পতন আর মেঘলা আবহাওয়ায় মনে হচ্ছিল থেকে যাই এখানে।

গোয়াইন ঘাট

তামাবিল স্থলবন্দর এ পৌঁছাই ১০ কি ১০.৩০ টার সময় । সেখানে ছবিতোলার পর্ব সেরে পাহারি রাস্তায় রাইড করে পৌঁছাই জাফলং । এখানে মামার বাজার বলে একটা জায়গা আছে , সেখানে আমার বাইক এর ইঞ্জিন অয়েল বদলাই এবং রুশোর বাইক এর কিছু কাজ করাই । বেশ ছোট একটা ছেলে কাজ করে এবং বেশ দক্ষ ।

তামাবিল স্থলবন্দর

ওর সাথে বেশ কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে এবং একসাথে নাস্তা করে আমরা যাই বল্লার বাজার । রাস্তার অবস্থা ভয়াবহ । এমন একটা পর্যটন এলাকায় রাস্তা এমন কিভাবে রাখে সেটা ভেবে পাই না । পাথর বাহী ট্রাক চলাচল করে বেশ ঝুঁকি নিয়ে , যদিও রাস্তার এহেন অবস্থার জন্য ট্রাক ই দায়ী । পারকিং এ বাইক রেখে আমরা একটা নৌকা নেই । নৌকায় করে জিরো পয়েন্ট ঘুরে আসি । ভারতের ঝুলন্ত ব্রিজ এর কাছে যাই । বৃষ্টি তে নৌকায় চরার মজাই আলাদা ।

ভারতের ঝুলন্ত ব্রিজ

সবাই মিলে নৌকা বেয়ে বেশ উপভোগ করলাম । নৌকা বিহার শেষ করে নদীর একদম পারে একটা হোটেল এ ভাত খেলাম । সস্তা এবং গরীবি হালের হোটেল হলেও খাবার খুব ই ভালো । গরুর মাংস টা অসাধারন হয়েছিলো । ভাত খাচ্ছিলাম আর ঠিক সামনেই প্রকৃতির খেলা দেখছিলাম । নদি , পাহাড় , মেঘ , বৃষ্টি … আহা । স্বর্গ মনে হচ্ছিলো জায়গাটাকে ।

সিলেটের আসল সৌন্দর্য

খাবার এর পর কিছুক্ষন বিশ্রাম করে রউনা দেই ফিরতি পথে । একবার করে দেখে যাওয়া জায়গা গুলোর মায়া তখনো কাটাতে পারিনি । আবার থামি কিছু স্পট এ । রাস্তায় বিশ্রাম , কাঁঠাল খাওয়া ইত্যাদি করতে করতে শহর এ পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত হয়ে যায় ।

বাসায় এসে সারাদিনে প্রথমবার রেইন কোট খোলার সুযোগ পাই । তারাতারি খাওয়া দাওয়া করে শুয়ে পড়ি কারন পরদিন আরো অনেক পথ যেতে হবে । (বাদ বাকি শেষ পর্বে)