চুরি হবার ৮৯ দিন পরে সন্ধান পাওয়া গেলো মোটরসাইকেল এর !!
This page was last updated on 07-Jul-2024 02:58pm , By Shuvo Bangla
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে চুরি হওয়া একটি মোটরসাইকেল (ঢাকা মেট্রো–ল-১৪-####) নম্বরের একটি সুজুকি জিক্সার) প্রায় তিন মাস পর পুলিশের দক্ষতা ও নিরন্তর চেষ্টায় ফিরে পেয়েছেন প্রকৃত মালিক। এ রকম চুরি যাওয়া মোটরসাইকেল ফিরে পাওয়ার ঘটনা সিদ্ধিরগঞ্জ বিরল বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। গত ১৭ এপ্রিল সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিল আবাসিক এলাকার ১০ নম্বর রোডের একটি বাড়ির গ্যারেজ থেকে সকাল ৭টা ২১ মিনিটে বাড়ির গেটসহ মোট ৪টি তালা ভেঙে চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয় মোটরসাইকেলটি। সেসময় বাড়ির এক ভাড়াটিয়া চোরদের দেখলেও বুঝতে পারেনি তারা চোর।
চুরি হবার ৮৯ দিন পরে সন্ধান পাওয়া গেলো মোটরসাইকেল এর!!
মোটরসাইকেলটি নিয়ে বাড়ির গলি থেকে বের হচ্ছে দুজন চোর। সামনে মানিক ও পেছনে কালাম। সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ছবি।[/caption] সেদিন সকালেই মোটরসাইকেলের মালিক সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। রাতে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাসেল সরোজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে তাকে হীরাঝিল এলাকার সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়। পরে ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দুইজন চোর বাড়ির ভেতরে ঢোকার ৫ থেকে ৬ মিনিটের মাথায় মোটরসাইকেলটি চালিয়ে নিয়ে চলে যায়। এ ঘটনায় পরে ওই থানায় একটি চুরির মামলা দায়ের করা হয়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে আরও দেখা যায়, চুরির আগে সিলভার কালারের একটি প্রাইভেট সিএনজি থেকে ওই দুজন লোক এলাকার প্রধান রাস্তায় নামেন। ১০ নম্বর রোডের একটু দূরে সিএনজিটি রেখে প্রথমে একজন বাড়ির ভেতরে ঢোকেন, তার কিছুক্ষণ পরে বাজারের ব্যাগ হাতে আরেকজন লোক বাড়িটিতে ঢোকে।
তার হাতের ব্যাগটিতে ছিল তালা কাটা ও ভাঙার যন্ত্রপাতি। সেসময় রোডের মাথায় একজনকে দেখা যায় তাদের পাহারা দিতে। তারা বাড়িতে ঢোকার ৫ মিনিট পর মোটরসাইকেলটি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। যাওয়ার সময় সিএনজিচালককে ইশারা করলে তাদের পেছন পেছন চলতে থাকে এবং দাঁড়িয়ে পাহারা দেওয়া লোকটিও চলে যায়। এই সিলভার কালারের একটি প্রাইভেট সিএনজিতে আসে চোরেরা। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে পুলিশ ধারণা করে, চুরির সঙ্গে জড়িত ছিল কমপক্ষে ৪ জন ব্যক্তি। এদের একজন হলেন সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক রবিউল ইসলাম বাবু (৪৫) ও অন্যরা হলেন গলির মাথায় দাঁড়িয়ে পাহারাদানকারী আমজাদ (৩৮), মোটরসাইকেলটি চালিয়ে নেন মানিক (২৮) এবং সেসময় তার পেছনে বসে থাকা ব্যক্তিটি হলেন তালা কাটার মিস্ত্রি কালাম (৩৫)। পুলিশ জানায়, কালাম এই চারজনকে নেতৃত্ব দেন। ২৩ এপ্রিল সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী অটোরিকশার নম্বরটি ট্র্যাক করে পুলিশ।
মোটরসাইকেলের মালিক পক্ষের লোকদের সঙ্গে নিয়ে প্রথমে ঢাকার কচুক্ষেতে অভিযান চালিয়ে সিএনজিচালক রবিউল ইসলাম বাবুকে আটক করে পুলিশ। সেসময় বাবু জানান, পরদিন সকালে তাদের আরও একটি মোটরসাইকেল চুরি করার পরিকল্পনা রয়েছে। তার তথ্য অনুযায়ী, সেরাতেই গাবতলী ও মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামি কালামকে গ্রেফতার ও তার সহচর নাজমুল (১৯) নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ। একইসঙ্গে অটোরিকশাটি জব্দ করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় নিয়ে আসা হয়। গ্রেফতারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নাজমুল জানান, তিনি চুরির ব্যাপারে কিছু জানেন না। কালাম তাকে মোটরসাইকেল চালাতে দিবে বলে সাভারের ধামরাই থেকে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে আসতে বলে। এ বিষয়ে অভিযানের দায়িত্বে থাকা এসআই রাসেল বলেন, ‘গ্রেফতার হওয়া তিনজনের পরদিন সকালে আরও একটি মোটরসাইকেল চুরি করার কথা ছিল। তারা চুরির উদ্দেশ্যেই একত্রিত হয়েছিল।’
গ্রেফতারের পর ডান দিকে রবিউল ইসলাম বাবু, মাঝে নাজমুল ও বামে প্রধান আসামি কালাম।[/caption] গ্রেফতারের পর প্রধান আসামি কালাম ১৭ এপ্রিলের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে পুলিশকে জানান, ঘটনার পরপরই তাদের চালক মানিক মোটরসাইকেলটি নিয়ে গিয়ে নোয়াখালীর এক ব্যক্তির কাছে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে। পরে ঘটনার সঙ্গে জড়িত চারজন বিকাশের মাধ্যমে সেই টাকা ভাগ করে নিয়েছে। কিন্ত মানিক বর্তমানে কোথায় আছে, তা জানে না বলে দাবি কালাম। মানিক পুলিশের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকলেও গ্রেফতার ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্য ও মানিকের ফোন নম্বর এবং যার কাছে বিক্রি করা হয়েছে, তার ফোন নম্বর ট্র্যাক করে মোটরসাইকেলটির অবস্থান নির্ণয় করতে সক্ষম হয় পুলিশ। পরে ২৯ জুন চুরি যাওয়ার ৭৪ দিন পর চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার সদর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তুহিন মোটরস নামে এক মোটরসাইকেল মেরামতের দোকানের পেছন থেকে মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে পুলিশ।
অবশ্য এ সময় কাউকে আটক করা হয়নি। এ ব্যাপারে মামলার দায়িত্বে থাকা এসআই রাসেল বলেন, ‘বাদীর মোটরসাইকেলটি দরকার ছিল, আমরা মোটরসাইকেলটি পেয়েছি। কম দামে পেয়ে কেউ কিছু কিনলে সে তো আর চোর হয়ে যায় না’। চুরি হওয়া Suzuki Gixxer SF. উদ্ধারের পর তোলা ছবি। ২৯ জুন রাতেই উদ্ধার অভিযানে সঙ্গে থাকায় মোটরাসাইকেলটির প্রকৃত মালিক তা চালিয়ে চাঁদপুর থেকে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে আসেন।
কিন্তু বাইকটি ফিরে পেয়েও চুরির মামলা কোর্টে চলে যাওয়ার কারণে তিনি সেটিকে সে রাতে তার বাসায় নিয়ে যেতে পারেননি। তাকে মোটরসাইকেলটিকে রেখে আসতে হয় সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সামনে পুলিশের হেফাজতে। পরে মোটর সাইকেলের মালিকানা যাচাই করে নারায়ণগঞ্জ আদালতের কাছ থেকে প্রকৃত মালিককে তার মোটরসাইকেল ফিরিয়ে দেওয়ার আদেশ আনতে সময় লাগে আরও ১৫ দিন। অতঃপর আদালত আদেশ দেওয়ার এক দিন পর এক লক্ষ টাকার বন্ড ও তিনজন সাক্ষী সামনে রেখে ৮৯ দিন পর ১৪ জুলাই চুরি যাওয়া মোটরসেইকেলটি তার মালিকের হাতে ফিরিয়ে দেয় পুলিশ।
সংবাদ সূত্রঃ প্রিয় ডট কম