কিভাবে বুঝবেন ক্লাচপ্লেট নষ্ট?? ক্লাচ লিভার সেট আপ ও বিস্তারিত

This page was last updated on 03-Jul-2024 12:48pm , By Shuvo Bangla

আজ আমি আপনাদের দেখাব কিভাবে ক্লাচপ্লেট পরীক্ষা করবেন? কিভাবে সেটআপ করবেন? কিভাবে ব্যবহার করলে ক্লাচ প্লেট দীর্ঘস্থায়ী হয়? এক্ষেত্রে ইয়ামাহা কি নিয়ম অনুসরণ করে? এই পোস্ট এ আমি ক্লাচ প্লেট সম্পর্কিত সবকিছু স্টেপ বাই স্টেপ লিখব।

তাই পুরো পোস্ট পড়ে জানাবেন আপনার কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা আছে কিনা? আমি চেষ্টা করব উত্তর দিতে। চলুন শুরু করি।

ইঞ্জিন না খুলে ক্লাচ প্লেট টেস্ট:

নিরব নিরাপদ একটা ভালো রাস্তা বেছে নিন।

মোটরসাইকেল চালু করে তৃতীয় গিয়ার্ এ ৩k আরপিএম এ একনাগারে কিছুক্ষণ চালাতে থাকুন। হঠাত করে ফুল থ্রটল দিয়ে ধরে রাখুন। লক্ষ্য করুন মোটরসাইকেল কিভাবে আপনার কাজে সারা দিচ্ছে। যদি দেখেন স্পীড ভো করে দ্রুত উঠতে থাকে, ফুল থ্রটল আরপিএম এর সাথে বাইকের স্পিড দ্রুত সমন্নয় করতেসে, তাইলে সব ঠিকঠাক আছে।  আর যদি দেখেন ফুল থ্রটল দেয়ার পর হাই আরপিএম এর সাথে স্পিড আসতে আসতে বেড়ে তারপর ম্যাচিং করে, তাইলে ক্লাচ প্লেট এ সমস্যা থাকতে পারে। এভাবে  তিন চারবার টেস্ট করলে একটা ভালো ধারণা পাবেন।

ক্লাচ প্লেট কিভাবে কাজ করে:

ক্লাচ প্লেট কিভাবে কাজ করে

ইঞ্জিন থেকে উৎপাদিত শক্তি ক্লাচ প্লেট কে ঘুরায়।

ক্লাচ প্লেট ঘুরায় প্রেসার প্লেট কে।

প্রেসার প্লেট ঘুরায় চাকা কে। (=প্রেসার প্লেট + গিয়াড়িং + ফাইনাল ড্রাইভ + হুইল )

ইঞ্জিন থেকে উৎপাদিত শক্তি এতগুলা মাধ্যম পার হয়ে চাকায় পৌছাইতে পৌছাইতে কিছু শক্তির

ক্ষয় হয়, অপচয় হয়। এটা স্বাভাবিক। এটাকে পারফরমেন্স লস বলে। ক্লাচ এসেম্বলির কোথাও সমস্যা থাকলে এই অপচয় আরো বেশি হয়। ফলাফল মোটরসাইকেল এর স্পিড আগের মত উঠে না। রেডি পিকআপ দেরিতে সাড়া দেয়। হালকা হালকা লাগে।

ইঞ্জিন খুলে ক্লাচ প্লেট টেস্ট:

এইটা সঠিক উত্তর দিবে।এক্ষেত্রে আমি ইয়ামাহা পদ্ধতি অনুসরণ করছি।

একটা ক্লাচ এসেম্বলি পাচটি অংশ থাকে।

১. ক্লাচ প্রেসার প্লেট

২. ক্লাচ প্লেট

৩. প্রেসার প্লেট

৪. ক্লাচ সেন্টার

৫. ক্লাচ হাউসিং

ইঞ্জিন খুলে ক্লাচ প্লেট টেস্ট

ইঞ্জিন থেকে একে একে সব ক্লাচ অংশ খুলুন, ভালো করে পেট্রোল ওয়াশ করে শুকাই ফেলুন। এখন আমরা ক্লাচ প্লেট, প্রেসার প্লেট এর পুরুত্ব মাপব।

ভার্নিয়ার স্কেল

এজন্য দরকার হবে একটা ভার্নিয়ার স্কেল। ক্লাচ প্লেট এর উপর ছোট ছোট বাদামী রঙের, গারো বাদামী রঙের কোটিং ম্যাটারিয়াল থাকে। গভীরতা মাপার সময় খেয়াল করে কোটিং ম্যাটারিয়াল সহ পুরুত্ব মাপবেন ।

 প্রতিটা ক্লাচ প্লেট এর, প্রতিটা প্রেসার প্লেট এর চার জায়গার মাপ নেন। একটা খাতায় মানগুলো টুকে রাখুন। এরপর নতুন ক্লাচ প্লেট এর সাথে পুরুত্ব তুলনা করুন। যদি নতুন আর ব্যবহৃত ক্লাচ প্লেটের মধ্যে পার্থক্য ০.২০এমএম এর বেশি হয় তাইলে নতুন ক্লাচ সেট কিনা লাগবে।

ক্লাচ প্লেট

নতুন ক্লাচ প্লেট

প্রেসার প্লেট

fz / fazer এর ক্লাচ প্লেটের পুরুত্ব ৩.০০ এমএম। এটার ব্যাবহার উপযোগী সর্বনিম্ন সীমা ২.৮০ এমএম (= ৩.০০ - ০.২০). আর প্রেসার প্লেট এর সর্বনিম্ন উপযোগী সীমা ১.৭০ এম এম.  আরেকটা জনপ্রিয় বাইক ইয়ামাহা আর ১৫ এর নতুন ক্লাচ প্লেট এর পুরুত্ব ২.৯০-৩.১০ এমএম। এর ব্যাবহার উপযোগী সর্বনিম্ন সীমা হলো একই ২.৮০ এমএম। প্রেসার প্লেট  সীমা ১.৪৫-১.৭৫ এমএম। অর্থাৎ নতুন আর পুরাতন প্রেসার প্লেটের মাঝের পার্থক্য ০.৩০এমএম থেকে বেশি হলে প্রেসার প্লেট পুরা সেট পাল্টাতে হবে। কাজটা খুব সহজ এবং একুরেট রেজাল্ট।  ইয়ামাহা আর একস আরেকটা লিজেন্ড বাইক এটার সর্বনিম্ন ব্যবহার সীমা ২.৭০ এমএম। আমার কাছে ডিসকভার ১৩৫ এর একটা ব্যবহৃত ক্লাচ এসেম্বলি আছে। আমি জানি না এটার কি অবস্থা। নতুন ক্লাচ প্লেট এর পুরুত্ব ৩.১০এমএম। সর্বনিম্ন ব্যবহার উপোযোগী সীমা ২.৯০ এমএম (=৩.১০ - ০.২০).

একটা একটা করে প্রত্যেক টার মাপ নিলাম আর দেখলাম সবগুলা ৩.০০-৩.০৫ এমএম এর মধ্যে। মানে এখনো ব্যবহার উপযোগী আছে।

তারপর প্রেসার প্লেট এর মাপ নিলাম। সবগুলা ১.৫০(= ১.৭৫ - ০.৩০) এমএম এর মতন। মানে সর্বনিম্ন সীমা ছুই ছুই অবস্থা। প্রেসার প্লেট পাল্টাতে হবে।

ক্লাচ প্রেসার প্লেট:

সমতল, রুক্ষ টাইপ মসৃন থাকলে ভালো আছে ।

ক্লাচ প্রেসার প্লেট

ডিসকভার ১৩৫ এর ক্লাচ প্রেসার প্লেট

ডিসকভার ১৩৫ এর ক্লাচ প্রেসার প্লেট টি দীর্ঘ ব্যবহারের ফলে গভীর ক্ষত তৈরী হইছে। এটা পাল্টানো বেশি জরুরি।

ক্লাচ সেন্টার :

এ প্রেসার প্লেট এর আঙ্গুলের ছাপ বসে গেলে পাল্টাইতে হবে., নইলে পাল্টানোর দরকার নাই।

কিভাবে ক্লাচ লিভার সেটআপ করবো?

সেটআপ করার আগে দেখে নেন মোটরসাইকেল বর্তমানে কি অবস্থায় আছে।

বাইক টা সেন্টার স্ট্যান্ড এ বসান। পিছনের চাকা যেন মাটি না ছোয়।

বাইক স্টার্ট করে ফার্স্ট গিয়ার্ দেন। ক্লাচ লিভার ছাড়বেন না, চেপে ধরে রাখুন।

লক্ষ্য করুন পিছনের চাকা কি থেমে আছে না ঘুরতেছে?? যদি ঘুরতে থাকে, আস্তে করে পেছনের ব্রেক চাপ দিয়ে থামাই দেন। ক্লাচ লিভার ছাড়বেন না।

এখন চাকা কি আবার ঘুরা শুরু করসে? যদি একটুও ঘুরে তাইলে ক্লাচ সেটআপ নতুন করে ঠিক করতে হবে। ক্লাচ ক্যাবল বাড়ায় কমায় সহজেই তা করা যায়।

অবশ্য এটা নির্ভর করে আপনি অলরেডি কত কিলোমিটার চালাইছেন এই ক্যাবল দিয়ে। সময়ের সাথে সাথে ক্লাচ ক্যাবল স্ট্রেচ করে। বেশি ঢিলা হলে নতুন ক্লাচ ক্যাবল লাগান।

কিভাবে ক্লাচ লিভার সেটআপ করবো

সেটআপ করার জন্য ক্লাচ লিভার এর ঠিক পাশে রাবার কভার খুলুন। ওটার ভিতরে বৃত্তাকার একটা চাকতি (লক নাট) আছে। চাকতি টা ঢিলা করুন। এরপর এডজাস্ট বোল্ট ঘড়ির কাটার দিকে ঘুরালে ঢিলা হবে, ফ্রি প্লে বাড়বে। আর ঘড়ির কাটার উল্টা দিকে ঘুরাইলে টাইট হবে , ফ্রি প্লে কমবে। পালসার এ জাস্ট অপজিট ফাংসন। ক্লাচ লিভার ফ্রি প্লে এফজি ফেজার, আর ১৫, জিক্সার , পালসার সহ প্রায় সব বাইকে ১০-১৫ এমএম।

ক্লাচ এডজাস্ট বোল্ট

এভাবে না হলে ইঞ্জিনের পাশে দ্বিতীয় ক্লাচ এডজাস্ট বোল্ট ব্যবহার করে সঠিক ফ্রি প্লে নিশ্চিত করুন।

ক্লাচ প্লেটের দীর্ঘস্থায়িত্ব :

ক্লাচ লিভার সেটআপ শেষ হলে এটাকে ফিক্সড ধরে নিজেকে এই সেটআপের সাথে মানিয়ে নেন।

ক্লাচ প্লেটের দীর্ঘস্থায়িত্ব

ক্লাচ লিভার ধরবেন দ্রুত, ছাড়বেন আস্তে স্মুথলি।  হাফ ক্লাচ কখনো না।  ধরলে ফুল, ছাড়লেও ফুল।  ক্লাচ প্লেট অনেক দিন লাস্টিং করবে । ভালো থাকুন , সবাই কে অনেক অনেক ধন্যবাদ। বাইক বিডির সব দর্শক শ্রোতা দীর্ঘজীবি হোক ।

নোটস:

প ৩. মোটরসাইকেলের সাদা ধোয়া বা কালো ধোয়ার সাথে ক্লাচ প্লেট অ্যাসেম্বলির কোনো সম্পর্ক নাই।

প ৪.  ক্লাচ প্লেট ৩০ হাজার কিলো কখনো কখনো ৪০-৫০ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘস্থায়ি হয়।

প ৫. ক্লাচ প্লেট কখনো পাল্টাইলে, পাল্টানোর সময় সাথের ক্লাচ স্প্রিং গুলাও পাল্টায় নিবেন। মনের শান্তি ।

লিখেছেনঃ প্রিয় নীল আকাশ ( Priyo Nil Akash)