কিওয়ে সুপারলাইট বাইক - টীম বাইকবিডি বাইকটিকে টেস্ট রাইড - রিভিউ

This page was last updated on 08-Jul-2024 12:23pm , By Shuvo Bangla

বিগত ৫ বছরে বাংলাদেশে মোটরসাইকেল এর চাহিদা এবং আমদানী – উভয়ই বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের মোটরসাইকেল মার্কেটে অফ-রোডার, কমিউটার, স্পোর্টস, বিভিন্ন সেগমেন্টের বাইক এসেছে, এর পাশাপাশি জনপ্রিয় একটি সেগমেন্ট হচ্ছে ক্রুজার বাইক। জনপ্রিয় হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের হাতেগোনা কয়েকটি ক্রুজার বাইক রয়েছে, কিওয়ে সুপারলাইট তাদের মধ্যে অন্যতম।

কিওয়ে সুপারলাইট এর ভিডিও রিভিউ

keeway superlight review

কিওয়ে সুপারলাইট বাইকটি একটি বড়সড় ক্রুজার বাইক, যেটি ২০১৬ সালের মার্চে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম লঞ্চ করা হয়েছিলো। কিওয়ে সুপারলাইট বাইকটি মূলত তৈরী করা হয়েছে আরাম এবং আভিজাত্য কে মূল লক্ষ্য রেখে, ফলে বাইকটি তৈরীর সময় গতিকে অতটা প্রাধান্য দেয়া হয়নি। বাইকটি স্টাইল এবং আকর্ষন এর এক অসাধারন মিশ্রন। বাইকটি মূলত ডিজাইন করা হয়েছে তাদের জন্য যারা গতির চাইতে আরামকে প্রাধান্য দেন, যারা রাস্তায় এগ্রেসিভভাবে রাইড না করে বরং ৬০-৮০ গতিতে ধীরস্থিরভাবে রাইডকে উপভোগ করেন। 

কিওয়ে এর ডিজাইনার এবং ইঞ্জিনিয়ারেরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন বাইকটির উচ্চতা এবং এবং ওজন সর্বনিন্ম রাখতে যাতে করে বাইকটি বাংলাদেশের রাইডারদের পক্ষে শহরে এবং হাইওয়েতে রাইড করতে সুবিধা হয়।

keeway superlight max power

বাইকটিতে একটি ১৫০ সিসি এয়ার কুলড ইঞ্জিন রয়েছে যা ১২.১ ব্রেক হর্সপাওয়ার শক্তি এবং ১১ নিউটন মিটার টর্ক উতপন্ন করে। কাগজে কলমে এটা খুব বেশি মনে না হলেও যেহেতু বাইকটিকে মূলত কমফোর্ট এর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, সেই হিসেবে এই শক্তি ও টর্ক যথেষ্ট। বাইকটি একটি ৫-স্পীড গিয়ারবক্স এর মাধ্যমে এই শক্তি পরিচালনা করে।

keeway superlight photo

বাইকটির ফুয়েল ট্যাংক বিশালাকায়, এবং এর ধারনক্ষমতা প্রায় ১৬ লিটার। বাইকটির ইঞ্জিন কিছুটা ভিন্নরকম আওয়াজ করে যা অতটা শ্রুতিমধুর নয়। স্পীডোজ বাইকটির কেবলমাত্র ম্যাট রঙ এর ভার্শনটিই এনেছে, কোন এক অজানা কারনে তারা বাইকটির অন্য কোন রঙের ভার্শন আনেনি। বাইকটির হেডলাইটটি বিশাল, গোলাকার এবং হ্যালোজেন বাল্বসমৃদ্ধ। বাইকটিতে উন্নতমানের এলয় রিম থাকা সত্ত্বেও বাইকটিতে টিউবলেস টায়ার দেয়া হয়নি যা কিছুটা বেখাপ্পা। কিওয়ে সুপারলাইট বাইকটিতে হাফ চেইন-কভার রয়েছে। এর পেছনের সাসপেনশনটি হচ্ছে ডুয়েল স্প্রিং সাসপেনশন। সামনের সাসপেনশনটি সাধারন টেলিস্কোপিক ফর্ক। বাইকটিকে অত্যান্ত ক্লাসিক লুকসমৃদ্ধভাবে ডিজাইন করা হয়েছে , এবং একই সাথে এতে বিভিন্ন আধুনিক ফিচার সংযুক্ত করা হয়েছে। বাইকটির ইঞ্জিন এর সাথে দুইটি টেইলপাইপ সংযুক্ত রয়েছে এবং একই ধারাবাহিকতায় পেছনে ডুয়েল এক্সহস্ট সিস্টেম রয়েছে।

keeway superlight brakes

বাইকটির পা-দানিগুলো প্রশস্ত এবং রাইডারকে কমফোর্টেবল রাইডের অভিজ্ঞতা দিতে রাইডারের পা অনেকখানি সামনে এগিয়ে থাকে। যদিও পা-দানিতে যথেষ্ট পরিমানে জায়গা রয়েছে, তবুও মাঝেমধ্যে তাড়াহুড়ো করে ব্রেক চাপতে গেলে ফুট ব্রেক পেডাল বাইকের বাম্পার এর সাথে আটকে যায় যা কিছুটা অন্যরকম পজিশনে সেট করা হয়েছে। বাইকটির ওজন ১৩৪ কেজি হওয়ায় এর ১৩০ সাইজের পেছনের টায়ার অসাধারন ব্যালেন্স দেয়। যদিও শহরের ব্যস্ত রাস্তায় বাইকটি চালানো খুব একটা সহজ নয়, তবে যেই বিষয়টি আমার কাছে দৃষ্টিকটু মনে হয়েছে সেটা হচ্ছে বাইকটির হ্যান্ডেল অন্যান্য সকল ক্রুজার বাইকের মতো কিছুটা বাকানো নয়, বরং একদম সোজা।

keeway superlight build quality

 বাইকটির সুইচ এবং বাটনগুলো সম্পূর্ন এলোমেলো। যদিও এগুলোর কোয়ালিটি ভালো, তবে এগুলো খুবই অগোছালোভাবে সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। রাইডার এর সবগুলো সুইচের সাথে অভ্যস্ত হতে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। বাইকটিতে কোন পাসলাইট সুইচ এবং কন ইঞ্জিন কিল নেই। এর স্পিডোমিটারটি হচ্ছে দুটি এনালগ কাউন্টার যা স্পীড, আরপিএম এবং ওডো নির্দেশ করে। বাইকটির ফুয়েল ইন্ডীকেটর বাইকটির ফুয়েল ট্যাংকের উপরে সেট করা রয়েছে। রাতেরবেলায় স্পীডোমিটারটি খুব বেশি আলোকিত হয় না ফলে স্পীড, আরপিএম, ইত্যাদি ইনফরমশেন রাইডার খুব সহজেই দেখতে পারে না।

keeway superlight 150 price in india

 বাইকটির পেছনের সিটটি নরম, কিন্তু পেছনে কোন ব্যাকরেস্ট নেই, কোন গ্র্যাব রেইল, বা এমনকিছুই নেই যা পাইলিয়ন ধরে থাকতে পারে। বাইকটির রাইডারের সিটটি বেশ প্রশস্ত ও আরামদায়ক, যা লম্বা যাত্রায় আরামদায়ক রাইড নিশ্চিত করবে। বাইকটির সাসপেনশনগুলো বেশ ভালো, তবে সামনের ব্রেকটি কিছুটা দুর্বল, এবং এটি চাকার বামপাশে দেয়াটা কিছুটা বেখাপ্পা।

keeway superlight comfort

শুরুর দিকে বাইকটিরর ব্রেকগুলো বেশ দুর্বল ছিলো, প্রথম ৫০০ কিলোমিটার টেস্ট রাইডিং এ আমরা বাইকটির ব্রেক থেকে খুব বেশি পারফর্মেন্স পাইনি। বাইকটির উভয় টায়ারই অসাধারন পারফর্ম করে ও গ্রিপ প্রদান করে। যদিও আমরা বৃষ্টিভেজা রাস্তায় টায়ারের পারফর্মেন্স পরীক্ষা করতে পারিনি, তবে বেশকিছু কিওয়ে সুপারলাইট চালক জানিয়েছেন যে বাইকটির টায়ারের পারফর্মেন্স নিয়ে তারা সন্তুষ্ট।

keeway superlight top speed

 কিওয়ে সুপারলাইট পুরনো প্রযুক্তির পুশরড ইঞ্জিন ব্যবহার করে বিধায় এটি অন্যান্য বাইকের তুলনায় কিছুটা বেশি তেল খায়।  রাইডিং এর কথা চিন্তা করলে বাইকটি খুব সহজেই রাইড করা যায়, যদিও শহরের ছোটখাটো রাস্তায় এবং ট্রাফিক জ্যামে রাইড করাটা কিছুটা কঠিন। তবে, উম্মুক্ত রাস্তায় বাইকটি রাইড করা অত্যান্ত আরামদায়ক ও উপভোগ্য। সহযাত্রী নিয়ে বাইকটি রাইড করা খুবই সহজ, তবে অসমতল রাস্তায় বাইকটির পেছনের চাকা টায়ার গার্ডের সাথে ঘষা খায়। 

keeway superlight fuel gauge

হাইওয়েতে বাইকটি খুবই ভালো পারফর্ম করে।বাইকটির ইনিশিয়াল এক্সেলেরেশন ০ থেকে ৮০ কিমি/ঘন্টা পর্যন্ত খুবই ভালো। বাইকটি ঢাকা-সিলেট হাইওয়েতে রাইড করার সময় আমি কোনপ্রকার ব্যকপেইন অনুভব করিনি। বাইকটির হর্ন খুবই শক্তিশালি। বাইকটির ইঞ্জিন কিছুটা ভাইব্রেট করে, তবে সেটা ৭০০০ আরপিএম এর পর থেকে শুরু হয়।

keeway superlight mileage

কিওয়ে সুপারলাইট - পারফর্মেন্স

টপ স্পীড: ১১০ কিমি/ঘন্টা মাইলেজ: ৩৩ কিমি/লিটার (ঢাকা শহরে) ৩৬-৪০ কিমি/লিটার (হাইওয়েতে)

keeway superlight image

ইতিবাচক দিকসমূহ:

  • ভিন্নরকম স্টাইলিং
  • ভালোমানের ফিনিশিং
  • আরামদায়ক রাইডিং পজিশন
  • লম্বা ভ্রমনের জন্য বিশাল ফুয়েল ট্যাংক
  • ভালোমানের সাসপেনশন এবং টায়ার
  • পেছনের ব্রেকটি অসাধারন
  • জোরালো হর্ন

keeway superlight wallpaper

নেতিবাচক দিকসমূহ:

  • সুইচ এবং বাটনগুলো ভালোমানের হওয়া সত্ত্বেও সম্পূর্ন এলোমেলো।
  • মাঝেমধ্যেই পেছনের ব্রেক এপ্লাই করার সময় সামনের ফুট বাম্পার ঝামেলা তৈরী করে।
  • হ্যান্ডেলবার ট্রেডিশনাল ক্রুজার বাইকগুলোর মতো নয়, একদম সোজা , যা বাইকের চেহারার সাথে খাপ খায়।
  • কেবলমাত্র একটি রঙের অপশন রয়েছে, ক্রেতা চাইলেও তার পছন্দের রঙের বাইক কিনতে পারবেন না।
  • মাইলেজ খুবই কম।
  • দাম অনুযায়ী পেছনের চাকায় ডিস্ক ব্রেক থাকা উচিত ছিলো।
  • টিউবলেস টায়ার না থাকাটা বাইকটির অন্যতম নেতিবাচক দিক।
  • উচুনিচু রাস্তার জন্য পেছনের সাসপেনশনটা উপযুক্ত নয়।

keeway superlight test ride review

উপসংহার

আমার মতে, কিওয়ে সুপারলাইট একটি বিলাসবহুল বাইক যা সেসকল বাইকারের চাহিদা পূরন করবে যারা গতি বা কর্নারিং নয়, বরং ছুটির দিনে বন্ধুবান্ধবের সাথে একটি মানসম্পন সময় উপভোগ করতে চান। যদিও বাইকটিতে শক্তির কিছুটা ঘাটতি রয়েছে, তবে আমার মনে হয় যে সেটাই এই বাইকটিকে বিশেষ কিছু করে তুলেছে।

keeway superlight 150 price in bangladesh

কিওয়ে সুপারলাইট - স্পেসিফিকেশন

ইঞ্জিন ডিসপ্লেসমেন্ট : ১৫০.১ সিসি ইঞ্জিন টাইপ : ১৬২ এফ.এম.জি ইঞ্জিন মোড : ১-সিলিন্ডার, ফোর স্ট্রোক , টু ভালভ বোর x স্ট্রোক : ৬২.০ x ৪৯.৫ সর্বোচ্চ শক্তি : ১২.১ বিএইচপি @৮৫০০ আরপিএম সর্বোচ্চ টর্ক : ১১ এনএম @৬০০০ আরপিএম কমপ্রেশন রেশিও : ৯.২:১ ফুয়েল সিস্টেম : কার্বুরেটর ফুয়েল কন্ট্রোল : ওএইচভি ইগনিশন : সিডিআই স্টার্টার : ইলেকট্রিক & কিক স্টার্ট লুব্রিকেশন সিস্টেম : প্রেশার স্পল্যাশ লুব্রিকেশন কুলিং সিস্টেম : এয়ার-কুলড গিয়ারবক্স : ৫-স্পীড ফাইনাল ড্রাইভ : চেইন ক্লাচ টাইপ :  ওয়েট – মাল্টিপ্লেট ড্রাই ওয়েইট : ১৩৪ কিলোগ্রাম সীট হাইট : ৭৩০ মিলিমিটার ওভারঅল লেন্থ : ২২৬০ মিলিমিটার ওভারঅল ওয়াইডথ : ৮০০ মিলিমিটার ওভারঅল হাইট : ১১১০ মিলিমিটার গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স : ১২০ মিলিমিটার হুইলবেজ : ১৪৪০ মিলিমিটার ফ্রেম টাইপ : ব্যাজিনেট ফ্রন্ট সাসপেনশন : ১১০ মিলিমিটার ট্রাভেলবিশিষ্ট টেলিস্কোপিক ফর্ক রিয়ার সাসপেনশন : টেলিস্কোপিক কয়েল স্প্রিং ফ্রন্ট টায়ার : ১১০/৯০-১৬ রিয়ার টায়ার : ১৩০/৯০-১৫ ফ্রন্ট ব্রেক : ২৭৫ মিলিমিটার ডিস্ক ব্রেক রিয়ার ব্রেক : ১৬০ মিলিমিটার ড্রাম ব্রেক ফুয়েল ক্যাপাসিটি : ১৫ লিটার ব্যাটারী : ১২ভি ৬ এএইচ