কার্বুরেটর বনাম ফুয়েল ইঞ্জেকশন ইঞ্জিন–সুবিধা এবং অসুবিধা
This page was last updated on 14-Jul-2024 03:02am , By Saleh Bangla
আজকাল মোটরসাইকেল এর ইঞ্জিনে পাওয়ার ও মাইলেজ এর বিষয়ে ইঞ্জিনগুলা খুব উন্নত হয়েছে আগেকার তুলনায়। আজকাল কম ক্ষমতা সর্ম্পূন মোটরসাইকেল এর ইঞ্জিনে ও উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ফিচারস ও টেকনোলজি পাওয়া যাচ্ছে। সেই অনুসারে মর্ডান টেকনোলজি এর সাথে ফুয়েল ফিডিং সিস্টেম ও উন্নত করা হচ্ছে। এজন্য কার্বুরেটর বনাম ফুয়েল ইঞ্জেকশন ইঞ্জিন বাইকগুলো প্যারালাল রোড এ চলছে। এখন প্রশ্ন আসছে যে কোনটা ভাল এবং কেন? সেই ব্যপারটাকে লক্ষ্য করেই এখানে আমরা কার্বুরেটর বনাম ফুয়েল ইঞ্জেকশন ইঞ্জিন – এ্যডভানটেজ এন্ড ডিসএ্যডভানটেজ এর বিষয়ে ছোট আলোচনা আপনাদের কাছে তুলে ধরলাম।
কার্বুরেটর বনাম ফুয়েল ইঞ্জেকশন ইঞ্জিন –সুবিধা এবং অসুবিধা
কার্বুরেটর ফিডিং ইঞ্জিন-কার্বুরেটর ইঞ্জিনে ফুয়েল ফিডিং ইঞ্জিনে কাজ করে কার্বুরেটর এর মাধ্যমে। কার্বুরেটর এমন একটি যান্ত্রিক অংশ যেটা ফুয়েলকে সাকড এয়ার এর মাধ্যমে কমবাসশন চেম্বারে পৌছায়। প্রক্রিয়াটা কমবাসটেশন চেম্বার সাকশন এর মাধ্যমে কত ও কি পরিমানে থ্রোটল বডিতে এয়ার সাকড করে তার উপর নির্ভর করে কাজটা সম্পন্ন হয়। এখানে কার্বুরেটর নিজে নিজে ফুয়েল ডেলিভার করে না বরং এয়ার সাক বিভিন্ন চ্যানেল থেকে ফুয়েল টেনে আনে এবং ইনটেক মেইনফোল্ড এর আগে সেটাকে মিশ্রিত করে। আর হ্যা কার্বুরেটর এয়ার-ফুয়েল মিক্সার ও রেটিওকে কন্ট্রোল করে যখন চ্যানেল টিউন করা হয়। অবশ্যই কার্বুরেটর ফিডিং সিস্টেম পুরাতন সময়ের মেকানিজম। কিন্তু তবুও মর্ডান টেকনোলজি এটাকে গুরুত্ব দেয় এবং এর অনেক সুবিধা ও অসুবিধা আছে। চলেন দেখে আসি সেগুলো কি কিএ্যডভান্টেজস অফ কার্বুরেটর ফিডিং ইঞ্জিন-
- টু স্ট্রোক এবং ফোর স্ট্রোক মোটরসাইকেল ইঞ্জিন এর জন্য এটা খুব সহজ ও কম দামের ফুয়েল ফিডিং সিস্টেম।
- খুব সিম্পেল মেকানিক্যাল এর জন্য এর মেইন্টেন্স ও রিপিয়ার করা খুব সহজ হয়।
- এটার রেটিও পরিবেশ এর অবস্থা ও ব্যবহারকারীর উপর নির্ভর করে সহজে মেইন্টেইন করা যায়।
- মেকানিক্যাল ডিভাইস হওয়ার জন্য যখনি থ্রোটল চেপে ধরা হয় সাথে সাথে যেকোন পজিশনে এটি রেসপন্স করে।
- কম দামের ও কম ক্ষমতার মোটরসাইকেল ইঞ্জিন এর জন্য এটা খুব ভাল।
- কার্বুরেটর ফিডিং সিস্টেম এ এ্যাকসেলোরেশন খুব দ্রুত রেসপন্স করে। এজন্য এটা অফ রোড বাইক ও ডার্ট বাইক এর জন্য এটা খুব ভাল।
- কার্বুরেটর ইঞ্জিন এ জ্বালানি দুষনের বিষয়টি খুব খেয়াল রাখে।
ডিসএ্যাডভান্টেজস অফ কার্বুরেটর ফিডিং ইঞ্জিন-
- কার্বুরেটর ইঞ্জিন এ ফুয়েল ফিডিং সিস্টেম নির্দিষ্ট পরিমানে থাকে না, এটা কম্বাসশন চেম্বার এ কত পরিমান স্পিড ফ্লো হয় সেই অনুযায়ী ফুয়েল কাজ করে।
- হিসেব অনু্যায়ে কার্বুরেটর ইঞ্জিন এ মাইলেজ খুব কম।
- কার্বুরেটর ফুয়েল ফিডিং সিস্টেম এ ঠান্ডা অবস্থায় ইঞ্জিন সহজে চালু করা যায় না।
- পাতলা এবং গাড়ো মিশ্রন এর জন্য কার্বুরেটর ইঞ্জিন এ প্রায় সমস্যা দেখা যায়।
- অকার্যকর কম্বাসটেশন এর জন্য ধোয়া বেশি বের হয় কার্বুরেটর ইঞ্জিন এ।
- এছাড়া ইঞ্জিন এ মাঝে মাঝে ভাইব্রেশন হয় এবং স্পার্ক প্লাগ এর সমস্যা প্রায় হয়।ফুয়েল ইঞ্জেকটেড ইঞ্জিন- ফুয়েল ইঞ্জেকটেড ইঞ্জিন এ ফুয়েল ফিডিং সিস্টেম ইলেকট্রিক ভাবে কাজ করে আর এটার নাম হল ইলেকট্রনিক ফুয়েল ইঞ্জেকশন সিস্টেম। এখানে কম্বাসটেশন চেম্বারে ফুয়েল ফিডিং সিস্টেম কাজ করে ইলেকট্রনিক্যালি কন্ট্রোল ইঞ্জেকটর এর মাধ্যমে। এখানেও ইন্টেক মেইনফোল্ড কাজ করে এয়ার সাকড এর মাধ্যমে এবং ফুয়েল স্প্রে বা ইঞ্জেকটেড করা হয় নির্দিষ্ট ডিভাইসে। এটা মাঝে মাঝে মেইনফোল্ড এ স্প্রে বা মাঝে মাঝে সরাসরি কম্বাসটেশন চেম্বারে দেওয়া হয়। তাই ফুয়েল ও ইঞ্জেকশন টাইমিং কন্ট্রোল করে ইলেকট্রনিক ডিভাইস যেটার নাম হল ইলেকট্রনিক কন্ট্রোল ইউনিট অথবা ইসিইউ। এখানে ইঞ্জিন টেম্পারচার, অক্সিজেন লেভেল, এয়ার ইনটেক ও থ্রোটল বাটারফ্লাই পজিশন এ মাপার জন্য সেন্সর এর সাথে যুক্ত। তাই ফুয়েল ইঞ্জেকটেশন সিস্টেম হল হাই-টেক ও সহজ ফুয়েল ফিডিং সিস্টেম। এই মর্ডান টেকনোলজি ডিভাইস এর সাথে যুক্ত হয়ে মর্ডান মোটরসাইকেল এর ইঞ্জিনকে আরো উন্নত ও দক্ষতা বাড়িয়ে তুলছে। এছাড়া ও এর অনেক সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। চলেন দেখে আসি সেগুলো কি কি।
- এ্যাডভান্টেজস অফ ফুয়েল ইঞ্জেকটেড ইঞ্জিন-
- নিদিষ্ট পরিমানে ফুয়েল ইঞ্জেকশন ও মিশ্রন এর জন্য এটার মাইলেজ ও পাওয়ার খুব ভাল দেয়।
- ফুয়েল ইঞ্জেকটেড ইঞ্জিন এ কম্বাশন খুব সহজে কাজ করে। যার কারনে মাইলেজ ভাল দেয় ও ধোয়া কম নির্গত হয়।
- এটার কার্যক্ষমতার জন্য মর্ডান মোটরসাইকেল এগুলা বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে।
- পরিবেশ ও রাইডিং এর অবস্থা বিবেচনা করে এই টাইপ এর ইঞ্জিন অটোমেটাকিলি এয়ার-ফুয়েল মিশ্রন ব্যালেন্স রাখে।
- ইঞ্জিন এ ভাইব্রেশন কম হয় এবং স্পার্ক প্লাগ সমস্যা কম হয়।
- ফুয়েল ইঞ্জেকটেড ইঞ্জিন এ ইঞ্জিন ঠান্ডা হওয়াটা বিষয় না তাই ম্যানুয়ালি চোকিং করা লাগে না।
ডিসএ্যাডভান্টেজস অফ ফুয়েল ইঞ্জেকটেড ইঞ্জিন-
- ফুয়েল ইঞ্জেকটেশন সিস্টেম একটু জটিল কারন এটি ইলেকট্রিক্যালিভাবে কিছু ইলেকট্রনিক সেন্সর এর সাথে যুক্ত থাকে।
- এর মেইন্টেন্স অথবা রিপেয়ার খুবই কম এবং রেগুলার ওর্য়াকশপ এ এটা করা যায় না।
- এর পুরা সিস্টেমটা খুব ব্যয়বহুল। তাই মাঝে মাঝে এর মেইন্টেন্স বা রিপেয়ার এর জন্য পুরা সেট আপ রিপ্লেসমেন্ট করতে হয়।
- ফুয়েল ইঞ্জেকটেড ইঞ্জিন এ ভাল মানের ফুয়েল এর দরকার হয়।
- কম দাম এবং কম ক্ষমতাসম্পূর্ন মোটরসাইকেল এর জন্য এটা সঠিক না।
- কার্বুরেটর বনাম ফুয়েল ইঞ্জেকশন ইঞ্জিন- কার্বুরেটর বনাম ফুয়েল ইঞ্জেকটেশন ইঞ্জিন সিস্টেম এর এ্যডভান্টেজ এবং ডিসএ্যডভান্টেজস জানার পর আপনারা দেখতে পাচ্ছেন যে দুইটার ই বিভিন্ন রকম সুবিধা ও দূর্বলতা রয়েছে। কিন্তু সব দিক দিয়ে বিবেচনা করে বলা যাচ্ছে যে বেশির ভাগ মোটরসাইকেল এর জন্য ফুয়েল ইঞ্জেকটেশন হল সঠিক চয়েস। আবার এটা খুব দামি মডেল ও সহজে রিপেয়ার করা যায় না। কিন্তু সময়ের স্বল্পতা, দাম এবং মেইন্টেন্স এর জন্য এটা খুব চমৎকার। আজকাল পুরো বিশ্বে যেগুলো কম ধোয়া নির্গত ও মাইলেজ এ ভাল, ক্ষমতা ভাল এসব মর্ডান মোটরসাইকেল এর জন্য সব থেকে গুরুত্বপূর্ন বিষয়। তাই আবারো ফুয়েল ইঞ্জেকটেশন সিস্টেম ই হল সঠিক সলুইশেন সেই সব বাইকের জন্য। কার্বুরেটর ইঞ্জিন বাইকগুলা বেশির ভাগ এন্ট্রি লেভেল ও কম দামি মোটরসাইকেল এর জন্য। সহজ ফিচারস, সহজ এবং কম দামে মেইন্টেন্স এর জন্য এই বাইকগুলা খুব ভাল। এর ফুয়েল কন্টিমেশন আর একটা খুব চমৎকার ফিচারস। এজন্য কার্বুরেটর ঐসব মোটরসাইকেল এর জন্য ভাল অপশন। শেষ-মেষ এটা বলব যে যারা অফ রোড ও ডার্ট বাইক ব্যবহার করেন তাদের জন্য কার্বুরেটর ইঞ্জিন ই ভাল। অনেক সময় হঠাৎ করে থ্রোটল চেপে ধরার ফলে ইঞ্জিন এ যেই খারাপ প্রভাব পড়ে তা ফুয়েল ইঞ্জেকটেড ইঞ্জিন এ পড়ে না। অতএব পাঠকেরা এই ছিল কার্বুরেটর বনাম ফুয়েল ইঞ্জেকশন ইঞ্জিন – এ্যডভান্টেজ এবং ডিসএ্যডভান্টেজস বিষয়ে আলোচনা। আশা করি আপনারা এই বিষয়ে পরিষ্কার তথ্য পেয়েছেন। তাই আপনার কমেন্ট ও যা যা খুজছেন বলতে ভুলবেন না এবং আমাদের সাথে থাকবেন। ধন্যবাদ আপনাদের সবাইকে আমাদের সাথে থাকার জন্য।