অবৈধ পথে আসছে মোটরসাইকেল
This page was last updated on 04-Jul-2024 06:04pm , By Shuvo Bangla
অবৈধ পথে আসছে মোটরসাইকেল
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার কাটলা সীমান্ত দিয়ে চোরাই মোটরসাইকেল ও মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ বাংলাদেশে আসছে। স্থানীয় বাজারে মোটরসাইকেল ও এর যন্ত্রাংশ যে দামে বিক্রি হয়, চোরাই পথে ভারত থেকে আনা একই মোটরসাইকেল ও যন্ত্রাংশ প্রায় অর্ধেক দামে পাওয়া যায়। এ কারণে দুই বছর ধরে এ সীমান্ত দিয়ে মোটরসাইকেল চোরাচালান বেড়ে গেছে।
কাটলা সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি মোটরসাইকেল পাচার হয়ে আসে। সেই হিসাবে মাসে ৬০ থেকে ৯০টি মোটরসাইকেল ও বিপুল পরিমাণ যন্ত্রাংশ চোরাই পথে আসছে। সম্প্রতি ক্রেতা সেজে চোরাকারবারিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। গত মে মাসের বিভিন্ন সময় কাটলা সীমান্তে অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, চোরাই পথে বাজাজ কোম্পানির পালসার ও ডিসকভার এবং হিরো হোন্ডা—এই দুই ব্র্যান্ডের তিন মডেলের মোটরসাইকেল দেশে আসছে। বিরামপুরে মোটরসাইকেলের বৈধ বিক্রেতারা জানান, বাজাজ কোম্পানির ১৫০ সিসির পালসার দুই লাখ পাঁচ হাজার টাকা, ১৩৫ সিসি এক লাখ ৭০ হাজার, ডিসকভার ১২৫ সিসি এক লাখ ৫৮ হাজার ও ১০০ সিসি এক লাখ ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
হিরো হোন্ডা ১০০ সিসি এক লাখ ২৫ থেকে ২৯ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চোরাকারবারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চোরাই পথে আনা নতুন ১৫০ সিসির পালসার এক লাখ ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা, পুরোনো ৯০ হাজার; ১২৫ সিসির ডিসকোভার ৯০ হাজার থেকে এক লাখ, ১০০ সিসির ডিসকোভার ৭০ থেকে ৮০ হাজার ও পুরোনো ৬০ হাজার এবং ১০০ সিসির হিরো হোন্ডা ৬০ হাজার টাকায় পাওয়া যায়। দিনাজপুরের বাজাজ কোম্পানির নির্ধারিত শোরুম থেকে জানা গেছে, একটি ডিসকভার মোটরসাইকেলের রিং পিস্টন পাঁচ হাজার ২৫০ টাকা, সামনের সকার ১০ হাজার, পেছনের সকার ছয় হাজার, মিটার পাঁচ হাজার, সাইলেন্সার আট হাজার, কার্বুরেটর সাড়ে পাঁচ হাজার, হেডলাইট তিন হাজার ২০০, সামনের ও পেছনের চাকা ১০ হাজার টাকা করে, ট্যাংকি সাড়ে ১৩ হাজার, সাইড কভার দুই হাজার ২০০, হর্ন ৮৬০, হ্যান্ডেল এক হাজার ১৫০ এবং বসার আসন চার থেকে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
চোরাই পথে আনা রিং পিস্টনের দাম তিন হাজার টাকা, সামনের সকার সাড়ে তিন হাজার, পেছনের সকার দুই হাজার ৭০০, মিটার এক হাজার ৮০০, সাইলেন্সার সাত হাজার, কার্বুরেটরের দাম দুই হাজার ৮০০, হেডলাইট দুই হাজার, সামনের চাকা সাড়ে চার হাজার, পেছনের চাকা পাঁচ হাজার, ট্যাংকি সাড়ে সাত হাজার, সাইড কভার এক হাজার ৩০০, হর্ন ৩০০, হ্যান্ডেল ৮০০ এবং বসার আসন দুই হাজার ৭০০ টাকায় পাওয়া যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোটরসাইকেল চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত কাটলা ইউনিয়ন পষিদের (ইউপি) এক সদস্য প্রথম আলোকে জানান, প্রতিটি গাড়ি সীমান্ত থেকে বিরামপুর পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য চোরাকারবারিরা ১০ হাজার করে টাকা নেয়। জনপ্রতিনিধি, পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা জানান, কাটলা সীমান্তে ভারতীয় তারকাঁটার অভ্যন্তরে শূন্যরেখায় ভারতের উঁচা গোবিন্দপুর, জামালপুর (নামা গোবিন্দপুর) ও শ্রীরামপুর (ঈশ্বরপাড়া ভীমপুর)—এই তিনটি গ্রাম রয়েছে।
Also Read: সাবধান !! ৩ জুন থেকে রেজিঃ বিহীন মোটরসাইকেল আটক করবে পুলিশ
চোরাকারবারিরা মোটরসাইকেলগুলো প্রথমে ওই তিন গ্রামে নিয়ে আসে। এরপর সুযোগ বুঝে বাংলাদেশ সীমান্তের কাটলার খিয়ারমাহমুদপুর, দাউদপুর ও ঘাসুরিয়া গ্রামে এবং পরে বিরামপুর নিয়ে আসে। পুলিশ ও বিজিবি বলছে, মোটরসাইকেলগুলো কাটলার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোয় নিয়ে আসার পর চোরাকারবারিরা বিরামপুরের কিছু অসাধু মোটরসাইকেল বিক্রেতার কাছ থেকে ক্রয়-বিক্রয়ের চালান সংগ্রহ করে। প্রতিটি চালানের জন্য বিক্রেতারা পাঁচ হাজার করে টাকা নেন। বিরামপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বজলুর রশিদ ও নির্ভরযোগ্য কয়েকটি সূত্র জানায়, কাটলা ইউনিয়নের খিয়ারমাহমুদপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য খলিল উদ্দিন; দাউদপুর গ্রামের শফিকুল ইসলাম, রাজু হোসেন, হান্নান, হিরো; কাটলার হিরা ও মোস্তাকিম সীমান্ত থেকে গাড়িগুলো বিরামপুর পর্যন্ত নিয়ে আসেন।
খলিল উদ্দিন তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, তিনি এই কারবারের সঙ্গে জড়িত নন। কাটলা সীমান্ত ভারতীয় মোটরসাইকেল চোরাচালানের নিরাপদ রুটে পরিণত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে কাটলা ইউপির চেয়ারম্যান সামছুল আলম জানান, বিষয়টি তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বহুবার জানিয়েছেন। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় দিন দিন চোরাচালন বেড়েই চলেছে।
বিজিবি ৪০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল খন্দকার মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, নির্ভরযোগ্য তথ্যের মাধ্যমে যখন চোরাই মোটরসাইকেল আটক করা হচ্ছে, তখন চোরাকারবারিরা মোটরসাইকেলের অসাধু বিক্রেতাদের দেওয়া কাগজ দেখিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে। বিআরটিএ ও পুলিশ স্থানীয়ভাবে নিবন্ধনহীন মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ করলে ভারতীয় মোটরসাইকেল চোরাচালান বন্ধ হবে।