Shares 2
হিরো হাঙ্ক ১৫০ মালিকানা রিভিউ - আহাদ বিন জাহিদ
Last updated on 11-Jul-2024 , By Saleh Bangla
প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি যারা টেকনিক্যাল ভঙ্গিমার রিভিউ পরে অভ্যস্ত তাঁদের জন্য এই লিখা না। ইঞ্জিনের কাঠামো – কাজের মাত্রা বা খুঁটিনাটি নিয়ে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের রিভিউ দেয়া আমার ক্ষমতার বাইরে। আমি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার না বা হিরো কোম্পানির মোটরসাইকেল প্ল্যান্টের থেকেও বলছি না। আমি আজ আমার হিরো হাঙ্ক ১৫০ এর রিভিউ লিখতে যাচ্ছি। আমি হিরো হাঙ্ক ১৫০ কিনি ২০১৭ সালের অগাস্ট মাসের ২০ তারিখ। প্রথমে ইচ্ছা ছিল ১০০ সিসির কিছু নেবার। কারণ আমি মূলত কমিউটার রাইডার। শহরের মাঝেই চলাফেরা আর দৈনন্দিন অফিস যাতায়াত করার জন্যই বাইক কেনার চিন্তা করছিলাম। পরে দাম কমের দিকে থাকায় নতুন বাজারে আসা ব্র্যান্ড “হিরো অ্যাচিভার” আমার দৃষ্টি কাড়ে। হাঙ্কের ইঞ্জিন – মোটামুটি বিগ বাইক ফীল – ডিউরেবিলিটি – স্পেয়ার পার্টস সবদিক মিলিয়ে আমার কাছে মডেলটা বেশ ভালো ভালোই লাগে। তাছাড়া ১৫০ সিসির সেগমেন্টে সবথেকে কমদামী মডেল। বাজেট কিছুটা বাড়িয়ে চিন্তা করি অ্যাচিভার নেবার। সমস্যা হয় মডেলটা সরাসরি দেখার পর। ওভারঅল ফিনিশিং আর ফিচার দেখে আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। সবথেকে বেশি দৃষ্টিকটু লাগে আমার কাছে পিছনের চাকার মাপ। হ্যা ... এটা ঠিক যে মোটরসাইকেলে এফজেডএস বা জিক্সার এর মতন মোটা চাকা থাকতেই হবে নাইলে হবে না, বিষয়টা এমন না কিন্তু ১৫০ সিসির একটা মাস্কুলার মোটরসাইকেলে যদি পিছনের চাকার মাপ হয় 80/100-18 54P তাহলে সেটা শুধু দৃষ্টিকটুই না, কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণও মনে হয়। সবকিছুর একটা পরিমিত মাত্রা থাকে। আমার কাছে একদমই খাপছাড়া লেগেছে মডেলটা শুধু এই চাকার কারণে।
Also Read: বাংলাদেশে হিরো এক্সট্রীম স্পোর্টস এর রিলিজ হচ্ছে খুব দ্রুতই
মজার বিষয় হল, শোরুমে ঠিক পাশেই রাখা ছিল হিরো হাঙ্ক ১৫০ এর ডাবল ডিস্কের একটা মডেল। দুইটাকে পাশাপাশি দেখে যে কারো পক্ষেই অ্যাচিভার পছন্দ করা কঠিন। তবে আমার ঐ মুহূর্তে হাঙ্কের মত বাজেট ছিল না। হাঙ্ক তখন ডাবল ডিস্ক ভার্সন বিক্রি হচ্ছিল ১,৬৯,৯৯০/= দামে। অ্যাচিভার এর সাথে প্রায় ৩০/৩৫ হাজারের ব্যবধান দামে, কিন্তু তুলনায় অনেক এগিয়ে হাঙ্ক আমি কিছুটা কনফিউজড হয়ে যাই। আমাকে এই দোটানা থেকে উদ্ধার করেন আমার সাথে থাকা কলিগরা। তাঁদের দুইজনের কথামতো হাঙ্ক নেবার জন্যই মনস্থির করি। এখানে একটা বিষয় সত্যি, যে মনে মনে আমি নিজেও হাঙ্কের প্রতি সাংঘাতিক দুর্বল। আর এই দুর্বলতা হাঙ্ক দেশে প্রথম আসার সময় থেকেই। তরুন জেনারেশনের কাছে একসময়ের ক্রেজ পালসার, পরের জামানায় এফজেডএস বা জিক্সার হয়ে “সিবিআর”/”ইয়ামাহা আর ১৫” হলেও আমার কাছে হিরো হাঙ্ক পছন্দের তালিকায় শীর্ষেই ছিল। আর দাম ২,০৪,০০০/= টাকা থেকে এক ধাক্কায় ১,৬৯,৯৯০/= টাকায় নেমে আসায় সেই ইচ্ছা এইবার আরও বেশি। যদিও এখন দাম আরও ১০,০০০/= কমে নিতে পারবেন আপনারা যারা কিনবেন। বর্তমানে হাঙ্ক ডাবল ডিস্ক ১,৫৯.৯৯০ দামে বিক্রি হয় আমি যতটুকু জানি। তবে ডিলারদের থেকে নিলে ৪/৫ হাজার কমেই পাওয়া যায়। যেমন আমি কেনার সময় বাংলামটরের এক ডিলারের থেকে নিয়েছিলাম। কেনার আগের দিন শুভ্র সেন দাদাকে মেসেঞ্জারে ফোন দিয়ে তার মোবাইল নাম্বার নেই, তারপর ফোন দিয়ে তার থেকে মতামত চাই। দাদার আন্তরিক পরামর্শে হাঙ্ক নেয়ার প্রতি ভরসা পাই। অসংখ্য ধন্যবাদ এই মানুষটাকে। বাইক কেনার পর একদিন ইঞ্জিন ওয়েলের মত তুচ্ছ বিষয়ে জিগ্যেস করলেও উনি সুন্দর করে উত্তর দেন। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা থাকল। আমার কেনার সময় হিরো সেন্টারে হাঙ্কের দাম ১,৬৯,৯৯০/= ছিল। আমি ডিলারের থেকে নেই ১,৬৪,০০০/= দিয়ে। তখন সবথেকে বেশি চাহিদা ছিল “আর্মি গ্রিন” কালারের। ব্রাউন বা ব্ল্যাক তখন ছিল না। আমাকে এই আর্মি গ্রিন কালার নেবার জন্য প্রায় ২/৩ দিন ঘুরতে হয়। তবে আমি খুশিমনেই একটু দেখেশুনে নিতে চাচ্ছিলাম। তেজগাঁও শোরুম থেকে ফেরত যাবার ৫/৭ দিনের মাঝেই বাজেট বাড়িয়ে আর ডিলারকে কনফার্ম করে আমি হাঙ্ক নেই ২০১৭, অগাস্টের ২০ তারিখ। একটা কথা বলার লোভ সামলাতে পারছি না, মনেপ্রানে যে হার্ডকোর বাইকার... তার সামনে যখন তার নতুন কেনা বাইক রেডি করা হতে থাকে, সেই সময়টুকুর মূল্য কেউ কোনদিন লিখে বোঝাতে পারবে না। কোন চিত্রকরের সাধ্য নেই সেই সময়কে চিত্রায়ন করে। এটা একটা অসাধারণ অনুভুতি। আর যদি সেই বাইকের দামের প্রতিটা টাকা নিজের রক্ত পানি করা হালাল উপার্জন হয়ে থাকে তাহলে সেই বাইকারের ভিতর কি অনুভুতি থাকে সেটা আমি এখন উপলব্ধি করতে পারি। কেন হিরো হাঙ্ক ১৫০? প্রথমেই বলবো, এই দামে চলতি বাজারে হিরো হাঙ্ক ১৫০ সেরা। এর কাছাকাছি মানের আর দামের মাঝে বাজারে থাকা মডেলগুলোর সাথে তুলনায় আমি হাঙ্ককে এগিয়ে রাখব। কিছু মডেল ধরে বরং তুলনাটা করি।
- পালসার ১৫০, ২০১৭ ভার্সনঃ
প্রথমেই বলবো, পালসারের তুলনায় হাঙ্কে আছে ডাবল ডিস্ক। চালিয়ে আরাম বেশী হাঙ্কে, হাইওয়েতে হাঙ্ক বেশী কার্যকর। ২০১৭ মডেলের পালসারের একটা বদনাম অনেকে করে যে, ইঞ্জিনের শব্দ নষ্ট হয়ে যায় যদিও আমি নিজে ব্যবহার করিনি পালসার... তবে হাঙ্ক নিয়ে এমন কমপ্লেইন শুনিনি কারো থেকে। মাইলেজে ২০১৭ হাঙ্ক এগিয়ে। যাঁদের উচ্চতা ৫ ফিট ৮ এর উপর এমন যে কেউ হাঙ্কে বেশী সুবিধা বোধ করার কথা পালসারের চেয়ে। আমার উচ্চতা ৫ ফিট ১০, তাই স্বভাবতই হাঙ্ক আমার কাছে স্বাচ্ছন্দ্যজনক।
- অ্যাপাচি ১৫০, ২০১৭ ভার্সনঃ
ব্রেকিং নিয়ে অ্যাপাচির বদনাম কমবেশি অনেকেই করে, যেটা হাঙ্ক নিয়ে প্রায় নেই। মাইলেজে দুই বাইক সমান প্রায়, কন্ট্রোলিং এর ক্ষেত্রে আমি অবশ্যই হাঙ্ককেই এগিয়ে রাখবো। রাইডিং পজিশন হিসাব করলেও হাঙ্ক ভালো। তবে জ্যামের মাঝে দুই গাড়ির চিপা দিয়ে নাক ঢুকিয়ে আচমকা টান দেওয়ার জন্য অ্যাপাচি বেটার।
- অ্যাভেঞ্জার ১৫০, ২০১৭ ভার্সনঃ
পুরোই আলাদা ঘরানার মডেল, ক্রুজার বেসড, যদিও ইঞ্জিন পালসারের।হিরো হাঙ্ক ১৫০ এবং হিরো হোন্ডা হাঙ্ক ১৫০ এর মাঝে পার্থক্য কি আদৌ আছে? আমার মতে হ্যা। আছে। আগের হাঙ্কের তুলনায় বর্তমানের মাইলেজ বেশী। তবে টপ স্পীড ৫/১০ কিলো কম উঠে। শাড়ি গার্ডের উপরে আগে একটা হেলমেট লকার থাকতো, যেটা নতুনগুলোয় নেই। এখনকারগুলোর ইঞ্জিন অনেক রিফর্ম করা, তাই স্মুথনেস বেশী, তবে আগেরগুলোর থ্রটোল রেসপন্স (রেডি পিকআপ) বেশী ছিল। আগেরগুলোর থেকে এখনকারগুলোয় উন্নত অ্যায়ারিং আছে। তবে চাকার রিম আমার কাছে পুরনোগুলোর বেশী শক্তিশালী মনে হয়েছে যদিও ব্রেকিং এখনকারগুলোয় বেশী স্মুথ। নাইট্রো পাওয়ার্ড শক অ্যাবজারভার নতুনগুলোয় উল্টো করে লাগানো, এটা ঝাঁকিরোধে কার্যকরীতা বাড়িয়েছে। সবদিক মিলিয়ে আমি নতুন ভার্সনের পক্ষে। তবে আসল তুলনা করা যাবে নতুনগুলো ৪০/৫০ হাজার কিলোতে যখন আসবে তখন।কি সুবিধা/অসুবিধা “হিরো” কোম্পানির? ৫ বছর বা ৭০০০০ কিলো ইঞ্জিন ওয়ারেন্টি, স্পেয়ার পার্টসের সহজলভ্যতা, দেশব্যাপী হিরোর সার্ভিস সেন্টার এইগুলো বেশ পজিটিভ। আমার কাছে মনে হয়েছে স্পেয়ার পার্টসের দাম তুলনামুলক বেশী। তবে হিরোর সার্ভিস সেন্টারের ব্যবহার বেশ সন্তোষজনক। আর ঢাকা বা বাইরের থানা সদরেও সার্ভিস সেন্টার আছে, এই সুবিধা এখনও চায়নার থেকে আনা বাইকগুলোর পরিবেশকরা দিতে পারেনি। হিরো হাঙ্ক ১৫০ - লুকস ও ডিজাইন হাঙ্ক যথেষ্ট পুরুষালী এবং মাস্কুলার লুকের। ৩৬০ ডিগ্রি ভিউতে কোন দিক থেকেই কমতি চোখে পড়ে না। বসার জায়গায় পিলিওন আর রাইডার সিট দুইটার মাঝে ঢেউ খেলানো পার্থক্য আছে। বাইকের ডিজাইনার বাইকে একটা ষাঁড়ের গঠন দিতে চেয়েছিল এবং তাতে সে সফল। তবে হেড লাইটের ডিজাইনে আরও উন্নত কিছু করার অবকাশ ছিল। বাইকে অ্যারো ডাইন্যামিক শেপ ভালমতো মানা হয়েছে। এর মিটারের গঠন অ্যানালগ আর ডিজিটাল মিলিয়ে। ডিসপ্লেতে ঘড়ি আছে। স্পিডোমিটার ডিজিটাল তবে আরপিএম এনালগ।ফুয়েল ট্যাংকের ধারণ ক্ষমতা ১২.৪ লিটার সাথে ২.২ লিটার রিজার্ভ। বাইকের ড্রাই ওয়েট ১৪৬ কেজি। ডাবল ডিস্কের বাইকটির দুটি চাকাই টিউবলেস। বাইকে কিক বা সেলফ দুইভাবেই স্টার্ট দেবার ব্যবস্থা আছে। ১২ ভোল্টের ব্যাটারি দেয়া আর পিছনের টেল লাইট এলইডি। পিছনের নাইট্রো পাওয়ার্ড সাস্পেনশন এর সাথে সামনে টেলিস্কোপিক সাস্পেনশন। সবকিছু মিলিয়ে বেশ আকর্ষণীয় একটা মডেল। হিরো হাঙ্ক ১৫০ - মাইলেজ হাঙ্কে ২০১৬/১৭ মডেল গুলোতে নতুন একটা জিনিস যোগ হয়েছে, তা হল বেটার মাইলেজ। আমি ব্যক্তিগতভাবে হাঙ্কে ৪২/৪৫ মাইলেজ পাচ্ছি। আর পুরনো হিরো হোন্ডা মডেলের ব্যবহারকারীরা যতদূর জানি ৩২/৩৫ এর মতন পান। তবে মাইলেজ বেশ কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে যেমনঃ
- রাইডিং স্কিল, রাইডারের চালানোর ধরন।
- ইঞ্জিন ওয়েলের সঠিক গ্রেড।
- টায়ারের কন্ডিশন, এয়ার প্রেশার ঠিক রাখা।
- রাস্তার অবস্থা।
- ড্রাইভ চেনের সঠিক ক্লিনিং – লুব্রিকেশন।
- এয়ার ফিল্টারের কন্ডিশন।
- ফুয়েলের মান।
- পিলিওন থাকা না থাকা।
- ইঞ্জিনের ওভারঅল কন্ডিশন।
আমার মতে ১৫০ সিসির একটা বাইকে যদি ৪০ এর উপরে মাইলেজ থাকে তাহলে সেটাকে সন্তোষজনক ধরা উচিৎ। কেননা আমাদের দেশের অধিকাংশ পাম্পের তেলে মাপে এবং মানে সমস্যা আর তেলের মান বা “রন” আন্তর্জাতিক মানের থেকে বেশ নিচে। এই কারণে এমনিতেই ১০/২০ ভাগ পারফর্মেন্স কম দেয় বাইকগুলো। হিরো হাঙ্ক ১৫০ - ব্রেকিং হাঙ্কে আছে নিসিন কোম্পানির বানানো ডাবল ডিস্ক ব্রেক। যারা নিসিন সম্পর্কে জানেন না, তাঁদের জন্য সংক্ষেপে বলি... নিসিন হল পৃথিবীর অন্যতম সুনামধারী এক ব্রেক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। হাঙ্কে আছে সামনে ২৪০ মিলি এবং পিছনে ২২০ মিলির ডিস্ক ব্রেক। ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে হাঙ্কের ব্রেকিং খুবই ভালো লেগেছে। দুই ব্রেক একসাথে ধরলে খুব সুন্দর রেসপন্স পাওয়া যায়। তবে নতুন রাইডারদের এই কম্বিনেশন হাতে আসতে কিছু
- টা সময় লাগবে। পুরনো রাইডার বা যারা আগে ডাবল ডিস্ক চালিয়েছেন, তাঁদের জন্য নতুন কিছু না। অনেকে বলেন যে হাঙ্কের পিছনের চাকা স্কিড করে বেশী। দুই ব্রেক একসাথে ধরলে এই সমস্যা হওয়ার কথা না। আমার অন্তত হয় না। তবে একটা কথা, বালুতে বা কাদা আছে এমন রাস্তায় হাঙ্কের চাকা নিয়ে কনফিডেন্স পাওয়া কঠিন। এর জন্য হাঙ্কের ওজন একটা বিষয় হতে পারে। আরেকটা বিষয় হল চাকার প্রেসার। অনেকেই নিজেরা নিজেদের মতন বুঝে বা পরিচিত মেকানিক থেকে শুনে চাকার প্রেশার সামনে ৩৫ আর পিছনে ৪৫ রাখেন, যেটা আদতে কোম্পানি থেকে বলা পরিমানের চেয়ে অনেক বেশী। স্বভাবতই এটার প্রভাব ব্রেকে পড়ে। চাকার প্রেসার কত হবে সেটা ম্যানুয়ালে পরিষ্কার বলা আছে আর চেন কাভারের গায়ে লিখাও আছে। নির্ধারিত প্রেশারে রাখলে অনেক ভালো ব্রেকিং পাওয়া যায়। তবে যাঁদের ধারনা প্রেশার বেশী রাখলে রোড ট্র্যাকসন কম হবে আর স্পীড ভালো পাবেন, তাঁদের প্রতি বলছি, এরকম হলে কোম্পানি থেকেই সেভাবে বলা থাকতো। কারণ ইন্ডিয়ান সব বাইক মেকারই চায় মাইলেজ ইস্যুতে গুরুত্ব দিতেহিরো হাঙ্ক ১৫০ - ইঞ্জিন পারফর্মেন্স ১৫০ (১৪৯.০২) সিসির এয়ার কুল্ড ইঞ্জিন হাঙ্কে। হোন্ডার ডিজাইন করা এই ইঞ্জিনের মান – ক্ষমতা – কার্যকরীতা সবই প্রমানিত। হাঙ্ক চলছে এদেশে অনেক বছর ধরে। এই একই ইঞ্জিন দিয়ে সিবিজেড, ইউনিকর্ণ এবং রিফাইন্ড ভার্সন দিয়ে হোন্ডা ট্রিগার বানানো। আমার কাছে এই ইঞ্জিনকে বেশ শক্তিশালী মনে হয়েছে। ম্যাক্স পাওয়ার (11.64 KW (15.6 bhp) @8500 rpm) আর ম্যাক্স টর্ক (13.5 N m @ 7000 rpm) দাবী করা হয় হিরো থেকে। আমার অভিজ্ঞতায় আমি খুব একটা তারতম্য পাইনি। আমার কাছে স্পীড ১২১ কিলো/ঘণ্টা পর্যন্ত উঠেছে। তবে আমি খুব যত্নের সাথে ব্রেক-ইন পিরিয়ড মেনেছি। হাঙ্কে ব্রেক-ইন পিরিয়ড ৩০০০ কিলো পর্যন্ত। প্রথম ২০০০ কিলো চালিয়েছি ৪০/৫০ কিলো স্পিডে। পরের ১০০০ কিলো পর্যন্ত ৭০/৭৫ ছিল আমার টপ। আর এখন হরহামেশা ১০০/১১৫ থাকে ... হাঙ্কের জন্য নির্ধারিত ইঞ্জিন ওয়েল (মবিল নামে পরিচিত বেশী) গ্রেড হল 10W30 মিনারেল। আমি নিয়মিত এই গ্রেডের ওয়েল ব্যবহার করেছি। হিরো সেন্টারে হিরো ব্র্যান্ডেরই একটা ওয়েল দিতে চায় যেটার পারফর্মেন্স নিয়ে কেউ ভালো কথা বলে না, এছাড়া ঐটা ৯০০ মিলি থাকে, যেখানে হাঙ্কের ম্যানুয়ালে বলা হয় ১ লিটারের কথা। আমি ঐটা ব্যবহারের ভরসা পাই না। আমি নিজে হ্যাভোলীন এর মিনারেল গ্রেড ব্যবহার করেছি বেশীরভাগ সময়। এছাড়া রেভলন সেমি সিনথেটিক দিয়ে দেখেছি কিছুদিন আগে। আমি প্রথম ওয়েল ড্রেন দিয়েছি ৪০০ কিলোতে প্রথম সার্ভিসিঙে। পরেরটা ১০০০ কিলোতে দ্বিতীয় সার্ভিসিঙে। তারপর প্রতি ৮০০ কিলোতে বদলেছি। এবং এভাবেই ৮০০/৯০০ কিলো প্রতি বদলাবো। হাঙ্কে অ্যাপাচির মত ভাইব্রেশন আমি পাইনি। ১১০ কিলো/ঘণ্টা স্পীডেও আমি স্মুথ পারফর্মেন্স পাই। তবে ১২০ কিলো/ঘণ্টা এর দিকে উঠার সময়ে সামান্য একটা ভাইব্রেশন পাই। এটা হতে পারে তখন হাই আরপিএম থাকে বলে। তবে সামগ্রিকভাবে হাঙ্ক ভাইব্রেশন মুক্ত বলা যায়। একটা জিনিষ বেশ ভালো লাগে, পঞ্চম গিয়ারের পারফর্মেন্স। অনেকে এটাকে হাঙ্কের “খাঁড়া টান” হিসাবে চিনেন।
হিরো হাঙ্ক ১৫০ - সুবিধা
- সহনশীল দাম
- ব্র্যান্ড ভ্যালু সাথে সাথে প্রমানিত এবং জনপ্রিয় মডেল
- ভারী কাঠামো / ওজন
- শক্তিশালী ইঞ্জিন
- ইঞ্জিন হিটের সমস্যা প্রায় নেই
- ৭০০০০ কিলো বা ৫ বছর ইঞ্জিন ওয়ারেন্টি
- দেশব্যাপী পার্টস ও সার্ভিস সেন্টারের অবস্থান
- রিসেল ভ্যালু
- দীর্ঘস্থায়ীত্ব
- হেভি ডিউটি / রাফ ইউজের নিশ্চয়তা
- সুন্দর মাস্কুলার লুক
- বিগ বাইক ফীল
- উন্নত ব্রেকিং / কন্ট্রোলিং
- একদম কম ভাইব্রেশন
- গ্রহণযোগ্য মাইলেজ
- দৃষ্টিনন্দন মডেল
- টিউবলেস টায়ার
- সেলফ + কিক স্টার্ট দুটোই আছে
- কমিউটার সেগমেন্ট
- দ্রুত এক্সিলারেশন (রেডি পিকআপ)
- নাইট্রো পাওয়ার্ড রেয়ার সাস্পেনশন
- এলইডি টেল লাইট
- বড় ক্যপাসিটির ফুয়েল ট্যাঙ্ক
- উন্নত অ্যায়ারিং
- চেন কাভারের উপস্থিতি
- ভালমানের সুইচ
হিরো হাঙ্ক ১৫০ - অসুবিধা
- বেশী ওজন, যেটা শহরের জ্যামে একটু কষ্টকর হতে পারে।
- পিছনের চাকা একটু চিকন, ১০০/১৮ মাপের। এটা ১২০/১৮ হলে দারুন হত। অনেকে অবশ্য বদলায়, তবে চেন কাভার একটু কেটে নিতে হয়। পিরেলি / টিমসান বেশ ভালো টায়ার এক্ষেত্রে। তবে স্পীড আর মাইলেজ ৫–১০ ভাগ কমে যাবে।
- স্টক হেডলাইট হ্যালোজিন এসি মোডের। কুপিবাতির মত আলো। পিক আপের সাথে কমে–বাড়ে। বদলে এলইডি লাগিয়ে ডিসি করে নিলে সমস্যা সমাধান হয়।
- ট্যাঁপেট ঘনঘন অ্যাডজাস্ট করতে হয়, কাজটা সেনসিটিভ। ইঞ্জিনের উপরের ভাগ খুলে করতে হয়। প্রতি ৪/৫ হাজার কিলো পরপর না করলে ইঞ্জিন থেকে বাজে শব্দ হয়। আর করতেও হয় খুব পাকা হাতে, ইঞ্জিন একদম ঠাণ্ডা থাকা অবস্থায়।
- ওয়েল ফিল্টার নেই। রটোর ফিল্টার আছে। দ্বিতীয় সার্ভিসিঙে ক্লিন করে নিতে হয়। এরপর আবার প্রতি ১০০০০ কিলো পরপর করলেও চলে। ইঞ্জিনের ডানপাশ খুলে করতে হয় এটা, যার কারণে গ্যাসকেট বদলাতে হয়। আর শুধু ঐ সময়ই ইঞ্জিন ওয়েল ১১০০ মিলি লাগে।
- ডিস্ক ব্রেকে একটু বালু থাকলেই কিচকিচ শব্দ করে। সামনের ব্রেক প্যাড প্রতি ৩/৪ হাজারেই বদলাতে হয়।
- ইঞ্জিন কিল সুইচ নেই। তবে ১০০ টাকা দিয়ে আলাদা কিনে লাগিয়ে নেয়া যায়।
- কোন কারণে পিছনের চাকা লিক হলে তখন চাকার অ্যালাইনমেন্ট খুব সাবধানে মিলিয়ে লাগাতে হয়।
- পিলিওন সিট বেশ উঁচুতে, অনেকটা স্পোর্টস বাইকগুলোর মত। লম্বা চওড়া পিলিওন হলে রাইডারের জন্য কঠিন।
হিরো হাঙ্ক ১৫০ - মডিফাই
- কিছু কিছু করা যায়। যেমন আমি হেডলাইট এলইডি লাগিয়েছি।
- অনেকে বাইকে পলি কোটিঙ করায়, এখন আবার সিরামিক কোটিঙ ও দেখি এসেছে দেশে। আমি করাইনি কোনটাই।
- টায়ার বদলানোর বিষয়ে উপরেই বলেছি যে ১২০/১৮ মাপ পর্যন্ত লাগানো যায়, আমি স্টক নিয়েই সন্তুষ্ট।
- হাঙ্কের স্টক হর্ন খুব একটা ভাল নয়। আমি বদলে পালসারের পি৭০ এক জোড়া লাগিয়েছি।শেষ কথাঃ পৃথিবীর কোন কিছু পারফেক্ট না। একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ছাড়া সবকিছুতেই খুঁত থাকে। এখন কথা হল মাত্রা কততুকু। যেই বাজেটে হাঙ্কে যা যা পাচ্ছি তাতে সবদিক মিলিয়ে আমি সন্তুষ্ট। আমার জানা মনে ডিস্কভার ১৩৫ এর পর হাঙ্ক হল একমাত্র মডেল যার হেটার প্রায় নেই বললেই চলে। আমাদের সবার চেনা–পরিচিত বাইক বিডির ফাউণ্ডার “শুভ্র সেন” দাদা বা থ্রটোলারের “নাভিদ ইশতিয়াক তরু” এবং আরও অনেক লিজেন্ড বাইকারের প্রথম বাইক ছিল হাঙ্ক। সুতরাং এদের চয়েসকে আপনি পজিটিভ ধরতে পারেন। সবার প্রতি অনুরোধ থাকবে নিজে এবং পিলিওনকে হেলমেট পরাবেন। কেউ না কেউ আছে যে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। তার কাছে ফিরে না গিয়ে রাস্তায় জীবনটা বিলিয়ে দেয়া থেকে বিরত থাকবেন। প্রতিটা বাইকারের হাসিমুখ থাকুক আজীবন। শুভ হোক সকলের নিরাপদ পথচলা। লিখেছেনঃ আহাদ বিন জাহিদ
T
Published by Saleh Bangla