Shares 2

শীতকালে ভ্রমণ এর জন্য জনপ্রিয় ১২ টি স্থান - জানুন বিস্তারিত

Last updated on 29-Jul-2024 , By Raihan Opu Bangla

শীতকালে ভ্রমণ এর জন্য জনপ্রিয় ১২ টি স্থান নিয়ে আমাদের আজকের এই আর্টিকেল। আমরা যারা বাইকার আছি অনেকেই শীতের এই সময়টাতে ভ্রমণ করতে খুব বেশি ভালোবাসি। আপনি যদি শীতকালে ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন তাহলে এই জায়গাগুলো থেকে ঘুরে আসতে পারেন, আশাকরি ভালো লাগবে।

শীতকালে ভ্রমণ এর জন্য জনপ্রিয় ১২ টি স্থান

শীতকালে ভ্রমণ এর জন্য জনপ্রিয় ১২ টি স্থান

১- উত্তরবঙ্গ

আমার মতোন শীত যাদের পছন্দ তাদের জন্য এই সময়টাতে ভ্রমণের সেরা জায়গা হলো উত্তরবঙ্গ। শীতের এই সময় উত্তরবঙ্গের যেকোনো জেলায় থেকে  ঘুরে আসতে পারেন।উত্তরের সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো পঞ্চগড় আর তেঁতুলিয়া। আকাশ যদি পরিষ্কার থাকে তাহলে তেঁতুলিয়া থেকে দেখতে পাবেন কাঞ্চনজঙ্ঘা।  পঞ্চগড়ে গেলে দেলহতে পাবেন সমতলের চা–বাগান।

উত্তরবঙ্গ

রংপুর থেকে দিনাজপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার মধ্যে রয়েছে প্রচুর বিখ্যাত ঐতিহাসিক স্থাপনা। দিনাজপুরে দেখতে পাবেন টেরাকোটায় সাজানো প্রাচীন মন্দির কান্তজিউ সাথে দেখতে পারেন নয়াবাদের টেরাকোটাশোভিত মসজিদ। ঠাকুরগাঁওয়ের দিকে যেতে দেখতে পাবেন  উত্তরবঙ্গের একমাত্র শালবন শিঙারা ফরেস্টের। বগুড়ায় আছে বেহুলা লখিন্দরের বাসরঘর, সঙ্গে মহাস্থানগড় আর প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধন নগরী। একটু দূরেই দেখতে পাবেন প্রাচীন পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহার।

২- শ্রীমঙ্গল ( Sreemangal Upazila )

চায়ের শহর শ্রীমঙ্গল শীতকালে ভ্রমণের জন্য অসাধারণ এক জায়গা। আপনি যদি চায়ের বাংলোতে থাকেন তাহলে চা গাছে ঘিরে থাকা পরিবেশে শীতের হিম হাওয়া আপনার মধ্যে অদ্ভুত এক  রোমাঞ্চের জন্ম দিবে। বাইক্কা বিলের পাখির অভয়াশ্রম কিংবা লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে জীববৈচিত্র দেখতে শুরু করলে আপনার সময়গুলো কিভাবে পার হয়ে যাবে আপনি নিজে বুঝতে পারবেন না। তবে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে আপনি সব সময় বাইক নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না। বাইক গেঁটের বাইরে রেখে আপনাকে যেতে হবে, অনেকেই রেললাইন পর্যন্ত ঘুরে ফিরে আসেন কিন্তু আমি বলবো একজন গাইড নিয়ে ভেতরটা ভালোভাবে ঘুরে দেখতে। আশাকরি বেশ ভালো লাগবে। বনের মধ্যে গেলে পানির বোতল সাথে নিয়ে যাবেন অবশ্যই।

শ্রীমঙ্গল

৩- জাফলং ( Jaflong )

শীতকালে জাফলং আমার কাছে অনেক ভালো লাগে। যদিও এই সময়টাতে আপনি ঝর্ণা দেখতে পাবেন না, তবে কুয়াশার চাদরে ঘেরা পাহাড়ি পরিবেশ আপনার বেশ দারুণ লাগবে। জাফলং জিরো পয়েন্টের শীতের বাতাস আপনাকে বেশ ভিন্ন এক অনুভূতি দিবে। তবে বাইক নিয়ে আপনি যখন জাফলং যাবেন অবশ্যই ভালো শীতের পোশাক ব্যবহার করুন নাহলে আপনার শরীর অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।

জাফলং

৪- কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ( Cox's Bazar Beach )

বাংলাদেশের বিশ্ব দরবারে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। শীতের এই সময়টতে সমুদ্রের পাড়ে বছরের সবচেয়ে ব্যস্ত সময় দেখা যায়।  আবহাওয়ার জন্য  কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ঠাণ্ডার প্রকোপ তুলনামূলক কম থাকে। মেরিন ড্রাইভের বিশাল রাস্তা কক্সবাজারে যোগ করেছে ভ্রমনের ভিন্ন এক আকর্ষণ। মেরিন ড্রাইভের রাস্তা ধরে আপনি যদি  টেকনাফের দিকে এগিয়ে যান তাহলে দেখতে পাবেন  হিমছড়ি, ইনানি, শামলাপুর ও হাজামপাড়ার মতো সুন্দ সুন্দর স্থানগুলো।  মেরিন ড্রাইভে বাইক চালানো অনেক বাইকারের স্বপ্ন, আপনি যদি এখানে না যেয়ে থাকেন তাহলে এবার শীতে অবশ্যই গিয়ে ঘুরে আসুন।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ( Cox's Bazar Beach )

৫- সেন্টমার্টিন দ্বীপ ( Saint Martin island )

আমাদের দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ হচ্ছে সেন্টমার্টিন, শীতকালে ভ্রমণের জন্য একটি আদর্শ জায়গা সেন্টমার্টিন। শীতকালে লাখো মানুষ এখানে ছুটে আসে। মেরিন ড্রাইভ দিয়ে বাইক চালিয়ে আপনি টেকনাফ যেতে পারেন, সেখানে গিয়ে সেখান থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রের কোলে সেন্টমার্টিনের অবস্থান। মাত্র ১৬ বর্গ কিলোমিটারের দ্বীপটিতে যেন নীল রঙের নতুন এক সংজ্ঞা জানা যায়। এখানে রয়েছে সারি সারি নারিকেলের গাছ। জেলেপাড়া, শুটকিপাড়া ও এলাকার মানুষের দিনযাপনের কাজ পর্যবেক্ষণ করলে আপনার জীবনের অনেক চিন্তায় বেশ ভিন্নতা আসবে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপ

৬- সাজেক ভ্যালি ( Sajek Valley )

ভ্রমণের জন্য বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থান হলো সাজেক ভ্যালি। শীতকালে সাজেক এ বেশ ভিন্ন একটা রূপ দেখা যায় ।  রাঙ্গামাটির ছাদ খ্যাত সাজেক ভ্যালি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। সাজেকের অবস্থান রাঙামাটি জেলায় হলেও ভৌগলিক কারণে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে সাজেক যাতায়াত অনেক সহজ। সাদা তুলোর মত মেঘের ভ্যালি আপনার মনকে ফ্রেশ করে দিবে। সাজেক এমনই আশ্চর্য্যজনক জায়গা যেখানে একই দিনে প্রকৃতির তিন রকম রূপ আপনি দেখতে পাবেন। কখনো বা খুব গরম অনুভূত হবে তারপর হয়তো হটাৎ বৃষ্টিতে ভিজে যাবেন।

( Sajek Valley )

৭- কুয়াকাটা ( Kuakata )

পাহাড় আর বন ঘুরা শেষ করে যদি মন সাগরে ছুটে যেতে চায় তবে সাগরকন্যা কুয়াকাটা থেকে ঘুরে আসতে পারেন। কুয়াকাটা এমন এক বিশেষ স্থান যার একই জায়গা থেকে আপনি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে পারবেন। এছাড়া শুটকি পল্লী, ফাতরার বন, গঙ্গামতির জংগল ও লাল কাঁকড়ার দ্বীপ কুয়াকাটার অন্যতম আকর্ষণ।

বান্দরবান

৮- বান্দরবান ( Bandarban )

মেঘ ছুঁয়ে দেখার কথা মাথায় আসলে সবাই প্রথমে যে নামটি আমার মনে আসে সেটা হলো বান্দরবান। সাঙ্গু নদীর পাশে গড়ে ওঠা পাহাড়ের সারি বান্দরবানের মেঘকে মাথায় নিয়ে পর্যটকদের হাতছানি দেয়। আদিবাসী বোমাং রাজার বাড়ি থেকে শুরু করে জাদির পাহাড়ের চূড়ার স্বর্ণ মন্দির, নীলাচল, নীলগিরি, মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্সের হ্রদ, ঝুলন্ত সেতু আর ছোট চিড়িয়াখানা, চিম্বুক পাহাড়, শৈল প্রপাত, আদিবাসীদ গ্রাম, ভ্রাম্যমাণ বাজার ইত্যাদি সমস্ত কিছু বান্দরবানকে ভ্রমণের দিক থেকে যেমন সমৃদ্ধ করেছে তেমনি বাংলাদেশের সকল স্থান থেকে করেছে অনন্য।

রাঙ্গামাটি

৯- রাঙ্গামাটি ( Rangamati )

রাঙ্গামাটিতে দেখার অনেক কিছু আছে, তবে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে ঝুলন্ত সেতু। সিম্বল অফ রাঙ্গামাটি খ্যাত ঝুলন্ত সেতু দেখবার জন্য অসংখ্য মানুষ এখানে প্রতি বছর ঘুরতে আসেন। এই দিকের রাস্তায় বাইক চালানোর মজাটাই পুরো আলাদা। কাপ্তাই হ্রদের তীরে রিজার্ভ বাজার ও তবলাছড়ি বাজার নামে জনবহুল দুটি লোকাল বাজার দেখা যায়। এখান থেকেই নৌকায় করে শুভলং বাজারের দিকে গেলে শুভলং ঝর্নার দেখা মিলে। শীতকালে এই ঝর্না মনোরম পর্যায়ে না থাকলেও যাত্রা পথে পাহাড়ি আদিবাসী খাবারের স্বাদ নেবার জন্য নামকরা কিছু রেস্তরা পাবেন।

সুন্দরবন

১০- সুন্দরবন ( Sundarbans )

শীতকালে ভ্রমণের জন্য সুন্দরবন অনেক ভালো একটি স্থান।  ইউনেস্কো কতৃক বিশ্ব ঐতিহ্যে জায়গা করে নেওয়া প্রায় ৬ হাজার বর্গ কিলোমিটারের এই সুবিশাল ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলটি ওয়াইল্ড লাইফ প্রেমীদের কাছে অনেক জনপ্রিয়। সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, কুমির, বানর সহ নানা বৈচিত্র্যময় প্রানীকুলের দেখা মিলে।  লঞ্চে করে গহীন বনে ভ্রমণ, গা ছমছমে এলাকায় বাঘের খোঁজে ভয়ে ভয়ে মাটিতে পা রাখা নিশ্চিতভাবে আপনার ভ্রমণে বাড়তি অ্যাডভেঞ্চারের যোগান দিবে।তবে লঞ্চে উঠার আগে আপনার বাইকটি অবশ্যই নিরাপদ স্থানে রেখে যান।

বাগেরহাট

১১- বাগেরহাট

সুন্দরবন দেখতে গেলে বাগেরহাট জেলাকে ভ্রমণ পরিকল্পনায় যুক্ত করে নেয়া যায়। বাগেরহাটে অবস্থিত প্রাচীন মসজিদের মধ্যে আছে ঐতিহাসিক ষাট গম্বুজ মসজিদ, নয় গম্বুজ মসজিদ, জিন্দাপীর মসজিদ, সিংরা মসজিদ, রণবিজয়পুর মসজিদ, চুনাখোলা মসজিদ এবং হজরত খান জাহান আলীর সমাধিসৌধ। প্রাচীন ইতিহাসের পাশাপাশি এসব মসজিদের নির্মাণশৈলী মনকে অভিভূত করে।

কুতুবদিয়া দ্বীপ

১২- কুতুবদিয়া দ্বীপ

কক্সবাজার জেলার ছোট উপজেলা কুতুবদিয়ায় গেলে প্রাচীন একটি বাতিঘরের ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাবেন। দ্বীপের উত্তরপ্রান্তে অবস্থিত এই লাইট হাউসটি সমুদ্রপথে চলাচলকারী জাহাজের নাবিকদের পথ দেখাতে দেখাতে নিজেই কবে পরিত্যাক্ত হয়ে গেছে তা জানা যায়নি। এখনো ভাটার সময় পানি নেমে গেলে বাতিঘরের অবশিষ্ট জেগে উঠে যেন পুরনো ইতিহাসের গল্প বলে যায়।

২১৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ছোট এই দ্বীপে প্রাচীন বাতিঘর ছাড়াও রয়েছে একান্ত সময় কাটানোর জন্য নির্জন সমুদ্র সৈকত, বাংলাদেশের একমাত্র বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র, প্রাকৃতিক ভাবে লবণ চাষের স্থান এবং কুতুব আউলিয়ার মাজার। দ্বীপটিতে পৌঁছাতে হলে চকোরিয়ার মাগনামা ঘাট থেকে কুতুবদিয়া চ্যানেল পাড়ি দিতে হয়। ঝাউগাছের ঘেরা দ্বীপের সৈকত এলাকা নীরবতা প্রিয় পর্যটকদের কাছে ভীষণ আকর্ষণীয়। হাইওয়েতে বাইক রাইড করার আগে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে নিন, অসুস্থ অবস্থায় কখনো হাইওয়েতে বাইক রাইড করবেন না। সব সময় ভালোমানের হেলমেট এবং ভালো রাইডিং গিয়ার ব্যবহার করুন। 

তথ্যসূত্র - প্রথম আলো , ভ্রমণ গাইড ,  সময়  

Published by Raihan Opu Bangla