Shares 2

লিফান কেপিএস১৫০ টেস্ট রাইড রিভিউ - টিম বাইকবিডি

Last updated on 06-Jul-2024 , By Shuvo Bangla

লিফান বাংলাদেশের বাইক কোম্পানি গুলোর মধ্যে অন্যতম। এরই মধ্যে লিফান কেপিআর১৫০ অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বাইকাদের কাছে। সম্প্রতি তারা নতুন দুটি বাইক বাংলাদেশের বাজারে নিয়ে আসে। তাদের মধ্যে একটি হচ্ছে লিফান কেপিএস১৫০। বাংলাদেশের বাজারে এটি সম্পূর্ন নতুন বাইক । যদিও বাইকটিতে কিছু টেকনিক্যাল পরিবর্তন আনা হয়েছে, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কেপিআর১৫০ আর চেয়ে  কেপিএস১৫০ কি ভাল হবে নাকি খারাপ হবে? যেদিন কেপিএস১৫০ বাইকটি বাংলাদেশের মার্কেট এ লঞ্চ হয়, সেদিনই আমরা বাইকটি টেস্ট রাইডের জন্য পেয়ে যাই। তাই টেস্ট রাইডের পর রিভিউ নিয়ে চলে এসেছি আমরা টীম বাইকবিডি । তাই সবাইকে স্বাগতম জানাচ্ছি লিফান কেপিএস১৫০ এর রিভিউতে। চলুন দেখে নেয়া যাক এই বাইকটি কেমন হবে।

lifan kps150 bd 2017

আমরা বাইকটি সিটি এবং হাইওয়ে দুই জায়গাতেই টেস্ট করেছি। হয়ত আপনাদের মনে আছে যে, আমরা লিফান কেপি১৫০ বাইকটি প্রায় ৩০,০০০ কিমি রাইডিং করেছি। এটা প্রমান করে যে সব চাইনিজ বাইক এক নয়। আমরা প্রায় দু বছর  বাইকটি টেস্টরাইড করার কারণ ছিল এটা দেখা যে বাইকের ইঞ্জিন কত দূর পর্যন্ত ক্ষমতা সহ্য করতে পারে এবং এর নতুন পার্টস কখন দরকার হয়।

কাগজে কলমে লিফান কেপিএস১৫০ বাইকটি লিফান কেপিআর১৫০ এর নেকেড ভার্সন। কিন্তু এতে কিছু ছোট খাটো পরিবর্তন আনা হয়েছে অন্য সকল জাপানী ব্র্যান্ড গুলোর মত। এখন প্রতিটি ব্র্যান্ডই তাদের ফ্ল্যাগশিপ স্পোর্টস বাইকের নেকেড ভার্সন বাজারে এনেছে,  যেমন,  হোন্ডা সিবিআর১৫০এবং সিবি১৫০, সুজুকি জিএসএক্সআর১৫০ এবং জিএসএক্সএস১৫০। ঠিক এদের মতই লিফান ও ট্রেন্ড এর কথা মাথায় রেখে কেপিআর এর নেকেড ভার্সনটি বাজারে এনেছে।

lifan kps150 bd

যেহেতু এটি কেপিআর১৫০ এর নেকেড ভার্সন, তাই এর ইঞ্জিন ঠিক একই ১৫০সিসি, ওয়াটার কুলড, সিঙ্গেল সিলিন্ডার, দুটি ভালভ, কার্বুরেটর সমৃদ্ধ ইঞ্জিন। সিক্স গিয়ারের ইঞ্জিন ১৪.৮ বিএইচপি তে ৮৫০০আরপিএম এবং ১৪এনএম টর্কে ৬৫০০ আরপিএম ক্ষমতা উৎপন্ন করতে পারে। কেপিআর আর মতই এর ইঞ্জিন স্মুদ এবং কেপিআর ভি২ এর ইঞ্জিন সমৃদ্ধ। থ্রটল করলে আপনি প্রায় ১১০০০ আরপিএম পর্যন্ত তুলতে পারবেন।

lifan price bangladesh

 বাইকের ইঞ্জিন কম্প্রেশন রেশিও হচ্ছে ১১.৪ঃ১। তাই ইঞ্জিনে বেশি পরিমানে বাতাস প্রবাহিত হয়। প্রথম দিকে বাইকের ইঞ্জিন কিছুটা গরম হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে এটি কমে আসে এবং আবহওয়ার সাথে মানিয়ে যায়। ইঞ্জিনের এই নতুনত্বের জন্য এর এক্সেলারেশন অনেক স্মুদ ও গিয়ার বক্স অনেক নরম। যদিও প্রথম ১০০০-১২০০কিমি পর্যন্ত একটু গিয়ারবক্সটা কিছুটা হার্ড থাকে, কিন্তু পরে সেটি ঠিক হয়ে যায়। এই একই রকম সমস্যায় আমাদেরও পড়তে হয়েছে। কিন্তু প্রথম সার্ভিসিং এরপর সব কিছু নরমাল হয়ে যায়। সবার পছন্দ এক নয়। তাই রাইডারের কমফোর্ট অনুযায়ী ক্লাচ চেঞ্জ করে নেয়া যায়।

lifan kps price

লিফান কেপিএস১৫০ এর ইঞ্জিন এবং চেসিস দুটো ই লিফান কেপিআর১৫০ এর মত করেই তৈরি করা। তবে বাইকটিতে কিছু গুরুত্বপূর্ন পরিবর্তন করা হয়েছে।

  • ফুল এলএইডি প্রোজেকশন হেডলাইট।
  • ফুল এলএইডি টেল লাইট।
  • এলএইডি ইন্ডিকেটর।
  • আপসাইড ডাউন ফ্রন্ট সাসপেনশন।
  • রেয়ার মনোশক সাসপেনশন।
  • এয়ার স্কুপ বাইকের সাইডে দেয়া যাতে ইঞ্জিনে বেশি পরিমানে বাতাস প্রবাহিত হয়।
  • রেডিয়েটর গ্রিলস প্রোটেক্টর।
  • কালার চেঞ্জিং স্পিডো মিটার।
  • ফ্রন্ট টায়ার ১০০ এবং রেয়ার টায়ার ১৩০।
  • ৩০০ মিমি ফ্রন্ট ডেস্ক এবং ২২০ ডিস্ক ব্রেক।
  • টিউবলেস টায়ার।
  • ১২ স্টিক এলয় রিম।
  • সিট অনেক প্রশস্ত।
  • এক্সহস্ট এর উপর স্টিল প্লেট দেয়া আছে যাতে পিলিয়ন গরম অনুভূব না করে।
  • স্প্লিট সিট।

লিফান কেপিএস১৫০ বাইকের অন্যতম ফিচার হচ্ছে এর এলইডি প্রোজেকশন হেডলাইট। কোন সন্দেহ নেই যে ২ লাখ টাকা বাজেটের মধ্যে এর চেয়ে ভাল আর কিছুই হতে পারে না। এর তিনটি এলইডি, ২টি ইলুমিনেটস লো বিম এবং তিন নম্বরটি হাই বিম এ দেয়া। এই বাইকটির হেডলাইটের জন্য এর লুক অনেক এগ্রেসিভ দেখায়। এর সামনে আপসাইড ডাউন সাসপেনশন বাইকের সম্পূর্ন চেহারায় একটি নতুনত্ব এনে দিয়েছে।

lifan price in bd

লিফান কেপিএস১৫০ এর কন্ট্রোলিং আমাদের সন্তুষ্ট করেছে। বাইকটির ৩০০মিমি ফ্রন্ট ডিস্ক, বাংলাদেশে বর্তমানে সবচেয়ে বড়। ব্রেকিং সিস্টেম অনেক ভালো। ফ্রন্ট এবং রিয়ার দুটি ব্রেকই পারফেক্টলি কাজ করে। আর এর ১৪৫ কেজি ওজন হাই স্পিডে রাইডার কে কনফিডেন্স দেয়। বাইকটির স্পিড ১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টাতেও ব্রেক অনেক ভালো কাজ করে। আমরা বাইকটিকে পিলিয়ন সহ টেস্ট করেছি। ভারী হওয়া সত্ত্বেও ব্রেকিং এ ভালো কনফিডেন্স দেয়। টায়ার গুলো একটু মোটা এবং ওজনে ভারী হওয়ার কারনে হাইস্পিডে অনেক বেশি স্টেবল। আপনি অনেক ভালো কর্নারিং করতে পারবেন।

lifan kps150 new

লিফান কেপিএস১৫০ বাইকটির টার্নি রেডিয়াস অনেক ভালো। এর হ্যান্ডেল গুলো উচু এবং প্রশস্থ হওয়াতে কোন পেইন বা ঝামেলা হয় না রাইডিং এ। কিন্তু মাঝে মাঝে আমাদের মনে হয়েছে যে বাইকটি অনেক প্রশস্ত যা মাঝে মাঝে সমস্যা করতে পারে। পেছনের সাসপেশনে আরো পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। ফ্রন্ট সাসপেশন ইনভার্স হওয়াতে ভালো রাস্তায় এর ফিডব্যাক ভালো। কিন্তু খারাপ রাস্তাতে ভালো ফিডব্যাক পাওয়া যায় না। এটি রিয়ার মনোশক সাসপেনশন এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। লিফানের এই জায়গাতে সব চেয়ে বেশি পরিবর্তন প্রয়োজন। কারণ বর্তমানে বাংলাদেশের রাস্তার অবস্থা খুব বেশি ভালো নয়। হাইওয়েতে ভালো ট্র্যাকশন পাওয়ার জন্য টায়ারের প্রেশার কম করে নেয়া ভালো। কারন, টায়ারের প্যারেশার কমিয়ে নিলে ভালো ট্র্যাকশন এবং ভালো কন্ট্রোল পাওয়া যায়। কিন্তু সাসপেনশন হাই স্পিড ব্রেকিং এর ক্ষেত্রে ভালো ব্যাকআপ দেয়।

lifan kps150 2017

রাইডিং পজিশন সোজা এবং হ্যান্ডেল বার উচু হওয়াতে কোন ব্যাক পেইন হয় না। আপনি ফ্রন্ট ভাইজর লাগিয়ে নিতে পারেন। এতে ড্র্যাগ বেড়ে যাবে, কিন্তু রাইডার এর গায়ে বাতাস কম লাগবে। লিফান এবার স্পিডোমিটারে পরিবর্তন এনেছে। এটি পুরোপুরি ডিজিটাল এবং ফুল এলইডি। এতে স্পিডোমিটার, রেভ কাউন্টার, ফুয়েল গেজ ইন্ডিকেটর এবং ওয়ার্নিং লাইটস রয়েছে। সবচেয়ে মজার বিষয় যে এর স্পিডো মিটার এর কালার চেঞ্জ করা যায়। সুইচ গিয়ার গুলো নরমাল কোয়ালিটির, আর এর রং খুব দ্রুত মুছে যায়। বাইকের ওয়ারিং অনেক ভালো। তাই বড় কোন সমস্যা ছাড়া আপনি সুন্দর ভাবে এটি রাইড করতে পারবেন। এলইডি ইন্ডিকেটর গুলো একটু নরম টাইপের।

lifan kps150 speed

কিন্তু এটা কেপিআর এর মত নয়। কেপিএস খুব দ্রুত ১০০-১০৮ কেএমপিএল পর্যন্ত স্পিড উঠে যায়। কিন্তু এরপর স্পিড উঠে সময় নেয়। এর কর্নারিং অনেক প্রশংসনীয়। উচু হ্যান্ডেল বার হওয়ার পরও বাইক অনেক স্টেবল। লিফান টায়ারের উপর অনেক কাজ করেছে। কেপিআর এ সিএসটি ব্যবহার করা হয়েছিল, যদিও তা মানসম্মত ছিল না। আর এজন্যই অনেক অভিযোগ ছিল রাইডারদের। কিন্তু কেপিএস এ সকল সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। এর ফ্রন্ট ৩০০মিমি ডিস্ক ব্রেক অনেক হাই স্পিড ব্রেকিং এ ভালো পারফরমেন্স দেয়। হাইওয়েতে ক্রুজিং এর জন্য এই বাইকটি ভাল। আপনি ৮০-১০০ স্পিডে অনেক ভালো কনফিডেন্স দেয়। স্মুথ রাস্তায় ফ্রন্ট সাসপেশন অনেক ভালো কাজ করে কিন্তু নুড়ি বিছানো রাস্তায় সেভাবে কাজ করে না। তাছাড়া রেয়ার সাসপেনশন এ ইম্প্রুভমেন্ট দরকার। সিঙ্গেল রাইডিঙ্গের জন্য ভালো কিন্তু উচুনিচু রাস্তায় ভালো পারফরমেন্স দেয় না।

lifan kps150 price

লিফান কেপিএস১৫০ এর উভয় ব্রেক ভালো কাজ করে এবং টায়ারে ভালো সাপোর্ট দেয়। কিন্তু বিরক্তর বিষয় হচ্ছে এর গিয়ার বক্স। ১২০০-১৫০০ কিলোর পরে শক্ত হয়ে যায়। এরপর ক্লাচ এডজাস্ট করে নিতে হয়। স্পিডোমিটারের লাইট দিনে ভালো কাজ করে না। যদিও আপনি রেভ এবং স্পিড ওয়ার্নিং লাইট দেখতে পাবেন। হেড লাইট অনেক বেশি শক্তিশালী রাতের রাইডের জন্য। আমাদের বিশ্বাস ২ লাখ বাজেটের মধ্যে বেস্ট এলইডি লাইট। এক টানা ৩০০-৪০০ কিলো রাইড করার পরও ব্যাক পেইন হয়না। সুইং আর্ম প্রশস্ত আর হুইল বেসের সাথে যুক্ত। কিছু বিষয় যা লিফানের উন্নত করা প্রয়োজন। তাদের মধ্যে হর্ন যা ভালো কাজ করে না। চেইন টাইট দিতে হয় প্রতি ৫০০ কিলো পর পর। চেইস্পেকেট ১০০০০ কিলো এর বেশি লাস্ট করে না। ডিস্ক কোয়ালিটি, হ্যান্ডেল বার, কালার অফ সুইচ গিয়ার খুব বেশি ভালো নয়।

lifan kps150 mileage

আমরা সিটিতে ৩৫-৩৮ এবং হাইওয়েতে ৪০-৪২ কিমি/লিটার মাইলেজ পেয়েছি। এর টপ স্পিড পেয়েছি ১২২ কিমি/ঘন্টা। যদিও এটি কেপিআর এর নেকেড ভার্সন তবুও আমরা মনে করি এটি ৮০-১০০ স্পিডে ক্রুজিং এর জন্য তৈরি করা হয়েছে।

লিফান কেপিএস১৫০ বিক্রয়মূল্য:

বাইকটির বর্তমান বিক্রয়মূল্য:  ১,৮৯,৯০০ টাকা 

lifan kps150price in bd

লিফান কেপিআর এর তুলনায় এটি একটু দামি। যদিও এতে কিছু বড় ধরনের পরবর্তন আনা হয়েছে। যেমন বড় মোটা টায়ার, ইউএসডি ফ্রন্ট সাসপেনশন আর আমরা দিন শেষে ভ্যালু ফর মানি খুজে থাকি। আশা করছি লিফান কেপিএস১৫০ বাইকটি রেস ফিয়ারো১৫০ এফআর এবং বেনলি টিএনটি১৫০ এর সাথে প্রতিযোগিতা করবে।  

Published by Shuvo Bangla