Shares 2
মোটরসাইকেল এয়ারব্যাগ ভেস্ট – নিউ ডেফিনিশন অফ সেফটি
Last updated on 18-Jul-2024 , By Ashik Mahmud Bangla
মোটরসাইকেল এয়ারব্যাগ ভেস্ট । বন্ধুরা, আপনাদের কি মনে হয়না যে মোটরসাইকেল এক্সিডেন্ট একটি খুব বাজে জিনিষ? একটি বাজে এক্সিডেন্ট আপনার প্রিয় মোটরসাইকেলটির অনেক ক্ষতিই করতে পারে। তবে ব্যাগভরা নগদ টাকা থাকলে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া কোন ব্যাপারই না।
তবে একজন রাইডারের শারীরিক ক্ষতি কখনই কোনভাবেই উপভোগ্য বিষয় নয়। কিছু কিছু এ্যাক্সিডেন্ট এতটাই ক্ষতি করে দিতে পারে যে, হয়তো কোনো বিলিয়নিয়ারের সুইস-ব্যাঙ্কের একাউন্ট শূন্য করেও সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব না।
যাই হোক না কেন, আজ আমরা মোটরবাইকারদের জন্য নতুন এয়ারব্যাগ সেফটি ভেস্ট বিষয়ে আলোচনা নিয়ে এসেছি। এই আধুনিক হাইটেক সেফটি-গিয়ারটি খুব বাজে এক্সিডেন্টের প্রভাবকেও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে। ফলে এটি একজন রাইডারকেও মারাত্মক আঘাত থেকে বাঁচিয়ে দিতে পারে।
মোটরসাইকেল এয়ারব্যাগ ভেস্ট - নিউ ডেফিনিশন অফ সেফটি
বন্ধুরা আপনারা জানেন যে এয়ারব্যাগ সিকিউরিটি সিস্টেম মূলত: ফোর-হুইলারের মতো গাড়িতে বাড়তি সুরক্ষা দেবার জন্য একটি আধুনিক সংযোজন। সাধারনভাবে যেকোন ফোর-হুইলারে কেবিনের মতো ককপিট, মেটাল ও ফাইবারের কম্ফোর্ট লেয়ার, সিটবেল্ট ও বেষ্টনীর মতো সাধারন কিছু নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে।
তবে আধুনিক লাইফসেভার প্যাকেজে এয়ারব্যাগ সিস্টেম গাড়ির ড্যাশবোর্ডে মাউন্ট করা থাকে। গাড়ি বা অন্যান্য ফোর-হুইলারের ড্যাশবোর্ডের এই এয়ারব্যাগ সিস্টেমের ধারণাটি অবশ্য বেশকিছু মোটরসাইকেলেও বাস্তবায়িত হয়েছে। তবে নিঃসন্দেহে সেই মোটরসাইকেলগুলি আকারে অনেকটাই বিশাল এবং বিলাসবহুল।
সুতরাং একটি বিষয় খুবই পরিস্কার যে বেশিরভাগ সাধারণ মোটরসাইকেলেই এইধরনের এয়ারব্যাগ সিকিউরিটি সিষ্টেম দেয়া মোটেও বাস্তবসম্মত নয়। আর মোটরসাইকেলে গাড়ির মতো কোন কেবিন নেই যা কিনা একজন রাইডারকে ভিতরে ধরে রাখতে পারে। সুতরাং, মোটরসাইকেলের ছো্ট ড্যাশের পরিবর্তে পরিহিত রাইডিং গিয়াররের মাধ্যমেই রাইডারকে সুরক্ষা দেওয়াটা বেশি বাস্তবসম্মত।
সুতরাং এয়ারব্যাগ সেফটি ভেস্টের ধারণাটি আরও সুবিধাজনক এবং বাস্তববাদী একটি বিষয়। আর আধুনিক মোটর-রাইডাররা যেহেতু বেশ বিস্তৃত পরিসরের সেফটি-গিয়ার ব্যবহার করেন, সেখানে ইন্টিগ্রেটেড এয়ারব্যাগ জ্যাকেট ড্যাশ-মাউন্টেড এয়ারব্যাগের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকরী।
তবে এয়ারব্যাগ ভেস্টেও এয়ারব্যাগ সিস্টেমের বেসিক প্রিন্সিপাল ও ফিচারগুলি মূলত: একই। এখানে এয়ারব্যাগ সিস্টেমটি দুর্ঘটনার ঠিক আগে বা তার সাথে সাথেই সক্রিয় হয়ে রাইডারের দেহের চারপাশে একটি কুশনড-আর্মার তৈরি করে। এটি গুরুতর শক বা শারিরিক আঘাত থেকে রাইডারকে রক্ষা করে।
আর আরো আশার কথা যে এয়ারব্যাগ ভেস্টের টেকনলোজি ও ফিচার ইতিমধ্যেই সফলভাবে প্রমাণিত। ফলাফল হিসাবে, মোটোজিপি রেসিং কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের মোটোজিপি ২০১৮ সিজন থেকে প্রত্যেক রাইডারের এয়ারব্যাগ ভেস্টে ব্যবহার বাধ্যতামূলক ঘোষণা করেছে।
মোটরসাইকেল এয়ারব্যাগ ভেস্ট – ইনভেনশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট
মোটরসাইকেল রাইডার বা ঘোড়সওয়ারদের জন্য এয়ারব্যাগ প্রটেকশন সিস্টেমের ধারণাটি মূলত: প্রথম ১৯৭৬ সালে রূপ পায়। হাঙ্গেরিয়ান উদ্ভাবক ট্যামাস স্ট্রাব তার উদ্ভাবিত এয়ারব্যাগ প্রটেকশন সিস্টেমের ধারণাটি আরো সুসংহত রুপ দেবার প্রয়াসে ৩০ নভেম্বর ১৯৭৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি নিবন্ধ করেন।
তাঁর স্বল্প মেয়াদের পেটেন্টটি ১৯৮০ সালেই শেষ হয়। ফলে এটির ব্যবহার ও আরো উন্নয়ন সর্বসাধারনের জন্য অবমূক্ত হয়। সেসময় থেকে মূলত: ’৯০ দশকের শুরু থেকেই জাপানের হোন্ডা তাদের কিছু মোটরসাইকেলের জন্য ফুয়েলট্যাঙ্ক মাউন্টেড এয়ারব্যাগ সিস্টেমে ডেভেলপের কাজ শুরু করে।
একই সময়ে, আরেকটি জাপানি সংস্থা মোটরসাইকেল চালকদের জন্য পরিধানযোগ্য এয়ারব্যাগ সিস্টেম তৈরীর জন্য তাদের গবেষণা ও উন্নয়ন কাজ শুরু করে। ফলাফল, ১৯৯৮ সালে প্রথম এয়ারব্যাগ ভেষ্ট বাস্তব রূপ লাভ করে। জাপানিদের পরপরই বেশ কয়েকটি আমেরিকান ও ইউরোপীয় দেশ এয়ারব্যাগ ভেস্টের পেটেন্ট লাভ করেছিলো।
ফলে প্রথম কমার্শিয়াল এয়ারব্যাগ ভেস্ট ১৯৯৯ সালে ইউরোপ থেকেই বাজারে আসে। একই বছর এই সেফটি ভেস্টটি বেলজিয়ামের ওয়ার্ল্ড এক্সিবিশন অফ ইনভেনশন থেকে গোল্ড ও সিলভার মেডেল পুরস্কার পায়। একইসাথে এটি সেফটি প্রটেকশন লাইফ সেভিং বিভাগেও গোল্ড মেডেল পায়।
এইসময়ে ইটালিয়ান মোটরগিয়ার নির্মাতা ডাইনাজি এয়ারব্যাগ ভেস্টের কোর টেকনলোজির ব্যপক উন্নয়ন ঘটায়। তারা মোটরসাইকেলের সাথে ভেস্টের সংযোগের মাধ্যমে মেকানিক্যাল ট্রিগারের পরিবর্তে ইলেকট্রনিক ট্রিগারিং টেকনলোজি গ্রহন করে। ফলে এই উন্নয়নের মাধ্যমে তারা ২০০১ সাল থেকেই তাদের ইলেকট্রনিক সিস্টেম বেজড এয়ারব্যাগ জ্যাকেট সাফল্যের সাথে বাজারে বিক্রি শুরু করে।
প্রথমদিকে এয়ারব্যাগ জ্যাকেটগুলি মূলত: বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ন্যাশনাল সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টেই ব্যাপকভাবে ব্যবহার শুরু হয়। পরবর্তীতে এটি সাফল্যের সাথে রেস ট্র্যাকে প্রবেশ করে। তবে বর্তমানে এর ব্যপক কার্যকারীতা বিচারে এটি এখন আফিশিয়ালি ২০১৮ সিজন থেকে সব মোটোজিপি রাইডারদের জন্য ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েরছ।
বর্তমানে ডাইনাজি ছাড়াও বিশ্বের আরো অনেক মোটরগিয়ার প্রস্তুতকারক যেমন আলপিনেস্টারস, ক্লিম, আরএসটি, এবং অন্যান্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরণের এয়ারব্যাগ ভেস্ট ও এবং জ্যাকেট উৎপাদন করছে। তারা বিশ্বব্যাপী অফিশিয়াল রেসারের সাথে সাথে সাধারণ মোটরসাইকেল চালকদের জন্যও এসব ভেস্ট ও জ্যাকেট বিক্রি করছে।
মোটরসাইকেল এয়ারব্যাগ ভেস্ট – টেকনলোজি এন্ড ফিচারস
মোটরসাইকেলের এয়ারব্যাগ ভেস্ট মূলত: একটি পার্সোনাল সেফটিগিয়ার যা মোটরসাইক্লিস্টরা সাধারন রাইডিং জ্যাকেটের মতোই পড়তে পারে। এই গিয়ারটি নিয়মিত পোশাকের উপর বা স্ট্যান্ডার্ড প্যাডেড ভেস্টের সাথেই পড়া যায়। অথবা কিছু ভেস্ট সাধারন রাইডিং জ্যাকেটের মধ্যেই ইন্টিগ্রেটেড থাকে।
এয়ারব্যাগ বা এয়ার-ব্লাডারের মূল বিষয়টি হলো এটি একটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কম্প্রেশড গ্যাস ক্যানিস্টার থেকে বের হওয়া গ্যাস দ্বারা তাৎক্ষনিকভাবে স্ফীত হয়। ফলে রাইডারের ঘাড়, বুক, এবং শরীরের অন্যান্য অংশের চারপাশে স্ফীত হওয়া এয়ারব্যাগটি রাইডারকে শক এবং আঘাত থেকে রক্ষা করে।
এই এয়ারব্যাগটি আবারও নতুন গ্যাস ক্যানিস্টার ইনস্টল করে বারবার ব্যবহার করা যায়। এয়ারব্যাগ ভেস্টের এই গ্যাস ক্যানিস্টারে মূলত: কম্প্রেশড কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস থাকে। ক্যানিস্টারটি রাইডারের ক্র্যাশের ঠিক আগে বা তার সাথে সাথেই ট্রিগার হয়ে ভেস্টে দ্রুত গ্যাস রিলিজ করে ভেস্টটি ফুলিয়ে দেয়।
প্রথমদিকে এয়ারব্যাগ ভেস্টের এই গ্যাস ক্যানিস্টার ট্রিগারিং সিস্টেমটি ছিল মূলত: মেকানিক্যাল। ভেস্টের মূল ট্রিগারটি সাধারনত একটি সুতা বা কর্ডের মাধ্যমে মোটরসাইকেলের ফুয়েলট্যাঙ্ক বা বাইকের অন্য কোন সুবিধাজনক অংশের সাথে লাগানো থাকতো।
যখন কোনও ক্র্যাশ বা দুর্ঘটনার পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো তখন রাইডার স্যাডল থেকে স্থানচ্যূত হবার সাথে সাথে সুতায় টান পরে গ্যাস ক্যানিস্টারটি ট্রিগার হয়ে যেত। ফলে মিলিসেকেন্ডের মধ্যে এয়ারব্যাগটি স্ফীত হয়ে রাইডারের দেহের চারপাশে কুশনযুক্ত আর্মার তৈরি করে তার সুরক্ষা নিশ্চিত করতো।
মডার্ণ এয়ারব্যাগ ভেস্ট সিস্টেম
বর্তমানের আধুনিক এয়ারব্যাগ সিস্টেম সম্পূর্ণ ইলেক্ট্রনিক ট্রিগার সিস্টেমযুক্ত। ইটালিয়ান কোম্পানী ডাইনাজি সর্বপ্রথম তাদের এয়ারব্যাগ ভেস্টে ইলেক্ট্রনিক ট্রিগার সিস্টেম সংযুক্ত করে। এটি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় এবং এয়ারব্যাগ ভেস্টে রাখা ইন্টিগ্রেটেড ইলেকট্রনিক সিপিইউ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
ডাইনাজির পরে, আলপিনেস্টারস, ক্লিম, আরএসটি-র মতো অন্যান্য নির্মাতারাও একইধরনের ইলেক্ট্রনিক মডিউল নিয়ন্ত্রিত ট্রিগার সিস্টেমের এয়ারব্যাগ ভেস্ট তৈরী শুরু করে। ইলেক্ট্রনিক সিস্টেমের এয়ারব্যাগের সিপিইউটি অ্যাকসিলারোমিটার, জিপিএস-সেন্সর, এবং জাইরোস্কোপসহ বিভিন্ন সেন্সর ডাটার সাথে এ্যাডভান্সড সফ্টওয়্যার অ্যালগরিদম সমন্বয় করে।
ফলে এর মাধ্যমে এয়ারব্যাগের সিপিইউটি বিভিন্ন রাইডিং কন্ডিশন বিশ্লেষণ করে, এবং যেকোন ক্র্যাশের ঠিক আগমূহুর্তে মিলিসেকেন্ডের মধ্যে গ্যাস ট্রিগার করে। এই সিস্টেমটি অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট, কার্যকর, এবং ইতিমধ্যে এর সঠিক কার্যকারীতা প্রমাণ করেছে।
তাই আধুনিক মোটরসাইকেল এয়ারব্যাগ ভেস্ট সিস্টেম এখন মোটরসাইকেল চালকদের জন্য একটি অত্যন্ত হাই-টেক এবং প্রমাণিত সুরক্ষা ব্যবস্থা। এটি বিভিন্ন রেস-ট্র্যাকে ব্যাপকভাবে পরীক্ষিত এবং ইতিমধ্যে অনেক রাইডারকে বাজে রকম দুর্ঘটনায় আঘাত থেকে বাঁচতে সাহায্য করেছে। সুতরাং এটি এখন সাধারন মোটরসাইক্লিস্টদের শপিং কার্টেও প্রথম পছন্দ।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্নসমূহ:
মোটরসাইকেল এয়ারব্যাগ সিস্টেম কি?
উত্তর: মোটরসাইকেলের এয়ারব্যাগ সিস্টেম মূলত: একটি পার্সোনাল সেফটিগিয়ার যা মোটরসাইক্লিস্টরা সাধারন রাইডিং জ্যাকেটের মতোই পড়তে পারে। এই গিয়ারটি নিয়মিত পোশাকের উপর বা স্ট্যান্ডার্ড প্যাডেড ভেস্টের সাথেই পড়া যায়। তবে হোন্ডার কিছু মোটরসাইকেলে কারের মতো ড্যাশ-মাউন্টেড এয়ারব্যাগ সিস্টেম রয়েছে।
মোটরসাইকেলের এয়ারব্যাগ ভেস্ট কিভাবে কাজ করে?
উত্তর: মোটরসাইকেল এয়ারব্যাগ বা এয়ার-ব্লাডারের মূল বিষয়টি হলো এটি একটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কম্প্রেশড গ্যাস ক্যানিস্টার থেকে বের হওয়া গ্যাস দ্বারা তাৎক্ষনিকভাবে স্ফীত হয়। ফলে রাইডারের ঘাড়, বুক, এবং শরীরের অন্যান্য অংশের চারপাশে স্ফীত হওয়া এয়ারব্যাগটি রাইডারকে শক এবং আঘাত থেকে রক্ষা করে।
আধুনিক ইলেকট্রনিক কন্ট্রোলড মোটরসাইকেল এয়ারব্যাগ সিস্টেমটি ডেভেলপ করেছে কারা?
উত্তর: ইটালিয়ান মোটরগিয়ার নির্মাতা ডাইনাজি আধুনিক ইলেকট্রনিক কন্ট্রোলড মোটরসাইকেল এয়ারব্যাগ সিস্টেমটি ডেভেলপ করেছে। কারা এয়ারব্যাগ ভেস্টের কোর টেকনলোজির ব্যপক উন্নয়ন ঘটায়। তারা মোটরসাইকেলের সাথে ভেস্টের সংযোগের মাধ্যমে মেকানিক্যাল ট্রিগারের পরিবর্তে ইলেকট্রনিক ট্রিগারিং টেকনলোজি গ্রহন করে।
T
Published by Ashik Mahmud Bangla