Shares 2

মোটরসাইকেল ইঞ্জিনের ফুয়েল ইঞ্জেকশন সিস্টেম (FI) কি?

Last updated on 14-Jul-2024 , By Ashik Mahmud Bangla

বাংলাদেশের বাইকারদের কাছে ফুয়েল ইঞ্জেকশন সিস্টেম (FI) অনেকটা নতুন বলা যায়। আমরা দেখেছি যে বাংলাদেশে ১৫০সিসির পারফর্মেন্স বাইক গুলোতে দেয়া এফআই সিস্টেম দেয়া হয়েছে। তবে নতুন নিয়মের কারনে বাংলাদেশে অনেক ফুয়েল ইঞ্জেকশন সিস্টেমের মোটরসাইকেল বাংলাদেশে আসছে। আজ আমরা এই সিস্টেমের কিছু গুরুত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। 

ইঞ্জিনের ফুয়েল ইঞ্জেকশন সিস্টেম (FI) কি ?

ফুয়েল ইঞ্জেকশন সিস্টেম (FI) হচ্ছে মুলত ইঞ্জিনে কার্বুরেটরের বদলে ইলেক্ট্রনিক ভাবে ইঞ্জিনে ফুয়েল দেয়ার সিস্টেম। এর মানে দাড়াচ্ছে যে ইঞ্জিন কম্বাস্টে কার্বুরেটের এর বদলে ইলেক্ট্রনিক ভাবে ফুয়েল পৌছে দেয়া। অন্যান্য বাইকের মত ইঞ্জিনে বাতাস নিয়ে আসে এয়ার ফিল্টার। ইঞ্জিনের ভেতরে Electronic Control Unit (ECU) এর মাধ্যমে ফুয়েল পৌছে দেয়া হয়। ফুয়েলের পরিমান এবং টাইমিং এর সময় পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করা হয় ECU এর মাধ্যমে। Electronic Control Unit (ECU) এর উদ্দেশ্য হলো ইঞ্জিনের তাপমাত্রা, অক্সিজেন লেভেল, এয়ার ইনটেক, থ্রটল রেসপন্স, এবং আরও অনেক কিছুই রয়েছে যা একটি ফুয়েল ইঞ্জেক্ট বাইকের ক্ষেত্রে পরিমাপ করা হয় অনেক গুলো সেন্সরের সাহায্যে।

yamaha fzs fi v2 army green 

২৫ বছর ধরে আমরা ফোর স্ট্রোক বাইকে রাইড করে আসছি, তাই ফুয়েল ইঞ্জেকশন সিস্টেম আমাদের জন্য অনেক উন্নত প্রযুক্তি বলতেই হবে। বলা যায় কিছু দিন আগেও আমরা Yamaha R15 এবং Honda CBR সিরিজের ক্ষেত্রেই শুধু মাত্র এই প্রযুক্তির দেখা পেতাম। আর উভয় বাইকই হচ্ছে ১৫০সিসি স্পোর্টস সেগমেন্টের বাইক। আমরা গত ৩.৫ বছর ধরে দেখতে পাচ্ছি Yamaha FZS সিরিজে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। ফুয়েল ইঞ্জেকশন সিস্টেম ১৫০ থেকে ১৬৫সিসি সেগমেন্টের মোটরসাইকেলের ইঞ্জিনের কর্মদক্ষতা এবং এর কার্যকারিতা বাড়িয়ে তুলেছে। আপনি এটা তখনই বুঝতে পারবেন যখন আপনি এ ধরনের কোন বাইকে পাহাড়ি রাস্তায় রাইড করবেন।

Click Here For Yamaha FZS FI V3 Review

 

চলুন এবার দেখে নেয়া যাক ফুয়েল ইঞ্জেকশন সিস্টেম (FI) এর ভাল এবং খারাপ দিক গুলো কি। ভাল দিকঃ

  • এই প্রযুক্তিতে ECU ইউনিট ফুয়েল এবং বাতাসের মিশ্রনকে সঠিক মাত্রায় ঘটায়, যা কার্বুরেটর এর চেয়ে অনেক বেশি ফুয়েল সাশ্রয়ী।
  • ইঞ্জিনের ভাইব্রেশন অনেক কমে যায় এবং নকিং এর শব্দ কমে যায়, যার কারনে ইঞ্জিন অনেক বেশি রিফাইন্ড হয়েছে
  • ১৫০ - ১৬৫ সিসির বাইকে এফআই প্রযুক্তি অনেক বেশি সাহায্য করে পাহাড়ি রাস্তায় আরামদায়ক রাইড করতে
  • পরিবেশের জন্য অনেক ভাল। কারণ এই প্রযুক্তিতে কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনো অক্সাইড, নাইট্রোজেন এবং অন্যান্য বিষাক্ত গ্যাস কম উৎপন্ন হয়
  • কার্বুরেটর এডজাস্ট করার প্রয়োজন হয় না। কারণ ইসিইউ তার মত করে পরিমাপ করে সেন্সর অনুযায়ী ফুয়েল ও বাতাসের মিশ্রণ ঘটায়।
  • ঠান্ডার স্টার্ট না নেয়ার হাত থেকে বাচায়। আমরা শীতের সময়ে অনেকেই এই সমস্যায় পরে থাকি যে সকালে বা ঠান্ডায় বাইক স্টার্ট নিতে চায় না। কিন্তু এফআই প্রযুক্তিতে এই সমস্যায় পরতে হয় না।

খারাপ দিকঃ

  • এটি অনেক জটিল। সাধারণ মেকানিক এটা পরিস্কার করতে বা সার্ভিস করতে পারবে না। এর জন্য আলাদা টুলস এবং দক্ষ মেকানিক এর প্রয়োজন।
  • এই প্রযুক্তির জন্য অনেক ভাল ফুয়েল দরকার, যেমন রন-৯০। তা না হলে আপনি প্রযুক্তি থেকে ভাল ফিডব্যাক পাবেন না।
  • ফুয়েল ইঞ্জেকশন সিস্টেম এর সার্ভিস, মেরামত বা কোন ধরনের পরিবর্তন অনেক বেশি ব্যয়বহুল। যেহেতু অনেক বাইক কোম্পানি ফুয়েল ইঞ্জেক্ট বাইক নিয়ে আসছে, যেমন ইয়ামাহা বাংলাদেশ তাদের বর্তমানে ৬১টি সার্ভিস সেন্টার রয়েছে যেখানে সার্ভিস, মেরামত বা পরিবর্তন করা যায় । এই ৬১টি সেন্টারের ভেতর ৫৭টি সেন্টারে YDT( Yamaha Diagnostic Tools) রয়েছে।

fi service centre

 বাংলাদেশের মোটরসাইকেল মার্কেট মুলত ইন্ডিয়ান ও জাপানীজ মোটরসাইকেলের উপর নির্ভরশীল। এই দুই দেশ ইমিশন এর ক্ষেত্রে অনেক কাজ করছে। এছাড়া সরকার জোর দিচ্ছে ফুয়েল ইঞ্জেকশন কে আর বেশি রিফাইন্ড এবং পরিবেশের জন্য সহায়ক হবে সেভাবে তৈরি করতে, যাতে করে পরিবেশ কম দূষিত হয়। বর্তমানে, ১১০-১২৫ সিসির কিছু মোটরসাইকেলে এফআই এবং BS-VI ইঞ্জিনসহ লঞ্চ করা হচ্ছে। আমরা আশা করছি তাদের কিছু বাইক বাংলাদেশেও আসতে পারে। যদিও এফআই অনেক ব্যয়বহুল, তবে আমরা আশা করতে পারি ভবিষ্যতে বেশির ভাগ বাইক এফআই সহ বাংলাদেশে আসবে। ধন্যবাদ।

Published by Ashik Mahmud Bangla