Shares 2
নিরাপদ সড়ক গড়ে তুলতে করণীয় । বাইকবিডি
Last updated on 15-Jul-2024 , By Ashik Mahmud Bangla
নিরাপদ সড়ক গড়ে তুলতে করণীয় ।
নিরাপদ সড়ক গড়ে তোলা আমাদের সবার এখনকার প্রধান লক্ষ্য। শুধু সোস্যাল মিডিয়াতে অথবা নিরাপদ সড়ক চাই বললেই কিন্তু আমরা নিরাপদ সড়ক পাবো না। নিরাপদ সড়ক পেতে হলে কাজ করতে হবে আমাদের সবার।
বিগত কয়েকদিনে সড়ক দুর্ঘটনা এক ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। সোস্যাল মিডিয়ায় প্রবেশ করলেই দেখা যায় আপনার আমার পরিচিত কোন না কোন সড়ক দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে। কেউ বা হয়েছেন আহত, কেউ বা নিহত। সড়ক দুর্ঘটনায় খালি হচ্ছে হাজারো মায়ের কোল।
একটি এক্সিডেন্ট যে শুধুমাত্র চালকের কারনেই ঘটে এমনটা কিন্তু নয়, এক্সিডেন্ট ঘটে অনেকগুলো কারনের সমন্বয়ে। আজ আমি এক্সিডেন্টের কারন এবং এর সমাধান নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো। এতে হয়তো এক্সিডেন্ট সম্পূর্ণ বন্ধ হবে না, কিন্তু নিরাপদ সড়ক এর দাবি কিছুটা হলেও পূরন করা সম্ভব।
সব সময় আমার লেখাগুলো হয় বাইকারদের নিয়ে, কিন্তু আজকের এই লেখাটা আমাদের সবার জন্য, নিরাপদ সড়ক এর জন্য।
পথচারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাবঃ
লেখার শুরুতেই আমি বলেছিলাম সড়ক দুর্ঘটনায় সব সময় শুধুমাত্র চালক দায়ী থাকেন না। আমরা যারা বাইক চালাই অথবা বিভিন্ন যানবাহন চালায় তাদের জন্য অসচেতন পথচারী অনেক বড় একটা সমস্যা।
আপনি প্রায়ই আপনার চলার পথে দেখতে পাবেন ফুটওভার ব্রিজ বাদ দিয়ে মানুষ ফুটওভার ব্রিজের নিচ দিয়ে চলাচল করছে, এবং এই মানুষগুলো আপনাকে ও আমাকে প্রতিদিন কোন না কোন বিপদের সম্মূখীন করছে।
অনেক সময় দেখা যায় এই জাতীয় পথচারীদের বাচাতে কোন বাইকার আহত হচ্ছেন সিরিয়াসভাবে, কোন কোন বড় যানবাহন চালক তার গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে। আপনি যদি বাইকার হয়ে থাকেন তবে আপনার সাথে এই ঘটনা জীবনে একটা বার হলেও হয়েছে, চিন্তা করে দেখুন।
এখানেই কিন্তু শেষ না পথচারীদের মধ্যে এমনও কিছু পথচারী আছেন যারা অর্ধেক রাস্তা পার হয়ে কোন যানবাহন দেখলে আবার পিছে চলে আসেন, মূলত তখনি সৃষ্টি হয় আসল সমস্যা।
এই জাতীয় পথচারী চালকে কনফিউজড করে ফেলেন আর ঘটে যায় মারাত্মক সব দূর্ঘটনা। সমাধানটা আমি আমার মতোন করে দিচ্ছি অনেকের পছন্দ নাও হতে পারে। পথচারীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
জেব্রা ক্রসিং, ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে সবাইকে উৎসাহী করে তুলতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর আরো শক্ত হওয়া উচিত। কিছুদিন আগে দেখেছিলাম বাংলাদেশ পুলিশ একটি ভালো উদ্যোগ নিয়েছিলো, সেটা হচ্ছে "ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করলে তাদের কাউন্সিলিং করানো হতো”, এই ব্যবস্থাটি চালিয়ে যাওয়া উচিৎ।
এরপরও যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তাহলে পরিবহন মামলার মতোন পথচারী মামলা চালু করা উচিৎ। এতে করে প্রতিটা পথচারী আইন মানতে বাধ্য থাকবে, আর কোন বাইকারকে পথচারী বাচাতে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হবে না, কোন গাড়ি চালককে পথচারী বাচাতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা এর সম্মুখীন হতে হবে না।
রিক্সাচালক ভ্যান চালকদের কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনাঃ
গরীব বলে এই মানুষগুলো সব সময় সমাজের চোখে সহানুভূতির তালিকায় থাকে,আর এদের নিয়ে কথা বলতে গেলেই এক শ্রেণীর মানুষের থেকে অনেক কথা শুনতে হয়। আচ্ছা এদের জন্য কি আপনি কখনো দূর্ঘটনার সম্মুখীন হন নি?
এদের কি কোন ভুল থাকে না? একই রাস্তায় যদি একজন বাইক চালকে বাইক চালাতে গেলে ড্রাইভিং লাইসেন্স সহ সকল ডকুমেন্টস আপডেট থাকতে হয়,গাড়ি চালকদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম মেনে চলতে হয়, তাহলে রিক্সাচালক ভ্যান চালকরা কেন মানবে না? তারা গরীব বলে?
আপনি একটা জিনিস ভালো করে লক্ষ করলে দেখতে পাবেন অধিকাংশ রিক্সাচালক আইনের পরোয়া করে না। হয়তো বা তাদের এই সম্পর্কে জ্ঞান নেই অথবা তারা ছাড় পেয়ে এর অপব্যবহার করছে। রিক্সা হুট করে ডানে চাপ দিয়েছে, মোড় ঘুরার সময় কোন সিগলাল দেয় নি ঘটে গেছে বড় দূর্ঘটনা, আহত হয়েছেন অনেক বাইকার। আপনি এমন বিপদের সম্মুখীন কখনো হয়েছেন?
রিক্সাচালক,ভ্যানচালকদের যদি কিছুটা নিয়ন্ত্রনে আনা যায় তাহলে সড়ক দূর্ঘটনার হার অনেকটা কমিয়ে আনা যায়। রিক্সাচালকের ভুলে যে শুধুমাত্র অন্যরা ক্ষতিগ্রস্থ হয় তা কিন্তু না, ক্ষতিগ্রস্থ হয় রিক্সার যাত্রিরাও। নিরাপদ সড়ক গড়তে ধনী গরীব সবাইকেই আইন মানতে হবে।
সিগনাল বাতির সঠিক ব্যবহার করাঃ
লেন পরিবর্তন করার সময় অবশ্যই সিগনাল বাতির ব্যবহার করা উচিত। শুধু সিগনাল বাতি ব্যবহার করলেই হবে না, সিগনাল বাতি দিয়ে তারপর কিছুটা সময় নিয়ে লেন পরিবর্তন করা উচিত, হুট করেই সিগনাল বাতি জ্বালিয়ে লেন পরিবর্তন করা উচিত না, এতে করে পিছে থেকে আসা দ্রুততর গাড়ি অথবা বাইকটির সাথে বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।
সচেতনতা আমাদের সবার থাকতে হবে, শুধুমাত্র একজন বা কয়েকজন মানুষের সচেতনতায় তেমন কোন পরিবর্তন আনা সম্ভব না। কিছুদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হওয়া বাইক এক্সিডেন্টের ঘটনা হয়তো সবারই জানা। বাইকারের গতি বেশি ছিলো কিন্তু মাইক্রোবাসের হুট করে বামে চেপে আসাও কিন্তু সেদিনের এক্সিডেন্টের জন্য কিছুটা হলেও দায়ী মনে হয়েছে আমার কাছে।
অতিরিক্ত গতি পরিহার করাঃ
আমাদের দেশের রাস্তা এখন অনেক উন্নত, কিন্তু আমরা এখনো পুরোপুরি সচেতন হতে পারি নি। তাই রাস্তা যেমনি হোক আমাদের অতিরিক্ত গতি পরিহার করা উচিত। কে কখন কোথা থেকে রাস্তার মাঝে চলে আসবে অথবা কোন গাড়ি লুকিং গ্লাস না দেখেই ডানে বামে হুট করে চাপিয়ে দিবে এটা আমরা কেউ জানি না। আর এই অবস্থায় গতি অতিরিক্ত হলে নিয়ন্ত্রন করা তখন অসম্ভব হয়ে যায়।
এজন্য সব সময় আমাদের অতিরিক্ত গতি পরিহার করা উচিত। আমাদের বাইকারদের সবচেয়ে বেশি সচেতন থাকা উচিত, কারন যে কোন দূর্ঘটনায় আমরা বাইকাররা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
এছাড়াও আপনি আমি যখন দ্রুত গতিতে বাইক অথবা অন্য যানবাহন চালাই তখন আমাদের নজর থাকে সোজা সামনের দিকে, যার ফলে হুট করে ডান বাম থেকে আসা ছোট প্রানীগুলো আমাদের চোখে পরে না, ঘটে যায় অনেক দূর্ঘটনা। হয়তো বা আপনার সাথে এমনটাও হয়েছে আপনি আপনার মতো বাইক নিয়ে ছুটে চলেছেন, হুট করে কোথা থেকে কুকুর অথবা অন্য কোন প্রানী সামনে চলে আসলো, আর ঘটে দূর্ঘটনা।
ফিটনেস বিহীন যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়াঃ
ঢাকার রাজপথে এখনো অনেক গনপরিবহনের দেখা মিলে যেগুলোর পিছে না থাকে কোন ব্যাক লাইট অথবা সিগনাল লাইট। আর, এইসব গনপরিহন হুট হাট দাঁড়িয়ে পরে রাস্তার মাঝে যাত্রি উঠানো অথবা নামানোর জন্য।
এর ফলে পিছে থাকা গাড়িটি যে শুধু বিপদের সম্মূখীন হচ্ছে তা কিন্তু না, জীবন নিয়ে ঝুকিতে পরছেন গন পরিবহন থেকে নামা মানুষগুলো। আমরা যারা বাইক ব্যবহার করি তাদের সব সময় গনপরিবহনের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বিশেষভাবে সতর্ক থাকা উচিত। হর্ন ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রিত গতিতে সাবধানতার সাথে গনপরিবহন ওভারটেক করা উচিত।
রাইড শেয়ারিং কম্পানিগুলোর আরো বেশি সচেতন হওয়াঃ
পাঠাও, উবার, রাইড শেয়ারিং এর জন্য ঢাকায় বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনেক তরুণ রাইড শেয়ারকে তাদের পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। কিন্তু কম্পানির সব সময় খেয়াল রাখা উচিত যাতে করে ডাইভিং লাইসেন্স ব্যতীত কেউ রাজপথে বাইক চালাতে না পারে। পাঠাও উবারের অনেক রাইডারের জন্য এখন আমাদের প্রায় অনেকের বিপদের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এদের মধ্যে এমন অনেক রাইডার আছেন যারা ঢাকায় নতুন বাইক নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন,অনেকেই জানেন না এই রাস্তার সম্পর্কে, এদের ফলে বিপদে পরতে হয় অনেককেই।
গন পরিবহনের দিকে নজর রাখাঃ
আমরা সবাই জানি নিরাপদ সড়ক আন্দোলনটা জোরালো হয়েছিল গনপরিবহনের একটা এক্সিডেন্টকে কেন্দ্র করে। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর পরিশ্রমে অনেকটাই নিরাপদ হয়েছে রাজপথ। কিন্তু এখনো সুযোগ পেলে কিছু কিছু পরিবহন চালক রাস্তাটাকে মরনফাদে পরিনত করে। এদেরকে আইনের আওতায় আনা উচিৎ।
কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা সচেতন হতে হবে প্রতিটি মানুষষকেই, ভুল প্রতিটা মানুষই করে কিন্তু নিজের ভুলটা শুধরে না নিয়ে আমরা অন্যের ভুল তুলে ধরতে ভালোবাসি। আমাদের মন মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে সবার আগে। তাহলেই নিরাপদ সড়ক হবে প্রতিটা রাস্তা।
Frequently Asked Questions
বাংলাদেশে বাইক এক্সিডেন্টের প্রধান কারন কি?
উত্তরঃ বাইক এক্সিডেন্ট অনেক কারনেই হয়ে থাকে, তবে অতিরিক্ত গতি বাইক এক্সিডিন্টের অন্যতম এক প্রধান কারন।
নিরাপদ রাইডিং করার জন্য কি কি করনীয়?
উত্তরঃ সবার প্রথমে ভালো মানের ফুলফেস হেলমেট ব্যবহার করা উচিত। অতিরিক্ত গতি পরিহার করা উচিত, লোকাল পরিবহন থেকে নিরাপদ দূরত্বে থেকে বাইক রাইড করা উচিত। ওভারটেক করার সময় বিশেষভাবে সতর্ক থাকা উচিত।
আইনগত সমস্যা এড়িয়ে চলতে কি কি করনীয়?
উত্তরঃ সব সময় আইন মেনে চলা, বাইকের সকল ডকুমেন্ট আপডেট রাখা এর একমাত্র সমাধান।
পরিশেষে বলতে চাই শুধু মাত্র চালকেরা সচেতন হলেই হবে না, সচেতন হতে হবে রাস্তায় চলাচলকারী সকল মানুষকে তাহলেই সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যুর হার অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব। আর আমাদের সবার দাবি নিরাপদ সড়ক সেটাও আমরা পাবো। আমরা যদি প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হই তাহলে অবশ্যই ভালো কিছু করা সম্ভব।
লিখেছেন - আশিক মাহমুদ
T
Published by Ashik Mahmud Bangla