Shares 2

দ্যা অ্যাডভেঞ্চার অফ বান্টিং, মালয়েশিয়া

Last updated on 04-Jul-2024 , By Shuvo Bangla

দেশ ছেড়ে মালয়শিয়া পাড়ি জমিয়েছি মাত্র দুই মাস হল। পড়াশুনা চলছে মালশিয়ান অ্যালাইড হেলথ সায়েন্স ইন্সটিটিউটে(MAHSA)। দেশে যখন ছিলাম তখন বন্ধুবর ওয়াসিফ আনোয়ার ও বাইকবিডির কোর মেম্বারদের সাথে হ্যাং আউট এর সুবাদে প্রায়ই এক দিনের ট্যুর আর সিটির মধ্যে মিট আপ এ যাওয়া হত।

দ্যা অ্যাডভেঞ্চার অফ বান্টিং, মালয়েশিয়া

এখানে আসার পরে নারী-পুরুষ, আবাল-বৃদ্ধ সবার কাছে বাইক (মূলত স্কুটার) দেখে সেইসব সিটি রাইড আর অ্যাড্রেনালিন রাশগুলা খুব মিস করা শুরু করতাম। এর মধ্যে ক্যাম্পাস যেতে আসতে কষ্ট হত, প্লাস ট্রেনের ভাড়া প্রচুর হওয়ায় ভাবতে থাকি একটা ইউসড স্কুটার নেওয়ার। বাসার আইডিয়াটা দেওয়ার সাথেই শুরু হল বিপত্তি।

এই দেশে বাইক এক্সিডেন্টে প্রচুর কমবয়সী ছেলেরা মারা যায় (কারণ মূলতঃ ভূল পদ্ধতিতে রেসিং ডিএনএ আনলিশিং, সিগনাল অমান্য করা ইত্যাদি)কাজেই আম্মু আর আপু স্কুটার দিতে রাজী হচ্ছিলো না। অনেক বুঝিয়ে শেষ পর্যন্ত রাজী করালাম এই শর্তে যে নো উড়াধুড়া রাইডিং, শুধুহ ক্যাম্পাস যাওয়া আর আসা আর হাইওয়ে থেকে দূরে থাকবো।

বাসার পরিচিত বড় ভাইকে দিয়ে দরদাম করিয়ে এক বাংলাদেশী ভাইয়ের ব্যবহৃত স্কুটার Modenas Kriss 110কিনে ফেলি।(বিস্তারিত জানতে তাদের ওয়েবসাইট এ কিছু সময় কাটাতে পারেন https://www.modenas.com.my/v2motorcycle.asp ) মডেনাস ক্রিস এখানকার খুব পপুলার স্কুটার। এর কারণ হল হোন্ডা বা ইয়ামাহার প্রোডাক্ট এর দাম তুলনামূলকভাবে খুব বেশী না হলেও সেগুলোর স্পেয়ার পার্টস এর দাম বেশী।

মডেনাস এর মডেলগুলোর বিল্ড কোয়ালিটি আর ইঞ্জিন পারফরমেন্স দাম অনুযায়ী অনেক বেটার। অনেকটা আমাদের দেশের লিফান এর বাইকগুলোর মত যা বাজেট ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় প্রথম দিকে।  স্কুটার কিনে অল্পকিছু টাকা দিয়ে সার্ভিসিং করে কুয়ালালামপুরের রোডে ফার্স্ট হ্যান্ড এক্সপিরিয়েন্স নিয়েছি দুই সপ্তাহ মত।

চালাতাম সকালে উঠে যখন ট্রাফিক ডেনসিটি কম থাকে। ৭৮০০০ কিমি চলা স্কুটার হলেও মডেনাস এর এঞ্জিনের সাউন্ড আর পাওয়ার ডেলিভারি আমাকে ১৫০ সিসির Znen এর স্কুটার এর কথা মনে করিয়ে দেয়! যাই হোক আমার ফরেন টেরিটরি বাইকিং চলতে থাকে। পবিত্র রমজান মাস শেষ করে লাইফে প্রথম ফ্যামিলির বাইরে ঈদ করতে হয়েছে এইবার, স্বাভাবিক ভাবেই অনেক কিছু মিস করেছি ঈদের দিনে। ঈদের পরদিন রুমে শুয়ে বোর হচ্ছিলাম।

রুমমেট জুনিয়র অফার দিলো পাশেই সানওয়ে পিরামিড (এখানকার অত্যন্ত জনপ্রিয় টুরিস্ট অ্যাট্রাকশন)আছে , চলেন ঘুরে আসি। শুনেই আর দেরি করিনি, দুইটা টি শার্ট (বুকে বাতাস কম লাগার জন্য) আর দুইটা হেলমেট (এখানে রাইডার এবং পিলিওন দুইজনের ই হেলমেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক)নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। মোটামুটি ধীরে সুস্থে চালিয়ে ১৫ মিনিটের মধ্যে সানওয়ে পিরামিড পৌঁছে গেলাম। সেখানে যোহরের নামাজ আর অল্পকিছু ছবি তুলে বের হলাম।

পথে জুনিয়র আবার অফার দিলো যে মোটামুটি ১৯-২০ কিমি দূরে একটা টেম্পল আর কেভ মত এলাকা আছে, সেটাও দেখে আসি। কিন্তুআমরা কেউ ই রাস্তা চিনি না, কাজেই গুগল ম্যাপস ভাইয়াকে তলব করতে হল আর কি। কিন্তু প্রথম কয়েকটা ইন্টারসেকশন ঠিক নেওয়ার পরে ছোট ভাইয়ের ভুল জিপিএস রিডিং এর জন্য আমরা কুয়ালালামপুর থেকে বাইরে যাওয়ার এক্সিট ফ্লাইওভারে উঠে পড়ি। কিছুক্ষণ পরে আমাদের মনে হল যে আমরা শহর থেকে অনেকটা দূরে চলে এসেছি।

পরে রাস্তার পাশে ছোট একটা স্টপ নিয়ে ম্যাপ এর ডাইরেকশনাল মোড ঠিক করতে গিয়ে ফোন এর ব্যাটারি অক্কা !! আমার ফোনে চার্জ ছিলো কিন্তু ফেরার পথে জিপিএস (বিশেষ করে রাতে) অত্যন্ত জরুরী বিধায় ঠিক করলাম এখন রোড সাইন দেখে চালাই পরে ফেরার সময়ে জিপিএস দেখবো। যেই ভাবা সেই কাজ, হাইওয়েতে স্লো আর মিডিয়াম লেন সুইচ করে করে দুপুরের তপ্ত রোদকে এঞ্জয় করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছি (এখানে হাইওয়েতে তিন লেন থাকে যেগুলোর স্পীড লিমিট স্লো ৫০-৬০ কিমি/ঘন্টা, মিডিয়ামঃ ৬০-৮০ কিমি/ঘন্টা আর ফাস্ট লেন ৮০-১২০ কিমি/ঘন্টা) ।

ডেস্টিনেশন আননোউন, ইচ্ছা জাস্ট হারিয়ে যাওয়া। আধাঘন্টা মত রাইড করার পরে আবিস্কার করলাম আমরা কুয়ালালামপুর ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট (যেখানে আমি দুইমাস আগে ল্যান্ড করেছিলাম) সেখানে পৌঁছে গিয়েছি!! রোড সাইনে এয়ারপোর্টের সাথে একটা পোর্টের কথা লেখা ছিলো। সেটা দেখে সী বিচ এ যাওয়ার ইচ্ছেটা নেশার মত চেপে বসল মাথায়! “কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা, অক্টেন ঢেলে মেলে দিলেম স্কুটারের এই ডানা”এই ফর্মুলায় সিদ্ধান্ত নিলাম আজকে সী বিচের একদিন আর আমার যেই কয়দিন লাগে।

হেলমেটের ভাইজরটা মটোজিপি রাইডার স্টাইলে লক করে দিয়ে  মাঝে একের পর এক ইন্টারসেকশন, ফ্লাইওভার আর শহরতলী পার হতে লাগলাম। রোড সাইনে পোর্টের লোকেশন আস্তে আস্তে কাছে আসতে লাগল। যাইহোক ফুলে যেমন কাঁটা থাকবে, জার্নিতেও ঝামেলা থাকবে। একটা পয়েন্টে এসে আর ডিসাইড করতে পারছি না সী বিচ কোনদিকে প্লাস চারিদিকে রাস্তা এক ই রকম। সেটা জোহর বারু, শাহ আলম, পুত্রাজায়া আর আর চেরাস যাওয়ার কমন পয়েন্ট। একটু সামনে যেতেই স্কুটারের স্টার্ট অফ হয়ে গেল। কিছুটা চেষ্টার পরে আবার স্টার্ট করে পেছনে ফেলে আসা এক ছোট গ্যারেজে নিলাম।

সেখানে পুরাতন স্পার্ক প্লাগটা ফেলে দিয়ে ৫ রিংগিত এর এন জি কে এর প্লাগ লাগিয়ে নিলাম। গ্যারেজের কর্মচারী তামিল ছিলো কিন্তু ভালো ইংলিশ বলে সো ওর কাছ থেকে জানলাম যে সবচে কাছের সী বিচ হল বানটিং যা ৩০-৩৫ কিমি দূরে। আমার ৪.২ লিটারের ট্যাঙ্ক তখন প্রায় খালি। নেক্সট গ্যাস স্টেশন ৬ কিলো সামনে! ডানে বামে না তাকিয়ে এক টানে গ্যাস স্টেশনে গিয়ে ট্যাঙ্ক লোড করলাম ৫.২৫ রিংগিতের ৯৫ অকটেন দিয়ে। (এখানে তেলের দাম ৯৪ আর ৯৫ অকটেন ১.৬ রিংগিত/লিটার আর ৯৮ ও ১০০ অক্টেনের দাম ১.৭৫ রিংগিত/লিটার। এক রিংগিত সমান ২০ টাকা কাজেই তেলের দাম দেখে চোখের জল ফেলতেই পারেন কারণ আমরা তিনগুন্ন দাম দিয়ে তেল কিনি তাও আবার কাদা-বালি ইত্যাদি স্পেশাল ইনগ্রেডিয়েন্ট সহ!!!) এবার আমাদের আর পায় কে!

এক লাফে বানটিং এর লেন ধরে এগিয়ে গেলাম। দুপুর তিনটার দিকে বানটিং সিটি তে চাকা রাখলাম। চারিদিকে নারকেল গাছ আর সমুদ্রের রিফ্রেশিং হাওয়া পুরো জার্নির ক্লান্তিকে বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে দিলো। সী বিচ তখনও ৬ কিলোমিটার দূরে বাট উই গট দেয়ার ফাইনালি!!! আরও অনেক বাইকার সেখানে ছিলো। কে টিম এম ডিউক , আর টু ফাইভ , আর নিনজা ২৫০ এ পার্কিং ভর্তি!! বাইক পার্ক করার সাথেই শুনি আসরের আজান। নামাজের পরে বিচে ঢুকলাম। ছোট একটা বিচ কিন্তু অনেক পপুলার!! যেহেতু আমরা কোন রকম ট্যুরের প্রিপারেশন ছাড়াই এসেছি তাই গোসল করার জন্য কোন আলাদা কাপড় নাই। একটু সার্চ করে একটা দোকান পাওয়া গেলো যেখান থেকে দুটো শর্টস কিনে গোসল করে প্লাস গাদা দশেক ছবি তুলে ফেরার পালা কারণ ফেরার সময়ে দিনের আলোতে কুয়ালালামপুরের যত কাছে আসা যায় এরপর অন্ধকার হলে গুগল ম্যাপস দেখে বাসায় ফিরতে হবে। কাজেই এইবার হবে স্পিডিং।

বাইকও সেভাবেই রেস্পন্স দিলো। টপ স্পীড ১০৭ তুলতে পেরেছি আর অ্যাভারেজ ছিলো ৭০-৮৫ কিমি ঘন্টা মত। রাত আটটার সময়ে কুয়ালালামপুর সিটির শেষ মাথা পুত্রা হাইটস এর সিগন্যালে পুলিস আটকাইলো (আমার পিলিওন কিছুক্ষনের জন্য হেলমেট খুলেছিলো আর সেই সময়ে প্যাট্রল কার পাশেই পার্ক করা ছিলো) তবে স্টুডেন্ট আইডি, ভিসার কপি আর বেসিক কিছু কোয়েশ্চেনিং এর পরে ছেড়ে দিলো। অফিসারকে থ্যাঙ্কস দিয়ে সুবাং জায়ার উপর দিয়ে ই ১১ হাইওয়ে দিয়ে সোজা বাসার এলাকায় এন্ট্রি নিলাম।

রাত ৯.৩০ এ রুমে ঢুকে বিছানায় পিঠ লাগিয়ে গুগল ম্যাপে বান্টিং এর ডিসট্যান্স দেখলাম আমার বাসা থেকে ৯২ কিমি। কাজেই যাওয়া আসা মিলে ২০০ কিমি আর ভুল পথে যাওয়া আর ইউটার্নগুলো মিলিয়ে প্রায় ২২০ কিমি মত জার্নি ছিলো। ঈদের ছুটি দেশে কাটাতে না পারার ফ্রাস্ট্রেশন এই ট্যুর অনেকটাই মিটিয়ে দিয়েছে। আল্লাহকে অশেষ ধন্যবাদ যিনি আমাকে এইরকম একটা দিন উপহার দিয়েছেন।

আমার কোর্স কো অর্ডিনেটর ম্যাডাম ও আমার ক্লাসমেটরা অনেকেই বিশ্বাস করতে চায়নি আমি এতদূর ঘুরে এসেছি কিন্তু ছবি দেখার পরে তারা আমাকে “ ক্রেজি” ট্যাগ দিয়েছে! যাইহোক ম্যাডামের কাছ থেকে জেনেছি বান্টিং থেকে ৫৫ কিমি সামনে পোর্ট ডিক্সন নামে এক সী রিসোর্ট আছে যা আরো সুন্দর। তাই সেমিস্টার ব্রেকে আমার টার্গেট পোর্ট ডিক্সন ঘুরে আসার। মালয়শিয়ায় কোন বাঙ্গালি বাইকার থাকলে অক্টোবরে আমার সাথে জয়েন করতে পারেন কুয়ালামপুর-পোর্ট ডিক্সন- কুয়ালালামপুর বাইক ট্যুরে।

পরিশেষে কিছু মানুষের উপর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই। কারণ এর আগে আমি দেশে থাকতেও কোনওদিন হাইওয়েতে বাইক নিয়ে যাইনি। সবসময়ে পিলিওন হয়ে গিয়েছি স্পেশালি ওয়াসিফ এর পিলিওন হয়ে। ওর পেছনে বসে অবসারভেশন করে শিখেছি কিভাবে হাইওয়েতে রাইড করতে হয়। আশেপাশের রাইডার প্লাস ট্রাফিকের মতিগতি বুঝতে হয়, রিয়ার ভিউ মিরর দেখে সেইফ ডিস্ট্যান্স বোঝা, হ্যান্ড সিগন্যালিং, ইন্ডিকেটর দিয়ে লেন সুইচ, ব্রেকিং পয়েন্ট মেজারমেন্ট করা, কখন স্পীডিং আর কখন ক্রুজিং এইসব রোড কোড আমি টিম বাইকবিডির রাইডারদের কাছ থেকে দেখে শিখেছি যা আমার লাইফের প্রথম ট্যুরকে রীতিমত অ্যাডভেঞ্চার অফ বান্টিং এ পরিণত করেছে।

দেশে ফিরে টিম বাইকবিডির সাথে ট্যুরে যেতে যাই আমার সুন্দর মাতৃভূমির বিভিন্ন আনাচে কানাচে। আমার জন্য দুয়া করবেন যাতে আমি আরও ট্যুর এক্সপিরিয়েন্স নিয়ে আপনাদের মাঝে ফিরে আসতে পারি। ততদিন পর্যন্ত রাইড সেইফ এভ্রিওয়ান অ্যান্ড টেক কেয়ার। আল্লাহ হাফিজ।

-Omar Ferdaus 

Published by Shuvo Bangla

Best Bikes

Honda CB Hornet 160R

Honda CB Hornet 160R

Price: 169800.00

Honda CB Hornet 160R ABS

Honda CB Hornet 160R ABS

Price: 255000.00

Honda CB Hornet 160R CBS

Honda CB Hornet 160R CBS

Price: 212000.00

View all Best Bikes

Latest Bikes

CFMoto 125NK

CFMoto 125NK

Price: 0.00

Liban Wind

Liban Wind

Price: 0.00

Liban Phoenix Plus

Liban Phoenix Plus

Price: 0.00

View all Sports Bikes

Upcoming Bikes

Liban Wind

Liban Wind

Price: 0.00

Liban Phoenix Plus

Liban Phoenix Plus

Price: 0.00

Liban Phoenix

Liban Phoenix

Price: 0.00

View all Upcoming Bikes