Shares 2
দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে ঢাকা টু মাওয়া - তসলিম আহমেদ মুরাদ
Last updated on 30-Jul-2024 , By Ashik Mahmud Bangla
দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা টু মাওয়া। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার থেকে নামলেই এর সুবাতাস পাওয়া যায়, দ্রুততম সময়ে চলে যাওয়া যায় একেবারে মাওয়া ঘাট পর্যন্ত। অনেক আশা ভরসা নিয়ে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ের স্বাদ নিতে গিয়েছিলাম গত শনিবারে।
এই এক্সপ্রেসওয়ে সুন্দর, অল্প সময়ে চলে যাওয়া যায় মাওয়াতে। কিন্ত এখানে গতির খেলা খেলতে চাইলে সেটা হবে খুবই বিপজ্জনক, টপ স্পীড চেক করার চিন্তা মাথায় না আনাই ভালো। সুন্দর, উপভোগ্য কিন্ত বিপজ্জনক এই রাস্তায় বিভিন্ন অব্যবস্থার জন্য সমভাবে দায়ী - আইনের প্রয়োগের অভাব আর আমাদের বদভ্যাস! রাস্তার পিচের গ্রীপ এখনো যথেষ্ট ভালো হয় নাই, অনেক যায়গাতেই মৃদু ঢেউ এর উপস্থিতি টের পাওয়া যাচ্ছে। আশপাশ যেহেতু খালি তাই এখানে Crosswind এর ব্যাপক প্রকোপ, যেটা সামনে বর্ষা মৌসুমে আরো বাড়বে।বাইকের জন্য কিন্তু এই Crosswind সবসময়েই খারাপ। রাস্তার দুইপাশে অনেক ধূলো, হালকা বাতাসেই ধূলোর উড়োউড়ি শুরু হয়ে যায়। সন্ধ্যা বা রাতে Visibility Low হয়ে যায় এই ধূলোর কারণে!
রাস্তার কাজ শেষ হলেও অনেক যায়গাতেই খালি ড্রাম আর প্লাস্টিকের ব্যারিয়ার দিয়ে রাস্তা আটকিয়ে কাজ চলছে। মাঝের ডিভাইডারের আশেপাশে কর্মীরা কাজ করছেন এখনো।বিভিন্ন ব্রীজ ও কালভার্ট থেকে নামার পরপরই আপনে বিভিন্ন Obstacles এর দেখা পেতে পারেন, সচরাচর যখন আমাদের গতি তূলনামূলক বেশি থাকে। সো বুঝতেই পারছেন কেমন অজানা বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে এগুলো! বাংলাদেশের অন্যসব হাইওয়ের মত এখানেও কোন কারণ ছাড়াই রং সাইডে যানবাহন চলাচল করে।কথা নাই বার্তা নাই দেখবেন, 'আকাশ ভরা তারা, সামনে গাড়ি খাড়া'! এক্সপ্রেস ওয়েতে রিকশা,সাইকেল, সিএনজি, ভ্যান এদের সদর্প উপস্থিতি তো আছেই (যেগুলোর থাকার কথা পাশের সার্ভিস রোডে) বরঞ্চ অনেকসময় রং সাইডেও দেখা পাবেন এগুলোর।বিপদের মাত্রা আরো বেড়ে যাবে রং সাইডে Construction ভেহিকেল গুলোর উপস্থিতি। অতিকায়,দানবীয় এই মেশিনগুলো চলছে না থেমে আছে অনেকসময় তা বোঝাও যায় না ঠিকমত! মানুষের সুবিধার্থে মাওয়া
এক্সপ্রেসওয়ের উপরেই আছে বৈধ ও অবৈধ বেশ কিছু বাসস্টপেজ!যেখানেই স্টপেজ সেখানেই আছে মানুষ ও যানবাহনের অবধারিত জটলা।আপনে যদি দ্রুতগতিতে আসতে থাকেন তাহলে এসব জটলায় আপনাকে আঁতকা ব্রেক করতেই হবে, বাউলি মেরে বের হয়ে যেতে চাইলে বাস বা মানুষের সাথে ঠুঁয়া খেতে পারেন।বাস স্টপেজ ছাড়াও পুরো এক্সপ্রেসওয়েতেই আপনে দেখতে পাবেন যখন-তখন যেখানে-সেখানে রাস্তার ডানে ও বামে দাঁড়িয়ে আছে রং বেরংগের বিভিন্ন বাস।
হাইওয়েতে রাইডিং করার সময় সেফটি গিয়ারের গুরুত্ব
অনাহূত অতিথির মত আপনার বাইকের সামনে উড়ে এসে জুড়ে বসবে এক্সপ্রেসওয়ে 'পারাপার'রত পথচারীরা। উনাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার মধ্যপথে থেমে যাবেন অথবা উল্টো দিকে দৌড় দিবেন, যেটা ঘটে যেতে পারে ঠিক আপনার বাইকের সামনেই। কাজে সাধু সাবধান, গতিতে দূর্গতি! এই এলাকার মানুষজন এখনো এই স্বপ্নের এক্সপ্রেসওয়ে ব্যাপারটা ভালোমত হজম করতে পারেন নাই, এত গতি-দূর্গতির সাথে উনারা অভ্যস্থ নন। আশার কথা, এখনো কুকুর বা ছাগলের আগমণ দেখি নাই এই এক্সপ্রেসওয়েতে।
সবচেয়ে বিপজ্জনক মনে হয়েছে আমার কাছে বিভিন্ন অনুমোদিত ও অনুনমোদিত 'কাটা' বা 'ইউটার্ণ'। কোনরকম সিগন্যাল ছাড়াই রাস্তার অপরপাশ থেকে ইউটার্ণ নিয়ে বিবিধ যানবাহন 'হান্দায়' যাবে আপনার সামনে। এসবের কিছু কিছুর এন্ট্রি হতে পারে পুরোপুরি Blind Spot থেকে, কাজেই নিয়ন্ত্রিত গতি না থাকলে কিন্তু মোলাকাত অবশ্যম্ভাবী! আরেকটা ব্যাপার না বললেই নয়।এই রোডে কিন্তু যেকোন প্রকার চারচাক্কা টাইপ যানবাহনই চরম বেপরোয়া এবং Aggressive. বাইক ও বাইকারদের উনাদের গোণার টাইম নাই।নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে সর্বদা লুকিং গ্লাসকে 'রাডার' হিসেবে ব্যবহার করা এবং তদনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া এখানে অত্যন্ত জরুরি৷ রাস্তায় ধূলাবালি আছে প্রচুর। সামনে বর্ষা আসলে এগুলো কাদায় পরিণত হবে। যথোপযুক্ত রোড সাইন ও ইন্ডিকেশন নাই, এগুলো বসানোর আগেই এই এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দেওয়া হয়েছে!
সুতরাং, এই এক্সপ্রেস ওয়ে আসলে ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডের মতই ৪ লেনের একটি রাস্তা যেখানে ওইসব রোডের সব অব্যবস্থাই আপনাকে এখানে উপভোগ করতে হবে। কাজেই সংগ্রামী সাথী ভাই ও বোনেরা, এই এক্সপ্রেসওয়েতে উঠেই 'ধরছি তোরে, খাইছি তোরে' মুডে গতির ভয়ংকর খেলায় মেতে উঠার কোন কারণ নেই! মাওয়া রোডে আপনে 'চিল' করে চালাতে পারেন! অত সময়ে অত কিমি যাওয়া যাবে, আপাতত এই চিন্তা বাদ দেন।সবসময় যে আপনাকে আনলিমিটেড বুফেই খেতে হবে এর তো কোন কারণ নেই, নাহয় পাকস্থলীতে অল্পকিছু যায়গা খালি রেখে খাবারটা এঞ্জয়ই করলেন! আগের মত ভাংগাচোরা রাস্তায় ধূলো আর ঝাঁকি খেতে খেতে মাওয়া যাওয়া লাগছে না, এটাই কি যথেষ্ট নয়?
আপনে যদি ২০% অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করেন, ইনশাল্লাহ আপনে ৮০% দূর্ঘটনা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবেন। আর এই সতর্কতার প্রথম ও প্রধান ধাপই হচ্ছে নিয়ন্ত্রিত ও নিরাপদ গতি। আমাদের মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের রাস্তায় শুধু নিজের ভুল শুধরানোর সুযোগই নয় বরং আশেপাশের অন্যান্যদের ভুলও শুধরানোর সুযোগ রেখে বাইক চালাতে হয়। সকল বাইকারদের গন্তব্যে প্রত্যাবর্তন শুভ ও নিরাপদ হোক, এই শুভকামনা রইলো।
লেখা ও ছবিঃ তসলিম আহমেদ মুরাদ
T
Published by Ashik Mahmud Bangla