Shares 2

কুয়াকাটা ভ্রমনে একদল বাইকার - সাহাদাত হোসেন বাপ্পি

Last updated on 13-Jul-2024 , By Saleh Bangla

কুয়াকাটা । ইহার অপর নাম সাগরকন্যা, যা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি সৌন্দর্যমন্ডিত স্থান হিসাবে পরিচিত। কুয়াকাটা বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া থানার লতাচাপলি ইউনিয়নে অবস্থিত ও এর বিচটি ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ। জেলা সদর হতে ৭০ কিলোমিটার, বরিশাল থেকে ১০৮ কিলোমিটার এবং ঢাকা হতে ৩২০ কিলোমিটার দুরে অস্থিত । 

Kuakata tour

ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, রাখাইনদের মাতৃভূমি হিসেবে খ্যাত বার্মার আরাকান রাজ্য এক সময়ে বর্মী রাজা দখল করে নেয়। রাজার সৈনিকদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে রাখাইনরা দল বেঁধে বড় বড় নৌকায় করে সাগরে ভাসতে থাকে। ভাসতে ভাসতে এক সময় একটি দ্বীপে নৌকা আটকে গেলে তারা সেখানে নেমে পড়ে। ওই দ্বীপটি ছিল পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী দ্বীপ। এরপর তারা সেখানে বসবাস শুরু করে। এর মধ্যে কিছু রাখাইন পরিবার ওই স্থানে বসবাস না করে তারা বনাঞ্চলের মধ্যে ঢুকে বনের গাছপালা কেটে সেখানে বসবাস শুরু করে। বনাঞ্চলে বসবাস করার উদ্দেশ্যে ছিল সহজভাবে খাবার সংগ্রহ করা। যে বনাঞ্চল কেটে তারা বসবাস শুরু করে সেটিই হচ্ছে বর্তমান কুয়াকাটা।

কুয়াকাটা ভ্রমনে একদল বাইকার - সাদাত হোসেইন বাপ্পি 

kuakata sea beach in bangladesh

তখন ওই বনের কোন নাম ছিল না। থাকলেও রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন তার নাম জানত না। যার ফলে সাগর পাড়ি দিয়ে ওই স্থানে বসবাস শুরু করায় রাখাইন ভাষায় তারা নামকরণ করে কানশাই। কানশাই শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে ভাগ্যকুল। কিন্তু রাখাইন লোকজন এখানে বসবাস করলেও তাদের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায় খাবার জন্য মিঠা পানি। সাগরের পানি লবণাক্ত হওয়াই তা খাওয়া সম্ভবপর ছিল না। এজন্য তারা সবাইমিলে নিজ উদ্যেগে একটি কুয়া খনন করে তা থেকে মিঠা পানি সংগ্রহ করতো। মিঠা পানির কুয়ার নামানুসারে নামকরণ করা হয় কুয়াকাটা। রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন কুয়ার মিঠা পানি শুধুমাত্র পান করত বাকি সব কাজে ব্যবহার করতো সাগরের পানি ই। 

bike tour bangladesh

কুয়ার সন্ন্যিকটেই তারা স্থাপন করে ৩৭ মণ ওজনের ধ্যানমগ্ন অষ্টধাতুর বৌদ্ধ মূর্তি। মন্দিরের নির্মাণ সৌন্দর্যে ইন্দ্র চীনের স্থাপত্য অনুসরণ করা হয়। দেখলে মনে হবে থাইল্যান্ড, লাওস বা মিয়ানমারের কোন মন্দির। প্রায় সাড়ে তিন ফুট উঁচু বেদির উপর মূর্তিটি স্থাপন করা হয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মের আড়াই হাজার বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ৮৩ বছর পূর্বে অষ্টধাতুর ওই মূর্তিটি ওই স্থানে স্থাপন করা হয় বলে রাখাইন সম্প্রদায়ের ইতিহাস থেকে জানা যায়। 

group tour kuakata

প্রায় ৭ ফুট উচ্চতার এ বৌদ্ধ মূর্তিটি স্থাপন করেন উপেংইয়া ভিক্ষু। তখন মন্দিরের দায়ক (পরিচালক) ছিলেন বাচিন তালুকদার। এ অঞ্চলের রাখাইন সমপ্রদায়ের তেজস্বী নেতা হিসেবে পরিচিত বাচিন তালুকাদার ১৯৯৯ সালে মারা যান। তার ছেলে অং সুমিং তালুকদার মন্দিরের দায়িত্ব পান। তিনিই এখন মন্দির ও কেরানীপাড়ার দায়িত্বে আছেন। মন্দিরের পাশেই ইন্দ্র চীন স্থাপত্যের অনুকরণে নির্মাণ করা হয়েছে শ্রী মঙ্গল বৌদ্ধ বিহার।


সেখানে বসে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা ধর্ম সভা করতেন। মন্দিরের নীচেই হচ্ছে ঐতিহাসিক কুয়াটি। বর্তমানে সেই কুয়ার পানি খাওয়ার অনুপোযোগী অর্থাৎ পরিত্যক্ত। তারপরও কুয়াকাটার ঐতিহ্য ধরে রাখতে কুয়াটিকে নতুনভাবে সংস্কার করা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক সহায়তায় অপূর্ব স্থাপত্যকলার সমন্বয়ে মন্দিরটি পুনঃ নির্মাণ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এর চারদিক পাকা ও উপরে ছাদ দেয়া হয়েছে। কুয়াকাটায় আসা পর্যটকরা যাতে মনোমুগ্ধকর পরিবেশে ওই কুয়ার দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন সেজন্য সেখানে প্লাষ্টিক টিন দিয়ে একটি লন তৈরি করা হয়েছে। 

yamaha r15 v2 in bangladesh

পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা সী-বিচের অপার নৈসর্গিক সৌন্দর্য নিজের চোখে না দেখলে বোঝানো কঠিন যা শুধু দেখলেই উপভোগ করা যায়। তখন মনে হবে বিরাট এক অগ্নিকুন্ড আস্তে আস্তে সাগর ভেদ করে আসমানের উপরে দিকে উঠে যাচ্ছে আবার সূর্যাস্তের সময় সাগরের ঢেউয়ের মধ্যে আস্তে আস্তে হারিয়ে যায় সূর্যটা। মনে হয় সাগরের মধ্যেই সূর্যের বাড়ি ঘর। 

kuakata tour

পূর্ণিমার রাতে সী বিচ হয় দেখা মত। চাঁদের আলোয় বিশাল বিশাল ঢেউগুলো যেন কাছে ডাকে। আর আমাবশ্যায় অন্ধকার রাতে দেখা যায় আরেক দৃশ্য ফসফরাসের মিশ্রণে সাগরের ঢেউগুলো থেকে আলোর বিচ্ছুরণ ছড়ায়। কুয়াকাটার সী বিচের সৌন্দর্য লিখে শেষ করা সত্যিই খুব কঠিন ব্যাপার। আজ এই পর্যন্তই। ধন্যবাদ সবাইকে কষ্ট করে লেখাটা পড়ার জন্য।  

 লিখেছেনঃ সাহাদাত হোসেন বাপ্পি কৃতজ্ঞতায়ঃ আরিফুল হক নয়ন    

 আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।

Published by Saleh Bangla