Shares 2

করোনাভাইরাস: কেন ও কীভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবেন?

Last updated on 13-Jul-2024 , By Ashik Mahmud Bangla

করোনাভাইরাস এর বিস্তার ঠেকানোর জন্য সামাজিক দূরত্বের কোন বিকল্প নেই। গোটা বিশ্ব এখন সামাজিক দূরত্ব নিয়ে অনেক বেশি সচেতন। আমাদের দেশেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নানা রকম পদক্ষেপ নিচ্ছেন, কিন্তু এখনও আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ সামাজিক দূরত্ব নিয়ে মোটেও সচেতন না। একটু সুযোগ পেলে আমাদের দেশের অনেক মানুষ বাইরে বের হচ্ছে এর ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি দিন দিন বেড়েই চলেছে। আজ আমরা জানবো কেন এবং কিভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবেন সেই সম্পর্কে।

সামাজিক দূরত্ব কি?

সামাজিক দূরত্ব বলতে বোঝায় নিজের বাসায় থাকা, ভিড়ে না যাওয়া, একজন আরেকজনকে স্পর্শ না করাকে বোঝায়। করোনাভাইরাস এর বিস্তার ঠেকানোর গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং স্বেচ্ছায় নিজেকে আলাদা করে রাখা অর্থাৎ সেলফ আইসোলেশনে রাখা এখন একমাত্র প্রতিষেধক।

কিভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা যায়?

জাতি হিসেবে আমরা অনেক আন্তরিক, আমরা সব সময় চাই সবাই মিলে একসাথে চলতে। কিন্তু করোনাভাইরাস মোকাবিলায় আপনাকে অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। আপনি চাইলে খুব সহজে এটি করতে পারেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কিছু সহজ উপায়ঃ

১- একটু সময় পেলে আড্ডা দিতে আমরা সবাই খুব পছন্দ করি। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আমাদের আড্ডার ধরনটা একটু পরিবর্তন করলেই চলবে। বন্ধুদের খোঁজ নিতে অথবা আড্ডা দিতে ভিডিও চ্যাট ব্যবহার করুন, কিন্তু একে অপরের কাছে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

২- এই সময়ে বাইরের খাবার না খাওয়ায় সবচেয়ে উত্তম। কিন্তু অনেক সময় বাধ্য হয়ে বাইরের খাবার খেতে হয়। হোটেলে গিয়ে ভীড় না করে খাবার অর্ডার দিয়ে বাসায় এনে খেতে পারেন। কিন্তু কাঁচা সালাদ বাইরে থেকে আনাবেন না। আর যিনি খাবার নিয়ে আসবেন তাকে বলবেন খাবার দরজার বাইরে রেখে দিতে। টাকা আদান প্রদানের সময় গ্লাভস ব্যবহার করুন। 

৩- নিত্যপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে যেতে পারেন। তবে চেষ্টা করুন কিভাবে কম যাওয়া যায়। যাওয়ার জন্য কম ভিড় থাকার সম্ভাবনা এমন সময়টা বেঁছে নিবেন। বাজার থেকে বাসায় এসে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নেবেন। ভিড় এড়িয়ে চলুন

৪- বাসা থেকে বের হতে হলে প্রয়োজনীয় সতর্কতা মেনে চলুন। যে কোনো ধরণের ভিড় এড়িয়ে চলুন। পাশের জনের সঙ্গে দুই-চার হাত দূরত্ব বজায় রাখুন। সম্ভব হলে নিম্ন আয়ের মানুষের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন। 

৫- হাসপাতাল, ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর অহেতুক চাপ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। খুব বেশি প্রয়োজন না হনে হাসপাতালে যাওয়ার দরকার নেই। 

৬- বাসায় যদি ফাকা জায়গা থাকে বাচ্চারা সেখানে একা একা খেলতে পারবে। তবে বাইরে অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে যাতে একসাথে খেলাধুলা না করে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।

  

৭- সংক্রমিত না হলে পরিবারের সদস্যরা একে অন্যের সাথে মিশতে পারবেন। কিন্তু যদি আপনি মনে করেন কেউ সংক্রমিত হয়েছে তাহলে দূরত্ব বজায় রাখুন। 

৮- খুব বেশি প্রয়োজন না হলে অন্যের বাসাইয় যাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এটি আপনার এবং আপনি যে বাসায় যাচ্ছেন উভয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। সামাজিক দূরত্ব অথবা শারীরিক দূরত্ব যেটাই বলেন না কেনো বজায় রাখতে যথাসম্ভব বাসায় থাকুন। পারত পক্ষে বাসা থেকে বের না হওয়া। বাসা থেকে বের হতে হলে প্রয়োজনীয় সতর্কতা মেনে চলুন।

সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কেন জরুরি?

সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা খুবই জরুরি, কারণ আক্রান্ত কেউ হাঁচি কাশি দিলে তার সূক্ষ্ম থুতুকণা যাকে ইংরেজিতে ‘ড্রপলেট’ বলা হয় তা বাইরে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। এই ড্রপলেটের মধ্যে ঠাসা থাকে ভাইরাস। যেসব জায়গায় এই কণাগুলো পড়ছে সেসব জায়গা যদি আপনি হাত দিয়ে স্পর্শ করেন, এবং তারপর আপনার সেই অপরিষ্কার হাত আপনি মুখে দেন অথবা খুব কাছ থেকে সেই কণাগুলো নি:শ্বাসের মধ্যে দিয়ে আপনার শরীরে ঢোকে, আপনি সংক্রমিত হবেন। আপনি যদি অন্য ব্যক্তিদের সঙ্গে বেশি সময় না কাটান, অন্যদের খুব কাছে না যান, আপনার সংক্রমিত হবার সম্ভাবনাও কমবে। সামাজিক দূরত্ব সংক্রান্ত কিছু জরুরী তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরা হলোঃ যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থিত ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের একদল গবেষক একটি গাণিতিক মডেল তৈরি করেছেন। গত সোমবার এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। ইউরোপের ১১টি দেশে সংক্রমণের হার ও চিকিৎসাব্যবস্থা ছাড়া সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ আমলে নিয়ে মডেলটি দাঁড় করানো হয়েছে। এই দেশগুলো হলো ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, ডেনমার্ক, সুইডেন, নরওয়ে, বেলজিয়াম ও অস্ট্রিয়া। প্রতিবেদনে ওই ১১ দেশে সামাজিক দূরত্বসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ না নেওয়া হলে কত মৃত্যু হতে পারত, তার একটি ধারণাগত হিসাব তুলে ধরা হয়েছে।

গাণিতিক মডেলের ফলাফলে ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের গবেষকেরা মন্তব্য করেছেন, করোনা মহামারিতে চলতি বছর মারা যেতে পারে দুই কোটির মতো মানুষ। তবে সামাজিক দূরত্বের নিয়মকানুনগুলো মানা না হলে মৃত্যু চার কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে। যদি আরও আগে কড়াকড়িভাবে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা যেত, তাহলে ৩ কোটি ৮৭ লাখ মৃত্যু এড়ানো যেত।

Also Read: কাশি মানেই কি করোনাভাইরাস? জানুন বিস্তারিত । বাইকবিডি

হুবেই প্রদেশের উহান শহরে গত ২৩ জানুয়ারি কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় এবং অন্যান্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এসব পদক্ষেপের অন্যতম ছিল আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিন করা। এতে ফেব্রুয়ারিতে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমতে শুরু করে। গত ১৯ মার্চ নাগাদ উহানে স্থানীয় সংক্রমণ শূন্যতে নেমে আসে।

করোনার সংক্রমণে ইউরোপে বর্তমানে সবচেয়ে নাকাল ইতালি ও স্পেন। জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে, ইতালিতে গত সোমবার পর্যন্ত মারা গেছে ১১ হাজার ৫৯১ জন। গতকাল এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ইতালির সরকার সোমবার থেকে গতকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মোট মৃত্যু ও নতুন সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা প্রকাশ করেনি। ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের গবেষকদের গাণিতিক মডেল অনুসারে, সামাজিক দূরত্ব, পুরো দেশ অবরুদ্ধ করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ না নিলে দেশটিতে গতকাল ৩১ মার্চ পর্যন্ত মৃত্যু ছড়াত ৫২ হাজার। অর্থাৎ প্রায় ৪০ হাজার মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। স্পেনে গতকাল পর্যন্ত মারা গেছে ৮ হাজার ১৮৯ জন। ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের গাণিতিক মডেল অনুসারে, সামাজিক দূরত্ব, জরুরি অবস্থা জারি ও দেশ অবরুদ্ধ করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া না হলে এদিন পর্যন্ত দেশটিতে মৃত্যু ছাড়াত ২৪ হাজার। অর্থাৎ স্পেনে প্রায় ১৬ হাজার মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। আপনারা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করতে সামাজিক দূরত্বের কোন বিকল্প নেই। আমাদের হাতে এখনো সময় আছে আসুন নিজে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখি এবং অন্যকে এই সম্পর্কে সচেতন করি। 

তথ্য সূত্রঃ প্রথম আলো

Published by Ashik Mahmud Bangla