Shares 2
অ্যাভাটার - টিম বাইক-বিডি টেষ্টরাইড রিভিউ
Last updated on 18-Aug-2024 , By Shuvo Bangla
অ্যাভাটার - টিম বাইক-বিডি টেষ্টরাইড রিভিউ
বন্ধুরা আপনাদের অনেকেরই হয়তো মনে আছে যে গত ১৬ই মে, ২০১৫ এ গুডহুইল বাংলাদেশ একটি ছোট আনুষ্ঠানের মাধ্যমে অ্যাভাটার নামে নতুন একটি বাইকের প্রদর্শনী করেছিল। আমরা টিম বাইক-বিডি সেই সময়েই বাইকটি নিয়ে আমাদের টেষ্ট-রাইডের জন্য উৎসাহীত ছিলাম যাতে করে আমরা বাইকটির পারফর্মেন্স ও সকল ফিচার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারি। আর সেসময়ে বাইকটির বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য বিচারে আর কারিগরি বৈশিষ্ট্য নিয়ে আমরা AVATAR-Featured Review প্রকাশ করেছিলাম।
আর যেহেতু অ্যাভাটার বাইকটি ছিলো বাংলাদেশের পরিবেশ এবং রাস্তায় এর পারফর্মেন্সের অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য গুডহুইল কোম্পানির টেস্ট প্রোডাক্ট, তাই তারা খুশিমনেই আমাদের টেস্ট রাইডে বেশ আগ্রহ দেখিয়েছে। আর তাই প্রায় একমাস ধরে প্রায় ১০০০কিমি বাইকটি চালিয়ে দেখে আমরা অ্যাভাটার-টিম বাইক-বিডি টেষ্টরাইড রিভিউ নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আমারা আশা করছি আমাদের পর্যালোচনা আপনাদের অনুসন্ধিৎসা ও নানা প্রশ্নের উত্তর যোগাবে ও সেইসাথে প্রতিষ্ঠানটিকে বাইকটির যথার্থ মূল্যায়নে সাহায্য করবে।
গুডহুইল বাংলাদেশ আমাদের মোটরসাইকেল ইন্ডাষ্ট্রিতে একটি নতুন নাম। তারা নিবেদিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে গুডহুইল নামে বাংলাদেশের বাজারে মোটরসাইকেলের একটি স্থানীয় ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবার জন্য। আর এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত ব্যক্তিরাও মোটরসাইকেল নিয়ে খুবই আগ্রহী আর মোটরসাইকেল ভক্তদের জন্যেও ভালো কিছু দিতে চায়।
আর সেকারনেই তাদের বক্তব্য অনুসারে যে মোটরসাইকেলের উপর গুডহুইল ব্র্যান্ডনেম টি থাকবে তা হবে কোয়ালিটি, পারফর্মেন্স আর ডিজাইনে অনন্য। আর সেই সাথে থাকবে প্রতিটি মোটরসাইকেলের পার্টস আর আফটার সেলস সার্ভিসের সহজলভ্যতা।
গুডহুইল বাংলাদেশ এর গুডহুইল ব্র্যান্ড এর সকল প্রডাক্টই চায়নায় তৈরী। তবে গুডহুইল বাংলাদেশ এর মতে তারা চীন থেকে সেরা পন্যই তাদের বাইকের ডিজাইনে ব্যবহার করে থাকে যেসব মূলত: ইউরোপিয়ান বাজারের জন্যে ইউরোপিয়ান কোম্পানীর তত্বাবধানে প্রস্তুত করা হয়।
নিরীক্ষাকালীন সময়ে জন-সাধারনের প্রতিক্রিয়া
আমরা বাহ্যিক বিচারে অ্যাভাটার বাইকটিকে আগ্রাসী গঠনের দৃষ্টিনন্দন ও বৈশিষ্টপূর্ণ একটি নমুনা হিসেবে পেয়েছি। আমরা যখন প্রথমবার অ্যাভাটার বাইকটিকে গুডহুইল বাংলাদেশ এ দেখি তখনই এর গঠন দেখে উৎসাহীত হয়েছিলাম। আর সতিকার অর্থেই বাইকটির বাহ্যিক নির্মানশৈলী যেকান বয়সী চালকের দৃষ্টি আকর্ষন করার মতোই।
আর যেহেতু আমরা আমাদের AVATAR-Featured Review এ আগেই অ্যাভাটার এর অবয়ব ও বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যসমূহ পর্যালোচনা করেছিলাম তাই আজ আর ওসব আলোচনায় যাচ্ছিনা। তবে যদিও আজ আমরা আমাদের টেষ্ট-রাইডের ফলাফল নিয়ে আলোচনা করব, তবুও আমাদের এই একমাস সময়ে অ্যাভাটার নিয়ে চলার পথে সাধারন মানুষের প্রকাশিত অভিব্যাক্তি গুলো কিছুটা তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
যেমন যতবারই আমরা শহরের ভিড়ের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে গিয়েছি বা ট্রাফিক সিগন্যালে দাড়িয়েছি, প্রতিবার মানুষজন ঘুরে-ফিরে তাকিয়েছে, বাইকটার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছে। আর আপনারা জানেন যে এভাবে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষন করাটা আসলেই একটা আনন্দদায়ক অনুভুতি। আর মানুষজন বেশ আগ্রহের সাথেই জানতে চেয়েছিল যে বাস্তবিক পক্ষে বাইকটি কেমন কাজ করছিল।
আমরা লক্ষ্য করেছি যে বাইকটির খেলুড়ে গঠন, অবয়ব, আর সুন্দর রঙের কাজ মানুষ-জনের অত্যন্ত আগ্রহ সৃষ্টি করেছিল। আর সর্বোপরি এটা ছিল একটা নতুন চেহাড়ার বাইক যেটা তারা আগে কখনো আমাদের রাস্তায় দেখেনি। যাহোক, অনেকেই এর একজষ্ট এর উচ্চকিত বন্য শব্দ অত্যন্ত পছন্দ করছে, কিন্তু অনেকে কিছু না বললেও শব্দটার প্রকৃতি নিয়ে অভিযোগ করেনি। তবে অনেককেই পেয়েছিলাম যারা কিনা এর হেড-লাইটের আকার ও গঠন নিয়ে তুষ্ট হতে পারেননি। তবে সার্বিক বিচারে অ্যাভাটার বাইকটির বাহ্যিক দর্শনে সাধারন মানুষের অভিব্যাক্তিতে আমরা যথেষ্ট সন্তুষ্ট।
নিরীক্ষাকালীন সময়ে আমাদের বিবেচ্যগুলো
অ্যাভাটার বাইকটি নিয়ে আমরা প্রায় একমাসের মতো ঘুরেছি। বেশিরভাগ সময়েই আমরা শহুরে রাস্তায় কাটিয়েছি আর কিছুটা গ্রামীন রাস্তায়ও ঘুরেছি। আমরা চেষ্টা করেছি ভালো খারাপ দুধরনেরই রাস্তায়ই তুলনামুলক বিচারে এর সক্ষমতা ও উপযোগীতা জানতে আর এর কার্যদক্ষতা পরিমাপ করতে।
আমরা বুঝতে চেষ্টা করেছি যে ভিন্ন ধরনের রাস্তায় এটা কেমন আচরণ করে, আর ব্রেক ও সাসপেনশন কেমন ভাবে কাজ করে। আরো বুঝতে চেষ্টা করেছি যে এটা কি সব বয়েসি চালকদের জন্য নিয়ন্ত্রনযোগ্য বা সমান আরামদায়ক, নাকি কেবলমাত্র নির্দিষ্ট কোন বিশেষ শ্রেনীর চালকদের জন্য নকশাকৃত। এসব কিছুই ছিল আমাদের বিবেচনায়। এছাড়াও আমাদের টেষ্ট-রাইডের সময়ে আমরা কিছু সাধারন মানুষকে বাইকটি চালাতে দিয়ে তাদের মন্তব্য ও চালনা অভিজ্ঞতা জেনেছি। পরিশেষে অ্যাভাটারের পরীক্ষাকালের শেষে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে আমরা হাজির হয়েছি।
আমরা অ্যাভাটার বাইকটির একদম নতুনাবস্থা থেকেই টেস্টিং শুরু করি। আমরা যখন প্রথমবার বাইকটার একজষ্ট এর আগ্রাসী বন্য শব্দ শুনেছিলাম সেটা আসলেই অন্যরকম অভিজ্ঞতা ছিল যা কিনা অনেকটা ডার্ট বা অ্যাডভেঞ্চার বাইকের মতোই। আর সত্যিকার অর্থে এটা চালিয়ে আমরা অ্যাডভেঞ্চার বাইকের অনুভুতিই পেয়েছিলাম।
আর আমরা আনন্দিত যে এটাতে বসার ধরনও অনেকটা ডুয়াল স্পোর্টস বাইকেরই অনুরুপ। এটা চালানোর সময় আপনার অনেকটা মনে হতে পারে যেমন কোন রাজপথে মানুষজনের হর্ষধ্বনির মধ্য দিয়ে আপনি আপনার ঘোড়া ছোটাচ্ছেন। আর সত্যিকার অর্থে মানুষ-জনের আগ্রহী দৃষ্টি অনেকটা সেই অনিভুতিই দেয়।
অ্যাভাটার এর বাস্তবিক পারফর্মেন্স
এবার আসা যাক অ্যাভাটার এর বাস্তবিক পারফর্মেন্সে। আমরা বাইকটি নিরীক্ষার সময়ে এর ইঞ্জিনটা যথেষ্টই রেস্পন্সিভ পেয়েছিলাম। এর এ্যাক্সিলারেশন ছিল লক্ষ্য করার মতোই যা কিনা এর আগ্রাসী শব্দের সাথে যথার্থই মিলে যায়। কিন্তু হতাশাজনকভাবে আমাদের কাছে এর ইঞ্জিনটা যথেষ্ট পরিশীলিত মনে হয়নি। আর পাওয়ার ডেলিভারীর মসৃনতা আর স্বমন্বয়ের অভাব ও অনুভব করেছি, যেটা কিনা গিয়ার বদলের সময় আর তার ঠিক পরপরই আরো প্রকট হয়ে ওঠে। আর যখনই বাইকটির গতি বাড়ানো হয় আর উচ্চগতিতে চালানো হয় তখন ইঞ্জিনটি পুরো বাইক আর চালকসহ বেশ ঝাঁকুনি দেয়।
অ্যাভাটার বাইকটির গিয়ার অবাক করার মতোই যথেষ্ট মসৃন আর পরিমার্জিত। আর এতে গিয়ার বদলাতে আপনি কোন ঝামেলাই অনুভব করবেন না। আমরা এর গিয়ারের কারিগরী নিয়ে যথেষ্ট খুশি, কারন অনেক সময়ই এর মসৃনতার কারনে আমরা এর কার্যদক্ষতা বিচার করে দেখার জন্য মনোযোগ দেবার কথা ভুলেই ছিলাম। কিন্তু আবারো বলতে হয় এর গিয়ারের কার্যক্রমের সাথে এর শক্তি প্রবাহ সুসমন্বিত হয়নি।
অ্যাভাটার একটি দৃষ্টিনন্দন নগ্ন গঠনের ষ্ট্রিট বাইক। আর আপনি নি:সন্দেহে এতে অনেকটা অ্যাডভেঞ্চার বাইকের আমেজ পাবেন সেটা আমরা আগেই উল্লেখ করেছি। এর এ্যাক্সিলারেশন যতটা ভালো সেই অনুপাতে সর্বোচ্চ গতিও মোটামুটি ভালোই। আমরা এক কিমি পথে প্রায় ১১৫ কিমি/ঘন্টা গতি পেয়েছিলাম আর তার পর প্রায় ১২৪কিমি/ঘন্টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ গতি তুলেছিলাম। কিন্তু সত্যি বলতে গুডহুইল বাংলাদেশ কর্তৃক দাবীকৃত এর ৩০০সিসি বাতাস গ্রহনক্ষমতার ইনটেক, এর হালকা ওজন, আর উল্লেখ করার মতো ৯.৮:১ অনুপাতের কম্প্রেশনের কারনে এর গতি আরো বেশি আশা করেছিলাম।
আর অ্যাভাটার বাইকটিতে আগের মডেলের এফজেড সিরিজের মতো প্রায় একই কার্বুরেটর সংযোজিত বিধায় আশা করেছিলাম এর তেল খরচের মাত্রাও তেমনই হবার কথা। উপরোন্ত এর হালকা ওজনের কারনে আমরা আরো বেশী আশা করেছিলাম। কিন্তু আমাদের সর্বমোট চালানো পথের সাথে সর্বমোট খরচকৃত তেলের হিসেবে অ্যাভাটার বাইকটির তেল খরচের মাত্রা আমরা হিসেব করে পেয়েছি প্রায় ৩২-৩৫লিটার/কিমি।
অ্যাভাটার এর ফ্রেম ও ডিজাইন
তো বন্ধুরা অ্যাভাটার বাইকটির নিরীক্ষাকৃত ফলাফলের বেশকিছু চিত্র ইতিমধ্যে আপনারা পেয়েছেন যা কিনা এর ইঞ্জিন আর তার কার্যদক্ষতার সাথে সম্পর্কযুক্ত। তবে বাইকটির আরামপ্রদতা, সাসপেনশন আর নিয়ন্ত্রনযোগ্যতা বিচারে আরো খানিকটা চিত্র বাকী রয়েছে। এবার চলুন দেখা যাক অ্যাভাটার বাইকটি নিয়ে আমাদের নিরীক্ষাকালীন অভিজ্ঞতাগুলো কেমন ছিল।
প্রথমে এর হ্যান্ডেলবার থেকেই শুরু করা যাক। অ্যাভাটার বাইকটির রুপালী প্রলেপ দেযা হ্যান্ডেলবারটি বাংলাদেশে বর্তমান সময়ের বাইকগুলির মধ্যে অত্যন্ত সুন্দর। কিন্তু এর বল-রেসার বিয়ারিংটা যথেষ্ট মানসম্পন্ন ছিলনা, ফলে আমাদের নিরীক্ষাকালীন সময়েই এটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল ফলে এর নিয়ন্ত্রনযোগ্যতা হ্রাস পেয়েছিল।
অ্যাভাটার বাইকটির বসার ব্যবস্থা অত্যন্ত ভালো এবং চালক ও যাত্রীর জন্য যথেষ্ট আরামদায়ক যেটা সবাই স্বীকার করেছেন। আর এর বিভাজিত গঠনটাও যথেষ্ট দৃষ্টিনন্দন আর স্পোর্টি। তবে সিটের উচ্চতা যদিও একটু বেশী তবুও তা বাইকটির গঠনের সাথে স্বমন্বিত। ফলে নিশ্চিতভাবে আপনি এটা নিয়ন্ত্রনে কোন ঝামেলা অনুভব করবেননা।
অ্যাভাটার বাইকটি ইস্পাতের পাইপ-জোড়ের কাঠামোয় গঠিত হয়েছে। আর পেছনের সুয়িং-আর্মটিও জোড়া নলাকৃতি শক্তিশালী কাঠামোয় নির্মিত। আর আমাদের মনে হয়েছে এটি সর্ব্বোচ্চ ভার ও চাপ সহনে যথেষ্ট সক্ষম যা কিনা এর কাঠামোর মধ্য দিয়ে ভালো সাসপেনশনেও বেশ সহায়ক।
অ্যাভাটার এর সাসপেনশন, ব্রেকিং ও চাকা
অ্যাভাটার বাইকটির সামনের সাসপেনশন জোড়া টেলিস্কোপিক আর পেছনেরটা মনো-শক সাসপেনশন যা কিনা বাইকটির অন্যতম ভালো বৈশিষ্ট্য। কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে আমরা অত্যন্ত অনমনীয় সাসপেনশন পেয়েছি, যেখানে পেছনের সাসপেনশনটা মোটামুটি চলনসই ছিল। আর সামনের দুর্বল সাসপেনশনের কারনে পুরো বাইকটিতে বেশ ঝাঁকুনি অনুভব হতো, আর সেইসাথে ইঞ্জিনের ঝাঁকুনি; সব মিলিয়ে যখন সামান্য খারাপ রাস্তা বা শহরের খানা-খন্দপূর্ণ রাস্তায় চালানো হতো তখন পুরো বিষয়টি অসহনীয় হয়ে উঠতো। সত্যিকার অর্থে আমরা এই বিষয়ে মোটেও খুশি হতে পারিনি।
অ্যাভাটার বাইকটির সামনে পেছনে চমৎকার দর্শন হাইড্রলিক ডিস্ক ব্রেক সংযোজিত রয়েছে, যা আসলেই একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। ব্রেকগুলো বেশ ভালোই কাজ করে তবে বৃষ্টিতে খানিকটা দুর্বলতা দেখা যায়। আর এই বাইকটির সামনের পেছনের দুটো চাকাই টিউবলেস তাই হঠাৎ লিক হয়ে ঝামেলায় পড়ার ভয় নেই।
আর এখানে উল্লেখ করা দরকার যে দুটো চাকারই রাস্তা আঁকড়ে ধরার ক্ষমতা অসাধারন। আমরা সেকারনেই কিছু চরম বাঁক খুব স্বস্তির সাথে নিতে পেরেছিলাম। কিন্তু সাথে সাথে দুর্বল সাসপেনশন আর ব্রেকের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হয়েছিল। তাছাড়া এটা আসলেই বাঁক সমূহে অসাধারন পারফর্ম করেছিল। তবে আরেকটি বিষয় এর স্যাডল হাইট বেশি হবার কারনে কিছুটা খাটো চালকের ভীড়ের মধ্যে চলতে কিছুটা কসরত করতে হবে, তবে তা তেমন বিশেষ কিছু নয়।
অ্যাভাটার এর কিছু বাড়তি বৈশিষ্ট্য
অ্যাভাটার বাইকটিতে কিছু বাড়তি বৈশিষ্ট্য সংযুক্ত রয়েছে যেমন এতে একটি বিল্টইন মিউজিক সিস্টেম রয়েছে। তাই শহরের ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকার সময় এর বিল্ট ইন মিউজিক প্লেয়ার রাইডার এর বিরক্তি কিছুটা দূর করতে পারে।
এছাড়াও এই বাইকে একটি ইউএসবি সেলফোন চার্জার রয়েছে। ফলে চালককে তার লঙ ট্যুর বা অন্যান্য সময়ে তার গ্যাজেট সমূহের চার্জ নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না।
আর এই বাইকটির স্পীডোমিটারে একটি ক্লান্তি নির্দেশক এলার্ম আছে। যখন বাইকটিকে একটানা তিনঘন্টার বেশি ধরে চালানো হয় তখন এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজে থেকে চালু হয়ে যায় ও চালককে সাবধান করে দেয়।
এছাড়াও বাইকটির স্পীডোমিটার অন্যান্য সকল বাইকের থেকে সামান্য আলাদা। এখানে আরপিএম কাউন্টারটি ডিজিটাল, কিন্তু স্পীডোমিটারটি এনালগ। এখানে একটি ঘড়ি ও অন্যান্য সকল প্রয়োজনীয় ওয়ার্নিং লাইট রয়েছে।
এছাড়াও এটাতে একটি পার্কিং সিস্টেম আছে যাতে করে পার্কিং লাইট চালু করে রেখে বাইকের ঘাড়লক করা যায়। ফলে অন্ধকারে পার্ক করলে বাইকটি সহজেই খুজে পাওয়া যায় ও হারানের ভয়ও থাকে না।
অ্যাভাটার এর কিছু ভালো বৈশিষ্ট্য
তো বন্ধুরা, আমরা আমাদের নিরীক্ষা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের মোটামুটি বেশিরভাগই আপনাদের জানিয়ে দিলাম। এছাড়াও মোটরসাইকেলটির পক্ষে বিপক্ষে আরো কিছু সাধারন তথ্য আপনাদের জানিয়ে দেয়া যাক।
- অ্যাভাটার বাইকটি কোম্পানীর দাবীমতে বিশেষভাবে জৌলুস, কেতাদুরস্ততা আর কারিগরী উৎকর্ষতার সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে ফলে এর গঠনশৈলী আর বাহ্যিক সৌন্দর্য্য নিয়ে অভিযোগ করার সুযোগ কম।
- এর রঙের মান আর অন্যান্য কারুশৈলী অত্যন্ত সুন্দর।
- নিয়ন্ত্রক সুইচসমূহ, লিভার, পা-দানি আর কেবল সমূহ ভালো মানের; আর সুন্দর পরিমিতভাবে সমন্বয় করা।
- বাইকটির গঠন উপাদান তথা প্লাস্টিক আর ধাতব অংশগুলো মনসম্পন্ন, আমরা প্রায় দিনই বৃষ্টিতে চালিয়ে এর কোন নাট-বোল্টে মরচে বা কোন প্রকার বিকৃতি পাইনি।
- গতি ও ত্বরন অপেক্ষাকৃত ভালো।
- আর ডিসপ্লেবোর্ড অনেক বৈশিষ্টপূর্ণ।
অ্যাভাটার এ উন্নত করার মতো কিছু বিষয়
- এল.ই.ডি ডি.আর.এল, হেডল্যাম্প, সিগন্যাল বাতি, আর ডিসপ্লে ভালোভাবে পানি রোধকভাবে তৈরি নয়, ফলে বৃষ্টির পানি সহজেই এতে প্রবেশ করে।
- ডিসপ্লেবোর্ড অনেক বৈশিষ্টপূর্ণ তবে স্পিডমিটারটা এ্যানালগ, যেটা অসমন্বিতভাবে কাজ করে আর প্রায়ই ভুল নির্দেশনা দেয়।
- পেছনের কাদা প্রতিরোধক আসলে কোন কাজেরই না। বরং রাস্তার ময়লা কাদায় চালক আর যাত্রীর পিছনদিক প্রায় ছাপিয়ে ফেলে যেটা বৃষ্টির সময়ে আরো বাজে অবস্থা সৃষ্টি করে।
- সাধারন দাড়িয়ে থাকার সময় যেমন ট্রাফিক সিগন্যালে দাড়ানো অবস্থায় ইঞ্জিন স্থিরাবস্থায় থাকেনা। ইঞ্জিন চালু রাখতে এর থ্রটল মুচড়ে ধরে রাখতে হতো।
- হেডল্যাম্পের আলো মোটামুটি মানের তবে এর উচ্চ ও নিম্ন আলোর ফোকাস সমন্বয় যথার্থ নয়।
গুডহুইল হতে প্রতিক্রিয়া
বন্ধুরা আপনাদের আমরা আগেই জানিয়েছি যে অ্যাভাটার বাইকটি গুডহুইল বাংলাদেশ কর্তৃক আনীত একটি নিরীক্ষা পন্য। আমাদের মনে হয় বাংলাদেশে এটা প্রথমবার আর উল্লেখযোগ্য কিছু, যে কেউ কোন মোটরসাইকেল আমদানী আর বাজারজাত করার পূর্বেই আমাদের দেশীয় রাস্তাঘাট আর পারিপার্শ্বিকতা বিচারে এর সক্ষমতা যাচাইয়ের উদ্যোগ নিয়েছে। আর আমরা টিম বাইক-বিডি খুব খুশি যে আমরা এই যাচাইয়ের অংশ হতে পেরেছি। তাই আমরা আমাদের নিরীক্ষাকার্যের শেষে আমাদের প্রাপ্ত তথ্য সমূহ প্রতিষ্ঠানটির কাছে প্রাথমিকভাবে পেশ করেছিলাম যা তারা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিয়েছিল আর সমস্যাগুলো স্থানীয়ভাবে সমাধানের চেস্টা করেছিল। যেমন তারা হ্যান্ডেলবারের অবস্থান, বল-রেসার, সামনের সাসপেনশন আর বেকিংয়ের কলকব্জা গুলো পুন-সমন্বয়ের চেষ্টা করেছিল। তাদের প্রাথমিক রক্ষনাক্ষেন আর পরিষেবার পর আমরা কিছু সমস্যার সমাধান পেয়েছিলাম। বিষয় গুলো এবার দেখা যাক:
- হ্যান্ডেলবারের অবস্থান পরিবর্তন করে হাতলে নরম আচ্ছাদন দেয়া হয়েছিল ফলে তুলনামুলক আরাম বোধ করা গেছে।
- বল-রেসার পুন-সমন্বয় করা হয়েছিল কিন্তু তা নিম্নমানের বিধায় কোন উন্নতি হয়নি। এটা আসলে ভালো মানের পন্য দিয়ে বদলে ফেলা দরকার ছিল।
- দুটো চাকার ব্রেকই প্রাথমিক রক্ষনাবেক্ষন আর পরিষেবা পেয়েছিল, ফলশ্রুতিতে আগের তুলনায় তুলনামুলক ভালো কাজ পেয়েছিলাম।
- বাইকটির ইঞ্জিন-ওয়েল বদলানো হয়েছিল আর আনুসাঙ্গিক রক্ষনাবেক্ষন করা হয়েছিল ফলে আগের চেয়ে ভালো সাড়া দিচ্ছিল।
শেষ কথা
তো বন্ধুরা এই ছিল আমাদের বিস্তৃত নিরীক্ষার পর এ্যাভাটার বাইকটির সার্বিক চিত্র। আমরা চেষ্টা করেছি আমাদের নিরীক্ষার মাধ্যমে সম্ভাব্য সবরকমের তথ্য বের করে আনতে যাতে বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান এর বাস্তবিক সক্ষমতা বুঝতে পারে আর বাইকটি আমদানী আর বাজারজাত করার পূর্বেই এর উপযোগীতা বিবেচনা করতে পারে আর পাঠকরাও যাতে এর সার্বিক চিত্র পায়।
এটা আসলেই একটা চমৎকার দৃষ্টিনন্দন গঠনের পরীক্ষামুলক নমুনা তাতে কোন সন্দেহ নেই। আমরা আমাদের চলার পথে বাইকটির প্রতি মানুষদের অতীব আগ্রহ আর আকর্ষন যেমন দেখেছি, তেমনই দেখছি পথের ভীড়ে আটকে থাকার সময়, এমনকি কোথাও বাইকটি পার্ক করার সময়ও উৎসাহী মানুষজন জানতে চেয়েছে বাইকটা কেমন। আর সত্যিকার অর্থে এই অভিজ্ঞতা অত্যন্ত আনন্দদায়ক ছিল। এবং, এর ১,৬৮,৯৯০ টাকার মূল্য বাইকটিকে করে তুলেছে আরো আকর্ষনীয়!
আমরা মনে করি যে আরো সামান্য কিছু পরিশুদ্ধির মাধ্যমে বাইকটি হতে পারে তরুনদের জন্য এক অসাধারন প্যাকেজ। আমাদের জানামতে কোম্পানি ইতিমধ্যেই বাইকটির বেশকিছু বিষয় উন্নত করেছে। আমাদের টেস্টরাইড এর পরে ইতিমধ্যেই গুডহুইল কোম্পানি বাইকটির বল রেসার, সাসপেনশন, ব্রেক, এবং ইঞ্জিন এর মান উন্নত করেছে এবং নিরলসভাবে করে যাচ্ছে। গুডহুইল বাংলাদেশকে জানাই শুভকামনা।
গুডহুইল বাংলাদেশ
১১৫/২ বিজয় সরনী লিংক রোড, তেজকুনিপাড়া তেজগাঁ, ঢাকা-১২১৫, বাংলাদেশ ফোন : 01993-081741 , 01993-081742 ই-মেইল: info@goodwheel.com.bd ওয়েবসাইট : www.goodwheel.com.bd
T
Published by Shuvo Bangla