Shares 2
Yamaha Saluto এর মালিকানা রিভিউ - লিখেছেন মিজানুর রহমান
Last updated on 04-Jul-2024 , By Shuvo Bangla
শুভেচ্ছা সবাইকে। আমি ডাঃ মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, বয়স ৩৫ বছর, পেশায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মেডিকেল কর্মকর্তা। থাকি ঢাকার পল্টনে, কর্মস্থল গুলশানে। আমার বর্তমান বাইক Yamaha Saluto । এটা আমার ২য় বাইক। এই বাইকটির মডেল বাংলাদেশে আগে ছিল না, সম্পূর্ণ নতুন মডেল হওয়ায় মাত্র ১২০০ কি.মি. চালানোর পর আমার এক্সপেরিয়েন্স টা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।
Yamaha Saluto ১২০০ কি.মি. চালানোর অভিজ্ঞতা
বাইক কেনার আগে বাস, সিএনজি, রিকশা, ব্যক্তিগত গাড়ি এসবই ছিল আমার ঢাকায় চলাচলের মাধ্যম। ঢাকায় উত্তরোত্তর জ্যাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে মোটরসাইকেল কিনতে বাধ্য হলাম। নানাবাড়ির কল্যানে যদিও আমি ১৫ কি ১৬ বছর বয়স থেকে মোটরসাইকেল চালাতে জানি, কিন্তু কখনোই কেনার ইচ্ছে হয় নাই। তার উপর আমার চাচাতো ভাই, আসলে আপন ভাইয়ের মতোই ছিল, বাইক নিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ায় পরিবার থেকে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা আছে। যাহোক আমার প্রথম বাইক ছিল ৮০ সি. সি. রানার AD80S Deluxe. প্রথম বাইকের অনেকধরণের ভোগান্তির পর দ্বিতীয় বাইকটি অর্থাৎ Yamaha Saluto বেশ চিন্তাভাবনা করে কিনলাম।
Yamaha Saluto এর ভিডিও রিভিউ দেখতে এখানে ক্লিক করুন
আমার বাইক ব্যবহারের প্রধান উদ্দেশ্য ঢাকার জ্যাম এ কিছুটা স্বস্তি পাওয়া। ঢাকার বাহিরে বাইকে যেহেতু জার্নি করবো না তাই আমার টার্গেট ছিল গুড লুকিং (বাট নট স্পোর্টস লুকিং), ভালো মাইলেজ, হালকা ওজনের বাইক (জ্যামের মধ্যে বেশিরভাগ সময় বামদিকে-ডানদিকে কাত হওয়া লাগে), নরমাল গিয়ার শিফটিং প্যাটার্ন(স্পোর্টস বাইকের গিয়ার বড়ই গোলমেলে লাগে আমার কাছে যখন খুব তাড়াতাড়ি গিয়ার নামাতে হয় কোন কারণে)। এছাড়াও আমার চাহিদা ছিলো ভালো ব্রেক (আই মিন ফ্রন্ট ডিস্ক ব্রেক), টিউবলেস টায়ার (প্রায় সময় আমার বাইকের চাকা পাংচার হয় ঢাকার রাস্তার ভাঙাচোরা অবস্থার কারনে), এবং অন্ততঃ একটি সাইড হুক লাগানো যাবে বাজারের ব্যাগ ঝুলানোর জন্য (বর্তমানে বাইকগুলিতে পেছনের সাস্পেন্সান নাট হিডেন থাকে অথবা মনো সাস্পেন্সান থাকায় হুক লাগানো বেশ কঠিন কাজ)। মাইলেজের কথা মাথায় রেখে ১২৫ সিসির উপরে গেলাম না।
তারপর হিডেন সাসপেনশন নাট থাকায় Honda CB Shine ও Hero Glamour বাদ গেলো। ওজন বেশির কারণে Bajaj Discover 125 ও বাদ দিলাম। এবার ঝামেলায় পরলাম TVS 125 আর Yamaha Saluto র মধ্যে। TVS এ লোভনীয় হচ্ছে ডিজিটাল ডিসপ্লে, ১২লিটারের ফুয়েল ট্যাংক, লোকেটর কি, নরম সিট। অন্য দিকে Yamaha Saluto র ক্ষেত্রে হাই ব্র্যান্ড ভ্যালু, blue core ইঞ্জিন, টিভিএস ফিনিক্সের চেয়েও ওজনে হালকা, গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স বেশি। তো টিপিক্যাল বাংলাদেশি হিসেবে বরাবর জাপানি নামের প্রতি দুর্বল। তাই ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা দিয়ে নভেম্বর ২০১৬ তে মিরপুরের ক্রিসেন্ট এন্টারপ্রাইজ থেকে নিয়ে নিলাম Yamaha Saluto Disk Bold Blue Color Edition তাদের প্রথম স্যালুটো কাস্টমার হিসেবে।
বোল্ড ব্লু কালারটা আমার কাছে বেশ আকর্ষণীয় মনে হয়েছে এবং এই কালারে বাইকটির ডিজাইন আরও সুন্দর মনে হয়েছে। বাইকবিডি কম্প্যারিজন রিভিউতে Saleh Md. Hassan যথার্থ বলেছেন, “ফুয়েল এ্যাফিশিয়েন্সির সাথে সাথে বাইকের ডিজাইনকেও সমান প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। আর একারনেই স্যালুটো মূলত: কর্পোরেট ব্যবহারকারীদের ব্যাক্তিত্বের সাথে বেশি মানানসই যাদের কিনা সবসময়েই ফরমালি প্রেজেন্টেবল থাকতে হয়।”
ফুয়েল ট্যাংকের ডিজাইন বেশ আধুনিক মনে হয়েছে। হেডলাইট, উইন্ডস্ক্রিন, টেইললাইট সহ অভারঅল গেটআপ মডার্ন এবং ম্যাগনিফিসেন্ট । প্রথম থেকেই যে জিনিসটা ফিল করছি, ইঞ্জিন বেশ রিফাইন্ড এবং কন্ট্রোলিং খুব ভালো। শুন্য থেকে ৭০ কি.মি. গতি বেশ তাড়াতাড়ি উঠে, তারপর আস্তে আস্তে উঠে এবং ভাইব্রেট হয়, তবে টপ স্পিড কত জানি না, ট্রাই করি নাই। ব্রেকিং যথেষ্ট কার্যকর।
চাকা সরু হওয়া সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত হার্ড ব্রেকে স্কিড হয়নি,চাকার গ্রিপ ভালো। টিউবলেস টায়ার হওয়াতে কিছুটা নিশ্চিন্ত, পাংচার হলেও কন্ট্রোল হারাবো না। সাসপেনশন ভালো মনে হয়েছে, ঝাঁকি কম লাগে, আর পেছনের পিলিয়ন ও একই কথা বলেছে। কেনার পর ট্রাস্ট ফিলিং থেকে ৭.৬ লিটার ফুলট্যাঙ্ক অকটেন নিয়েছিলাম। ১ম মাইলেজ ৬০কি.মি./লি.। তারপর প্রথম সার্ভিসটি করাই ৩৫০ কি.মি. এ এবং ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করি ইয়ামালুব 20W40 দিয়ে। তবে ২য় মাইলেজ থেকে পরের গুলো কিছুটা কম পাচ্ছি ৫৭ কি.মি./লি.। মনে হয় ইঞ্জিন ব্রেক ইন পিরিয়ডের জন্য। দ্বিতীয় সার্ভিসটি করাই ৯৫০ কি.মি. তে। এবার ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করি ইয়ামালুব অপ্টিমা দিয়ে।
সুতরাং, মাইলেজ ভালই বলবো কারণ এটা ঢাকার নিত্য দিনের তীব্র জ্যামের মধ্যে এই মাইলেজ। আরেকটা জিনিস বেশ আরাম পাচ্ছি, তা হলো স্পিড ব্রেকার পার হতে পারি গতি সম্পূর্ণ কম্প্রোমাইজ না করে এবং এই সুবিধাটা পাচ্ছি হাই গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্সের জন্য। গিয়ার ৪টি সবগুলো পেছন দিকে গোড়ালি দিয়ে, নামানোর জন্য সামনে পায়ের পাতা ব্যাবহার করতে হয়। গিয়ার শিফট করতে মাঝে মাঝে শক্ত মনে হয়। আর মেইনটিনেন্স, পার্টস এভেইলিবিলিটি ভালোই হবে যেমন আমি ইঞ্জিন অয়েল ফিল্টার/ মবিল ফিল্টার পরিবর্তন করেছি যেটা FZS এও একই। এখন পর্যন্ত বাইকটির বিল্ড কোয়ালিটি ভালোই মনে হচ্ছে।
নেগেটিভ সাইড: ১. হেডলাইট এর আলো পিকআপের সাথে বাড়ে কমে এবং ৩৫ ওয়াটের বাতি, আলো অনেক কম। কেনার পর প্রথমেই এটাকে এসি থেকে ডিসি করা লেগেছে এবং ১২০০ টাকা দিয়ে RTD LED হেডলাইট লাগিয়ে নিয়েছি। ২. এনালগ ডিসপ্লে মিটার। দেখতে খারাপ লাগে না কিন্তু ব্যাটারি গজ/লেভেল ডিসপ্লে নাই। ১২৫ সিসির অন্য বাইক গুলিতে Hero Glamour, TVS এনালগ-ডিজিটাল কম্বো ডিসপ্লে। ৩. সিট খুবই শক্ত, আরামদায়ক না তবে অনেক লম্বা। দীর্ঘ সময় রাইড করলে পশ্চাৎদেশের ভিতর দিকে ব্যথা লাগে। এই ক্ষেত্রে TVS এর সিট খুবই নরম । ৪. সিট হাইট অনেক বেশি। আমার উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি হওয়ায় ৮০৫ মি. মি. উঁচু সিটে বসে গ্রাউন্ড নাগাল পেতে মাঝে মাঝে কষ্ট হয়। ৫. হর্নের আওয়াজ তুলনামূলক কম। দুটির বদলে একটি হর্ন দেয়া হয়েছে। আমার আগের ৮০ সি.সির Runner AD80S Deluxe বাইকেও এক জোড়া শক্তিশালী হর্ন ছিল।
ছোটখাটো এসব সমস্যা বাদ দিলে ডেইলী কমিউটার বাইক হিসেবে পারফর্মেন্স, ডিজাইন, মাইলেজ, রাইডিং কমফোর্ট, টোটাল কন্ট্রোল, সবদিক থেকে আমি Yamaha Saluto কেই সেরা বলবো। আশা রাখি ACI Motors এর কল্যাণে মেইনটিনেন্স এবং পার্টস পেতে কোন সমস্যা হবে না।
লিখেছেনঃ ডাঃ মুহাম্মদ মিজানুর রহমান
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com - এই ইমেইল এড্রেসে।
T
Published by Shuvo Bangla