Shares 2
Yamaha R15 V3 Indo ৬,০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - খলিলুর রহমান
Last updated on 14-Jul-2024 , By Ashik Mahmud Bangla
আজ আমি আপনাদের সাথে আমার ব্যাবহৃত Yamaha R15 V3 বাইকটি সমন্ধে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো । লাস্ট ৬ মাসে আমি বাইকটি প্রায় ৬,০০০ কিলোমিটার রাইড করেছি। আর এই রিভিউটি সেই অভিজ্ঞতা থেকেই লিখা।
Yamaha R15 V3 Indo ৬,০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - খলিলুর রহমান
আমি এম. খলিলুর রহমান (আবির), আইন বিভাগ থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছি। আমার দেশের বাড়ি জামালপুর জেলা। এই বাইকটি আমার দ্বিতীয় বাইক। আমার প্রথম বাইক হচ্ছে Yamaha RxS. বাইকের প্রতি নেশা, ভালবাসাটা আসলে ছোট থেকেই। বাইক চালাতে, বাইক দিয়ে ঘুরাঘুরি করতে ভাল লাগে। মন ভাল থাকে। আসলে কি চার চাকার বদ্ধ গাড়িতে পৃথিবীটা ততোটা উপভোগ করা যায় না যতটা করা যায় দু চাকার বাইকে।
Also Read: Yamaha R15 V3 ৫,০০০কিমি মালিকানা রিভিউ
Yamaha R15 V3 Indo বাইকটি বেছে নেওয়ার পিছনে সবচেয়ে বড় যে কারনটি হল নিজের পছন্দ, নিজের সপ্ন এবং ইচ্ছার মুল্যায়ন করা। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে YZF R সিরিজের ভক্ত। R15 ভাল লাগে সেই ২০১১ সাল থেকে। তখন Yamaha R15 V2 ছিল, সেটাই পছন্দ ছিল। কিন্তু বাইক কিনতে কিনতে এতটাই লেট হল যে তখন R15 V3 মার্কেটে এসে পরেছে। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে V2 থেকে V3 অনেক বেশি আপডেট, ইঞ্জিন, লুক সব দিক থেকেই। তাই বেছে নিলাম পছন্দের সেই বাইক। বাইকটি কিনেছি আমি আনঅফিসিয়াল, ইম্পোর্টারদের কাছ থেকে। বাইকটি কিনেছি ৫,২৫,০০০/- টাকায়।
বাইকটি যেদিন কিনতে যাই সেই দিনটি আমার জন্য স্মরনীয় একটি দিন। আগের রাতে ঘুম অব্দি হয়নি। প্রায় ১০ বছরের স্বপ্ন সত্যি হতে যাচ্ছে, তাই খুব উত্তেজিত ছিলাম। পরের দিন ইয়ামাহা শোরুম এ গেলাম, গিয়ে ক্যাশ পে করে, অন্যান্য ফরমালিটিস শেষ করে বাইক নিয়ে আসলাম। প্রথম বাইক রাইড করার অনুভূতিটা একেবারেই অন্যরকম। সন্ধ্যায় শো-রুম থেকে বাইক নিয়ে বের হলাম। কিছুটা আনইজি লাগছিল। লাইফে প্রথম R15 চালাচ্ছি। বাইকটা অনেক বড়, তাই একটু ভয় লাগছিল। তার উপরে আবার নতুন বাইক, রাস্তায় যদি কোথাও কোন গাড়ির সাথে বা অন্য কোথাও ঘসা লেগে যায়, সে ভয় লাগছিল। ওই দিনের অনুভূতির কথা বলি, আমি একেবারেই চুপ হয়ে গিয়েছিলাম, নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে টপ টপ করে চোখের জল ঝরছিল, ফুয়েল ট্যাংকের উপরে। প্রথম স্পর্শ, সে এক অন্য রকম অনুভূতি। স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেওয়ার অনুভূতি।
প্রথম অবস্থায় Yamaha R15 V3 বাইকটার পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ, খুব স্মুথ । নতুন বাইক, তাই ইঞ্জিন কিছুটা জ্যাম জ্যাম লাগছিল। গিয়ার শিফট করার সময় লক্ষ করেছিলাম সেটা একটু হার্ড। অন্যদিকে বাইকের ইঞ্জিন খুব বেশিই গরম হচ্ছিল, নতুন বাইকে যেমন হয় । বাইকটি ১ কিলোমিটারের মত চালাতেই কিভাবে যেন বাইকটির সাথে এডজাস্ট হয়ে যাই, অর্থাৎ সেই ভয়টা চলে যায়।
প্রতিদিনই কম করে হলেও ৮/১০ কি.মি. বাইক চালাই। বাইক চালালে মন ভাল থাকে, টেনশন কম থাকে। বাইকটি চালিয়ে পারফরম্যান্স এর দিক থেকে যতটা সেটিস্ফাই, তার থেকেও বেশি হচ্ছে মনের দিক থেকে। এটাই যে, আমার স্বপ্নের বাইক, আমার পছন্দের বাইক সেটার সাথেই আছি।
ফিচার এবং পারফর্মেন্স - বাইকটিতে ব্যবহার করা হয়েছে সিংগেল সিলিন্ডারের 155.1 সিসির চার ভাল্বের, একটি ফোর-স্ট্রোক ইঞ্জিন। বাইকটির ইঞ্জিনে থেকে সর্বোচ্চ পাওয়ার 19.4 BHP প্রডিউস করে এবং 14.7 Nm টর্ক উৎপন্ন করে। বাইকটির সামনের চাকায় রয়েছে ১০০ সেকশনের এবং পেছনের চাকায় রয়েছে ১৪০ সেকশনের টিউবলেস টায়ার। বাইকটিতে সামনের চাকায় ব্যবহার করেছে Up Side Down সাসপেনশন এবং পেছনের চাকায় রয়েছে মনোশক সাসপেনশন।
বাইকটিতে দুইটি নতুন ফিচার এড করা হয়েছে, Variable Valve Actuation (VVA) & Slipper Assist Clutch 7500 RPM এর পরে VVA active হয়, এবং Slipper ক্লাচটি বাইকের গিয়ার শিফটিং খুব ফাস্ট এবং স্মুথ করে।
সার্ভিসিং - প্রায় ৬০০০ কিলোমিটার এ বাইকটি মোট দুই বার সার্ভিসিং করিয়েছি। তবে শীঘ্রই আরো একটা সার্ভিসিং করিয়ে নিব। প্রথম ১০০০ কিলোমিটার রাইড করার পরে আমি একটা সার্ভিসিং করিয়েছি। তারপর ৩০০০ কিলোমিটার এ আরো একটা সার্ভিসিং করিয়েছি।
মাইলেজ - আমি বাইকটি 2000 কি.মি. পর্যন্ত ব্রেকিং পিরিয়ড মেনে বাইক চালিয়েছি। এ সময়ে বাইকের R.P.M. 5000 এর বেশি তুলিনি । সেক্ষেত্রে আমি সিটিতে মাইলেজ পেয়েছি প্রায় 36-38 কি.মি./লিটার এবং হাইওয়েতে 39-40 কি.মি/লিটার। কিন্তু 2000 কি.মি. এর পর থেকে মাইলেজ পাচ্ছি 44-45 কি.মি/লিটার এর মত। তবে 7500 R.P.M. এর উপরে চালালে যখন VVA এক্টিভেট হয়, তখন মাইলেজ কিছুটা কমে যায়।
মেইনটেন্যান্স - বাইকটি মেইনটেন্যান্স এর ক্ষেত্রে প্রথমত আমি প্রতিদিন বাইকটি চালানোর আগে, ৪/৫ মিনিট স্টার্ট দিয়ে রেখে দিই। যতটা সম্ভব আমি নিজের বাইক নিজেই ওয়াস করার চেস্টা করি। এতে বাইকের প্রতি ভালবাসাটা বাড়ে।
ইঞ্জিন অয়েল - আমার বাইকের ইঞ্জিন অয়েলের গ্রেড হচ্ছে 10w40। বাইকটিতে ৮৫০মিলি ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করতে হয়। তবে ওয়েল ফিল্টার চেঞ্জ করার সময় আরো ৫০মিলি বাড়িয়ে অর্থাৎ ৯০০মিলি ব্যবহার করতে হয়। ব্রেকিং পিরিয়ডে আমি মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করেছি। Motul & Yamalub এই দুইটা প্রথমে ইউস করেছি। যথাক্রমে ২০০ কিলোমিটার, ৭০০ কিলোমিটার, ১৩০০ কিলোমিটার, ২০০০ কিলোমিটার এ পরিবর্তন করেছি। পরের ৩০০০ কিলোমিটার অর্থাৎ ২০০০ - ৫০০০ কিলোমিটার সেমি-সিন্থেটিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করেছি। ৫০০০ কিলোমিটার এরপরে আমি ফুল-সিন্থেটিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি। আমি বর্তমানে Motul 10w40 4T 300v ব্যবহার করতেছি।
মডিফিকেশন - বাইকটি আমি মূলত তেমন কোন মডিফিকেশন করিনি। তবে ছোটখাটো দু একটা জিনিষ পরিবর্তন করেছি। আমি বাইকটির স্টক ক্লিয়ার ভাইজরটি চেঞ্জ করে কালো কালারের বাবল ভাইজর লাগিয়েছি। এছাড়াও বাইকে দুপাশে দুটি ক্রাশ গার্ড লাগিয়েছি এবং একটি রেডিয়েটার গার্ড লাগিয়েছি।
টপ স্পিড - আমি আসলে অতিরিক্ত স্পিড পছন্দ করি না। মানে প্রয়োজনের বেশী স্পিড পছন্দ করি না। আমি সব সময় সেইফ থাকার ট্রাই করি, কারণ সেইফটি আমার প্রথম লক্ষ। তবে বাইকটির পারফর্ম এবং টপ স্পিড চেইক করতে একদিন বাইকটি হাইওয়েতে টপ স্পিড তোলার ট্রাই করেছি। বাইকটিতে পিলিওন ছাড়া আমি ১৫২ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা পেয়েছি (আমার ওজন ৭৩ কেজি) এবং পিলিয়ন সহ ১৩৪ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা পর্যন্ত তুলতে সক্ষম হয়েছি। তবে YouTube এর কিছু ভিডিওতে দেখেছি বাইকের টপস্পিড ১৫৫ - ১৫৯ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা পর্যন্ত স্পিড উঠিয়েছে।
Yamaha R15 V3 Indo বাইকটির কিছু ভাল দিক-
- বাইকটি সবচেয়ে ভাল দিক বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় এর লুকস সমন্ধে। আমার দৃস্টিতে এটা এই সেগমেন্টের সবচেয়ে সুন্দর বাইক।
- বাইকের ইঞ্জিনের পারফরম্যান্স অসাধারণ। এর VVA এবং স্লিপার ক্লাচ এর জন্য বাইকটির পারফর্মেন্স অনেক ভাল।
- বাইকটির ব্রেকিং সিস্টেম অনেক ভাল। সেই সাথে বাইকটির ব্যালেন্স খুব ভাল। সামনের চাকার USD সাস্পেনশন ব্রেকিংএ খুব হেল্প করে।
- বাইকটির কর্নারিং ক্ষমতা অসাধারণ। বাইকটির ওয়েট ডিস্ট্রিবিউসন প্রপার হওয়ায় এবং পিছনে ১৪০ সেকশনের টায়ারের জন্য লো স্পিডে এবং হাই স্পিডে বাইকটি অসাধারণ পারফর্ম করে, এবং সেই সাথে ভাল কনফিডেন্স পাওয়া যায়।
- বাইকটির বিল্ড কোয়ালিটি স্পোর্টস বাইক হিসেবে সন্তুষ্টজনক। এবং বাইকটির কালার/গ্রাফিক্স খুব উজ্জ্বল।
- স্পোর্টস বাইক হওয়া স্বত্ত্বেও এর মাইলেজ খুব ভাল।
Yamaha R15 V3 Indo বাইকটির কিছু খারাপ দিক-
- বাইকের হেডলাইটের আলো খুব কম। তাই রাতের বেলা হাইওয়েতে কিছুটা সমস্যা হয়।
- বাইকটির সাস্পেনশন ভাংগাচুরা রাস্তায় খুব একটা কাজ করে না, (যেহেতু এই বাইকটি স্পোর্টস বাইক, তাই ভাংগাচুরা রাস্তার জন্য না)
- এর স্পেয়ার পার্টস গুলোর দাম খুব বেশি।
- বাইকটি বেশ বড়, তাই কম উচ্চতার মানুষের জন্য বাইকটি রাইড করা খুব কঠিন হয়ে যাবে।
- লং রাইডে ব্যাক পেইন করে ।
বাইকটি নিয়ে এখন পর্যন্ত দুই বার লং রাইড করেছি। সেটা ১৭০ কিলোমিটারের ট্যুর। এছাড়া এর বেশি দূরে কোথাও আপাতত যাইনি। আপনি যদি এমন একটি বাইক চান যেটা থেকে আপনি পারফরম্যান্স চান, ভাল ব্রেকিং চান, ভাল ব্যালেন্স চান এবং হাইওয়েতে রাইড করতে চান তবে এই বাইকটি আপনার জন্য। তবে এই বড় বাইকটি নিয়ে শহরের ট্রাফিক জ্যাম এ আপনার বেশ কষ্ট হবে।
বাইকটি আমার খুব পছন্দের একটা বাইক। অনেক সাধনার বাইক। বাইকটি হাতে পাবার পরে থেকে ধীরে ধীরে বাইকটির প্রতি আগের থেকে আরও দু্র্বল হয়ে যাই, একটু বেশিই ভাল লাগা কাজ করে। চোখের আড়াল হলেই একধরনের শুন্যতা কাজ করে। আমার বাইক, আমার পথ চলার সাথী। সবার জন্য একটা উপদেশ ও অনুরোধ, সব সময় হেলমেট পরে বাইক চালাবেন এবং ট্রাফিক আইন মেনে চলবেন।
ইয়ামাহার এমন ইউজার রিভিউ এবং r15 v3 price in bangladesh এর সর্ম্পকে বিস্তারিত জানতে আমাদের ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল এবং ফেসবুক গ্রুপ ঘুরে দেখুন। তাছাড়া বাইক সম্পর্কিত যেকোন তথ্য পাবেন আমাদের ওয়েবসাইটে। আপনাদের মূল্যবান বক্তব্য এবং r15 v3 ভালো বা খারাপ দিক আপনার কাছে কোনটা মনে হয় সেগুলো আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন । ধন্যবাদ।
লিখেছেন - এম. খলিলুর রহমান আবির
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।
T
Published by Ashik Mahmud Bangla