Shares 2

Yamaha R15 V3 Indian Version মালিকানা রিভিউ - অমি

Last updated on 30-Jul-2024 , By Raihan Opu Bangla

আমি অমি। আমি কক্সবাজার বসবাস করি । আজ আমি আমার R15 V3 বাইকটি নিয়ে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো ।

Yamaha R15 V3 Indian Version মালিকানা রিভিউ - অমি

Yamaha R15 V3 Indian Version

ছোট বেলা থেকে বাইক এর প্রতি একটা অন্যরকম ভালবাসা কাজ করত, যা বলে বোঝানো সম্ভব না। স্কুল লাইফে এক বন্ধুর মাধ্যমে বাইক চালানো শিখি তাও অনেক ত্যাগ আর কষ্টের বিনিময়ে।

এই দুই চাকার বাহন টা আমাকে যতটুকু ভালবাসা দেয় তা আমাকে চার চাকার কোন বাহন দিতে পারবে বলে মনে হয় না । যেদিন নিজের সামর্থের কাছাকাছি আসলাম সেদিনই বাজাজ পালসার বাইকটি ক্রয় করি । বাইকটি প্রায় এক বছর ব্যবহার করি এরপর আমি ৪টি বাইক পরিবর্তন করি ।

বাংলাদেশে R15 বাইকটি অনেক বাইকারের পছন্দের বাইক । আমিও তাদের মধ্যে একজন । আমার অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল একটা R15 বাইক ব্যবহার করবো । 

কালের পরিবর্তনে Yamaha R15 V1, R15 V2 , V3 BS4 ভার্সন এর পরে ২০২০ সালে আসে Yamaha R15 V3 BS6 ভার্সন , সময়ের পরিবর্তনে স্বপ্নটা একটু দেরীতেই পূরন হয় ।

Yamaha R15 V3 Indian Version

২০২০ সালের  অক্টোবর মাসের ২৮ তারিখ আমার দীর্ঘ অনেক বছরের অপেক্ষার পর স্বপ্ন পূরন হলো । জীবনে প্রথম স্পোর্টস বাইক, ২৮ তারিখটা আমার কাছে ২০২০ সালের ঈদের দিনের মতই মনে হয়েছিল, অনুভূতিটা লিখে প্রকাশ করা সম্ভব না । 

জীবনে প্রথম বার স্পোর্টস বাইকের হ্যান্ডেল ধরে বিন্দু পরিমান ও অস্বস্থি লাগেনি । বাইকটি থেকে আমার যতটুকু চাওয়া ছিল তার চাইতে একটু বেশী পেয়েছি বলেই মনে হয়েছে। 

বাইকটি সম্পর্কে যত রিভিউ দেখেছি তেমন খারাপ  ফিডব্যাক পাইনি ১৫৫ সিসি ইঞ্জিন, ৬ টি গিয়ার, ফুয়েল ইঞ্জেক্ট সিস্টেম, ডুয়েল হাইড্রোলিক এর সাথে এন্টি লক ব্রেকিং সিস্টেম (এবিএস)। অসাধারণ ডিজিটাল মিটার, ইঞ্জিন কাট অফ সুইচ, তারপর আছে VVA ফিচার।

R15 V3 তে VVA এমন একটা ফিচার যা আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে , যখন আপনি ৭০০০ আর পি এম ছাড়িয়ে যাবেন তখন আপনার বাইকের VVA  এক্টিভে হয়ে যাবে তার নোটিফিকেশন আপনি বাইকের মিটারেই পেয়ে যাবেন, VVA এক্টিভেট হওয়ার পর রাইডিং এর সময় একটা অন্য রকম অনুভূতি পাবেন।

তাছাড়া আরো অনেক ফিচার তো আছেই, লুকের ক্ষেত্রে বলতে গেলে R15 V3 BS6 অনেক সুন্দর একটা বাইক, তিনটি কালার রয়েছে -

  • Racing Blue
  • Thunder Grey
  • Dark Knight Black

আমার পছন্দের কালার ছিলো নীল তাই আমি Racing Blue কালারের বাইকটা পছন্দ করি, R15 V3 পছন্দ করার আরেকটা কারন আছে সেটা হলো বাইকটির হেডলাইট আমার খুবই পছন্দের।  যা দূর থেকে দেখতে খুব ভালো লাগে ।

বাইকটির বেশ কিছু জিনিস আপনার ভালো লাগবে, যেমন বাইকটার সিটিং পজিশন BS4 ভার্সন এর তুলনায় অনেক কমফোর্ট। আপনি যদি ৫ ফিট ৭ ইঞ্চির উপরে হোন তাহলে এই বাইকটা আপনার জন্য বেষ্ট হবে, আর যদি ৫ ফিট ৭ এর নিচে থাকলে একটু কমফোর্ট নাও হতে পারে ।

Yamaha R15 V3 Indian Version view

বাইকটির লুকের ক্ষেত্রে আমি ১০ এর মধ্যে ৯ দেবো, এটা আমার সম্পূর্ণ ব্যাক্তিগত মতামত । তবে যতটা বিল্ড কোয়ালিটি খারাপ ভেবেছিলাম ততটা খারাপ না, যারা R15 BS6 Indian নেয়ার কথা ভাবছেন দাম আর কোয়ালিটি সব কিছু বিবেচনা করে নিতে পারেন ।

এবার আসি সরাসরি রাইডিং অভিজ্ঞতায় । বাইক টা কেনার উদ্দেশ্য লং রাইড আর ট্যুরের জন্য,  কম বেশী প্রায় অনেক জায়গায় ট্যুর দিয়েছি, আমার বাইকে তেমন  বড় কোন মডিফাই করা হয় নি,  যেহেতু ট্যুর জন্য কেনা, শীত কালে হাইওয়েতে রাইড করার সময় ফগ লাইট অনেক প্রয়োজন ।

ফগ লাইট, ভাইজর, উইংলেট এর মধ্যে মোডিফিকেশন শেষ । বাইক কেনার পর আমি একটানা  ৮০০ কিলোমিটার রাইড করি। ৮০০ কিলোমিটার রাইডে আমি ৫০-৫৫ মাইলেজ পেয়েছি । সর্বোপরি আমার ১৬ লিটার এর মত ফুয়েল খরচ হয়েছে।

আমি টপ স্পিড পেয়েছি হাইওয়েতে ১৩৫। প্রথম ৩০০০ কিলোমিটার রাইডিং এর ক্ষেত্রে আমি এই বাইকের মাইলেজ দেখে পুরাই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। ভাবতাম অন্যরা যখন  রিভিউ লিখতো ওরা বাড়িয়ে বলতো,  কিন্ত না কথা সত্য,  নিজে অভিজ্ঞতা  না হলে কখনো বিশ্বাস করতাম না ।

বাড়িয়ে বলার মত এখানে কিছুই নেই আপনি হাইওয়েতে রাইড করলে ৫০-৫৫ মাইলেজ পাবেন,  আর যদি সিটিতে রাইড করেন তাহলে ৪২-৪৫ মাইলেজ পাবেন যা আমি নিজেই পেয়েছি । প্রথম ৩০০০ কিলোমিটার কমপ্লিট করার পর বাইক সার্ভসিং করাই,  আমার বাইকের মাইলেজ এখনো নতুন বাইকের মতই আছে।

Yamaha R15 V3 Indian Version view

এবার আসেন একটু স্পোর্টস বাইকে বসা নিয়ে একটু কথা বলি, স্পোর্টস বাইকের বসার পজিশন সব বাইকের মত না সেটা সবাই জানেন, কোমরে ব্যাথা বা কব্জি ব্যাথার জন্য বা বডি একটু নিচে হয়ে রাইড করা লাগে বলেই স্পোর্টস বাইক অনেকেই পছন্দ করেন না।

তবে আমার ক্ষেত্রে আমি প্রথম স্পোর্টস বাইক ব্যাবহার কারী হিসেবে নতুন বাইকে ৮০০ কিলো রাইড দিয়ে আমি কোমরের ব্যাথা অনুভব করিনি, শরীরে ক্লান্তি ছিল, কিন্ত কোন ব্যাথা ছিল না, তবে সেটা কিছু টা আপনার হাইটের উপর  ও নির্ভর করে থাকে।

আমার হাইট ৬ ফুট আমি কোমরে ব্যাথা কিংবা তেমন বড় সমস্যা ফেস করিনি, হাইট ৫ ফুট সাত এর উপরে থাকলে আশা করি প্রব্লেম হবে না। আর যদি ৫ ফিট ৭ ইঞ্চির কম হয় লং রাইডের ক্ষেত্রে কোমরে একটু ব্যাথা অনুভব করতেও পারেন।

নতুন বাইক কিনলে অবশ্যই ব্রেক ইন পিরিয়ড মেন্টেইন করা লাগে আমি ১৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত মেন্টেইন করেছি , ব্রেক ইন পিরিয়ড আপনি ৫০০ - ১০০০ কিলোমিটার ও করতে পারেন তার বেশী ও করতে পারেন এটা সম্পূর্ণ আপনার ইচ্ছা ।

আমি প্রথম ৬০০ কিলোমিটার রাইড করার পর আমার বন্ধু সাজেস্ট করে ইঞ্জিন অয়েল মতুল এর 10w40 গ্রেডের মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করার জন্য। R15 V3 বাইকে ৮৫০ এম এল ইঞ্জিন অয়েল ব্যাবহার করতে হবে ।

পরবর্তী  ১১০০ কিলোমিটার রাইড করার পর  আবার মতুল 10w40 গ্রেডের মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি। পরবর্তী  ইঞ্জিন অয়েল দিয়েছিলাম ১৬০০ কিলোমিটার রাইড করার পর । এর পর থেকে লিকুমলি 10w40 গ্রেডের মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি ।

লিকু মলি ইঞ্জিন অয়েলে আমি খুব ভাল পার্ফরমেন্স পেয়েছি। লিকু মলি R15  BS6 এর জন্য বেস্ট একটা ইঞ্জিন অয়েল যারা ইউস করেন তারা হয়তো জানবেন আশা করি। ভাল খারাপ পারফরম্যান্স সবাই তো পায়, তবে লিকু মলি আমাকে তেমন হতাশ করেনি । আমার অনেক ভাল লেগেছে ইঞ্জিনের সাউন্ড অনেক স্মুথ ।

বাইক এমন একটি জিনিস যা আপনি যেমন ভালবাসবেন আপনাকে তেমনি সার্ভিস দেবে। বাইকের খুটিনাটি কাজগুলো করতে আমি অন্যরকম আনন্দ পাই।

পরিশেষে আমি একটা কথাই বলবো, যারা স্পোর্টস সেগমেন্ট বাইক এর কথা ভাবছেন তারা Yamaha R15 V3 Indian Version Dual ABS বাইকটি নিতে পারেন ।

Yamaha R15 V3 Indian Version view

খারাপ দিক তেমন একটা আছে বলে আমার মনে হয়নি তারপর ও আছে দুই একটা খারাপ দিক যেমন বাইকটির বিল্ড কোয়ালিটি আরেকটু ভাল হতে পারতো, সাসপেনশন টা ইউ এস ডি দেয়া যেত, সিগনাল লাইট গুলো আরেকটু আপগ্রেড করা প্রয়োজন ছিল তবে R15 Indian আর Indonesian এর মধ্যে সিগনাল লাইটের মধ্যে ভিন্নতা আছে।

তাছাড়া হেডলাইট এর লুক যদি ও ভাল হলে ও আলোর ক্ষেত্রে অনেক কম,  হেডলাইট এর আলো টা আরেক টু ভাল হতে পারতো, ৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দামের এই বাইকে আমি মনে সব ঠিক ঠাক ই আছে । বাইক রিভিউ কোন সময় আমি লিখিনি,  তবে হ্যাঁ আজ সর্বপ্রথম আমি বাইবিডির সাথে আমার লাইফের বেস্ট অনূভুতি গুলোই শেয়ার করলাম ।

লিখেছেনঃ অমি   

আশা করি অমি ভাই এর ইউজার রিভিউটি আপনাদের কাছে অনেক ভালো লেগেছে।  ইয়ামাহার এমন ইউজার রিভিউ এবং r15 v3 price in bangladesh এর সর্ম্পকে বিস্তারিত জানতে আমাদের ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব চ্যানেল ঘুরে দেখুন। শুধু ইয়ামাহা নয় আরো বাইকের ইউজার রিভিউ রয়েছে আমাদের ওয়েবসাইটে। আপনাদের মূল্যবান বক্তব্য এবং r15 v3 ভালো বা খারাপ দিক আপনার কাছে কোনটা মনে হয় সেগুলো আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন ।

আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।

Published by Raihan Opu Bangla