Shares 2

Yamaha FZS-Fi V3 ABS ৮,৫০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - অনিক

Last updated on 25-Jul-2024 , By Raihan Opu Bangla

আমি অনিক। আমি একজন ছাত্র। বর্তমানে ডিগ্রি ৩য় বর্ষে অধ্যায়নরত আছি। আমি চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলায় থাকি। আমি একটি Yamaha FZS-Fi V3 ABS বাইক ব্যবহার করছি । আজ আমি আমার এই Yamaha FZS-Fi V3 ABS বাইকটি নিয়ে আমার কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চাচ্ছি ।

Yamaha FZS-Fi V3 ABS ৮,৫০০ কি.মি. রাইড অভিজ্ঞতা

black colour yamaha fzs fi v3 abs

ছোট বেলা থেকে আমার বাইকের প্রতি একটা অন্যরকম দূর্বলতা কাজ করতো। ইচ্ছে ছিল বাইক চালানো শিখবো। অনেক কষ্টের পর ইচ্ছে পূর্নতা পায় ২০১২ সালে মামার বাইক Bajaj Discover 135 বাইকটি দিয়ে মামার সহযোগিতায় বাইক চালানো শিখি। 

যদিও তখন আমার পরিপূর্ণ বয়স হয়নি বাইক চালানোর তাই নিজের কোন বাইক ছিল না। অনেক ইচ্ছে ছিল বাইক কিনবো একজন বাইকার হবো। আস্তে আস্তে সোশ্যাল মিডিয়ায় বাইকবিডির মত বাইকিং কমিউনিটির সাথে যুক্ত হয়ে বাইকিং সম্পর্কে অনেক অজানা বিষয় সম্পর্কে জানতে পারলাম।

বর্তমানে আমি Hero Honda Hunk এবং Yamaha FZS-Fi V3 ABS ব্যবহার করি। আজ যে বাইক নিয়ে লিখবো সেটা হলো Yamaha FZS-Fi V3 ABS । গত ১০/০১/২০২০ তারিখে বাইকটি ক্রয় করেছিলাম সৌদিয়া মটরস, ফটিকছড়ি শো-রুম থেকে। যার তখন মূল্য ছিল ২ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকা।yamaha fzs fi v3 abs at cox bazar gateবাইক কিনতে যাওয়ার আগের দিনের ঘটনা শেয়ার করি, আমার বাইক কিনার মূল উদ্দেশ্য ছিল Yamaha Fazer Fi v2। বাইকটি কিনার জন্য শো-রুমে গিয়ে Yamaha FZS-Fi V3 ABS বাইকটি দেখে আমার লক্ষ্য পরিবর্তন করতে হয়। 

বাইকটিতে ABS অর্থাৎ Anti Lock Breaking System ব্যবহার করাই কন্ট্রোলের দিকের কথা মাথায় রেখে বাইকটি নিয়ে নিলাম। বাইকটি প্রথমবার চালানোর পর আমার কাছে একরকম ভালো লাগা কাজ করে বাইকটির প্রতি। নয় মাসে Yamaha FZS-Fi V3 ABS বাইকটির সাথে আমি ৮৫০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করি। 

বাইকটির লুকস এবং ফিচারস আমার কাছে বেশ সুন্দর মনে হয়েছে। বাইকটিতে আমার সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগে সেটা হলো বাইকটির হেডলাইট, মিটার এবং ট্যাংক।

Click To See Yamaha FZS-Fi V3 ABS First Impression Review In Bangla – Team BikeBD


সার্ভিসিং এর ব্যাপারে যদি বলি Yamaha FZS-Fi V3 ABS বাইকটি কিনার পর আমি ৪টি ফ্রি সার্ভিসিং পেয়েছিলাম। প্রথম ৫০০ কিলোমিটার পর সার্ভিসটি আমি যেখান থেকে বাইক কিনেছিলাম সৌদিয়া মোটরস থেকে করাই। 

তাদের সার্ভিসিং এ আমি পুরোপুরি সেটিসফাইড না থাকায় দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ সার্ভিসটি আমি চট্টগ্রামের মুরাদপুর ইয়ামাহা শো-রুম মীম মোটরস থেকে করাই। তাদের কাছে সার্ভিস করিয়ে আমি পুরোপুরি সেটিসফাইড। ৪০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ৪টি ফ্রী সার্ভিস করিয়ে প্রথম সার্ভিসিং বাদে বাকি ৩টি ভালো লেগেছে।

এইবার বলি একটা নতুন বাইকের সব চেয়ে বড় যে বিষয় সেটি হলো ব্রেক ইন পিরিয়ড মেইনটেইন করা এবং মাইলেজ খেয়াল রাখা। আমার Yamaha FZS-Fi V3 ABS বাইকে আমি প্রথম ২২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ব্রেক ইন পিরিয়ড মেইনটেইন করে রাইড করার চেষ্টা করেছি। 

এই সময় আমার বাইকের গতি সর্বোচ্চ ৫০/৫৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা এর মধ্যে এবং আরপিএম ৩০০০ হাজারের মধ্যে রাখার চেষ্টা করেছি। প্রথম ৮০০/১০০০ কিলোমিটারে বাইকের মাইলেজ পেয়েছি সর্বোচ্চ ৩৪ এবং সর্বনিম্ন ৩০ কিলোমিটার প্রতি লিটার। এখন বর্তমানে নিজের জানা মতে যতটুকু মেইনটেন্যান্স করছি এখন মাইলেজ পেয়েছি হাইওয়েতে ৪৫কিঃমি এবং সিটিতে ৪১/৪২ কিলোমিটার প্রতি লিটার। যা দিয়ে আমি পুরোপুরি সেটিসফাইড।yamaha fzs fi v3 abs at sajek

বাইকটির প্রতি আমার ভালোলাগা ভালোবাসা থেকে এটার প্রতি আমি যতটুকু সম্ভব যত্নশীল থাকি।বাইকটির মেইনটেন্যান্সের দিক দিয়ে যদি বলি আমি প্রতি ট্যুরে বাইকটির একটি বেসিক চেকআপ করি। প্রতিবার ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করার সময় অয়েল ফিল্টার পরিবর্তন করি এবং এয়ার ফিল্টার পরিষ্কার করি। 

চেইন লুজ থাকলে তা পরিমান মত টাইট করি এবং চেইনে লুব ইউজ করি। আর আমি সবসময় আমার বাইককে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করি। তাই ওয়াশ তো আছেই সবসময়।

আমার Yamaha FZS-Fi V3 ABS বাইকের ব্যবহৃত ইঞ্জিন অয়েল সম্পর্কে যদি বলি আমি প্রথম ২৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ইয়ামাহার Yamalube 10w40 গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েলটি ব্যবহার করেছি। পরবর্তীতে আমি এরচেয়ে ভালো পারফরম্যান্স এর জন্য অনেক রিসার্চ করে Motul 10w40 মিনারেল ইঞ্জিন অয়েলটি ব্যবহার করেছি। ৫০০০ কিঃমিঃ পর্যন্ত আমি Motul 10w40 গ্রেডের মিনারেল ইঞ্জিন অয়েলটি ব্যবহার করেছি।yamaha fzs fi v3 abs black colourমটুলের ইঞ্জিন অয়েলটির মূল্য ৫০০ টাকা। যা ব্যবহার করে বাইকে অনেকটা পরিবর্তন পেয়েছি। এরপর ৫০০০ কিঃমিঃ এরপর আমি Motul 10w40 সেমি সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করছি। যা বর্তমানে ব্যবহার করছি।

এটির পারফরম্যান্সে আমি সেটিসফাইড।আমার বাইকের ১০০০০ কিঃমি পূর্ন হলে তখন Motul 10w40 গ্রেডের ফুল সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েলটি ব্যবহার করব ভাবছি।

Click To See Yamaha FZS-Fi V3 ABS Test Ride Review In Bangla – Team BikeBD

আমার Yamaha FZS-Fi V3 ABS বাইকটিতে এখনো পর্যন্ত সেরকম কিছুই পরিবর্তন করিনি। শুধুমাত্র ফ্রন্ট এবং রেয়ার ব্রেক প্যাড সেট পরিবর্তন করেছি। যদিও এইগুলো তেমন ক্ষয় হয়নি তারপরও নিজের মধ্যে কেমন জানি মনে হচ্ছিলো তাই পরিবর্তন করে দিলাম। এই ব্রেকপ্যাড গুলো আমি আফটার মার্কেট থেকে নিয়ে বাইকে লাগাই। রেয়ার ব্রেক প্যাডের মূল্য ১৬৫০ টাকা এবং ফ্রন্ট ব্রেক প্যাডের এর মূল্য ৪৫০ টাকা। 

আর সামনের বাম পাশের ইন্ডিকেটর লাইটের বাল্ব ফিউজ হয়ে যাওয়ায় তা পরিবর্তন করি। বাল্বটির দাম ২০ টাকা। এছাড়া আমার বাইকে আর তেমন কিছু পরিবর্তন করতে হয়নি বাকি সবকিছুই স্টক আছে।

আমার বাইকের লুকস খানিকটা পরিবর্তন আনার জন্য কিছু স্টিকার দিয়ে মোডিফিকেশন করি। আর সামনের হেডলাইটের উপর Fazer v2 এর উইন্ডশিল্ড লাগাই । পিছনের চাকার উপর Fazer v1 ফুল মার্ডগার্ড ইনস্টল করি যাতে পিছনে কাঁদার পরিমান কম উঠে। আলোর পরিমান বৃদ্ধি করার জন্য দুইটি A7 ফটলাইট ইনস্টল করি।

এইগুলো বাদে আর তেমন কোন মোডিফিকেশন করা হয়নি। আমার জানা মতে Yamaha FZS-Fi V3 ABS বাইকটির টপ স্পীড ১২৫। আমি আমার বাইকটিতে সর্বোচ্চ টপ স্পীড ১০৭ পর্যন্ত তুলতে পেরেছিলাম।yamaha fzs fi v3 abs number plate back light

Yamaha FZS-Fi V3 ABS বাইকটির কিছু ভালো দিক - 

  • বাইকটির লুক যথেষ্ট সুন্দর।
  • বাইকটির ইগনিশন কি সুইচ ট্যাংকব ভিতর সেট থাকায় বাইকটি সহজে ওয়ারিং কেটে চুরি করার সম্ভব হবে না।
  • বাইকটির রাইডিং সিট যথেষ্ট আরামদায়ক যা লং রাইডে শরীরে কোন প্রকার পেইন অনুভব করে না।
  • বাইকটি হ্যান্ডেল বার অন্যসব বাইক থেকে কিছুটা উঁচু করায় রাইড করতে যথেষ্ট সুবিধা হয়।
  • কোন প্রকার ভাইব্রেশন অনুভব হয়না।
  • বাইকটিতে সিঙেল চ্যানেল এবিএস থাকায় বাইকটির যথেষ্ট ভালো কন্ট্রোল পাওয়া যায়।
  • পিছনে ১৪০ সাইজের বড় টায়ার এবং সামনে ১০০ সাইজের টায়ার থাকায় কর্নারিং এর সময় ভালো ব্যালেন্স পাওয়া যায়।
  • আমার কাছে বাইকটির সাউন্ড যথেষ্ট স্মুথ বলে মনে হয়েছে।

Yamaha FZS-Fi V3 ABS বাইকটির কিছু খারাপ দিক - 

  • বাইকটির হেডলাইটে এলএইডি বাল্ব ইউজ করার পরও আমার কাছে হেডলাইটের আলো পর্যাপ্ত বলে মনে হয়নি। তাই আমার এক্সট্রা ফগলাইট ইউজ করতে হয়।
  • বাইকটির রাইডিং সিট যথেষ্ট আরামদায়ক হলেও পিলিয়ন সিট খুব একটা সুবিধার বলে আমার মনে হয়নি।
  • বাইকটির রেডি পিকাপ আমার কাছে অন্যান্য বাইকের থেকে কম মনে হয়েছে।যার ফলে হাইওয়েতে রাইডিং এর সময় ভোগান্তি স্বীকার হতে হয়।
  • বাইকটি একটানা বেশিক্ষণ রাইড করলে এর ইঞ্জিন ওভার হিট হয়।
  • বাইকটির মিটার যথেষ্ট সুন্দর হলেও মিটারে যদি গিয়ার শো করতো আরো ভালো হত।yamaha fzs-fi v3 at korean epz

আমার এই Yamaha FZS-Fi V3 ABS বাইকটি নিয়ে প্রথম ট্যুর দিয়েছি সাজেক। এরপর কাপ্তাই, রাঙামাটি, বান্দরবান, লামা, আলীকদম, ডিম পাহাড়, থানচি, কক্সবাজার সহ আরো অনেক জায়গায় ট্যুর দিয়েছি। তবে এখনো পর্যন্ত নিজের বিভাগ এর বাইরে যাওয়া হয়নি তবে ভবিষ্যতে প্ল্যান আছে নিজের জেলার বাইরে তাকে নিয়ে ঘুরে আসবো বহু পথ। 

আমার এই বাইকটি আমাকে আমার ট্যুরে কখনো নিরাশ করেনি। তাই ভালো খারাপ মিলিয়ে আমার কাছে Yamaha FZS-fi v3 ABS বাইকটি বেষ্ট মনে হয়েছে। ধন্যবাদ জানাই বাইকবিডি পরিবারকে।

লিখেছেনঃ আনিক

আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।

Published by Raihan Opu Bangla