Shares 2

Yamaha FZS Fi V3 ৭৫০০ কিলোমিটার রাইড - আসাদুল কবীর পরাগ

Last updated on 29-Jul-2024 , By Raihan Opu Bangla

আমি আসাদুল কবীর পরাগ। বাড়ি গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলায়। পড়াশোনা করছি রাজধানীর সরকারী তিতুমীর কলেজে স্নাতক ৪র্থ বর্ষে। কিছুদিন যাবৎ ভাবছি আমার ব্যবহৃত বাইক Yamaha FZS Fi V3 নিয়ে ছোটখাটো একটা রিভিউ লিখবো। যার ফলশ্রুতিতে শুরু করতে যাচ্ছি Yamaha FZS Fi V3 বাইকটির মালিকানা রিভিউ লিখা। লিখাটি সম্পূর্ন আমার ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে, ভুলত্রুটি হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি।

Yamaha FZS Fi V3 ৭৫০০ কি.মি. রাইড অভিজ্ঞতা

yamaha fzs fi v3 brake

আমার জীবনে প্রথম বাইক চালানোর হতেখড়ি হয় Honda CD 80 দিয়ে। আমাকে বাইক রাইড করা শেখান আমার বাবা। যখন আমি ৫ম শ্রেনীতে পড়তাম তখন আমি বাইক চালানো শিখি। অতঃপর বাবার Honda CDI 100 বাইকটি রাইড করি। মূলত CDI দিয়েই বাইক চালানোর পদ্ধতি গুলো আয়ত্ত্ব করেছি এবং চালিয়েছি ৫ বছর। অতঃপর হিরো হোন্ডা স্পিন্ডার+, TVS Apache RTR 150, Bajaj Pulsar 150 এবং বর্তমানে Yamaha FZS Fi V3 বাইকটি চালাচ্ছি। 

Yamaha FZS Fi V3 বাইকটি অমি ক্রয় করি ২,৬০,০০০/- টাকা দিয়ে ঢাকার মগবাজারে অবস্থিত শরীফ মোটরসাইকেল বিতান থেকে ২০১৯ সালের অগাস্টে। বাইক কেনার দিন আমার মধ্যে কিছুটা উত্তেজনা কাজ করছিলো, কারন এই প্রথম ABS বাইক চালাবো। তাছাড়া বাইকটির জনপ্রিয়তাও ছিলো লোভনীয়।

কেন আমি এই বাইক টি নির্বাচন করলাম - বাইক কেনার সময় প্রত্যেকেই একই সেগমেন্টর কয়েকটি বাইক পছন্দের তালিকায় রাখে। সেগুলোর মধ্যে সকল কিছু বিচার বিবেচনা করে সেরা বাইকটি নির্বাচন করে থাকে। আমার বেলায় ও ঠিক তেমনটিই ঘটেছিল। সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নিয়ে নিলাম Yamaha FZS Fi  V3 বাইকটি। নতুন বাইক প্রথম চালানোর অনুভূতি ছিল অসাধারন। বাইক চালানোর অন্যতম কারন হল শখ। তাছাড়া প্রয়োজনের তাগিদেও ঘুরে বেড়ানো নিত্য দিনের অভ্যাস।

yamaha fzs fi v3 engine

ইঞ্জিন পারফরমেন্স - বাইকটি আমি ০ থেকে ৭৫০০ কিলোমিটার রাইড করি। এই দীর্ঘ রাইডে বাইকটির ইঞ্জিন পারফর্মেন্স ছিল অসাধারণ। এই দীর্ঘ পথচলায় ইন্জিনের কোনরূপ ত্রুটি-বিচ্যুতি আমার দ্বারা পরিলক্ষিত হয়নি। যদিও প্রথম দিকে কিছুটা হিটিং ইস্যু ছিলো তবে পরবর্তিতে সেসব ঠিক হয়ে গিয়েছে।

ব্রেক ইন পিরিয়ড - বাইকটির ইন্জিন এই সময় অল্প রাইডেই প্রচুর গরম হয়ে যেত, যা প্রতিটি নতুন বাইকের বেলায় ই দেখা যায়। তাই এই বিষয় নিয়ে এতটা চিন্তা করতাম না। ব্রেক ইন পিরিয়ডে স্পিড ও আরপিএম লিমিট মানার চেষ্টা করেছি কিন্তু সম্পূর্ণ পারিনি । যাই হোক ১৫০০ - ২০০০ কিলোমিটার চালানোর পর বাইকের ইন্জিন তুলনামূলক গরম কম হতে লাগল এবং মাইলেজ ও কমফোর্ট আগের চেয়ে বেশি পেতে শুরু করলাম।

রেডি পিকআপ - এই বিষয়ে বলতে গেলে বলতে হয় Yamaha FZS Fi V3 এর রেডি পিকআপ মোটামুটি ভালো। তবে স্পিড ইন টাইমের যে আলাদা বৈশিষ্ট্য যা আমরা TVS Apache RTR 160 4V তে পেয়ে থাকি তা এই বাইকটিতে পরিলক্ষিত হয়নি (একই সাথে দুটি বাইক চালানোর অভিজ্ঞতা থেকে বলা)। ০-৬০/৭০ স্পিড পর্যন্ত ইন্জিন ভালো রেন্সপন্স করে থাকে অতঃপর কিছুটা সময় নেয় স্পিড উঠতে।

Click To See Yamaha FZS FI V3 Test Ride Review

ভাইব্রেশন - মিনারেল গ্রেডের লুবরিকেন্ট ইউজে ১ম দিক দিয়ে পাইপ হেন্ডেলে কিছুটা ভাইব্রেশন অনুভূত হয়েছিলো। ২৫০০ কিলোমিটার পর যা আর অনুভূত হয়নি। যে কোন গিয়ার পজিশনেই ভাইব্রেশন অনুপস্থিত। টপ স্পিড এবং লো স্পিডেও ভাইব্রেশন অনুভূত হয়নি। 

ব্রেকিং ও কন্ট্রোলিং - ব্রেকিং ও কন্ট্রোলিং এ এই বাইকটি অসাধারন। একই সাথে কয়েকটি বাইক চালানোর অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, Yamaha FZS Fi V3 ১৫০ সিসি কমিউটার সেগমেন্টর বাইক গুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো ব্রেকিং ও কন্ট্রোলিং দিয়েছে। তাছাড়া বাইকটিতে ABS ব্যবহারের কারনে ব্রেকিং কন্ফিডেন্স আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। 

ইন্জিন অয়েল - ব্রেক ইন পিরিয়ডে প্রথম ৫০০ কিলোমিটারের পর ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করি। অঃতপর ৭০০ কিলোমিটার, ৮০০ কিলোমিটার এবং তার পর থেকে প্রতি ১০০০ কিলোমিটার পর পর পরিবর্তন করে আসছি। ইঞ্জিন অয়েল হিসেবে আমি ব্যবহার করছি YAMALUB 10W-40 মিনারেল গ্রেডের লুব।fzs v3 speedometer

ফুয়েল - জ্বালানি হিসেবে অকটেন ব্যবহার করছি। একবার পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে দোকান থেকে বোতলের অকটেন নিয়েছিলাম অতঃপর সকালে স্টার্ট নিতে ৩/৪ টি সেল্ফ লেগেছিল পরে সম্পূর্ণ তৈল ফেলে দেই ও পাম্প থেকে রিফুয়েলিং করি। অবশ্যই বিশ্বস্ত পাম্প ছাড়া ফুয়েল নিবেন না। এফ আই ইন্জিনের অন্যতম মেইনটেইনেন্স হচ্ছে ভালো মানের অকটেন। 

মাইলেজ - আমি Yamaha FZS Fi V3 বাইকটি দিয়ে গড় মাইলেজ পাচ্ছি ৪০ কিলোমিটার প্রতি লিটার, যা হাইওয়েতে ৪২+ কিলোমিটার প্রতি লিটার এবং শহরে ৩৮+ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা।

ট্যুরে Yamaha FZS Fi V3 - বাইকটি দিয়ে আমি সর্বোচ্চ একটানা ১০০ কিলোমিটার রাইড করেছি। এই ১০০ কিলোমিটার রাইডে বাইকটির ইঞ্জিন পারফরমেন্স ছিল অসাধারণ। আমি কোন বিরক্ত বোধ করিনি এই লং ট্যুরে সর্বদাই বাইকটি আমাকে সাপোর্ট করে গেছে। 

মোডিফিকেশন - এফজেডের আউট লুকটি আমার কাছে খুব ভাল লাগে। তাই এতে কোন প্রকার মোডিফিকেশন করিনি। 

পার্টস রিপ্লেস - ৭৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত শুধু লুব্রিরিকেন্ট ফিল্টার ছাড়া কিছুই পরিবর্তন করতে হয়নি। টপস্পিড - Yamaha FZS Fi V3 বাইকটিতে পিলিয়ন সহ সর্বোচ্চ ১০৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা, তবে আরও স্পিড উঠত বলে মনে হয়েছে। তাছাড়া ৭০-৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় প্রায়ই চালানো হয় বেশি। এক্ষেত্রে আমার স্বল্প অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছে বাইকটি ৮৫/৯০+ স্পিড তুলতে কিছুটা সময় নেয় । কিন্তু ৬০/৭০ এভারেজ স্পিড ইন টাইম পেয়েছি।

yamaha fzs fi v3 engine

ডিজাইন ও গ্রাফিক্স - বাইকটির ফ্রন্ট ডিজাইন ও গ্রাফিক্স আমার কাছে ভালো লেগেছে কিন্তুু রেয়ার ডিজাইন ভালো লাগেনি। তাছাড়া স্পিডো মিটার ডিজাইন অসাধারণ। সেই সাথে ফুয়েল ট্যাংক ডিজাইনও দৃষ্টিনন্দন।

লাইটিং - LED হেডলাইটের আলো তুলনা মূলক কম, ইন্ডিকেটর লাইট ও টেইল ল্যাম্প LED হলে ভালো লাগতো।

আফটার সেল্স সার্ভিস - যেহেতু বাইকটি গ্রে মার্কেট থেকে কিনেছি সেহেতু অফিশিয়াল কোন সার্ভিস আমি পাইনি তবে শো-রুম কর্তৃপক্ষ নিজ দায়িত্বে সার্ভিস করিয়ে দিচ্ছে যাতে আমি সন্তুষ্ট।

বর্তমান মূল্য - বর্তমানে ACI Motors অফিশিয়ালি ওয়ারেন্টি সহকারে বাইকটির দাম নির্ধারন করেছে ২,৪০,০০০ টাকা আর গ্রে মার্কেটে এর দাম ২,৪৫,০০০-২,৫৫,০০০ টাকা মতো।

বাইকের যত্ন - প্রতি মাসে গড়ে ১ দিন বাইক ওয়াশ করা হয়। অন্য সময় সুতি কাপড় দিয়ে ধূলাবালি পরিস্কার করি। বাইকের ফুয়েল ট্যাংক, বডি কিট ওয়াস করার জন্য আমি সেম্পু ব্যবহার করি এবং চাকা, টায়ার ও ইঞ্জিন পরিস্কার করতে ডিটারজেন্ট ব্যবহার করি। মাঝে মধ্যে পালিশ ও করি। নিজের ভালবাসার জায়গা থেকে দায়িত্ববোধের কারনেই সবসময় বাইকটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখি।fzs v3 review

Yamaha FZS Fi V3 বাইকটির কিছু ভাল দিক -

  • কন্ট্রোলিং খুবই ভাল
  • ব্রেকিং খুবই চমৎকার, ABS থাকায় আত্মবিশ্বাস বেড়েছে
  • তুলনামূলক মাইলেজ বেশি (এই সেগমেন্টের অন্যান্য বাইক থেকে)
  • লং ট্যুরের জন্য অত্যন্ত উপযোগী
  • ভাইব্রেশন নেই

Yamaha FZS Fi V3 বাইকটির কিছু খারাপ দিক -

  • বাইকের তুলনায় দাম অনেকটা বেশি
  • রেডি পিকআপ তুলনামূলক কম
  • প্লাস্টিকের মান নিন্ম মানের মনে হয়েছে
  • স্পিডোমিটারে সূর্যের আলো তীর্যক ভাবে পড়লে কিছুই দেখা যায় না
  • টেইল ল্যাম্প ও বেক সাইড ডিজাইন ভালো লাগেনি

পরিশেষে এ কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, বাংলাদেশের বাজারে ১৫০ সিসি সেগমেন্টের একটি বহুল জনপ্রিয় বাইক Yamaha FZS Fi V3 সিরিজ, যার তৃতীয় প্রজন্মের বাইকে ABS সংযোজিত হয়েছে এবং যা বর্তমানে একই সেগমেন্টের অন্যান্য বাইক থেকে স্বাতন্ত্র্য গুন বৈশিষ্ট্যর অধিকারী। গতির সাথে সাথে নিয়ন্ত্রন, মাইলেজ, দীর্ঘ্যস্থায়ী ইঞ্জিন পারফরমেন্স এবং পার্টস এর সহজলভ্যতার কারনে বাইকটির প্রতি আমার আস্থা দিন দিন বেড়েই চলছে। 

আমি মনেকরি, যারা টপ স্পিড ও রেডি পিকআপ লাভার তাদের জন্য এই বাইটি যথোপযুক্ত নয়। অপর দিকে যারা বেস্ট কন্ট্রোলিং চান ও এভারেজ স্পিডে (৫০-৮০) বাইক চালাতে ভালোবাসেন তাদের জন্য এর চেয়ে ভালো অপশন আপাতত দেখছি না। সকলের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা, সর্বদা হেলমেট পরে বাইক চালানোর চেষ্টা করুন। ধন্যবাদ।

লিখেছেনঃ আসাদুল কবীর পরাগ

আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।

Published by Raihan Opu Bangla