Shares 2
Yamaha FZS FI বাইক নিয়ে মালিকানা রিভিউ - জিহাদ
Last updated on 08-Jan-2025 , By Shuvo Bangla
আমি হাফিজুর রহমান জিহাদ , সহকারি শিক্ষক , পটুয়াখালী জেলা থেকে বাইক বিডি এর একজন গর্বিত মেম্বার। আমার জীবনের প্রথম বাইক Yamaha FZS FI । সবচেয়ে গর্বের বিষয় হচ্ছে বাইকটি আমি আমার সম্পূর্ণ নিজের টাকায় কিনেছি।
Yamaha FZS FI বাইক নিয়ে মালিকানা রিভিউ
আমি একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। আমার চাকরির জন্য যাতায়াতের সুবিধার্থে একটি বাইকের খুব দরকার ছিল। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম আমার নিজস্ব একটা বাইক হবে। কারণ, আমার বাবা ২০০৬ সালে প্রথম বাইক কিনেন এবং আমি ২০০৭ সালে ক্লাস সেভেনে পড়া অবস্থায় প্রথম বাইক শেখা শুরু করি। তবে সাহস করে কখনোই বাবার বাইক চালাইনি এবং কখনোই অন্য কোন বন্ধু-বান্ধবের বাইক ধার নেয়নি অথবা কোন আত্মীয়-স্বজনের বাইকও আমি ব্যবহার করিনি।
Also Read: Explore Yamaha's enticing Cashback Offer for July 2019
আমার ইচ্ছে ছিল নিজের টাকায় বাইক কিনে ব্যবহার করার, কারণ আমার জীবনে এমন কিছু কিছু ঘটনা ঘটেছে, যে কারণে কারো কোন কিছু ধার নেয়ার মানসিকতা আমার হয়নি। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমাকে নিজের টাকায় বাইক কেনার সামর্থ্য দিয়েছেন।
Also Read: Yamaha FZS Fi V3 ৭৫০০ কিলোমিটার রাইড - আসাদুল কবীর পরাগ
আমি যেভাবে আমার বাইকটি বেছে নিলাম: ২০২৩ সালের জুন মাস। আমার জন্মের মাস। চাকরির সুবাদে অনেকদিন থেকে ইচ্ছা একটি বাইক কেনার। ২২ জুন ২০২৩, সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আমার সামনে এসে উপস্থিত হল। আমি বিগত ছয় মাস ঘাটাঘাটি করে, বাইক বিডি এর রিভিউ দেখে ও বিভিন্ন অনলাইন ঘাটাঘাটি করে আমার পছন্দের কাঙ্খিত ও সেরা পারফরমেন্সের বাইক নির্ধারণ করলাম।আমার বাইকটি যে কারণে বেছে নিলাম -
আমার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব ৬ কিলোমিটারের মতো। বাবা-মা পটুয়াখালী জেলায় থাকার সুবাদে আমাকে বেশিরভাগ সময় পটুয়াখালীতে থাকতে হয়। আমার এমন একটা বাইক দরকার যে বাইকে আমি কমফোর্ট, মাইলেজ এবং ভালো লুকস পাব। জীবনের প্রথম বাইক তাই অবশ্যই এটাকে ড্রিম বাইক হিসেবে কল্পনা করেছিলাম। আর বাইক বিডি ও ইউটিউবের রিভিউ দেখে সিদ্ধান্ত নিলাম ইয়ামাহা এফ জেড এস ভি টু বাইকটা কেনার। কারণ বিয়ে করার কারণে একটা ফ্যামিলি বাইকের দরকার ছিল যেটার অভাব পূরণ করেছে এই বাইকটি। গত ছয় মাস ধরে চালিয়ে যা বুঝলাম এটি আমাকে ১০০% কম্ফোর্ট , মাইলেজ এবং আমার সকল ধরনের বাইকিং চাহিদা পূরণ করেছে।
Also Read: Yamaha FZS FI V3 রিভিউ - টীম বাইকবিডি
বাইকের দাম ও যেখান থেকে কিনেছি -
আমি ঈদুল আযহা ঈদের ঠিক এক সপ্তাহ আগে আমার বাইকটি কিনি। ৭৫০০ টাকা ডিসকাউন্ট ক্যাশব্যাক এ আমি ২ লক্ষ ২৬ হাজার টাকায় বাইকটি কিনতে পারি। পটুয়াখালীর ইয়ামাহার অফিসিয়াল শোরুম সব থেকে বিশ্বস্ত খান রাকিব শোরুম থেকে খুব সহজেই আমি বাইকটি কিনতে পারি। এখানের সর্বোচ্চ সহযোগিতায় আমি খুব দ্রুতই রেজিস্ট্রেশন , নাম্বার প্লেট ও স্মার্ট কার্ড পেয়ে যাই।
বাইক কিনতে যাবার দিনের ঘটনাবলি -
দিনটি ছিল আমার কাছে স্বপ্নের মত। দীর্ঘদিনের লালিত একটি স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। ব্যাংক থেকে টাকা তুলে আমি আমার মাকে, সহধর্মিনী কে ও আমার সবথেকে কাছের ছোট ভাই হামিমকে সাথে নিয়ে শোরুমে যাই। গিয়ে আমি আরো অভিভূত হই কারণ সেখানে আমার বাবা ও বোনেরা আগেই গিয়ে উপস্থিত হয়েছে। আমি খুব রোমাঞ্চিত হচ্ছিলাম কারণ, আমার সামনে আমি আমার স্বপ্নকে দেখতে পাচ্ছিলাম।
Also Read: ACI Motors Inaugurated Yamaha Flagship 3S Centre in Dhaka
দীর্ঘদিন বাইক না চালানোর কারণে ভিতরে ভিতরে একটা জড়তাও কাজ করছিল। আমি কি এটি পারব ! আমি কি সাবধানে চালাতে পারবো ! আমি কি সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে পারব ! এরকম নানান ধরনের প্রশ্ন আমার মনের মধ্যেও উকি দিচ্ছিল। আমার স্বপ্নের বাইকটি আমি খুঁটিয়ে খুটিয়ে দেখছিলাম কোন ধরনের সমস্যা আছে কিনা! বিকেল তিনটায় বাইক কিনতে গিয়ে সকল ধরনের কার্যক্রম সম্পন্ন করে রাত আটটায় সেই বাইক নিয়ে আমি বাড়িতে উপস্থিত হই। সারারাত উত্তেজনায় ঘুমাতে পারিনি। কখন নিজের বাইকটি চালাবো !!
Also Read: ACI Motors Will Launch Yamaha FZS FI Dual Disc In BD
বাইকটি প্রথমবার চালানোর অনুভূতি -
এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মত নয় নিজের টাকায় কেনা প্রথম বাইক আমার স্বপ্নের বাইক আমার সামনে। ছোট ভাই হামিমকে পিছনে বসিয়ে প্রথমবারের মত নিজের হাতে নিজের বাইক স্টার্ট দিলাম। হঠাৎ বৃষ্টিও শুরু হলো। তবুও থামলাম না ! টানা একঘন্টা বাইক চালিয়ে প্রথম বিরতি নিলাম। পটুয়াখালীতে তখন লোহালিয়া ব্রিজ এর কাজ সম্পন্ন হয়েছে, এখনো উদ্বোধন হয়নি। সেই ব্রিজে গেলাম আর নিজের অনুভূতিগুলো চিৎকার করে বাতাসে জানালাম। এটাই ছিল বাইক প্রথমবার চালানোর স্বপ্নের অনুভূতি।
বাইকটি চালানোর পেছনের মূল কারণ আমার বাসা থেকে কর্মক্ষেত্র দূরে হওয়ায় ও দীর্ঘদিনের স্বপ্নর স্মৃতিতে আমি বাইকটি চালানো শুরু করি।
Also Read: Yamaha 150cc Price in Bangladesh At A Glance
বাইকের ফিচারগুলোর সম্পর্কে বিস্তারিত -
এই বাইকের রয়েছে রুচিশীল আরমাডা ব্লু কালার কম্বিনেশন, ইয়ামাহার অত্যাধুনিক ব্লু কোর প্রযুক্তি, এফআই ফুয়েল ইঞ্জাকশন সিস্টেম , ডাবল ডিস্ক ব্রেকিং, স্প্লিট সিটিং পজিশন, ফুল ডিজিটাল মিটার , সামনে এবং পেছনে মোটা টায়ার যেটি আমার ব্রেকিং কে করবে আরও ভালো।প্রতিদিন বাইক চালানোর সময় আমার মনের সাধারণ অনুভূতি -
প্রতিদিন আমি প্রায় ৪৬ কিলোমিটার রাইড করি। বিদ্যালয় সপ্তাহে 5 দিন খোলা থাকে আর এ পাঁচ দিন আমি যাতায়াত করি। আমার কাছে একটা অন্যরকম ফিলিংস হয়। আমি আমার কর্মক্ষেত্রেও যেতে পারি আবার নিজেকে মনে মনে একজন বাইকের হিসেবেও গর্ববোধ করি।
Also Read: Yamaha CS5 Price In Bangladesh
যে কয়বার সার্ভিস করিয়েছি ও যেখান থেকে সার্ভিস করিয়েছি -
আমি এখন পর্যন্ত আমার বাইকটি তিনটি সার্ভিস করেছি। আমি খান রাকিব পটুয়াখালীর ইয়ামাহার শোরুম থেকেই সার্ভিস করাই। আমার অনেক দক্ষ টেকনিশিয়ান ভাইয়ের সাথে পরিচয় আছে যারা খুব দক্ষতা ও সততার সাথে সার্ভিসিং করে থাকেন আর এজন্যই আমি খুব আস্থার সাথে আমার বাইকের তিনটি ফ্রি সার্ভিসিং সম্পন্ন করেছি।
মাইলেজ ২৫০০ কিলোমিটার পূর্বে ও পরে -
প্রথম সার্ভিসিং এর আগ পর্যন্ত আমি 35 এর মত মাইলেজ পেতাম। প্রথম সার্ভিসিং (৯৮০ কিমি) করানোর পর থেকে এখন পর্যন্ত (৪৮০০ কিমি +-) যথাক্রমে ৪০, ৪৮ ও ৫১ করে মাইলেজ পাচ্ছি। আলহামদুলিল্লাহ ,আমি বাইকের কমফোর্ট ও মাইলেজ নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট।
Also Read: Yamaha Showroom in Barguna: M/S. KHUKUMONI MACHINERY STORE
যেভাবে বাইকের যত্ন ও মেইনটেনেন্স করি -
আমি দক্ষ মেকানিক দ্বারা বাইক মেনটেনেন্স করি। টুকটাক কিছু কাজ নিজেই করি যেমন ইঞ্জিন অয়েল পাল্টানো সেইম পরিষ্কার করা ও ওয়াশ করা। এছাড়াও আমি বাইরে থেকেও ওয়াশ করে থাকি।
Yamaha FZS V2 বাইকে ব্যবহৃত ইঞ্জিন অয়েল -
আমি বাইকে ইয়ামালুব 10w40 গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি। ২০০০ কিলোমিটারের মধ্যে চারবার মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করেছি। এরপর এই ৪৮০০ কিলোমিটার পর্যন্ত সেমি সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করে আসছি। মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল এর দাম ৬৫০ টাকা এবং সেমি সিন্থেটিক ইঞ্জিন অয়েল এর দাম ৭৭০ টাকা। প্রতি দুইবার ইঞ্জিনিয়ার পরিবর্তনের মাঝে আমি একবার করে অয়েল ফিল্টার চেঞ্জ করি। মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল দিয়ে 700 কিলোমিটার ও সেমি সিন্থেটিক ইঞ্জিন অয়েল দিয়ে ১৫০০ কিলোমিটার বাইক চালাই।
Also Read: ইয়ামাহা ওয়াইজেডএফ আর১৫ ভি.১ নিয়ে রিভিউ – পিয়াস জিআরজেড
এলইডি হেডলাইট ছাড়া বাইকের এখন পর্যন্ত কোন কিছু বদলাতে হয়নি। এখন পর্যন্ত কোন ধরনের মডিফাই করিনি তবে এক্সট্রা একটি মাডগার্ড লাগিয়েছি। আমার একটা পরিবার আছে , আমি আমার পরিবারের চিন্তা করি এবং আমার এমন কোন তাড়াহুড়ো নেই যে কারণে আমার সর্বোচ্চ স্পিড উঠাতে হবে। তাই আমি এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ 90 স্পিড উঠিয়েছি। যেটা আমি শুধুমাত্র একবার উঠিয়েছি। আমি ৪৫ থেকে ৬৫ এর মধ্যেই রাইড করি।
Also Read: Yamaha Bike Showroom in Comilla: M/S Jaker Motors
Yamaha FZS FI বাইকটির পাঁচটি ভালো দিক -
- এফ আই ইঞ্জিন হওয়ায় ভালো মাইলেজ পাই
- ডাবল ডিস্ক হওয়ায় ব্রেকিং কন্ট্রোল ভালো
- দুটি চাকায় মোটা হওয়ায় ব্রেকিংয়ে ভালো কনফিডেন্স পাই
- সিট যথেষ্ট নরম ও পিলিয়ন বসে আরামবোধ করে
- লুকস অসাধারন এবং কোম্পানির আফটার সেলস সার্ভিস ভালো।
Yamaha FZS FI বাইকটির পাঁচটি খারাপ দিক -
- ২০২২ এরপর থেকে বিল্ড কোয়ালিটি একটু খারাপ মনে হয়েছে
- কিক না থাকায় মাঝে মাঝে মনে হয় শীতকালে স্টার্ট দিতে কষ্ট হবে
- বাইক কেনার দুই মাসের মধ্যেই মিটারে পানি ঢুকেছিল, যদিও সেটি আবার পরিবর্তন করে দেয় কোম্পানি
- মাঝে মাঝে ইঞ্জিনের সাউন্ড একটু পরিবর্তন মনে হয়
- ইঞ্জিনের কালার উঠে যাচ্ছে
Also Read: Yamaha Sports Bike Price In Bangladesh
বাইকটি নিয়ে আমার লম্বা দূরত্বে ভ্রমন -
এখন পর্যন্ত বেশিদূর যেতে পারিনি। তবে লেবুখালী পায়রা সেতু পর্যন্ত কয়েকবার গিয়েছি। হাইওয়ে রাইড এর ক্ষেত্রে খুব ভালো উপভোগ করেছি, খুব ভালো ব্রেকিং কোয়ালিটি পেয়েছি এবং চালিয়েও খুব মজা পেয়েছি। কিছু ফটোশুট করেছি। দিনটা খুবই উপভোগ করেছিলাম।
বাইকটি নিয়ে আমার চূড়ান্ত মতামত ও পরামর্শ -
আমি আমার ইয়ামাহা এফ জেড এস ভি২ বাইকটি নিয়ে খুব খুশি। আমি বিশ্বাস করি, মালিক নিজে যদি তার বাইকটি চালায় সে যে কোম্পানির বাইক হোক না কেন - সেটি তাকে খুব ভালো সার্ভিস দেবে। আমার পরামর্শ হলো; অল্পবয়সী কোন বাইকারের হাতে বাইক না দেয়া, একজন এর বাইক প্রয়োজন ব্যতিত অন্যজন না চালানো, স্পিড মেনে বাইক চালানো, সকল ধরনের কাগজপত্র আপডেট রাখা ও এছাড়াও সার্টিফাইড হেলমেট পড়ে বাইক চালানো । ধন্যবাদ ।
Also Read: Yamaha FZs Vs FZs V2 (Fi): Including Yamaha Fazer V.2
লিখেছেনঃ হাফিজুর রহমান জিহাদ
T
Published by Shuvo Bangla