Shares 2

Yamaha FZ-S Carburetor ৩৫,০০০ কিলোমিটার রাইড - হোসাইন

Last updated on 18-Jul-2024 , By Raihan Opu Bangla

আমি হোসাইন মাহমুদ । আমি একজন ছাত্র, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছি । আমার Yamaha FZ-S carburetor বাইকটি আজ থেকে ৫ বছর ২৪ দিন আগে ক্রয় করি । Yamaha FZ-S carburetor কেন কিনলাম, কিনে কি পেলাম আর কি হারালাম এইসব গল্প জানতে পড়তে পারেন আমার নিজস্ব মালিকানা মোটরবাইক রিভিউ এর লেখাটি।

Yamaha FZ-S Carburetor ৩৫,০০০ কিমি রাইড

yamaha fz-s carburetor bike fuel tank

ফেইসবুকে হঠাৎ চোখ আটকে যায় BikeBD.com এর একটি পোস্টে দেখে, যেখানে লিখে জানাতে পারব নিজের বাইকের অভিজ্ঞতা এবং অনুভূতির কথা। তাই আর সময় নষ্ট না করে মাঝ রাতেই বসে পরলাম লিখতে ।

এক মুহূর্তেই ফিরে গেলাম ২০১৫ সালের ২৩ আগস্ট, যে দিনটি ছিল জীবনের সব থেকে আনন্দের দিন গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি দিন। স্কুল জীবনেই বন্ধুর বাইক দিয়ে চালানো শিখি, অনেক ঘোরা-ফেরা আর হাজার স্মৃতি হয়ে যায় বাইকের সাথে। সেই থেকে বাইকের প্রতি ভালো লাগা। 

Also Read: Yamaha FZ-S V2 ১৭ হাজার কিলোমিটার রাইড রিভিউ

খুব ইচ্ছা হতো নিজের একটা বাইক হবে, দুরন্ত গতিতে বাইক ছুটবে। বাইকের গতি ছিল তখন আমার কাছে সব থেকে আনন্দের যেটা বয়সের দোষ বলতে পারেন তারপর বুঝতে শিখি বাইকের ব্যবহার বা উচ্চ গতিতে ছুটে চলার ভুল ধারনা। পরিবার হয়ত এই সময়ের জন্যই অপেক্ষা করছিল।yamaha fz-s carburetor bike headlight

মোটর বাইকের আগ্রহ অনেক আগে থেকেই ছিল, সব সময় চেষ্টা করতাম বন্ধুর থেকে বা বড় ভাইদের থেকে সর্বশেষ তথ্যটি জানতে। সে সুবাদে তখনই ভালো ধারনা ছিল বাইক নিয়ে তারপরও কেনার আগে বন্ধুর পরামর্শ নিতে থাকি আর ভাবতে থাকি আমার চাহিদা কি কি। আমার চাহিদা ছিল সুপার কন্ট্রোল, স্মুথ ব্রেকিং আর কমফর্ট হতে হবে বাইকটি । 


সাধ্যের কথা চিন্তা করলাম, সেই দিক থেকে সব মিলিয়ে Yamaha FZ-S carburetor আর Suzuki Gixxer ছিল সমানে-সমান। তখন Suzuki Gixxer অল্প কিছু দিন হল বাজারে এসেছে সব দিকে শুধু এই বাইকের কথা। চলে যাই সিরাজগঞ্জের একটি শো-রুম যেখানে এই দুইটি বাইকই আছে। সবার কথা FZ-S নিতে হবে আর আমি গিয়েছিলাম Gixxer কিনতে ।


Yamaha Fz-s Test Ride Review In Bangla – Team BikeBD


এর সব কালার ছিল না শুধু ছিল সাদা আর গোল্ডেন কালার। কেনার ঠিক আগ মুহূর্তে সেই শো-রুমের মালিক বলেছিল Gixxer তো নতুন আসলো, FZ-S টা ভালো হবে কথা দিচ্ছি। তারপর আমার উত্তর ছিল, ব্যাটারিতে এসিড দেন। মানে আমি Yamaha FZ-S Carburetor ভার্সন কিনে ফেললাম। 


প্রথম নিজের বাইক, ৫০০ টাকার তেল আর বাল্যকালের বন্ধুকে নিয়ে নতুন বাইকের সাথে তপ্ত দুপুরের কিছু মুহূর্ত এখনও জীবন্ত। এখন বলি তখনকার এক মুহূর্তের সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল নাকি ভুল।


এর উত্তর একটাই সেই Yamaha FZ-S carburetor আজও আমার পথচলার বিশ্বস্ত সঙ্গি। ছোট-খাটো ট্যুর আর শহরের মাঝেই চলাফেরায় বাইকটি ৩৬,৫০০ কিলোমিটার অতিক্রম করেছে। আজ পর্যন্ত বড় কোন বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি। অনেক মারাত্মক পরিস্থিতি পাড় করেছি আত্মবিশ্বাসের সাথে। 


অফ রোড বা অন রোড FZ-S সব পথ পাড়ি দিতে যতটা সাহায্য করেছে সেখানে অন্য বাইক হলে কতটুক পেতাম সেটায় ভাবার বিষয়। দুর্দান্ত ব্রেকিং সিস্টেমের সাথে অসাধারণ কমফর্টনেসের দারুন একটা কম্বিনেশনের নাম FZ-S, ১৫৩সিসি, সিংগেল সিলিন্ডার, ৪ স্ট্রোক, ২ ভাল্ব এর সাথে এয়ার কুল ইঞ্জিন।


কার্বোরেটর ফুয়েল সাপ্লাই সিস্টেম, ডুয়েল স্টার্ট সিস্টেম আর ডুয়েল পিকআপ ক্যাবলে আপনার আস্থা বাড়িয়ে দিবে কয়েক গুন। এখন পর্যন্ত আমি সর্বোচ্চ গতি পেয়েছি ১১৮ কিলোমিটার/ঘণ্টা । মাইলেজের কথা বলি, সিটিতে আমি মাইলেজ পেয়েছি ৩২-৩৫ কিলোমিটার/লিটার। হাই-ওয়েতে ৩৫-৪০ কিলোমিটার/লিটার যা এখনও পাই।yamaha fz-s carburetor bike

আমি বিশ্বাস করি বাইকের পারফর্মেন্স আর স্থায়ীত্ব নির্ভর করে এর সঠিক ব্যবহার এবং পরিচর্যা এর উপর। আমি চেষ্টা করেছি আমার সাধ্য মতো। যদিও ভাগ্যের নির্মম পরিণতি বাইক কেনার ৬ মাসের মধ্যে অতিরিক্ত ওজন আর ভাঙ্গা রাস্তার জন্য মনোশক সাসপেনশন বসে যায় এবং মেরামত করে চালাচ্ছি। 


অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি এই ৫ বছরে মাত্র ২ জন মেকানিক দিয়ে আমি সার্ভিস করিয়েছি এবং এখন সেটা ১ জনই করে। অর্থাৎ আমার বাইকের সব কিছু একজন মেকানিক দিয়ে করাই। আমার কাছে এই বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ ।


Yamaha FZ-S Carburetor বাইকের কিছু ভালো দিক-

  • কম্ফোর্ট সিটিং পজিশন
  • এই সেগমেন্টের অপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রেকিং সিস্টেম
  • অসাধারণ কন্ট্রোল
  • টেকসই পার্টস এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি
  • যেকোনো রাস্তায় অপ্রতিরোধ্য


Yamaha FZ-S Carburetor বাইকের কিছু খারাপ দিক-

  • তুলনামূলক নিচু বাইক
  • মাইলেজ কমে যায়
  • ইনস্ট্যান্ট পাওয়ার কম
  • টপ স্পিড কম
  • হেডলাইটের আলো কম


৩৬,৫০০ কিলো চলা বাইকে এখন পর্যন্ত ইঞ্জিনের কোন কাজ করাতে হয়নি। পরিবর্তন করতে হয়েছে কার্বোরেটর, ক্লাচ প্লেট, চেইন সেট সহ নিয়মিত ক্যাবল, ব্রেক প্যাড, ড্রাম রাবার, অয়েল সিল ইত্যাদি ছোট ছোট পার্টস ।yamaha fz-s carburetor white colour bike

এখন পর্যন্ত আমার এই Yamaha FZ-S carburetor বাইক নিয়ে আমার সর্বোচ্চ ট্যুর মাদারীপুর পর্যন্ত যা আনুমানিক ৩০০+ কিলোমিটারের ট্যুর। একটানা ১২৫ কিলোমিটার সিরাজগঞ্জ সদর পর্যন্ত যাতায়াত করেছি বহুবার কোন সমস্যা ছাড়াই । 


Yamaha FZ-S carburetor ভার্সন এক কথায় অসাধারণ। এখনও দিব্যি বাংলাদেশের রাস্তা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে যদিও কার্বোরেটর ভার্সন আর আসবে না। তবুও বাইক প্রেমিদের কাছে অনেক আপন হয়ে থাকবে এই বাইকটি সেই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। 


পরিশেষে আবার BikeBD টিমকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি এমন একটা আয়োজনের জন্যে। একজন বাইকার জানে তার জীবনের প্রথম বাইকের গল্প কতটা আবেগের সেই গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পেরে আমিও আনন্দিত।


সবাই যে যেখানে আছেন ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং নিরাপদে থাকুন এই প্রত্যাশায় শেষ করছি আমার নিজস্ব মালিকানা মোটর বাইকের গল্প এবং ছোট রিভিউ। ধন্যবাদ ।


লিখেছেনঃ হোসাইন মাহমুদ


আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।

Published by Raihan Opu Bangla