Shares 2
TVS Metro Plus 110 ৩৭০০০ কিলোমিটার রাইড - তাইজুল ইসলাম
Last updated on 15-Jul-2024 , By Raihan Opu Bangla
আমি মোঃ তাইজুল ইসলাম। জন্ম এবং বেড়ে ওঠা যশোর শহরে। পেশায় একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। আমি একটি TVS Metro Plus 110 বাইক ব্যবহার করি । আজ আমি আমার বাইকটি নিয়ে ৩৭,০০০ কিলোমিটার রাইডের কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো ।
TVS Metro Plus 110 ৩৭০০০ কিলোমিটার রাইড
চাকরির সুবাদে ২০১৭ সালে ঢাকায় আসি। কিন্তু চাকরিটা বেশিদিন করা হয়ে ওঠেনি। অফিসে ঝামেলা করে চাকরি ছেড়ে দেই ২০১৮ এর মে মাসে। আর মনে মনে ভাবতে থাকি চাকরিই আর করবোনা। কিন্তু কি যে করব তেমন কিছু মাথায়ও আসছিলনা। হঠাৎ মাথায় এল যে অনেকেই এখন রাইড শেয়ার করেও নিজের খরচ নিজেই চালাচ্ছে। আমিও সিদ্ধান্ত নিলাম রাইড শেয়ার করব আর ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কম্পিউটার রিলেটেড কাজ করব।
কিন্তু সমস্যা তো অন্য যায়গায়। আমার তো বাইক নেই। আর চালাতেও পারিনা। এক বন্ধু আমাকে আশ্বস্ত করল যে বাইক কেনার পর আমাকে চালানো শিখিয়ে দিবে। ওর আশ্বাসে টাকা যোগাড়ের জন্য চেষ্টা করতে শুরু করি । অল্পকিছু টাকা যোগাড় করতে পেরেছিলাম।
উপায় না পেয়ে বাবাকে বললাম, বাবা ও রাজি হল ১ লাখ টাকা দেয়ার জন্য। সব মিলে হল ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এই টাকা নিয়েই চলে গেলাম TVS এর শোরুমে।
বাজেটের মধ্যে পছন্দ হয়ে গেল TVS Metro Plus 110 বাইকটি। যেহেতু বাইক সম্পর্কে আমার বিন্দুমাত্র ধারণাও নেই তাই কোন বিচার বিশ্লেষণ করারও সুযোগ ছিলনা। চোখের দেখায় ভাল লাগলো আর বাজেটেও হয়ে গেল তাই আর কিছু চিন্তা না করে ১ লাখ ১১ হাজার টাকায় TVS Metro Plus 110 বাইকটি নিয়ে নিলাম। এরপর ঐ বন্ধুর মাধ্যমেই বাইক চালানো শিখে গেলাম খুব অল্প সময়ের মধ্যে।
পরবর্তী ৬ মাস যশোরেই থেকে গেলাম। কারন আগে তো বাইক চালানোর হাত পাকা করতে হবে, তারপর নাহয় ঢাকা শহরের সেই চিরচেনা জ্যামময় রাস্তায় চালানো যাবে।
Five TVS Motorcycles Launched In Bangladesh – Team BikeBD
এই ৬ মাসে যশোরের অলি গলি থেকে শুরু করে ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, বেনাপোলসহ অসংখ্য জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছি আমার TVS Metro Plus 110 বাইকটি নিয়ে। সুতরাং সিটি এবং হাইওয়ে দুই ধরনের রাস্তা সম্পর্কেই মোটামুটি প্রাথমিক ধারণাটা হয়ে গেছে। এখন তাহলে ঢাকায় ফেরা যায়। কিন্তু ঢাকা-যশোর হাইওয়ে অনেক ব্যস্ত একটা সড়ক।
এই সড়কে তাই বাইকের মত ছোট যানবাহন চালানো অনেকটাই ঝুকিপূর্ন। তাও মনে সাহস সঞ্চয় করে আল্লাহর নাম নিয়ে বাবা মায়ের দোয়া নিয়ে একদিন ভোর বেলা একাই রওনা দিলাম। প্রথমে একটু কেমন ভয় ভয় লাগলেও কিছুদুর চালানোর পর আস্তে আস্তে নিজেকে স্বাভাবিক মনে হচ্ছিল। আল্লাহর রহমতে কোনরকম সমস্যা ছাড়াই বিকালের মধ্যেই ঢাকা পৌঁছে গেলাম। যদিও সময় একটু বেশি লেগেছিল তাও নিরাপদেই পৌঁছাতে পেরেছি।
যে উদ্দেশ্যে TVS Metro Plus 110 বাইকটি কিনেছিলাম, সেটা আর করা হয়ে ওঠেনি ঢাকায় এসে। ভাল একটা জব অফার পেয়ে গেলাম। সেখানে জয়েন ও করে ফেল্লাম। বাইকটি থাকার কারনে একটা বিষয় খুব ভালোই হয়েছিল। আমার বাসা কল্যানপুর আর অফিস ছিল এ্যালিফ্যান্ট রোড। অফিসে যাতায়াতের জন্য খুব ভাল কাজে দিল আমার TVS Metro Plus 110 বাইকটি।
আজ আমার TVS Metro Plus 110 বাইকের সাথে পথ চলা ৩৭,০০০ কিলোমিটার । এই ৩৭,০০০ কিলোমিটার চালানোর মধ্যে বেশ কিছু লং ট্যুর করেছি। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-কুমিল্লা উল্লেখযোগ্য। আর ঢাকা-যশোর তো প্রতি মাসেই ১-২ বার করে যাওয়া হয়। আল্লাহর রহমতে এখন পর্যন্ত মেজর কোন দূর্ঘটনায় পরিনি। আর আমার বাইক ও পথে কখনো আমাকে কোন বিড়ম্বনায় ফেলেনি।
বাইকটিতে আমি Mobil Super 4T 20W40 ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি। অন্যান্য বেশ কিছু ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করে ট্রাই করেছি কেমন সার্ভিস পাওয়া যায় সেটা দেখার জন্য। Mobil Super 4T 20W40 ইঞ্জিন অয়েল আমার কাছে বেষ্ট মনে হয়েছে।
বাইকের মেইন সার্ভিসগুলো আমি যশোর সার্ভিস সেন্টার থেকেই করাই আর টুকটাক বিষয় গুলো ঢাকার লোকাল মেকানিক দিয়ে করিয়ে নেই। এ পর্যন্ত আমার TVS Metro Plus 110 বাইকের শুধুমাত্র সামনে পিছনের ব্রেক প্যাড এবং ব্রেক সু আর ব্রেক কেবল ছাড়া আর কোন কিছুই পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়নি। TVS Metro Plus 110 বাইকটিতে আমার ওভাবে কখনো টপ স্পিড চেক করা হয়নি।
আমি আমার TVS Metro Plus 110 বাইকে ৯৫ কিলোমিটার স্পিড তুলেছিলাম। আরো স্পিড হয়তো তোলা সম্ভব। কিন্তু ট্রাই করিনি।
সিটিতে আমি মাইলেজ পাচ্ছি ৫০-৫৫ প্রতি লিটার অকটেনে এবংহাইওয়েতে মাইলেজ পাচ্ছি ৬০-৬৫ কিলোমিটার প্রতি লিটার অকটেনে।
TVS Metro Plus 110 বাইকটির কিছু ভালো দিক -
- এর বিল্ড কোয়ালিটি যথেষ্ট ভাল মনে হয়েছে আমার কাছে।
- সিটিং পজিশন এবং হ্যান্ডেল পজিশন এর কম্বিনেশন খুব আরামদায়ক।
- মাইলেজ যথেষ্ট ভাল।
- সামনে ডিস্ক ব্রেক থাকার কারনে ব্রেকিং-এ ভাল কনফিডেন্স পাওয়া যায়।
- স্মুথ এ্যাক্সেলারেসন এই বাইকের একটা অনন্য দিক।
TVS Metro Plus 110 বাইকটির কিছু খারাপ দিক -
- হেডলাইট হ্যালোজেন হওয়াতে হেডলাইটের আলো অনেক কম।
- তুলনামূলক বাইকটির চাকা একটু চিকন।
- সিঙ্গেল হর্ণ থাকার কারণে হর্ণের আওয়াজ একটু কম।
- কবাইকটির চাকা টিউবলেস না হওয়ার কারণে লিক হওয়ার মত বিড়ম্বনায় পরতে হয়।
- হাই আরপিএম-এ বাইকের অনেক ভাইব্রেশন হয় যা খুব বিরক্তিকর।
কোন বাইক-ই আসলে স্বয়ং সম্পূর্ন নয়। প্রিমিয়াম সেগমেন্টের বাইক গুলোতেও কোন না কোন দিক থেকে ল্যাকিংস থেকেই যায়। আর মাত্র ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকার একটা বাইকে এইটুকু অপূর্ণতা থাকতেই পারে।
এই ৩৭,০০০ কিলোমিটার রাইড করার পরে TVS Metro Plus 110 বাইকটি সম্পর্কে যদি এক কথায় বলতে হয়, তাহলে বলবো কিছু ভাল না লাগা বিষয় থাকলেও বাইকটি আমার কাছে অসাধারন লেগেছে। বাইকটির ওভারঅল পারফরমেন্সে আমি সত্যিই খুবই সন্তুষ্ট। সবাই হেলমেট পরে নিরাপদে রাইড করবেন। হ্যাপি বাইকিং। ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ মোঃ তাইজুল ইসলাম
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।
T
Published by Raihan Opu Bangla