আমার নাম মোঃ হুমায়ুন কবীর। আমার বাড়ি মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ। আমি একটি
TVS Metro বাইক ব্যবহার করি। চাকরির জন্য আমি কক্সবাজার থাকি। আমি বাইকে ভ্রমন ও চলালল করতে খুব বেশি ভালোবাসি। বাইকের প্রতি এই ভালোবাসাটা আমার ছোট বেলা থেকেই ছিলো, তার কারণ হচ্ছে আমার বাবা একজন বাইকার।
ছোট বেলা থেকে বাবার সাথে বাইকে চলে অভ্যস্থ। বাইক চালানো টা আসলে কেউ হাতে ধরে শেখায়নি, বাবা আর বড়ো ভাই এর পিছনে বসে থাকতে থাকতে সেই প্রাথমিক স্কুল এ থাকা অবস্থায় বাইক চালানো শিখেছি। বর্তমানে আমি
TVS এর এই Metro 100cc বাইক ব্যবহার করছি।
বাইকটার বয়স প্রায় ৫ বছর। ২০১৭ সালের ২৯ অক্টোবর আমি জীবনে প্রথম আমার নিজের বাইক কিনি। বাইকটি আমি কিনেছিলাম
টিভিএস বাইকের শোরুম "তাঁরা মটরস " মধুপুর, টাঙ্গাইল থেকে। বাইকটা যেদিন আমি কিনতে যাই আমি খুব এক্সাইটেড ছিলাম, জীবন এর প্রথম বাইক বলে কথা।
দুপুর বেলা আব্বা আর ছোট ভাই কে সাথে নিয়ে রওনা হলাম বাইক নিয়ে বাসায় আসলাম রাত ৯ টায়। প্রথমেই আমি চালাইনি, আব্বা বাড়ি পর্যন্ত চালিয়ে নিয়ে আসছে, তারপর বড় ভাই চালিয়েছে পরে আমি চাবি হাতে নিয়েছি, সেই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।
বাইকটি ইতিমধ্যে প্রায় ১,৩০,০০০ এর বেশি কিলোমিটার অতিক্রম করেছি। আজকে আমি আমার বাইক সম্পর্কে কিছু মন্তব্য আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।
আমি কেন এই বাইকটা নিলাম -
আসলে আমি তখন একটা কোম্পানিতে মার্কেটিং এর চাকরি করি, যার জন্য আমার এমন একটা বাইক দরকার ছিল যেটা খুব সাশ্রয়ী হবে। আর তেল সাশ্রয় এর জন্য আমি এই বাইক টা পছন্দ করি। আমি যখন বাইক টা কিনি তখন এটার দাম ছিলো ৯৭,০০০ টাকা।
আমার এই বাইকটা সিটি, মফস্বল বা হাইওয়ে সব রাস্তায় সমান তালে চলেছে। এটার মাইলেজ চেক করা নিয়ে আমার কখনো আগ্রহ আসতো না, কারণ দরকারই মনে হতো না মাইলেজ চেক করার। তার পরেও আমি বাইক টা নতুন অবস্থায় একবার মাইলেজ চেক করেছি তখন পেয়েছিলাম ৭১+ কিলোমিটার।
আবার এইতো কিছু দিন আগে মাইলেজ চেক করেছি তখন পেয়েছি ৭৬+ কিলোমিটার। কি? মাইলেজ দেখে অবাক হচ্ছেন? আমি নিজেও অবাক হয়েছি কিন্তু এটাই আসল মাইলেজ।
একটি এয়ার কুল্ড ইঞ্জিন এর বাইক। যেটাতে ড্রাম ব্রেকিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে। একটি এনালগ স্পিডোমিটার দেওয়া হয়েছে এবং সকল লাইটগুলো হ্যালোজেন ব্যবহার করা হয়েছে। আমার বাইকটাতে আমি সব সময় অকটেন ব্যবহার করি, আর ইঞ্জিন অয়েল কোন ঠিক নাই যখন যেটা মন চায়, Mobil Super 4t, Super V, TVS recommended, MX3, MX5 ।
আমি আমার বাইকটা সব সময় এক জায়গা থেকে সার্ভিস করাই, যেটার নাম "বিসমিল্লাহ মটরস " রসুলপুর, মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ। বিসমিল্লাহ মটরস এর মনির ভাই এর হাতের ছোয়া না লাগলে আমি বাইক চালিয়ে শান্তি পাই না। এ বাইকে আমি একবার ক্লাচ প্লেট ও পিস্টনের কাজ করেছি।
যখন যেটা প্রয়োজন পরে তখন সেই কাজ টাই করাই যেমন চেইন সেট পাল্টানো, ব্রেক সু , যদি কোন কেবল দরকার পরে তাহলে সেগুলো পরিবর্তন করি। আমি এ বাইক টা নিয়ে এক দিনে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়েছি বেশ কয়েক বার, এতো রাস্তা ওর সাথে অতিক্রম করেছি কিন্তু কোন দিন বাইক টা আমাকে বিপদে ফেলেনি, শুধু চাকার সমস্যা ছাড়া, যদিও এখন টিওবলেস করে নিছি।
আমি বাইক এ কোন মডিফিকেশন পছন্দ করি না তাই কোন দিন একটা হ্যান্ড গ্রীপ ও লাগাইনি। আমার বাড়ি মুক্তাগাছা , ময়মনসিংহ আর আমি চাকরি করি কক্সবাজার। এখান থেকে আমি বাইকেই যাতায়াত করে থাকি, স্টক লাইট দিয়েই কিন্তু মাঝে মধ্যে মনে হয় একটা ফগ লাইট লাগিয়ে নিলে ভালো হতো।
আমি আমার বাইকটাতে সর্বোচ্চ গতি পেয়েছি ১০৯ কিলোমিটার যা অনেকে বিশ্বাস করতে চায় না। অনেক কিছুর পরও কিছু ভালো খারাপ দিক নিয়ে কথা বলা দরকার।
TVS Metro বাইকের কিছু খারাপ দিক -
- এই বাইক এর পিছনে সাসপেনশন এতটা বাজে আর শক্ত যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না ।
- ব্রেকিং অতটা ভালো না বেশি গতিতে ইঞ্জিন ব্রেক ব্যবহার করতে হয় ।
- ভাইব্রেশন অতিরিক্ত বেশি যা খুবই বিরক্তিকর।
- পার্টস এর দাম বেশি।
TVS Metro বাইকের কিছু খারাপ দিক -
- এটা একটা মাইলেজ কিং, মাইলেজ নিয়ে কোন কথা নাই।
- মেইনটেইনেন্স খরচ খুবই কম।
- ১০০ সিসি বাইক হওয়ার পরেও এটার যে পাওয়ার ও রেডি পিকাপ যা আপনাকে মুগ্ধ করবে।
- পাওয়ার এর জন্য হাইওয়ে তে আপনাকে ভালো একটা আত্মবিশ্বাস দিবে।
- ছোট বাইক হওয়ার জন্য যেকোনো কর্দমাক্ত বা ভাঙ্গা রাস্তায় ভালো ভাবে চালানো যায়।
- স্টক হেড লাইটটা ভালো আলো দেয় যার আলাদা ফগ লাইট না লাগালেও চলে।
সর্বোপরি আপনি যদি পিছনের সাসপেনশন আর ভাইব্রেশনটা এড়িয়ে চলতে পারেন, তাহলে TVS METRO হবে ১০০ সিসি বাইক এর মধ্যে আপনার জন্য একটা বেস্ট বাইক। বিঃদ্রঃ আমি অনেক চেষ্টা করেছি গুছিয়ে লেখার জন্য, বাইক বিডি এর গাইড লাইন ফলো করে লিখেছি , তারপরও মানুষ ভুল এর উর্ধ্বে না। তাই ভুল গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ ।