Shares 2

TVS Apache RTR 160 4V ২৪,০০০ কিমি রাইড রিভিউ - আরাফাত তানভীর

Last updated on 16-Jul-2024 , By Ashik Mahmud Bangla

আমি আরাফাত । আমি চট্টগ্রাম , সাতকানিয়া থাকি। পেশায় একজন ব্যাবসায়ী। আজ আমি আমার ২৪,০০০ কিলোমিটার রাইড করা TVS Apache RTR 160 4V বাইকটি নিয়ে কিছু কথা শেয়ার করবো। 

tvs-apache-rtr-160-4v user review বাইক জিনিসটা আমার কাছে একটা ইমোশন, এটা একটা বাহন বললে কম বলা হবে। এটা নিয়ে আসলে রিভিউ বলে শেষ করা যাবেনা। কারন এই বাইক ও বাইকিং নিয়ে আমার জীবনে অনেক গল্প আছে যা লিখে শেষ করা যাবেনা। আমার লাইফে সেই স্কুল জীবন ক্লাস ৮ম থেকেই বাইকিং Bajaj Discover 135cc দিয়ে বাইক রাইড শুরু করি। একে একে বিভিন্ন বাইক পরিবর্তন করি, সব শেষে এখন ২০২০ সাল। বর্তমানে আমি ব্যবহার করতেছি TVS Apache RTR 160 4v (Black) বাইকটি । TVS Apache RTR 160 4v বাইকটি সম্প্রতি বাজারে এসেছে এবং বর্তমানে আমি ৪ ভালব ইঞ্জিন সমৃদ্ধ এই বাইকটি ব্যবহার করছি । বাইকটির বয়স ১ বছর ২মাস । তাই স্বল্প অভিজ্ঞতার আলোকে আমি আরাফাত তানভীর আপনাদের সাথে এর কিছু ভালো মন্দ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।  

tvs apache rtr 160 4v tour in bangladesh

শুরুতেই বলি TVS Apache RTR 160 4v বাইক কেনার কারণঃ 

আমি বরবারের মতই TVS Apache RTR সিরিজ এর ফ্যান । এই বাইকটি অফিশিয়ালি বাংলাদেশে আসার আগে থেকে ইউটিউবে সব সময় এইটার নিয়ে বিস্তারিত দেখতাম। বাইকটির লুকস, পারফরম্যান্স, কম্ফোর্ট নিয়ে সব সময় ইউজার রিভিউ দেখতাম । বেশ ভালই লাগতো মোটামুটি প্রেমে পড়েই গেছিলাম। অপেক্ষার পালা, কখন দেশে আসবে কখন নিব। ফাইনালি দেশে অফিশিয়ালি আসছে আমিও নিয়ে নিলাম। আলহামদুলিল্লাহ সেই থেকে আজ অব্ধি ২৪,০০০ কিলোমিটার রাইড করেছি। সব চেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে আমি একজন বাইকার, ঘুরাঘুরি আমার নেশা এই TVS Apache RTR 160 4v নিয়ে বাংলাদেশের ৬১ টা জেলা ঘুড়ে বেড়িয়েছি। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া (TT) শেষ করছি এই বাইক নিয়ে। আলহামদুলিল্লাহ আমাকে সে কোন ভাবেই হতাশ করেনি। যখন যেভাবে চেয়েছি সে ঐভাবেই পারফরম্যান্স করেছে বাইকটি।

Click To See TVS Apache RTR 160 4V Review By BikeBD

ডিজাইনের দিক থেকে আমার কাছে এই বাইকটার ডিজাইন বেস্ট মনে হয়েছে। সামনের টায়ার থেকে শুরু করে হেডল্যাম্প , এলইডি টেইল ল্যাম্প, কালার কম্বিনেশন, ফুয়েল ট্যাংক সহ ইত্যাদি সব কিছু ডিজাইন অনেক ভালো লেগেছে । সিটিং পজিশনে বসে আমার অনেকটা Yamaha FZ-S বাইকের মত অনুভুতি হয়। কারণ সিটিং পজিশন ও হ্যান্ডেলবারের কম্বিনেশনটা দারুণ। পিলিয়নের জন্য অন্যান্য ১৫০ সিসি বা ১৬০ সিসি বাইকের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে পেছনের সিটটা একটু উঁচু থাকে কিন্তু RTR 4v বাইকের পিলিয়নের সিটিং পজিশনের উচ্চতা একদম পারফেক্ট । রাতে হেডল্যাম্পের আলো যদিও বা কিছুটা কম, কিন্তু সিটির জন্য বেস্ট । তবে আমি হাইওয়ের জন্য আলাদা ফগ লাইট (A7) ইউজ করছি। আর দুইটা পারকিং লাইট জ্বলে থাকলে দূর থেকে দেখলে অনেক সুন্দর লাগে ।  

apache-rtr-4v-in-bd

TVS Apache RTR 160 4v ইঞ্জিনের ব্যাপারে আসিঃ 

আমি কোন প্রকার ভাইব্রেশন ৬ হাজার আরপিএম এ পাইনি। যেহেতু আমি ব্রেক ইন পিরিয়ড খুব ভাল ভাবেই মেইনটেইন করেছিলাম এবং এখনো নিয়ম অনুযায়ী বাইক মেইনটেইনে যা যা করতে হয় তা প্রতিনিয়ত করছি। আলহামদুলিল্লাহ খুব ভাল পারফর্মেন্স পাচ্ছি। আমি আগের আরটিআর রাইড করেছি কিন্তু নতুন এই ৪ভি প্রযুক্তি সমৃদ্ধ ইঞ্জিনে কোন প্রকার ভাইব্রেশন এখন পর্যন্ত পাইনি । থ্রটল রেসপন্সের কথা অবাক করার মত। এক্সজস্ট সাউন্ড গম্ভীর এবং এই শব্দটা আমাকে বাইকের ইঞ্জিনের প্রতি একটা আলাদা অনুভূতি এনে দেয় এবং মনে হয় সারাদিন চালাতে থাকি। মনোশক সাসপেনশন আমার চালানো কিছু কিছু বাইকের থেকে অনেক ভালো মনে হয়েছে। হর্নেট,পালসার এনএস বাইকের সাসপেনশন ৪ভি এর থেকে তুলনামূলক শক্ত যার জন্য আমি ভাঙ্গা রাস্তায় সবচেয়ে বেশি আরাম ও সাসপেনশনের ক্ষেত্রে স্মুথ পারফর্মেন্স পেয়েছি এপ্যাচি ৪ভি থেকে।

tvs apache rtr 160 4v price bd  টায়ারের গ্রিপগুলো অনেক ভালো। বিশেষ করে আমার কাছে যেটা সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে সেটা হল টায়ার সাইজ । টায়ারের সাইজ খুব বেশি মোটা বা চিকণ না। বাংলাদেশের রাস্তার জন্য একদম পারফেক্ট টায়ার বলে আমি মনে করি (২৪০০০ কিলোমিটার রানিং এখনো স্টক)। কর্নারিং করে আগের এপ্যাচি আরটিআর এর থেকে অনেক ভালো অনুভুতি পেয়েছি। ব্রেকিংটা বলতে গেলে খুবই ভালো। আমি এর মিটার কনসোলে দেখেছি যে এবিএস লিখা আছে, তবে প্রায় সময় ইঞ্জিন ব্রেক করি বেশ ভালই সাপোর্ট পাই। আমি হার্ড ব্রেক করেছিলাম শুধুমাত্র এর ব্রেকিং আর ব্যালেন্স পরিক্ষা করার জন্য তো হার্ড ব্রেক করে এই বাইকে যেমন অনুভুতি পেয়েছি আমার মনে হয় আগের এপ্যাচি হলে আমি বাইক নিয়ে সেখানেই পড়ে যেতাম। অর্থাৎ ব্রেক করলে যথারীতি খুব ভালো সাপোর্ট পাওয়া যায় । আমি শুরু থেকেই Motul ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করতাম নিয়মিত। প্রথম ৫ হাজার কিলোমিটারে মিনারেল দিয়েছিলাম। এরপর 10w30 প্রতি ২০০০ কিলোমিটার। Motul দিয়ে পারফর্মেন্স খুব ভাল পেতাম । ফ্রি সার্ভিস আপাতত ৫টি করা শেষ, একটা পেইড সহ। আসলে কোম্পানির ফ্রি সার্ভিস নিয়ে নানা জনের নানা মত নানান অভিজ্ঞতা আমারো কত অভিজ্ঞতা আছে এইটা আর কি বলার। তবে ভাল মোটামুটি, তেমন খারাপ না। বাইকের মডিফাই বলতে আহামরি তেমন কিছুই করা হইনি এখনো সব কিছু স্টক আছে।  

tvs rtr 160 4v

TVS Apache RTR 160 4v এর আমার কাছে যে জিনিস গুলো বেশি ভাল লাগছে তা হলোঃ

  • লুক সত্যি অসাধারণ
  • পাওয়ারফুল ইঞ্জিন
  • ট্যাংক ক্যাপ ডিজাইন যেটা আনকমন
  • এক্সস্ট সাউন্ড
  • রাইডিং কম্পোর্ড & কনফিডেন্স

TVS Apache RTR 160 4v এর আমার কাছে যে জিনিস গুলো ভাল লাগেনি তা হলোঃ

  • স্টক টায়ার আর টায়ার সাইজ, চাইলে আরো ভাল মানের টায়ার দিতে পারতো টিভিএস
  • গিয়ার ইন্ডিকেটর মিসিং
  • ব্রেকিং দুর্বল, টায়ার স্কিড এর প্রবণতা বেশি
  • মাইলেজ প্রবলেম
  • ওয়ারিং সিস্টেম চাইলে আরো উন্নত করতে পারত

সর্বোচ্চ টপ স্পিড পেয়েছিলাম ১৩৩ যদিও বা আরো বেশি পাওয়া যায় তবে আমি ট্রাই করিনি। লিমিটের মধ্যে থাকার চেষ্টা করি সব সময় । মাইলেজ আমি এখন পাচ্ছি ৩৫ কিলোমিটার প্রতি লিটার করে এভারেজ । অনেকে অনেক রকম পাচ্ছে কেউ আরোবেশি আর কেউ আরোকম । এই পাওয়ারফুল ইঞ্জিনের বাইকে ৩৫ কিলোমিটার করে পাচ্ছি, এতেই আলহামদুলিল্লাহ । বর্তমান দাম হিসেবে ব্যাক্তিগতভাবে মনে করি যে এর ফিচার্স,পারফরমেন্স সব কিছু দিক বিবেচনায় দামটা একদম ঠিক আছে । বাংলাদেশের লোকাল মার্কেটের প্রেক্ষিতে দাম একদম ঠিক আছে । এই বাজেটের মধ্যে সেরা দামে সেরা বাইক বলাই যায় ।  

rtr 160 tour

বাইকের যে সকল বিষয় আরও ভালো করা যেতঃ

  • লুকিং গ্লাসটা পূর্বের আরটিআর এর মতই রাখা হয়েছে যার জন্য লুকটা সামান্য কমে গেছে
  • বাইকের সাথে শাড়ী গার্ডের পা রাখার স্থানটা দেয়নি । সেটা দিলে আমার মনে হয় ভালো হত
  • হ্যান্ডেলবারটা যদি আরেকটু ঘোরানো যেত তাহলে ভালো হত। অন্যান্য বাইকের হ্যান্ডেল পুরোপুরি ঘুরে যায় কিন্তু এই বাইকে অন্যান্য বাইকের তুলনায় একটু কম ঘুরে।

এই ছিলো TVS Apache RTR 160 4v নিয়ে আমার ব্যাক্তিগত মতামত। রাইডারের যত্ন নেওয়ার উপর নির্ভর করে যে তার বাইক কেমন পারফরমেন্স করবে । আমি সর্বদা চেস্টা করি বাইকের যত্ন নেওয়ার । সবশেষে বলতে চাই, সব সময় হেলমেট পড়ুন ভাল মানের, সেফটি গার্ড ব্যবহার করুন । গতি নিয়ন্ত্রণে রেখে রাইড করুন । রাইডিং এ ওভার কনফিডেন্স পরিহার করুন । হ্যাপি বাইকিং। ধন্যবাদ।   লিখেছেনঃ আরাফাত তানভীর   আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।

Published by Ashik Mahmud Bangla