আমি আব্দুল্লাহ হাসিব। আমার বাসা যশোরের মণিরামপুর উপজেলাতে। আমার
TVS Apache RTR 160 4V সম্পর্কে রাইডিং অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। এটি আমার প্রথম বাইক যেটি আমি ৬০০০ কিলোমিটার চালিয়েছি।
TVS Apache RTR 160 4V ৬০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - হাসিব
আসলে সবার থেকে আমার বাইক কেনা এবং চালানোর গল্পটি একটু ভিন্ন। ছোট বেলা থেকে আমার বাইকের প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট ছিল না! ছোট বেলায় দেখতাম সবাই বড় হয়ে কি বাইক কিনবে সেসব নিয়ে গল্প করতো। কিন্তু আমার কখনো বাইকের প্রতি ভালো লাগা কাজ করেনি। পরবর্তিতে যত বড় হতে থাকি তত বাইক আমাকে আকর্ষণ করতে থাকে। ২০১৮ সালে আমি যখন ক্লাস ৮এ পড়ি তখন আমার প্রথম বাইক চালানো শেখা।
আমার চাচুর বাইক। দূর্ভাগ্যবশত প্রথম বাইক চালানো শিখতে যেয়ে কিছুদিন পরেই বাসার সামনে বাইক নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে পড়ে যায় আর বাম হাতের দুইটি হাড় ভেঙ্গে যায়। অপারেশন করে হাড়ের ভিতর স্টিলের রড দেওয়া লাগে আর ডাক্তার বলে যেন ওই রড যতদিন থাকবে ততদিন বাইক না চালায়। এরপর একরকম বাইকের উপর থেকে সব মায়া ভালোবাসা উঠে যায়। পরে অনেকদিন আর বাইকের কাছে যায়নি। তবে আব্বু, চাচুদের চালানো দেখে এক প্রকার লোভ হতো বাইকের উপর!
২০২২ সালে যখন আমি ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি তখন হটাৎ করেই আমার বাইক কেনার ইচ্ছা হয়। আর এই ইচ্ছা আমাকে প্রচুর ভাবে তাড়া করে। আমি বাসায় বলি বাইক কেনার কথা। প্রথমে আব্বু আম্মু রাজি না হলেও ৩ দিন পরে রাজি হয়ে যায়। সেসময় আমার কাছে জিজ্ঞাসা করে আমি বাইক চালাতে পারি কিনা। আমি এক প্রকার মিথ্যা বলি যে পারি। এই বলার পরদিন আমার ফুফাত ভাইকে ফোন দিয়ে বলি তার বাইকটা নিয়ে আমাদের বাসায় আসতে আর আমাকে চালানো শেখাতে।
মোটামুটি ৫/৬ দিনের মধ্যেই আমি রাস্তায় চালানো শুরু করি। পরে বাসা থেকে বলে যে কোন বাইকটা আমি নিতে চাই। তখন আসলে আমি সুজুকির কথা বলি। কিন্তু আম্মু পছন্দ করে না। আমার বন্ধুর 4v ছিল। তাকে বাইকটা নিয়ে আমার বাসায় আসতে বলি আর আম্মুকে দেখানোর সাথে পছন্দ করে। আমি তখন 4v নিয়ে অনেক গবেষণা করি বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে। ইন্টারনেট, ইউটিউব থেকে সব কিছু জানার পর এই 4v আমার একরকম ভালোবাসা হয়ে দাড়ায়। যাই হোক ২০২১ এর জুন মাসে
টিভিএস এর শোরুম থেকে আমার জীবণের প্রথম বাইক কিনে ফেলি। বাইকটি ২/২.৫ লাখ টাকা বাজেটের সেরা বাইক এটি।
মূলত সিটিং পজিশন আর কন্ট্রোলিং এর জন্য এই বাইকটি আমার সব থেকে বেশি পছন্দ হয়। আশেপাশে ঘুরাঘুরি আর বাইকের প্রতি ভালোবাসা থেকেই আমার বাইক কেনা। আমি ৬০০০ কিলোমিটার চালিয়ে এই বাইকে কোনো প্রকার বড় সমস্যা পাইনি। ব্রেকিং এর জন্য আমার এবিএস নেওয়া।আলহামদুলিল্লাহ এখন পর্যন্ত আমার বাইকের সবকিছু ঠিক আছে। প্রথমে বাইকের মাইলেজ ৪৪ পাইলেও বর্তমানে সিটিতে ৩৭-৪১ এমন পাচ্ছি।
যেহেতু বাইকটির পার্ফরমেন্স ভালো সেহেতু এই মাইলেজ অনেক বলে আমি মনে করি। এই বাইকের মিটারটা সবথেকে ভালো লাগে। চাবি দেওয়ার সাথে একটা 'হাই' জানায় সাথে নিজের নাম। এটি দারুণভাবে উপভোগ করি প্রতিবার চাবি দিয়ে। এটির সর্বোচ্চ স্পিড প্রথম একদিন ১১১ পর্যন্ত পেয়েছি । পরে অবশ্য কোনোদিন টপ চেক দেয়নি। আমি আমার বাইকের ইঞ্জিন অয়েল সঠিক সময়ে পরিবর্তন করি আর খুব যত্নে রাখি। আমি মনে করি কোনো জিনিস যত্নে রাখলে সেটি সবসময় ভালো থাকে। এটি দিয়ে একদিন ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত রাইড করেছি আর তেমন কোনো সমস্যার সম্মুখিন হইনি।
TVS Apache RTR 160 4V বাইকের কিছু ভালো দিক -
- সিটিং পজিশন ভালো হওয়ায় খুবই কম্ফোর্ট ভাবে রাইড করা যায় ।
- মাইলেজ খুবই ভালো আছে আলহামদুলিল্লাহ ।
- টার্নিং রেডিয়াস খুব ভালো হওয়ায় সিটি রাইড করে খুব মজা।
- টায়ার সাইজ ১৩০ হওয়াতে বাইকের কন্ট্রোলিং খুবই ভালো ।
- হেড লাইট এলইডি এবং পাওয়ারফুল হওয়ার কারনে রাতে ভালো ভাবেই রাইড করা যায়।
TVS Apache RTR 160 4V বাইকের কিছু খারাপ দিক -
- বাকটি ঘুরাতে জায়গা বেশি লাগে
- ইঞ্জিন অয়েল অন্যান্য বাইকের থেকে বেশি লাগে
- পিলিয়ন সিট ছোট হওয়ায় পিলিয়নের অনেক কষ্ট হয়
- স্ট্যান্ড বেশি বাকা হওয়ায় সব জায়গায় বাইক রাখতে ঝামেলা হয়
- পার্টসের দাম একটু বেশি
মূলত এই বাইকটি পছন্দের মূল কারণ হচ্ছে, এর মিটার এবং ফিচারগুলো। মোবাইল কানেক্ট করে সবকিছু কন্ট্রোল হয় এটাতে। এর সাথে বাইকের আউটলুক অনেক সুন্দর এবং গ্রাফিক্স ডিজাইন গুলো চমৎকার। এর বডির প্লাস্টিক ও বিল্ড কোয়ালিটি বেশ মজবুত।
আমার বাইকের ইঞ্জিন পারফরমান্স এখনও অনেক ভাল। এখন পর্যন্ত আমি এর ইঞ্জিনে কোন সমস্যা পাইনি। ইঞ্জিনের শব্দটা অনেক স্মুথ। আর কন্ট্রোল নিয়ে আমার কোন চিন্তা নেই। সাধ্যের মধ্যে এমন এইটি বাইক কিনতে পেরে আমি খুব খুশি।
সবশেষে আমি বলবো এর ভাল দিকগুলো বিবেচনা করে বাইকটি আপনারাও ব্যবহার করতে পারেন। বাইকটি দেখতেও যেমন সুন্দর এটি ব্যবহার করেও অনেক ভালো অভিজ্ঞতা পাবেন। আর অবশ্যই বাইক চালানোর সময় হেলমেট ব্যবাহার করবেন। ধন্যবাদ।