Shares 2
TVS Apache RTR 160 ১৩৫০০ কিলোমিটার - ফাইজুল কবীর নীরব
Last updated on 28-Jul-2024 , By Raihan Opu Bangla
আমি ফাইজুল কাবীর নীরব । আমি ২০১৮-২০১৯ ব্যাচ এর ইন্টার পরিক্ষার্থী আমি । আমি আমার TVS Apache RTR 160 বাইকটি ব্যবহার করি। আজ আমি আপনাদের সাথে আমার বাইকটি নিয়ে কিছু কথা শেয়ার করবো।
TVS Apache RTR 160 এর সাথে আমার স্মৃতি -
আমার বাসা ময়মনসিংহ সদর। আমার জীবনের প্রথম বাইক ছিলো TVS Apache RTR 150 2nd Version Yellow কালার। সেটি আমি ক্রয় করেছিলাম মানিকগঞ্জ এর অফিসিয়াল শো-রুম থেকে। সেই বাইকটি ছিলো আমার জীবনের ১ম এবং সেরা বাইক। বাইকটি আমি ১০,৫০০ কিলোমিটার রাইড করেছিলাম। তারপর বাইকটি চুরি হয়ে যায়। তবে বলতে পারি যে TVS Apache RTR 150 বাইকটি রাইড করে যথেষ্ট হ্যাপি ছিলাম আমি । ব্রেকিং ,কন্ট্রোলিং একটু খারাপ ছিলো । কিন্তু যার সাথে বাইকটি এডজাস্ট হয়ে যায় তার কাছে আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো লাগবে ।
তো আমার কাছেও বাইকটি আমার প্রিয় বাইক ছিলো, এখনো অনেক মিস করি বাইকটি। কিন্তু বাইকটি চুরি হয়ে যায় । আমি একজন ছাত্র কিন্তু আমি ভ্রমন করতে ভালোবাসি । বাবার সাথে ছোটবেলায় অনেক দূরে ঘুড়তে যেতাম। আমার বাবাও বাইকার ছিলেন সরকারি চাকরী করতেন বিধায় এক জেলা থেকে আরেক জেলায় স্থান পরিবর্তন করতেন। আমি মটো ট্রাভেলিং কে নিজের শখ হিসেবে বেছে নিয়েছি। আমি যখন ক্লাস ৬ এ তখন আমার বাবা আমাকে বাইক চালানো শিখিয়ে ছিলেন। আমার বাইকটি আমি ১৩,৫০০ কিলোমিটার চালিয়েছি।
আমাদের দেশের রাস্তাগুলো যেমন - উঁচুনিচু, পাহাড়ি, লালমাটি, কাচা রাস্তা, পাকা রাস্তা সহ মোটামুটি প্রায় সকল রাস্তায় রাইড করেছি। আজকে সেই রাইডগুলোর পরে নিজস্ব অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে বাইকটির প্রায় সবগুলো ভালো আর খারাপ দিকগুলো আপনাদের মাঝে তুলে ধরার চেস্টা করবো। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার - "আবুল হাজী মটরস" থেকে আমি আমার TVS Apache RTR 160 Matt Blue বাইকটি কিনেছিলাম ৪ জুন ২০১৯ এ।
কেন আমি আবার পুনরায় আপডেট ভার্সন এর এই বাইকটি কিনলামঃ- আমাকে অনেকে বলেছে যে এটার ২য় ভার্সন এর একটা বাইক এর আগেও ব্যবহার করেছো, আবার এই বাইক নিলে কেন? এই বাইকের তো ব্রেকিং কন্ট্রোলিং একেবারে খারাপ, তবুও কেন নিলে? তখন আমি ঠান্ডা মাথায় বলেছি যে - এই বাইক টার চেয়েও ভালো বাইক কেনার সামর্থ্য আছে কিন্তু এই বাইক এর মজা যে একবার পেয়েছে সে কখনো এই বাইক পরিবর্তন করে অন্য বাইকে যেতে পারবে না । হ্যা অনেক এক্সিডেন্ট হয়, ব্রেকিং আর কন্ট্রোল একেবারেই যে খারাপ তা কিন্তু নয়, আমি সর্বদা একটা কথা ই মেনে এসেছি - "একজন রাইডার এর ওপর একটি বাইক নির্ভর করে, বাইকের ওপর রাইডার নির্ভর করে না"।
রাইডার যদি নিজের দোষে এক্সিডেন্ট করে তখন তো বাইকের দোষ হবেই। বাজেট এর জন্য না, আমি রাইড করে অভ্যস্ত হয়ে মজা পেয়েছিলাম তাই আবার কিনেছি। আমরা যখন কোন বাইক কিনি বা কিনার জন্য লক্ষ্য স্থির করি তখন আমরা সেই বাইকের পার্ফরমেন্স নিয়ে আগে কথা বলি। পরবর্তীতে আউটলুক, ব্রেকিং সিস্টেম, বিল্ড কোয়ালিটি, মাইলেজ, হেডলাইট এবং ব্যাটারী, পার্টস, সার্ভিস এবং আরো অনেক কিছু নিয়েই কথা বলে থাকি। আজ এই বাইকের ব্যাপার এ সকল কিছু শেয়ার করবো ধীরে ধীরে।
Click To See TVS Apache RTR 160 Review
TVS Apache RTR 160 ফিচার্স
পারফর্মেন্স -
একটি বাইকের মুখ্য বিষয় বলতে আমরা বুঝি বাইকের পার্ফরমেন্স । TVS Apache RTR 160 বাইকটি তে রয়েছে 159.7 CC Air-cooled 4 stroke এর ইঞ্জিন যার থেকে সর্বোচ্চ পাওয়ার 11.19 (15.2 bhp) কিলোওয়াট @8500 rpm এবং সেই সাথে এটি 13.1 নিউটন মিটার @4000 rpm টর্ক উৎপন্ন করতে পারে।
আউটলুক -
এই বাইকের আউটলুক আমার কাছে মোটামুটি ভালো লেগেছে। এই বাইকের লুকটা আমার কাছে বেশ ড্যাশিং আর স্পোর্টি মনে হয়েছে। তবে এই বাইকটির স্পিড অনুযায়ী এটি বাংলাদেশের ১৫০ বা ১৬৫ সিসি বাইকের সাথে তুলনা করা যায়। এমনকি স্পিড অনুযায়ী এই বাইকটি ১৮০ সিসি বাইকের সাথেও তুলনা করা যেতে পারে।
Click To See TVS Apache RTR 160 Race Edition Price In Bangladesh
ব্রেকিং সিস্টেম -
এর বাইকের সামনে আছে সিংগেল ডিস্ক এবং পেছনে রয়েছে ড্রাম ব্রেক । অন্য রাইডাররা বলেছে যে - এই বাইকের ব্রেকিং ভালো না, হ্যা আমিও এটা মানি কিন্তু এই বাইকের ব্রেকিং আয়ত্ত করতে একটু সময় লেগে যায়। একবার আয়ত্তে এসে গেলে আলহামদুলিল্লাহ একেবারে সেটিসফাই হওয়া যায়। তবে আমি ব্রেকিং এ খুব ভালো সাপোর্ট পেয়েছি তা বলবো না, মোটামুটি সাপোর্ট পেয়েছি এবং চাকা আরেকটা মোটা হলে মনে হয় আরো ভালো ব্রেকিং সাপোর্ট পাওয়া যেতো।
বিল্ড কোয়ালিটি -
বিল্ড কোয়ালিটি আমি মোটামুটি ভালো পেয়েছি। বাইকের কালার এবং ফিনিশিং থেকে শুরু করে পুরো বাইকের লুকটা আমাকে আকৃষ্ট করেছে। আমি ছোটাখাটো কিছু কারনবশত ২-৩ বার পড়ে গিয়েছিলাম কিন্তু তেমন কোন ক্ষতি হয়নি বাইকের। এক কথায় বিল্ড কোয়ালিটি নিয়ে আমি সন্তুষ্ট।
মাইলেজ -
TVS Apache RTR 160 বাইকে আছে ১৬ লিটার ক্যাপাসিটিভ ফুয়েল ট্যাংক (রিজার্ভ-২.২লিটার)। এই বাইকের মাইলেজ নিয়ে আমি মোটামুটি ভাবে সন্তুষ্ট। সিটি রাইড এ আমি পাই ৩৮-৪০ কিলোমিটার প্রতি লিটার এর মতো এবং হাইওয়ে তে পাই ৪২-৪৫ কিলোমিটার প্রতি লিটার এর মত। আসলে মাইলেজ এর ব্যাপারটা কিছুটা বাইক মেইনটেইন এর ওপর নির্ভর করে থাকে।
হেডলাইট এবং ব্যাটারি -
এই বাইকের ব্যাটারি 12V, 9.0 Ah, ব্যাটারি পার্ফরমেন্স মোটামুটি ভালো পেয়েছি। এই ১ বছরের ওপর ব্যবহার করছি, কোনরকম ব্যাটারির কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি। হেডলাইট Halogen HS 12V, 35/35W× 1, এই লাইট নিয়ে আমি মোটামুটি অনেকটা ই সন্তুষ্ট। রাতে চলাফেরা করার সময় মোটামুটি ভালো সাপোর্ট পেয়েছি এই ব্যাটারি এবং হেডলাইট থেকে।
Click To See All TVS Bike Price In Bangladesh
সার্ভিস এবং পার্টস -
এই বাইকের কিছু পার্টস ব্যতীত প্রায় সব পার্টস গুলো আমি পেয়েছি। আমি আমার বাইক নিয়মিত সার্ভিস করিয়েছি এবং সময়মত ব্রেক প্যাড, এয়ার ফিল্টার, মবিল ফিল্টার, চেইন স্পকেট ইত্যাদি সহ আরো নানান পার্টস চেঞ্জ করেছি। কিন্তু আমার কাছে বাইকের কিছু পার্টস এর দাম একটু তুলনামূলকভাবে বেশি মনে হয়েছে। তাছাড়া বাইক এ রয়েছে ডিজিটাল স্পিডোমিটার, 3 Part Handle, সামনে টেলিস্কোপিক সাসপেনশন এবং পিছনে মনোটাইপ ইনিভার্টাড সাসপেনশন যা এখনকার যুগের সাথে কিছুটা বেমানান। টিউবলেস চাকা, সামনে পেয়েছি ৯০/৯০× ১৭ এবং পিছনে পেয়েছি ১১০/৮০× ১৭ সাইজের টায়ার যা এই বাইক এর সবকিছুর সাথে মিল খায়নি। বাইকটির ওজন ১৩৭ কেজি। রয়েছে LED ইনডিকেটরস। ক্লিয়ার লুকিং গ্লাস, পিলিয়ন গ্র্যাভ রিল।
মডিফাই -
আমি আমার বাইকে হালকা মডিফাই করেছি, সেটা হচ্ছে শুধু পিছনে ব্যাকলাইট এর নিচে আলাদা ক্লাম বসিয়ে নাম্বার প্লেট এডজাস্ট করেছি। হ্যান্ডেল বার এর ২ মাথায় লাইট লাগিয়েছি। বাইকের চাকা এবং সাসপেনশন এ হালকা স্টিকার মডিফাই করেছি।
বাইকটির কিছু ভালো দিক -
- মাইলেজ
- ইঞ্জিন পারফর্মেন্স
- বিল্ড কোয়ালিটি
- এক্সহস্ট সাউন্ড
- রেডি পিকাপ
বাইকটির কিছু খারাপ দিক -
- ব্রেকিং এবং কন্ট্রোল সিস্টেম
- ভাইব্রেশন
- চাকা চিকন
- কন্ট্রোল
এই বাইকের টপ স্পিড আমি পেয়েছি ১২৩ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায়। বাইকটি নিয়ে আমি প্রায় ৮-৯ টি জেলায় রাইড করেছি আমার বাইক নিয়ে, কোন প্রকার হতাশ বা কোনরকম বিপদে এখন ও পরতে হয়নি। আমি যখন হাইওয়েতে রাইড করি তখন বাইকটির রেডি পিকাপ আমাকে অনেক ভালো সাপোর্ট দেয় । বিশেষ করে ওভারটেকিং এ মোটামুটি খুব অল্প সময়ে ভালো স্পিড এর মাধ্যমে ওভারটেক করে ফেলতে পারি ।
ইঞ্জিন অয়েল হিসেবে আমি - TVS TRU4 SYNTHETIC ব্যবহার করি, যা আমাকে শোরুম থেকে বলা হয়েছে ১৮০০-২০০০ কিলোমিটার এর মধ্যে পরিবর্তন করতে। কিন্তু আমি ১৩০০-১৫০০ এর মধ্যেই পরিবর্তন করে ফেলি । এই ইঞ্জিন ওয়েল বাইক এর স্মুথনেস এর কমতি নেই কিন্তু ভাইব্রেশন আগের থেকে প্রায় অনেক কম । নতুন বাইক কিনার পর আমি ৪টা ফ্রি সার্ভিস করিয়েছি নিয়ম মত এবং একটা পেইড সার্ভিস করিয়েছি । বাসার পাশেই শো-রুম তাই আমার তেমন কোন সমস্যা হয়নি এখন পর্যন্ত । শো-রুম এর মেকানিক ছোটখাটো সমস্যা গুলো সমাধান করে দেয় ।
সর্বশেষে একটা কথা বলতে পারি - সব জিনিস এর ভালো এবং খারাপ দিক ছিলো আছে এবং আজীবন থাকবেই, একেবারে ১০০% ভালো করে কোন কিছু হয়না । তবে যারা মধ্যম বাজেট এ এই বাইক কিনতে চান তারা কিনতে পারেন, আমি মনে করি না খারাপ হবে । একটা বাইক কে একটা রাইডার এর চেয়ে ভালো কেউ বুঝে না। তাই আমি বলবো কিনতে পারেন যদি ভালো লেগে থাকে। সকলের উদ্দেশ্যে আমার একটি কথা - সকলে সর্বদা হেলমেট পড়ে বাইক চালাবেন। কোন ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার চোখে দেখবেন কারন আমি আমার বাইক নিয়ে আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি। ধন্যবাদ।
লিখেছেনঃ ফাইজুল কবীর নীরব
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।
T
Published by Raihan Opu Bangla