Shares 2

Suzuki GSX-R150 দিয়ে আমি একাই বাইক চালানো শিখি - মিশু

Last updated on 29-Jul-2024 , By Shuvo Bangla

আমি গাজী মিশু । আমি আজ আমার বাইকের রাইডিং অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো । আমার প্রথম বাইকটি হল Suzuki GSX-R150। কিছু সমস্যার কারণে আমার পারিবার থেকে বাইকের অনুমতি নেই।

suzuki gsx-r150

কিন্তু কোনোভাবে আমি আমার পরিবারকে বোঝাতে পেরেছি । আমার প্রথম বাইকটি হল গতির দানব তাই আমার পরিবারের সদস্যরা আমাকে নিয়ে একটু চিন্তিত , কারণ আমি আগে বাইক চালাতে জানতাম না।

মজার মনে হলেও সত্যি যে আমি Suzuki GSX-R150 দিয়ে বাইক চালানো শিখেছি এবং আমি মনে করি এটি মজার গল্প কারণ আমার মনে হয় যে আমি ছাড়া আর কেউ হয়তো GSXR 150 দিয়ে বাইক চালানো শিখেনি ।

suzuki gsx-r150 black red

সত্যি বলতে আমি বাইকের নাম জানতাম না কিন্তু মনে আছে আমি বাইকবিডির ইউটিউবে একটি ভিডিও দেখেছিলাম। যেখানে একটি লাল রঙের বাইক ছিল যার চাবিহীন ইগনিশন সিস্টেম ছিল এই বৈশিষ্ট্যটিই আমার মন কেড়ে নিয়েছে । সেই বাইক নিয়ে কিছু গবেষণা করার পর জানতে পারলাম যে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে দ্রুততম বাইক এবং আমি বাইকটির প্রেমে পড়েছিলাম।


আমি হৃদয় মটরস থেকে আমার বাইক ক্রয় করেছি এবং সেদিন আমার অনেক আনন্দ ছিল আবার নার্ভাস ও ছিলাম কারণ আমি বাইক চালাতে জানতাম না তাই আমি আমার সাথে একজন বন্ধুকে নিয়েছিলাম । সে Suzuki Showroom থেকে বাইকটি আমার বাড়িতে নিয়ে যায় ।

প্রায় 50 কিলোমিটার এবং ১ সপ্তাহ ধরে, আমি আমার নিজের বাইকের পিলিয়ন ছিলাম কারণ আমি বাইক চালাতে জানতাম না এবং আমাকে শেখানোর মতো কেউ ছিল না। আমার কিছু বন্ধু আমাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করতো যে আমি বাইক চালাতে পারিনা ,কিন্তু বাইক কিনে গ্যারেজে রেখে দিয়েছি ।

suzuki gsx-r150 bike pic

তাই অবশেষে আমি কারও সাহায্য ছাড়াই বাইক চালানোর সাহস করি এবং একটি দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা ছিল । আমি সেই দিনটি কখনই ভুলব না, আমি শেষ পর্যন্ত কারও সাহায্য ছাড়াই নিজে বাইক চালাচ্ছিলাম ।

আসলে আমি আমার ইউনিভার্সিটি যাতায়াত এর জন্য বাইকটি ক্রয় করেছি । কাগজপত্র সহ বাইকটির দাম হয় প্রায় ৩৭০০০০ টাকা।

বাইকটিতে রয়েছে একটি ১৪৭.৩ সিসির লিকুইড কুল্ড ইঞ্জিন , ৬ টি গিয়ার । বাইকটির ইঞ্জিন থেকে ১০,৫০০ আর পি এম এ ১৮.৯ হর্স পাওয়ার এবং ৯০০০ আর পি এম এ ১৪ নিউটন মিটার টর্ক উৎপন্ন করে । সিট হাইট ৭৮৫ মিমি । বাইকটির ওজন ১৩১ কেজি । কম উচ্চতার মানুষের জন্য বাইকটি পার্ফেক্ট ।

suzuki gsx-r150 at mawa highway

এতে Fuel Injector সহ একটি ১১ লিটারের ফুয়েল ট্যাঙ্ক রয়েছে। এই বাইকটির সবচেয়ে ভালো বৈশিষ্ট্য যা বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ছিল এটি হল চাবিহীন ইগনিশন সিস্টেম।

এতে সামনের দিকে টেলিস্কোপিক ফর্ক সাসপেনশন এবং পেছনে মনোশক সাসপেনশন রয়েছে । সামনে 90/80-17 এবং পিছনে 130/70-17 সাইজের টিউবলেস টায়ার এর সাথে অ্যালয় হুইল দেওয়া হয়েছে।

আমি ভাগ্যবান যে আমার প্রথম বাইক হওয়ার পরেও আমার বাইকটির খুব বেশি পরিষেবার প্রয়োজন ছিল না এবং আমি ভেবেছিলাম যে ক্লাচ প্লেটগুলি শীঘ্রই চলে যাবে। কিন্তু তা হয়নি।

সার্ভিস -

আমি ৩০০০ কিলোমিটারে একটি মাস্টার সার্ভিস করি , ইউটিউবের জন্য মাস্টার সার্ভিস এর একটি ভিডিও বানাই । ৬৫০০ কিলোমিটারে ফুয়েল ইঞ্জেক্টর এবং থ্রটল বডি ক্লিন করি । বাংলাদেশের ফুয়েল ভালো না আর GSX-R ভালো ফুয়েল না হলে সমস্যা করে । ৯৫০০ কিলোমিটারে বাইকের বল রেসার পরিবর্তন করি ।

suzuki gsx-r150 bike headlight

2500 কিলোমিটার আগে বাইকের মাইলেজ ছিল ২৬-২৮ এবং এখন শহরে মাইলেজ পাই ৩২-৩৫ । নিয়মিত চেইন স্পোকেট পরিস্কার রাখি , এয়ার ফিল্টার পরিস্কার করি , সময় মত ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করি , ভালো মানের ফুয়েল ব্যবহার করি ।

ইঞ্জিন অয়েল -

প্রথমে আমি Motul 3100 মিনারেল 10w40 গ্রেডের ইঞ্জিন ওয়েলটি ৫০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ব্যবহার করতাম যার দাম ৫০০ টাকা , তারপর আমি ফুল সিন্থেটিক এ চলে যাই এবং আমার বাইকের জন্য Mobil1 10w40 racing 4t ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করা শুরু করি যার মার্কেট প্রাইস ১৩০০ টাকা।

২ বার এয়ার ফিল্টার , ২ বার ব্রেক সু , একবার বল রেসার পরিবর্তন করি । ২ বছরে ১০ হাজার কিলোমিটার রাইড করি তাতে আমার ৭৩০০ টাকা খরচ হয় ।

৩০০০ কিলোমিটারে স্টক প্লাগ পরিবর্ত্ন করে রেসিং প্লাগ ইনেস্টল করি । ব্রেক হোস পাইপ পরিবর্তন করি , ভালো পাওয়ার ডেলিভারির জন্য রেসিং কয়েল ব্যবহার করি । স্টক IRC টায়ারটি পরিবর্তন করে MRF Masseter টায়ার ইনেস্টল করেছি কারণ স্টক টায়ারে ভেজা রাস্তায় কিছু সমস্যা ছিল।

আমি কিছু পার্টস পরিবর্তন করেছি যেমন স্টিকার , উইন্ডশীল্ড পরিবর্তন , একটি ব্যাক কিট ইনেস্টল করেছি ।

আমার ওয়েট ১০৮ কেজি তবুও আমি আমার বাইকে ১৫০ টপ স্পিড পেয়েছি । আমার একজন রাইড পার্টনার ১৬৭ পেয়েছে স্টক ইঞ্জিনে ।

suzuki gsx-r150 bike price

Suzuki GSX-R150 বাইকের কিছু ভালো দিক -

  • ইঞ্জিন পাওয়ার
  • হালকা ওজন
  • চাবিহীন ইগনিশন
  • দুর্দান্ত ইঞ্জিন ব্রেক করার ক্ষমতা
  • পার্টস সবসময় পাওয়া যায়

Suzuki GSX-R150 বাইকের কিছু খারাপ দিক -

  • ট্র্যাফিক জ্যামের মধ্যে রাইডিংয়ের জন্য এই সিটিং পজিশন অস্বস্তিকর ।
  • পিলিয়ন সিট
  • মাইলেজ কম
  • পার্টস এর দাম বেশি
  • স্টক টায়ার ভালোনা

হাইওয়েতে বাইকটির পাওয়ার যথেষ্ঠ ভালো । যে কোণ গাড়ি খুব সহজে ওভারটেক করা যায় । সিটিং পজিশন এর কারনে একটানা ৪০-৪৫ কিলোমিটার রাইড করে বিশ্রাম নেওয়ার দরকার হয় । যদিও স্পোর্টস বাইক থেকে কম্ফোর্ট সিটিং পজিশন আশা করা উচিৎ হবেনা ।

যারা গতি পছন্দ করেন এবং Suzuki Bike পছন্দ করেন তারা Gsx r150 বাইকটি নিতে পারেন । বাইকটি যেকোনো স্পোর্টস বাইককে স্পিডিং এর ক্ষেত্রে পরাজিত করতে পারে । স্টক টায়ার পরিবর্তন করলে আপনি ভালো ব্রেকিং এবং ব্যালেন্সিং পাবেন।

বাইকটির ইঞ্জন পাওয়ার এর ব্যাপারে না জেনে বাইকটি চালানো উচিৎ না কারণ এটি খুব শক্তিশালী যা আপনি হয়তো এর পাওয়ার সম্পর্কে না জেনে রাইড করলে ফলস্বরূপ আপনি আপনার জীবনের ঝুঁকি নিতে পারেন।

দয়া করে ভাল হেলমেট পরুন কারণ আমরা ৩-৫ লক্ষ টাকা দিয়ে বাইক কিনি কিন্তু আমরা কম দামে সার্টিফিকেশন ছাড়া হেলমেট পরি যা আমাদের রক্ষা করতে পারে না । দয়া করে হেলমেটের সাথে আপস করবেন না ভালো মানের হেলমেট ব্যবহার করুন । ধন্যবাদ ।

লিখেছেনঃ গাজী মিশু
 
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।

Published by Shuvo Bangla