Shares 2
Suzuki GSX-R 150 টেস্ট রাইড রিভিউ - টিম বাইকবিডি
Last updated on 08-Jul-2024 , By Saleh Bangla
গত ৬ বছর ধরে ইয়ামাহা ও হোন্ডা বাংলাদেশের স্পোর্টস বাইক মার্কেটে রাজ্বত্ব করে চলেছে। তবে সময়ের অপেক্ষা ছিল কবে সুজুকি এই ধরনের স্পোর্টস বাইকের রাজ্যে প্রবেশ করবে। ফাইনালি অনেক অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে এই বছর সুজুকি লঞ্চ করেছে Suzuki GSX-R 150। এই বাইকটি সুজুকির ১৫০সিসি সেগমেন্টের প্রথম স্পোর্টস বাইক। আজ আমরা টিম বাইকবিডি আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি Suzuki GSX-R 150 টেস্ট রাইড রিভিউ।
Suzuki GSX-R 150 টেস্ট রাইড রিভিউ
Suzuki GSX-R 150 ফার্স্ট ইম্প্রেশনঃ
প্রথমত এই বাইকতি অনেক স্লিম এবং হাইটে অনেক নিচু এর প্রতিদ্বন্দী বাইক গুলোর থেকে। যাদের হাইট ৫.৫ ফিট তাদের জন্য একটি পারফেক্ট স্পোর্টস বাইক। এই বাইকটির লুকস সামনের দিক থেকে অনেক বেশি সুন্দর। এর হেড লাইট অন্যান্য স্পোর্টস বাইকের হেড লাইটের তুলনায় দারুন এবং সাইড থেকে দেখলে মনে হয় কোন শার্ক এখন ই আক্রমনের জন্য তৈরি। বাইকটিকে এরো ডায়নামিক ভাবে তৈরি করার কারনে বাইকটি রাইড করার সময় অনেক হালকা মনে হয়। এছাড়া বাইকটি ওজনে মাত্র ১৩১ কেজি। যদিও বাইকটি সামনে থেকে এত বেশি আক্রমনাত্ম মনে হয় না কিন্তু প্রয়োজনের সময় ঠিকই এটি তার ক্ষমতা প্রদর্শন করতে সক্ষম।
Suzuki GSX-R150 স্টাইল ও ফিচারঃ
এলইডি হেড লাইটের সাথে বাইকটির টেল লাইটও এলইডি। এর ফুয়েল ট্যাঙ্কটি Suzuki GSXR1000 থেকে ডিজাইন করা হয়েছে। হ্যান্ডেল বার গুলো সোজা এবং স্পোর্টি। সুইচ গিয়ার গুলো কনভেনশনাল ইউনিট। এই বাইকটির অন্যতম ফিচার হচ্ছে যে বাইকটির ইগনিশিন কি লেস। মানে চাবি ছাড়া ইঞ্জিন স্টার্ট। Suzuki GSX-R 150 বাইকের কি লেস ফিচারটি হচ্ছে বাংলাদেশে অন্যতম উন্নত ফিচার। এতে আপনি একটি সেন্সরের মাধ্যমে আপনি বাইকটি স্টার্ট করতে পারবেন। এছাড়া আপনি অনেক ভীড়ের মাঝে সহজেই বাইকটি খুজে পেতে সেন্সরটি আপনাকে সাহায্য করবে।
এই বাইকটির স্পিডোমিটারটি জিক্সার থেকে নেয়া এবং কিছুটা মডিফাইড করা। এই স্পিডোমিটারেটিতে মাইলেজ কাউন্টার, RPM কাউন্টার, স্পিড ইন্ডিকেটর, এবং অন্যান্য ওয়ার্নিং লাইটস দেয়া আছে। বাইকটির ফুয়েল ট্যাঙ্কে ১১ লিটারের মত ফুয়েল ধরে। GSX-R150 এর হেড লাইট একটি উপর অপরটি দেয়া, যাতে করে আপনি রাতে রাইড করার সময় কোন সমস্যায় না পরেন। আমরা সন্তুষ্ট ছিলাম এই হেড লাইট নিয়ে কারণ রাতে হেড লাইটের আলো বেশ কার্যকরী। এই বাইকটির হেড লাইট ইয়ামাহা এম স্ল্যাজের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকরী।
GSX-R150 এর ইন্ডিকেটর গুলো বাল্ব টাইপ। রেয়ারের দিকটি একটু স্লিক। পিলিয়ন সিট একটু পিছনের দিকে অন্যান্য বাইকের মত এই বাইকে পিলিয়ন সাপোর্টের জন্য কোন গ্রেইব রেইল নেই। অনেকটা Yamaha R15 V3 এর মত এর গ্রেইব রেইল দেয়া হয়নি। বাইকের ইগনিশন ইন্টিগ্রটেড আপনি বাইকটি অপারেট করতে চাইলে অবশ্যই সেন্সরের কাছে থাকতে হবে। কারন আপনি সেন্সরের কাছে না থাকলে বাইক স্টার্ট করতে পারবেন না।
যদিও আপনি কোন ভাবে বাইকের নেক লক খুলতে পারেন তবুও এটা প্রায় অসম্ভব যে আপনি বাইকটি স্টার্ট করতে পারবেন। Suzuki GSX-R150 এর বিল্ড কোয়ালিটি খুব বেশি উন্নত নয়। এর প্লাস্টিকের বডি খুব বেশি সাপোর্ট দেয় না। এছাড়া এর কালার কোয়ালিটি অনেক বেশি খারাপ। ৩০০০কিমি তেই এর কালার হালকা হতে শুরু করে। খরচ কমাতেই মুলত এই পন্থা নেয়া হয়েছে।
Suzuki GSX-R 150 ব্রেক, টায়ার এবং সাসপেনশনঃ
এর ফ্রন্ট সাসপেনশন হচ্ছে টেলিস্কোপিক,অপর দিকে রেয়ার সাসপেনশন হচ্ছে মনোশক সুইং আর্ম। ফ্রন্ট এবং রেয়ারে দু জায়গাতেই পেটাল ডিস্ক ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে। আমার মনে হয় তারা টায়ার গুলো বেশি ভালো করেনি। ফ্রন্ট এবং রেয়ার টায়ার উভয় টিউবলেস এবং ১৩০ সেকশন রেয়ার টায়ার ও ৯০ সেকশন ফ্রন্ট টায়ার। এই বাইকটির পেটাল ডিস্ক ব্রেক বাংলাদেশে এই প্রথম। ব্রেক, টায়ার ও সাসপেশন এই তিনটির স্বমন্বয়ে বাইকটি ভালো ফিড ব্যাক দেয়। যদিও বাইকটিতে বড় ধরনের কোন সমস্যা ধরা পরেনি আমাদের কাছে।
Suzuki GSX-R 150 ইঞ্জিন ও ট্রান্সমিশনঃ
বাইকটির ইঞ্জিন ডিসপ্লেসমেন্ট হচ্ছে ১৪৭সিসি সিঙ্গেল সিলিন্ডার ৪ বাল্ব ওয়াটার কুল্ড ইঞ্জিন। ইঞ্জিন সাউন্ড অনেক চমতকার। ইঞ্জিনটি 18.9BHP @10,500RPM এবং 14NM @9000RPM ক্ষমতা উতপন্ন করতে সক্ষম। এই নিচু হাইটের জন্য ও স্লিক ডিজাইনের কারনে এর প্রতিদ্বন্দিদের চেয়ে বাইকটি টপ স্পিড অনেক বেশি। GSX-R150 বাইকটিতে ৬ স্পিড গিয়ার বক্স যুক্ত করা হয়েছে। যদিও গিয়ার চেঞ্জিং স্মুদ নয়। যদিও এই বাইকটির ইঞ্জিন এফআই প্রযুক্তির কিন্তু এতে কোন RPM লক নেই। তাই আপনি আপনার ইচ্ছে মতো থ্রটল ঘুরাতে পারবেন। তবে বিরক্তকর বিষয়টি হচ্ছে এতে ১৩০০মিলি ইঞ্জিন ওয়েল লাগে।
Suzuki GSX-R 150 রাইডিং অভিজ্ঞতাঃ
সুজুকি জিএসএক্স-আর১৫০ বাইকটি সিটিতে রাইড করার জন্য অনেক বেশি আরামদায়ক। যদিও এর এগ্রেসিভ হ্যান্ডেল বার গুলো একটু সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে কিন্তু যারা কম উচ্চতার তারা খুব ভালো ভাবে বাইকটি কন্ট্রোল করতে পারবে। উভয় সাসপেনশন উচু নিচু রাস্তায় ভালো ফিডব্যাক দেয় কিন্তু হ্যান্ডেল বারের পজিশনের জন্য আপনার কজ্বিতে হালকা পেইন অনুভব করতে পারেন।
হাইওয়েতে আপনার একটু কষ্ট হবে। তবে যদিও পিলিয়ন নিয়ে রাইড করে থাকেন তবে এটি আরো বেশি ভয়ংকর। যদিও সাসপেনশন আপনাকে ভালো ফিডব্যাক দেবে কিন্তু হ্যান্ডেল বারের কারনে আপনার পুরো শরীরের ওজন হাতের কজ্বির উপর পরবে। আপনি এক বারে এক ঘন্টার বেশি রাইড করেতে পারবেন না। Suzuki GSX-R150 বাইকটির সাসপেনশন কোন সমস্যা নয়, ব্রেক বা টায়ার ও তেমন কোন সমস্যা নয়। তবে এই বাইকটি ওয়েট ডিস্ট্রিবিউশন সামনের দিকে হওয়াতে বাইক হ্যান্ডেলিং এর ক্ষেত্রে তেমন কোন সুবিধা পাওয়া যায় না। এই বাইকটি এক্সেলারেশন ও টপ স্পিডের জন্য।
GSX-R150 এর টপ স্পিডের মেইন কারন হচ্ছে এর স্লিক ডিজাইন ও এর কম ওজন। যাতে করে ইঞ্জিনের 18.9BHP এফআই ও কোন আরপিএম লক না থাকার কারনে আপনি যত খুশি তত থ্রটল ঘুরাতে পারবেন। বাইকটির চাকা ও ব্রেক দুটোই ট্র্যাক রাইডিং এর জন্য ভালো। বাইকটির হেড লাইট রাতের জন্য যথেষ্ট। এছাড়া এতে AHO ফ্যাসিলিটি দেয়া হয়েছে। যদি পারফর্মেন্সের দিক থেকে অন্য সব বাইক গুলো GSX-R150 কে বিট করতে পারবে না স্পিড ও এক্সেলারেশন এর দিক থেকে। এই বাইকটির অন্যতম খারাপ দিক থেকে মাইলেজ। এই সেগমেন্টের অন্য স্পোর্টস বাইকের তুলনায় এর মাইলেজ কিছুটা কম। এছাড়া এই বাইকটিতে সব সময় ভালো মানের ফুয়েল ব্যবহার করা উচিত।
Suzuki GSX-R 150 সার-সংক্ষেপঃ
এই বাইকটি পুরোপুরি ভাবে একটি স্পোর্টস বাইক। অন্যান্য সেমি স্পোর্টস বাইক গুলোর মত এটি নয়। এই বাইকটি ওপেন রোডের জন্য তৈরি করা হয়েছে, যাতে করে আপনি বাইকটির পুরো মজা নিতে পারেন। যদিও এই বাইকটির কিছুই কোয়ালিটি ইস্যু নিয়ে কথা থেকে যায়। যদিও ৩.৮-৪.০ লাখ টাকার মধ্যে বাংলাদেশে এই জাপানী মোটরসাইকেলটি অন্যদের তুলনায় নিজের জায়গা তৈরি করে নেবে।
Suzuki GSX-R 150 পারফর্মেন্সঃ
টপ স্পিডঃ ১৫২কিমি/ঘন্টা মাইলেজঃ সিটি - ৩২-৩৫কিমি/লিটার; হাইওয়ে – ৩৫-৩৮কিমি/লিটার বর্তমান মুল্যঃ ৩৮০,০০০/- - ৪০০,০০০/- টাকা
আজকের মত শেষ করছি আমাদের এই Suzuki GSX-R 150 এর টেস্ট রাইড রিভিউ। আশা করছি খুব দ্রুত আমরা আপনাদের জন্য এর ভিডিও রিভিউ প্রকাশ করতে পারব। ধন্যবাদ সবাইকে।
T
Published by Saleh Bangla