Shares 2
Suzuki Gixxer SF Fi ABS টেস্ট রাইড রিভিউ - টিম বাইকবিডি
Last updated on 30-Jul-2024 , By Raihan Opu Bangla
মানব সভ্যতার ইতিহাসে দুটি সবচেয়ে বড় আবিস্কার হচ্ছে বিদ্যুৎ এবং বাস্প চালিত ইঞ্জিন। প্রথমটি আমাদের জীবনকে অনেক আরামদায়ক ও সহজ করে তুলেছে এবং দ্বিতীয়টি আমাদের জীবনকে করেছে মজাদার। বিশ্বায়নের এই সময়ে আমরা আমাদের জীবন কে উপভোগ করতে চাই এবং সেই সাথে জীবনের গতি আনন্দ উপভোগ করতে চাই।
আজ আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি Suzuki Gixxer SF FI ABS বাইকটির টেস্ট রাইড রিভিউ। আমি মনে করি এই Suzuki Gixxer SF FI ABS বাইকটি দেখতে বেশ সুন্দর। সামনের দিক থেকে লক্ষ্য করলে বাইকটি বেশ বড় এবং দেখলে বোঝার উপায় নেই এই বাইকটি ১৫০সিসির একটি বাইক। তারা সামনের দিকটি বড় রেখেছে, এর অন্যতম কারণ হচ্ছে এর LED লাইটের জন্য একটু জায়গা বেশি দরকার হয়েছে। এছাড়া এই লাইটটি বেশ পাওয়ারফুল।
Suzuki Gixxer SF Fi ABS টেস্ট রাইড রিভিউ
Gixxer SF এর পুরাতন ভার্সনের সাথে তুলনা করলে এই নতুন বাইকটি অনেক বেশি ডায়নামিক, এবং আমরা কাছে আগের চেয়ে বেশ ভাল মনে হয়েছে। আমার মনে হয় এটা আগের চেয়ে আরও ভাল হয়েছে। এই বাইকটির ফুয়েল ট্যাঙ্কের ডিজাইন বাইকটিকে অনেক পাওয়ারফুল লুক এনে দিয়েছে, ফেয়ারিং এর ডিজাইনের ক্ষেত্রে এসেছে নতুনত্ত্ব, যা বাইকটিকে একটি ভিন্ন লুকস এনে দিয়েছে।
বাইকটির রেয়ার ভিউ মিরর বাইরের দিকে কিছুটা প্রশস্ত, যা পিছনের দিকে দেখার জন্য যথেষ্ট। তবে এটার জন্য আপনাকে শহরের জ্যামের মধ্যে বেশ কষ্টকর অবস্থায় পরতে হবে। হেডলাইটের ঠিক উপরের দিকে ছোট একটি ভাইজর দেয়া হয়েছে, যা দেখতে খুব একটা খারাপ নয়, তবে লং ডিসটেন্স রাইডের ক্ষেত্রে সেভাবে বাতাস কাটাতে পারে না। আমি মনে করি তারা ভাইজরটি কিছুটা উচু করে দিতে পারত। এতে করে বাইকটি আরও বেশি এরোডায়নামিক হতো। Gixxer SF এর পুরাতন ভার্সনটি আমার কাছে মনে হয়েছে রাউন্ড বক্স, তবে নতুন এই Suzuki Gixxer SF FI ABS বাইকটি অনেক বেশি শার্প বা তীক্ষ্ম। আপনি যখন বাইকটি পার্ক করবেন, সত্যিকার অর্থে আপনি এর প্রেমে পরে যাবেন।
জিক্সারের মত এই বাইকটির রেয়ারও কিছু নতুনত্ত্ব আনা হয়েছে, যুক্ত করা হয়েছে স্প্লিট সিট, পিলিয়ন সিট বেশ প্রশস্ত, এবং এর এক্সহস্টও অনেক বেশি মানিয়ে গিয়েছে। আপনার মনে হতে পারে যে SF এবং Gixxer এর মধ্যে শুধু মাত্র হেডলাইট ও ফেয়ারিং এর পার্থক্য রয়েছে, কিন্তু আসলে তা নয়। Suzuki Gixxer SF FI ABS বাইকটিতে তারা যুক্ত করেছে নতুন থ্রি পার্ট হ্যান্ডেলবার, যাতে করে বাইকটি আগের ট্যুরিং এর চেয়ে একে স্পোর্টি লুকস আনা হয়েছে। এছাড়া ডাবল ব্যারেল এক্সহস্ট বাইকটিকে আরও নতুন ভাব এনে দিয়েছে। আমি শুরুতেই বলেছি যে আমার কাছে নতুন স্পিডোমিটার ভাল লেগেছে। কারণ এতে অনেক তথ্য প্রদর্শন করে থাকে। আপনার যা যা তথ্য দরকার সকল তথ্য আপনি এই স্পিডোমিটারে পেয়ে যাবেন।
এতে আপনি গিয়ার ইন্ডিকেটর, সার্ভিস রিমাইন্ডার, টুইন ট্রিপ মিটার, স্পিডোমিটার এবং রেভ কাউন্টার রয়েছে। আর এর সবকিছুই ডিজিটাল। আমি খুশি যে সুজুকি এই স্পিডোমিটারের ব্যাকগ্রাউন্ড সাদা রেখেছ, আগের মত এর ব্যাকগ্রাউন্ড অরেঞ্জ করেনি। তবে এই বাইকটির সুইচ গিয়ার্স গুলো আগের মতই রাখা হয়েছে, এটা নিয়ে তেমন বেশি কিছু বলার নেই। (তবে এর কোয়ালিটি কিছুটা উন্নত করা যেতো। আপনার কাছে এই বাইকটির সিঙ্গেল হর্ন পছন্দ নাও হতে পারে।) আমার মত যাদের উচ্চতা ৫.৫ ইঞ্চি তাদের জন্য ৮০০ মিলিমিটারের সিট হাইট কোন ধরনের অসুবিধা তৈরি করে না। যদিও থ্রি পার্ট হ্যান্ডেলবার এর কারণে রাইডিং পজিশন কিছুটা লিন হবার প্রয়োজন হয়, যা আগের ভার্সনে আপরাইট ছিল। তবে এটা বেশ কম্ফোর্টেবল, আপনি শহর বা হাইওয়ে যেখানেই রাইড করুন না কেন।
সামনের দিকের সাসপেনশন কিছুটা শক্ত ধরনের তবে সুজুকির দাবি হচ্ছে এতে সামনের টায়ারের গ্রিপ আরও ভাল হবে। কিন্তু বাইকের রাইডিং পজিশন কিছুটা স্পোর্টি হবার কারণে আপনি হাতে কিছুটা ব্যথ্যা অনুভব করবে যখন আপনি ৬০ কিলোমিটার গতিতে রাস্তার ছোট ছোট গর্তে হিট করবেন। যেহেতু এই বাইকটিতে দেয়া হয়েছে ফুয়েল ইঞ্জেকশন, সুজুকি এই ইঞ্জিনটিকে কিছুটা ডিটিউন করেছে, তাই এটি এখন অনেক বেশি রিফাইন্ড। এই ইঞ্জিন থেকে 13.4 BHP @ 8000 RPM & 13.8 NM @ 6000 RPM টর্ক উৎপন্ন করতে সক্ষম। তবে আপনি এর র পাওয়ার অনুভব করতে পারবেন না, যা কার্বুরেটর ভার্সন থেকে পেতেন। তবে এতে এফআই করার কারণ হচ্ছে বাইকটি আরও বেশি ফুয়েল এফিশিয়েন্ট হয়েছে। লো রেঞ্জে ট্রাফিক থেকে ট্রাফিকে আপনি সুন্দর ভাবে রাইড করতে পারবেন, তবে এই ইঞ্জিন থেকে আপনি মিড রেঞ্জে থেকে হাই রেঞ্জে বেশ ভাল ফিডব্যাক পাবেন। থ্রটল রেন্সপন্স দারুণ এবং দ্বিতীয় সার্ভিসের পর গিয়ার শিফটিং আরও স্মুথ হয়ে যায়।
এক্সহস্টে এর সাউন্ড আপনি শুনতে পাবে যখন বাইকটি আপনি উচ্চ আরপিএম এ রেভ করবেন। ইঞ্জিনটি অনেক বেশি স্মুথ ও রিফাইন্ড, এব ৭০০০ হাজার আরপিএম পর থেকে আপনি ভাইব্রেশন অনুভব করবেন। এই ভাইব্রেশন আপনি ফুটপেগ এ অনুভব করতে পারবেন। এমনকি হ্যান্ডেলবারেও কিছুটা অনুভব করতে পারবেন। তবে এটা এত বেশি নয়। বাইকটি ৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা খুব সহজে স্পর্শ করে থাকে এবং ৪র্থ গিয়ারে স্পিড ১০৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা স্পর্শ করতে সক্ষম। ৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা যখন আপনি ক্রস করবেন তখন আপনার মনে হবে যে একটু বড় ভাইজর বা উইন্ড শিল্ড দরকার।
Suzuki Gixxer SF Fi ABS Test Ride Review
হ্যান্ডেলিং এর দিক থেকে বাইক অনেক দারূন। আমি জানি না সুজুকি কিভাবে এটি করেছে, তবে যেকোন স্পিডে বাইকটির কর্নারিং কনফিডেন্স বেশ দারুন। আপনি যদি অভিজ্ঞ রাইডার হয়ে থাকেন তবে বাইকটি আপনি খুব সহজেই কন্ট্রোল করতে পারবেন। আপনি ট্রাফিকের মধ্যে জিগজ্যাগ করে বের হতে পারবেন তবে, প্রশস্ত রিয়ার ভিউ মিরর এর কারণে ছোট ছোট গ্যাপে কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। সামনের দিকের সাসপেনশনের কারণে বাইকটি রাস্তার সাথে বেশ দ্রুত মানিয়ে নিয়েছে, সাসপেনশন কিছুটা স্টিফ, এবং এটা হাই স্পিড কর্ণারিং এর ক্ষেত্রে বেশ সহায়তা করে থাকে। তবে খারাপ রাস্তায় সেভাবে ভাল ফিডব্যাক প্রদান করতে সক্ষম নয়।
আমরা কাছে এই বাইকের সবচেয়ে বেস্ট পার্ট হচ্ছে এর ব্রেকিং, আমার কাছে মনে হয় এর নেকেড ভার্সনের চেয়েও এই ভার্সনের ব্রেকিং অনেক ভাল। এখানে আবার সামনের সাসপেনশন কে ধন্যবাদ দিতে হয় এবং সামনের দিকে এখন যুক্ত করা হয়েছে সিঙ্গেল চ্যানেল এবিএস। এই বাইকের সামনের দিকে দেয়া হয়েছে ১০০ সেকশন টায়ার এবং রেয়ারে দেয়া হয়েছে ১৪০ সেকশন রেডিয়াল টায়ার, যা MRF থেকে নেয়া হয়েছে। এই টায়ারের কারনে শুকনো বা ভেজা রাস্তায় অথবা হেবি ব্রেকিং এর সময় খুব ভাল কনফিডেন্স পাওয়া যায়।
সুজুকিকে ধন্যবাদ দিতে হয় এই কারণে যে বাইকটির গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স ১৬৫মিলিমিটার। তাই আপনি রাস্তায় খুব সহজে স্পিড ব্রেকার সহ অন্যান্য বাম্প পার হয়ে যাবেন। এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে থ্রি পার্ট হ্যান্ডেল বারের কারণে আপনার ব্যাক পেইন বা কোন অসুবিধা হবে কিনা। যদি রাস্তা ভাল হয় তবে শহর বা হাইওয়ে কোনটাতেই আপনার ব্যাকপেইন হবে না বা হাতে তেমন ব্যথ্যা অনুভব করবেন না। Suzuki Gixxer SF FI ABS ভাল দিকঃ
- শার্প লুকস
- রিফাইন ও স্মুথ ইঞ্জিন ও সাথে এফআই
- হেড লাইটের আলো বেশ ভাল
- ব্রেকিং ও হ্যান্ডেলিং দারূণ এবং এর সাথে রয়েছে এবিএস
- মিড রেঞ্জে ভাল ফিডব্যাক দেয়
- কর্নারিং এবিলিটিতেও দারূন পারফর্ম করতে সক্ষম
Suzuki Gixxer SF FI ABS খারাপ দিকঃ
- সামনের দিকের সাসপেনশন কিছুটা শক্ত যদিও এটি ব্রেকিং এ সহায়তা করে থাকে, তবে খারাপ রাস্তায় ভাল ফিডব্যাক দেবে না
- সামনের ভাইজর বা উইন্ড স্ক্রিন কিছুটা বড় করা দরকার ছিল, এতে হাইওয়ে রাইডে সুবিধা হতো
- সিঙ্গেল হর্ন আরও উন্নত করা উচিত
- রিয়ার ভিউ মিরর অনেক প্রশস্ত, তাই জ্যামের রাস্তায় কিছু সমস্যায় পরতে হয়
- এফআই ইঞ্জিন হবার কারণে একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর সার্ভিস প্রয়োজন হয়
- এই ভার্সনের দাম ২,৯১,৯৫০ টাকা যা কিছুটা বেশি
এই বাইকটির দাম প্রায় তিন লাখ এর কাছাকাছি, তো সেই ভিত্তিতে আপনি একটি ব্যবহৃত V2 বা থাই CBR ক্রয় করতে পারেন যা আপনাকে আরও ভাল একটা ফিডব্যাক দিতে সক্ষম। এছাড়া চাইলে আপনি নতুন বাইক ক্রয় করতে পারেন, হয়ত কিছু ফিচার্স কম পাবেন তবে আপনার জন্য অনেক মজাদার হতে পারে। আমার মনে হয় সুজুকি এখানে একটি বিষয় বা ট্রিক মিস করেছে। তা হচ্ছে সুজুকি চাইলে এখানে GSXR-150 এর ইঞ্জিন বসাতে পারত। তাহলে বাইকটি পুরোপুরি একটি প্যাকেজে পরিণত হতো। Lets See Suzuki Gixxer price in Bangladesh here.
সুজুকির সব বাইকের দাম এবং সুজুকির শো-রুম সর্ম্পকে বিস্তারিত জানতে আমাদের ওয়েবসাইট ঘুরে আসুন। নতুন নতুন মোটরসাইকেল এর বিষয়ে খবর জানতে আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ সবাইকে।
T
Published by Raihan Opu Bangla