Shares 2
Suzuki Gixxer 155 ৫০ স্পিডে রাইডে অবিশ্বাস্য মাইলেজ - সরোয়ার
Last updated on 31-Jul-2024 , By Shuvo Bangla
Suzuki Gixxer 155 ৫০ স্পিডে রাইডে অবিশ্বাস্য মাইলেজ - সরোয়ার
আমার জীবনের প্রথম বাইক ছিল Bajaj Pulsar 150। ২০১৭ এর শেষের দিকে তখন আমি নতুন বাইক চালানো শিখেছিলাম। সিলেট শহর থেকে আমি সেকেন্ড হ্যান্ড বাইকটি ক্রয় করি, এবং তা নিজে ভাল ভাবে চালাতে না পারায় বন্ধুর মাধ্যমে চালিয়ে বাসায় নিয়ে আসি। তারপর শুরু হয় বাইকের সাথে আমার পথ চলা।
কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত পারিবারিক অর্থনৈতিক সমস্যার জন্য বাইকটা আমার ২০১৮ এর দিকে বিক্রি করে দিয়ে দিতে হয় । এর পরে আর বাইক কেনা হয়নি অর্থনৈতিক সমস্যার জন্য । বাইক ভালোবাসি কারণ আমি ঘুরতে পছন্দ করি এবং আমার দেশটা খুব ভালোভাবে দেখার এবং চেনার জন্য বাইকিং এর বিকল্প নাই। ২০২০ এর জানুয়ারি মাসে বড় ভাইয়া বলেন যে আমাকে একটা বাইক কিনে দিবে, শুরু হয় আবার স্বপ্ন দেখা । কিন্তু দিনটা আসল ২০২০ সালের জুলাই মাসের ৩ তারিখ ।
একবার বন্ধুর Suzuki Gixxer 155 চালিয়েছিলাম তারপর জিক্সারের প্রতি নেশা হয়ে যায় । কিন্তু যখন এক ছোট ভাই Honda Hornet 160 কিনল এবং সেটা কয়েকদিন চালালাম তখন ফিল করি হর্নেট বাইকের আসল মজা। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম যে Hornet 160R CBS 2020 মডেলের বাইকটি নেবো। জুলাইয়ে ৩ তারিখ যখন Suzuki Gixxer 155 বাইকটি ক্রয় করতে শো-রুমে যাই, হবিগঞ্জ শেখ মোটরসে কিন্তু তখন তাদের শো-রুমে বাইক এভেইলেভেল ছিলনা এবং কবে আসবে তার নির্দিষ্ট কোনো দিনও তারা বলতে পারেনা। এরপরে Suzuki gixxer 155 নীল কালারের বাইকটা ক্রয় করি । বাইকটি ১,৭৪,৯০০/- টাকায় KR Motors হবিগঞ্জ থেকে ক্রয় করি । এটা নেওয়ার কারণ এর স্টাইলিশ লুক এবং সিটি ও হাইওতে রাইডিং কম্ফোর্ট ।
তবে Suzuki Gixxer 155 বাইকটা শো-রুম থেকে বের করেই আমার চালানোর সৌভাগ্য হয় নাই কারণ বড় ভাই বলছিলেন যে উনি ৪-৫কিলোমিটার রাইড করবেন । যাই হোক বিকাল বেলা যখন বাসায় আসি এবং মা বাবাকে সারপ্রাইজ দেই, উনারা দেখে অবাক। এবং আমার তখন অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মত ছিলনা। Suzuki Gixxer 155 বাইকটি মুলত ক্রয় করি শখ এবং ব্যাবসা ওই দুই উদ্দেশ্যে কারণ আমাকে প্রতিদিন প্রায় ২০ কিলো রাইড করে আমার দোকানে যেতে হয় এবং রাতে বাসায় ফিরতে হয়। Suzuki Gixxer 155 বাইকটিতে আছে ১৫৪.৯ সিসির একটি পাওয়ারফুল ইঞ্জিন । ৪ স্ট্রোক সিঙ্গেল সিলিন্ডার , ২ ভালভ । বাইকটি এয়ারকুল্ড কার্বোরেটর ইঞ্জিন । ৫ টি গিয়ার । বাইকটি থেকে 14.8PS @8000RPM এবং 14 NM torque @6000RPM এ উৎপন্ন করে । বাইকটিতে সামনের টায়ার 100/80-17 পেছনের টায়ার 140/60-17 । সামনে ডিস্ক ব্রেক , পেছনে ড্রাম ব্রেক । বাইকের ওজন ১৩৫ কেজি । ফুয়েল ট্যাংকে ১২ লিটার ফুয়েল ধরে ।
প্রতিদিন বাইকটি চালিয়ে এক অন্যরকম ভাল লাগা কাজ করে যদিও আমার প্রতিদিন বাইকটি খুব বেশি চালানো হয় না । তবে যতটুকু চালাই প্রতিদিন এক অন্যরকম অনুভূতি পাই । বাইকটি এখন পর্যন্ত ২৬০০ কিলোমিটার চালানো হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র একবার ফ্রি সার্ভিস করিয়েছি ৯০০ কিলোতে হবিগঞ্জের সুজুকির অথরাইজ শো-রুম KR Motors থেকে।
আমি শুরু থেকে বাইক ৪ হাজার আরপিএম এ ৫০-৫৫ স্পিডে রাইড করেছি । ফুয়েল হিসেবে ভাল মানের অকটেন ব্যাবহার করেছি যার ফলে মাইলেজ পেয়েছি ৫১ কিলোমিটার+ যা সত্যিই অবিশ্বাস্য। এখন পর্যন্ত কোনো পার্টস পরিবর্তন করতে হয় নাই । তবে শুধু একবার অয়েল ফিল্টার পরিবর্তন করেছি৷ বাইকে এখন প্রযন্ত তেমন কোনো মডিফাইড করিনাই একমাত্র একটা হেডলাইট স্টিকার ছাড়া ৷ আমি যদিও টপ স্পিড তুলতে এতটা পারদর্শী না আর তুলতে ইচ্ছে করেনা। তারপর একবার চেক করছিলাম এবং ১০৪ টপ স্পিড তুলেছিলাম।
Suzuki Gixxer 155 বাইকের কিছু ভালো দিক-
- ভাল মাইলেজ
- স্মুথ ইঞ্জিন
- কন্ট্রোল
- কম্ফোর্ট
- পেছনে ১৪০ সেকশনের টায়ার
Suzuki Gixxer 155 বাইকের কিছু খারাপ দিক-
- পেছনের ব্রেক তেমন কনফিডেন্স পাইনা
- লুকিং গ্লাস পর্যাপ্ত প্রশস্ত না
- ১৫/২০ কিলোমিটার প্রেশার দিয়ে চালানোর পর ইঞ্জিন থেকে একটা বাজে গন্ধ আসে মাঝে মাঝে।
- গিয়ার লিভার এখনো প্রচন্ড হার্ড।
- পিলিয়ন সিট কম্ফোর্ট না
জানিনা এগুলো সমস্যা কি না যেহেতু আমি এই বাইকের সাথে এখন নতুন। বাইকের যত্ন আমার কাছে সবার আগে, প্রতিদিন আমি বাসা থেকে বাহির হওয়ার সময় বাইকটাকে পরিষ্কার করি এবং রাতে বাসায় ফিরেও আবার পরিষ্কার করি। সপ্তাহে একদিন অথবা প্রয়োজন অনুযায়ী বাইকটা আমি নিজেই ওয়াশ করি এবং ওয়াশ করার পরে চেইন লুব করে থাকি। তবে খেয়াল রাখি যেনো ধূলিকণায় কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করার সময় যেনো বাইকের রঙ নষ্ট না করে।
আমি প্রথম ইঞ্জিন অয়েল দেই Shell 10w40 মিনারেল যা বাইকের প্রথম চারশো কিলোতে পরিবর্তন করেছিলাম যার মুল্য ছিল ৪০০/-টাক। দ্বিতীয়বার Suzuki 20w40 মিয়ারেল দেই শো-রুম থেকে যার মুল্য রাখে তারা ৫০০/- টাকা এর পরের বার আবার Shell advance 20w40 premium minarel ইঞ্জিন অয়েল দেই যার মুল্য ছিল ৪২০/- টাকা, কারণ সুজুকি অয়েলে সাউন্ডটা আমার কাছে ভাল লাগেনি । এখন পর্যন্ত ভ্রমণ করেছি হবিগঞ্জ থেকে সিলেটের ভোলাগঞ্জ (সাদা পাথর)। ভ্রমণটা ছিল খুবি আরামদায়ক। তবে আমি একা ছিলাম না, আমার সাথে আমাদের ঢাকার কিছু বাইকিং কমিউনিটির ভাইয়েরা এবং সিলেটের বাইকিং কমিউনিটির ভাইয়েরা এবং আমার হবিগঞ্জের কিছু ছোট ভাই ছিল।
এবং সিলেটের আরেকটা থানা জকিগঞ্জ সেখানে যাওয়া হয় একবার। আমার বাইক আমাকে পর্যাপ্ত সাপোর্ট দিয়েছে বলে আমি মনে করি। এবং আমি আরো ভ্রমণ করতে চাই দেশকে দেখতে চাই খুব কাছ থেকে এবং জানতে চাই নতুন নতুন স্থান, স্থাপনা, ঐতিহ্য সম্পর্কে। বাইক আমার চলার সাথি, ইনশাআল্লাহ একে নিয়ে বহুদূর পারি দেওয়ার ইচ্ছে আমার আছে। আমি আমার বাইকের পারফরমেন্সে সন্তুষ্ট।
আপনি যদি বাইকের সঠিক যত্ন এবং সঠিক টাইমে সঠিক জিনিস গুলো পরিবর্তন করেন তাহলে আশা করি ভালো পারফরমেন্স পাবেন। ভাল মাইলেজ পেতে হলে অবশ্যই স্মার্ট রাইডিং করুন, চাকার এয়ার প্রেশার রিকমেন্ড অনুযায়ী মেন্টেইন রাখুন, সঠিক গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করুন,ভাল মানের ফুয়েল এবং তা অবশ্যই অকটেন ব্যবহার করুন । এবং সঠিক সময়ে সার্ভিসগুলা করিয়ে নেন তাহলে আশাকরি Suzuki Gixxer 155 আপনাকে হতাশ করবেনা।
পরিশেষে ধন্যবাদ আপনাদের মুল্যবান সময় দিয়ে কষ্টকরে আমার অনুভূতি গুলা শুনার জন্য। নিজে ভাল থাকুন,এবং অন্যকে ভাল রাখুন এবং সবসময় ভাল মানের সার্টিফাইড হেলমেট ব্যবহার করুন । ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ শেখ সারোয়ার উদ্দিন খন্দকার আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।
T
Published by Shuvo Bangla