Shares 2
Suzuki Gixxer 155 নিয়ে আমার বিস্তারিত অভিজ্ঞতা
Last updated on 06-Jul-2024 , By Ashik Mahmud Bangla
আমার নামঃ মিনহাজুল আবিদ সাকিন, আমার বাসা, রাজাবাড়ী(গ্রাম)শ্রীপুর(থানা), গাজীপুর(জেলা)। আমার প্রথম বাইক জিক্সারই বলা যায় কারন জিক্সার এর সকল কাগজ পত্র আমার নামে।
আমি নানা বাড়ীতে বড় হয়েছি। আমার দাদা বাড়ী এতটা ভাল লাগত না আর আমি নাকি ছোট থাকতেই দাদা বাড়ী যেতে চাইতাম না। আর মা আমাকে দাদা বাড়ী নিয়ে গেলে আমার নানা ১ ঘন্টার মধ্য এসে আমাকে নিয়ে যেত।
আমার নানা ও আমাকে ছাড়া থকতে পারত না। আমি ছোট বেলা থেকেই বাইক খুব পছন্দ করি। আমার বয়স যখন ৭/৮ তখন আমার নানা আর মামা মাঝে মাঝে আমাকে বাইকে চড়িয়ে হোসেনপুর, কিশরঞ্জ, টাঙ্গাই, ময়মনসিংহ নিয়ে যেত। আর তখন বয়সটা ও কম বাইকে চড়তে কার না ভাল লাগে। সেই থেকেই আমি ”বাইক সাইকো”। মানে বাইকের জন্য পাগল।
Suzuki Gixxer 155 নিয়ে আমার বিস্তারিত অভিজ্ঞতা
Suzuki Gixxer 155 নামটা শুনলে প্রথমেই আমার মা এর কথা মনে পরে। কারন আমার মা আমাকে এই বাইকটি উপহার দিয়েছে আমার জন্মদিনের উপহার হিসেবে। আমার জন্ম তারিখ ২৯/০৮ থাকায় বাইকটি তখন পাইনি কারন তখন জিক্সার বাংলাদেশে ছিল না।
কিছু কথাঃ
সবার ধারনা আমি যখন যেই বাইক চালাই সেটাকে ই ভাল বলি। আছা আপনারাই বলেন ভাল জিনিসকে কি খারাপ বলা যায়। আর জিক্সার তোঁ এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত । যখন CB Triggre চালাতাম তখন সবাই জিজ্ঞাসা করত ভাই বাইকটা কেমন মাইলেজ দেয়। আমি বলতাম ভাল মাইলেজ ৫২+ পাচ্ছি। কিছু দিন পর Hero XTREEM টা কিনি মামার জন্য, আমি মামাকে বলেছিলাম Gixxer এর জন্য অপেক্ষা করতে কিন্তু মামা ব্যবসায়ি মানুষ বাইক ছাড়া চলতে পারে না তাই Hero XTREEM টা নিল।
Also Read: সুজুকি ABS ও BS6 ইঞ্জিনসহ লঞ্চ করেছে Suzuki Gixxer & Gixxer SF
আর আমি যখন বাইক নেই আমার এলাকাতে ঐ বাইটাই থাকে প্রথম। তাই সবার নজর সব সময় আমার দিকেই থাকত। খুব ভাল লাগে যখন Suzuki Gixxer 155 নিয়ে বের হই সবাই আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। আসলে কি তাই সবাই আমার দিকে তাকিয়ে থাকে? না সবাই আমার বাইকের দিকে তাকিয়ে থাকে। বাইক নিয়ে কোথাও বের হলে সবার কথার উত্তর দিতে দিতে মুখ ব্যাথা হয়ে যায়। একজনের কথার জবাব দিতে দিতে আর এক জন এসে হাজির হয়। ভাই বাইকটার দাম কত? কোথা থেকে আনলেন? মাইলেজ কেমন? FZs এর থেকে ভাল?
প্রতিক্ষার Suzuki Gixxer 155 :
Suzuki Gixxer 155 এর জন্য আমি র্দীঘ ৬ মাস অপেক্ষা করেছি। জিক্সার এর জন্য প্রথম বুকিং দিয়েছি ২৭-১১-১৪ তারিখে। বুকিং দেয়ার পর আমাকে বলা হয়েছে ২৫-১২-১৪ তারিখ বাইক দেওয়া হবে। কিন্তু ২৪ তারিখ রাতে খবর পেলাম বাইক দেওয়া হবে না তখন মনের অবস্থা খুবই খারাপ তার পর একটা ফোন আসল বল্ল কালকে তুমি জিক্সার এর জন্য কিছু অগ্রিম টাকা দিয়ে বুকিং করে যাও। যেমন কথা তেমন কাজ আমি সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে মামা কে সাথে নিয়ে জিক্সার এর জন্য বুকিং করতে চলে যাই Rancon Motor এর হেড অফিসে। বুকিং করার পর আমাকে বলা হয়েছে ০১-০১-১৫ তারিখ বাইক দিবে। কিন্তু একটু সমস্যার কারনে আমি জিক্সার পেয়েছি ০৩-০২-২০১৫ তারিখে।
যা বাংলাদেশ এর ২য়। মানে আমি জিক্সার পেয়েছি ২য় নম্বরে। এর জন্য আমি Rancon Motor এর কাছে চির কৃতঙ্গ। আর এক জন এর কথা না বলেই হয় না তিনি ”আবিদ” ভাই ওনি না থাকলে আজ হয়ত আমার বাইকটাই আমার কাছে থাকত না। সুজুকি বাংলাদেশে আসার পরথেকেই আবিদ ভাই এর সাথে আমার পরিচয়। আমি যে দিন বাইকটা আনতে যাই সাথে ছিল মামা। আর ঐ দিনই দেখা হল “জুন” ভাই এর সাথে। একটা মজার বেপার হল জুন ভাই আমার বাইক চালিয়েছে এমন কি ভাবিকে নিয়ে ছবি ও তুলেছে তাও আবার আমার এলাকায় এসে।
Rancon Motor এর সার্ভিসিং:
আমি প্রথম সার্ভিসিং করিয়েছি ১৭০০ কি.মি তে। প্রথম সার্ভিসিং এর নিয়ম অনুযায়ি ৫০০ থেকে ৭৫০ কি.মি তে পরে। কিন্তু আমি ১৭০০তে করিয়েছি কারন আমার সামনের চাকার টায়ারে সমস্যা ছিল। Rancon Motor এর মেনেজার (উত্তম কোমার) তিনি নিজে বলেছিলেন বাইক চালাতে থাকেন যদি টায়ার ঠিক না হয় তাহলে টায়ার পালটিয়ে নতুন টায়ার দেওয়া হবে।
তাই আমি আমার ইচ্ছা মত বাইক চালিয়েছি। তার পর ১৭০০ কি.মি. হওয়ার পর ও টায়ার ঠিক হয়নি তাই আমাকে নতুন টায়ার দেয়া হয়েছিল। এর জন্য আমি Rancon Motor এর কাছে চির কৃতঙ্গ। Rancon Motor এর এখনও কোন সার্ভিসিং সেন্টার হয়নি তাই তারা তাদের Rangs এর Mitsubishi সার্ভিসিং সেন্টার এর পাশে বাইক সার্ভিসিং করে। ওদের ব্যবহার খুব ভাল আর বাইক ও খুব যত্ন করে সার্ভিস করে।
Suzuki Gixxer 155 মাইলেজঃ
আমি জিক্সার এর সরর্বোচ মাইলেজ পেয়েছি ৪৭ কি.মি. প্রতি লিটারে(অকটেন)। অনেকেই এই কথাটা বিশ্বাস করে না। জানি আপনি নিজে ও বিশ্বাস করবেন না। তাহলে শুনুন মাইলেজ বেশি পাবেন কি করে বা আমি পাই কি করে। প্রথম অবস্থায় জিক্সারে আর পি এম(RPM) ৪৫০০ এ দেয়া থাকে এর উপরে আর পি এম(RPM) উঠালে মিটারে বাতিটা জ্বলে উঠে । আমি কখনও এই বাতিটাকে জ্বলে উঠতে দেই না মানে আর পি এম(RPM) ৪৫০০ এর উপরে তুলি নাই|
আর প্রতি ঘন্টায় ৪০ থেকে ৪৮ কি.মি গতিতে চালিয়েছি তাই হয়তবা ৪৭ কি.মি পেয়েছি। এখন আমার বাইকের আর পি এম(RPM) ৯৫০০ তে নিয়ে গিয়ার শিফট করি । আর এখন আমি ৪০ থেকে ৫৮ কি.মি গতিতে চালাছি তাই আমি মাইলেজ পাচ্ছি ৪৬.৫ কি.মি. প্রতি লিটারে। আমি ৪.৪৩ লিটারে চালিয়েছি ২০৬.১ কি.মি. তার মানে আমার মাইলেজটা ৪৬.৫ তাই না? আবার কিছু দিন আমি ৭০কি.মি থেকে ৮৫ কি.মি গতিতে চালিয়েছি তখন ৪.৩ লিটারে ১৯৬.৭ কি.মি চালিয়েছি তখন মাইলেজ পেয়েছি ৪৫.৭(প্রতি লিটারে)।
আর একটি কথা না বল্লেই নয় আপনি যদি ১,২,৩ গিয়ারে বেশি বাইক চালান বা ১,২,৩ গিয়ারে আর পি এম ৫ এর উপরে নেন তাহলে আপনি মাইলেজ কম পাবেন। আমি কিছু দিন বৃষ্টির জন্য ছোট রাস্তা দিয়ে চালিয়েছি গিয়ার দুইয়ে ই বেশি থাকত তাই মাইলেজটা কম পেয়েছি। ৪.৪৪ লিটারে ১৯০.৭ কি.মি চালিয়েছি তার মানে প্রতি লিটারে ৪২.৯৫ কি.মি। তা ছাড়া কিছু বাজে অভ্যাস যেমন হঠাৎ ব্রেক, ঘন ঘন স্টার্ট করা, এক্সেলারেটর দ্রুত দেয়া এই বাজে অভ্যাস গুলো বাদ দিয়ে বাইক চালান দেখবেন আপনি ও ৪৫+ মাইলেজ পেয়েছেন।
Suzuki Gixxer 155 কি জাপানি?
অনেকের মনে প্রশ্ন SUZUKI জাপানি কোম্পানি কিন্তু জিক্সার ইন্ডিয়ান কিভাবে। SUZUKI কোম্পানি জাপানিই কিন্তু ভারতে তাদের Manufacturing Plan আছে। আর জাপানের লেবার খরচ ভারতের থেকে বেশি। ভারতে লেবার খরচ কম থাকায় SUZUKI এর বাইক গুলু বাংলাদেশে মানুষের কেনার সামর্থ্য আছে। আর বাংলাদেশ ভারত থেকে বাইক আমদানি করতে পারছে। আর যদি সরাসরি জাপান থেকে আমদানি করতোঁ তাহলে জিক্সার এর দাম ৫ লাক্ষ এর উপরে থকত। যা অনেকের পক্ষে ক্রয় করা সম্ভব হতোঁনা।
Suzuki Gixxer 155 এর মিটারঃ
জিক্সার এর সব থেকে আর্কষনিয় জিনিসটা হচ্ছে এর মিটার। কারন আর সব বাইকের মত জিক্সার এর মাইলেজ নির্ণয় করার ক্যবল সামনের চাকায় নেই। এর টাইমিং চেন এর সাথে মিটার এর তার একজাস্ট করা। যার ফলে পিছনের চাকা ঘুরলে মিটারে মাইলেজ দেখা যায়। তা ছাড়া জিক্সারে গিয়ার দেখায় যার ফলে বাইক কত গিয়ারে আছে তা বুঝা যায়। যা আর সব ১৫০ সি.সি. বাইকে গিয়ার এনটিগেট নেই।
Suzuki Gixxer 155 মিটারে আর পি এম এর সিগনেল থাকায় গিয়ার ফেলতে খুব সুবিদে হয়। মিটারে আর পি এম ১২ পর্যন্ত দেয়া আছে কিন্তু তা ১০ পর্যন্ত উঠে। জিক্সারের মিটারে সময় দেখার জন্য আছে ঘড়ী। জিকাসারের মিটারে মাইলেজ ৩ ভাগে ভাগ করা মোট কত কি.মি চলেছে আর ২টি টাইপ এ এবং টাইপ বি যা ১০০০ কি.মি. করে আছে যা শূন্য (০০০০) করা যায়। যার ফলে আপনি বাসা থেকে বের হয়ে কত কি.মি. বাইক চালিয়েছেন তা বুঝতে পারবেন। এমনকি আপনি বাইকের মবিল পাল্টানোর সময় টাইপ এ অথবা টাইপ বি শূন্য করে নেন তাহলে মবিল কত কি.মি. চালিয়েছেন তা বুঝতে পারবেন খুব সহজে।
তৈল আর মবিলঃ
আমি ছোট থাকতে দেখতাম আমার নানা, মামা সবাই বাইকে অকটেন ব্যবহার করে। তাই আমিও অকটেনই ব্যবহার করি। আমি জিক্সার এ কেসট্রল একটিভ 4T 20w40 টা ব্যবহার করছি। এর দাম ৪৪০ টাকা। জিক্সার এ পরিপূর্ণ তৈল নেয় ১২ লিটার আর রিজার্বে নেয় ২ লিটার। আমার মতে জিক্সার এ অকটেন ভরাটাই উত্তম।
ব্রেক আর নিয়ন্ত্রনঃ
জিক্সারে পিছনে চাকায় ১টি ড্রাম ব্রেক ও সামনের চাকায় ১টি ডিস্ক ব্রেক। অনেকে বলে পিছনের চাকায় ডিস্ক ব্রেক দিলে ভাল হত। কিন্তু আমার মতে জিক্সার এর ড্রাম ব্রেক এতটা খারাপ না কারন জিক্সার প্রতি ঘন্টায় ১১০কি.মি গতিতে ৭মিটার এর মধ্য ব্রেক হয়ে যায় আর ৯০কি.মি গতিতে ৬মিটারে ব্রেক হয়। এখন আপেনিই বলেন ব্রেকটা কি খুবই খারাপ?
Suzuki Gixxer 155 এর ইঞ্জিনঃ
জিক্সার ১৫৫সি.সির বাইক। যা ৪ স্ট্রোক ১ সিলিন্ডার এয়ার কোল্ড ইঞ্জিন। যার ইঞ্জিন ১৪.৮পিএস এবং ৮০০০ আর পি এম ১৪এন এম ৬০০০ আর পি এম।
ইলেকট্রিকঃ
জিক্সার এর ব্যটারির ক্ষমতা ১২ভোল্ট ৩AH.
জিক্সার এর বডিঃ
Wheels: Cast
Overall Length: 2050 mm
Overall Width: 785 mm
Overall Height: 1030 mm
Wheel Base: 1330 mm
Ground Clearance: 160 mm
Seat Height: 780 mm
Curb Mass: 135 kg
জিক্সার এর চাকা ও টায়ারঃ
জিক্সারে পিছনের চাকার টায়ারের মাপ ১৪০/৬০- ১৭ টিউবলেস চাকা। সামনের চাকার টায়ারের মাপ ১০০/৮০ -১৭ টিউবলেস চাকা। আর প্রতিটি জিক্সারে MRF টায়ার দেয়া থাকে।
জিক্সার এর ভাল দিকঃ
জিক্সার এর সব থেকে ভাল দিক হল এর ইনঞ্জিন। ১৫৫ সি.সি ইনঞ্জিন এ মাত্র ৮৫০মি.লি. ইঞ্জিন অয়েল লাগে। আর অয়েল ফিল্টার বদলালে ৯৫০ মি.লি। তাহলে খারাপ কোথায়। যেখানে অন্য ১৫০ সি.সি.র বাইকে ১লিটার ইঞ্জিন অয়েল লাগে সে খানে জিক্সার এর মাত্র ৯৫০মি.লি। জিক্সারের সাইলেন্সার পাইপটা যে দেখে সেই অবাক হয়। জিক্সার ৯০কি.মি গতিতে ৬মিটার এর মধ্য ব্রেক হয়ে যায়। বাইকটি ছোট হওয়ায যে কেও খুব সহযে নিয়ন্ত্রন করতে পারে।
Also Read: New Sakura Enterprise In Puthia, Rajshahi | BikeBD
জিক্সার এর খারাপ দিকঃ
জিক্সার আমার খুব প্রিয় একটি বস্তু তাই বলে এর খারাপ দিক লুকিয়ে রাখবনা। বাইকের হর্ন খুবই দূর্বল। একটি High হর্ন লাগানো আছে আর একটি Low হর্ন লাগিয়ে দিতে পারতোঁ। অনেকে আবার Gixxer এর হর্ন খুজে পায় না। ভাই TVS RTR এর হর্ন আর Gixxer এর হর্ন এক। লুকিং গ্লাস গুলি আরও ভাল দিতে পারত। পিছনের চাকার টায়ার গার্ডটি আরও বড় করলে ভাল হত। বাইকটি সামান একটো উচু করলে ভাল হত কারন অনেক আইল্যান্ড বা স্পীড ব্রেকার এ বাইকের নিচে বাড়ি খায়। বাইকের সাথে কোন বাম্পার নেই। ইঞ্জিন গার্ড থাকলে আরও বেশি ভাল লাগতো।
ধন্যবাদ, আজ এই পর্যন্তই। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরধ রইলো।
T
Published by Ashik Mahmud Bangla