Shares 2
Suzuki Gixxer 155 DD অবশেষে স্বপ্ন পূরন - রাসেদুল হাদী
Last updated on 18-Jul-2024 , By Raihan Opu Bangla
আমি রাসেদুল আল-হাদী । আমি বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলায় বসবাস করি । বর্তমানে আমি একটি Suzuki Gixxer 155 DD বাইক ব্যবহার করি । বাইকটি নিয়ে আছে আমার জীবনের অনেক গল্প আজ আমার Suzuki Gixxer 155 DD বাইকটি নিয়ে কিছু কথা শেয়ার করবো আপনাদের কাছে ।
Suzuki Gixxer 155 DD অবশেষে স্বপ্ন পূরন
বাইকের প্রতি একটা আকর্ষণ কাজ করতো খুব বেশি । আর সেই আকর্ষণ থেকে মা বাবাকে বাইক কিনে দেওয়ার জন্য অনেক বলতাম । কিন্তু তারা কিছুতেই বাইক কিনে দিতে রাজি ছিল নাহ । বাসা থেকে যতই না করুক আশা ছাড়িনি । সব থেকে বড় সাপোর্ট দিয়েছিল আমার ভালোবাসার মানুষটি ।
আমি যখন হতাশ হয়ে যেতাম এত বাইক এর কথা বলেও বাসায় রাজি করাতে পারতেছিলাম না তখন ও আমাকে অনেক বুঝাতো এবং বলতো একদিন তোমার স্বপ্ন পূরন হবে । আমিও সেই আশা নিয়েই থাকতাম । অনেক কষ্টে পরিবারের সবাইকে রাজি করতে সক্ষম হই । দিনটি ছিলো ২০১৯ এর জুলাই মাসের ৪/৫ তারিখ। রাত তখন ১১ টা।
আব্বু ফোন দিয়ে বলে, কিরে পড়াশোনা করিস নাকি শুধু বাইক? বলি নাহ আব্বু পড়াশুনা ঠিক ভাবে করতেছি । আব্বু জিজ্ঞেস করলো কি বাইক পছন্দ হয়েছে? আমি তখন আব্বুকে আমার পছন্দের Suzuki Gixxer 155 DD বাইকটির কথা বলি।
আব্বু আমাকে বললো কালকে গিয়ে কথা বলে আসিস আমি সামনের বৃহস্পতিবার আসতেছি। সন্তানের খুশির জন্য রাজি হয়ে গেলো বাবা। এই খুশির অনুভুতিটা বলে বোঝানো খুব কঠিন ।
Suzuki Gixxer 155 DD Test Ride Review In Bangla – Team BikeBD
১০ই জুলাই ২০১৯, সারা সন্ধ্যা এসডিএল মটরস বরিশাল, সুজুকি শো-রুমের সামনে দাড়িয়েছিলাম আর Suzuki Gixxer 155 DD বাইকটাকে দেখছিলাম। সারা রাতে ঘুম হয়নি আমার। কেটে গেলো নিদ্রাহীন একটি রাত। দু চোখে স্বপ্ন নিয়ে একটি রাত কেটে গেলো।
ফযরের নামাজ পড়ে নাস্তা করে হঠাৎ কখন ঘুমিয়ে গেলাম ঠিক বুঝতে পারিনি । সকাল ১১ টায় ঘুম থেকে উঠে গেলাম । আব্বু তখন রওনা দিয়ে দিছে। দুপুরে মামুন ভাই বাসায় এলো একসাথে রওনা দিলাম শো-রুমের উদ্দেশ্যে। বাইক দেখলাম পছন্দ করলাম তারা বাইকটি সুন্দর করে ফিটিং করে আমাকে দিলো। আব্বু শো-রুমে টাকা পে করলো। পূরন হলো আমার বাইকের স্বপ্ন।
Suzuki Gixxer 155 DD বাইকটি আমার জন্য পারফেক্ট মনে হয়েছে। আমি সিটিতে রাইড করি, লং ট্যুর তেমন হয় নাহ বললেই চলে। স্পোর্টস লুকস পছন্দ। মাইলেজ ভালো দরকার ছিল। ব্রেকিং, কন্ট্রোল ভালো দরকার ছিল। সব দিক ভেবে বাজেটের দিকে লক্ষ্য রেখে আমার পছন্দের সেরা Suzuki Gixxer 155 DD ।
Suzuki Gixxer 155 DD বাইকটি আমি কিনেছিলাম ২ লক্ষ ১৫ হাজার টাকায় । বাইকটি কিনেছিলাম এস ডি এল মটর বরিশাল থেকে । তারা বরিশাল এর সুজুকি বাইকের অফিসিয়াল ডিলার । বাইকটির সাথে অফারে একটি ইঞ্জিন অয়েল,একটি হেলমেট, একটি চাবির রিং, ৬ টি ফ্রি সার্ভিস আমাকে দেয়া হয়েছিলো। প্রথম Suzuki Gixxer 155 DD চালানোর অনুভূতি ছিল অসাধারণ। বিশ্বাস করতে পারছিলাম নাহ আমার বাইক আছে ।
আমি বাইক নিয়ে যত সামনে যাচ্ছিলাম বাইকটিকে তত ভালো লাগতে শুরু করে। তখনি ভেবেছি এই বাইক আমাকে অনেক সারপ্রাইজ দিবে। আমাক সাপোর্ট করবে আরো বেশি উৎসাহিত করবে বিপদ মুক্ত সকল রাইডে । আমার বাইকটি ১৫৫ সিসি সেগমেন্ট এর একটি বাইক। ৪-স্ট্রোক, ১ সিলিন্ডার,এয়ার কুলড ইঞ্জিন।
এর ম্যাক্সিমাম পাওয়ার ১৪.৬ বিএইচপি। ম্যাক্সিমাম টর্ক হচ্ছে ১৪.০ এন এম। কার্বোরেটর ভার্সন এর বাইক। ৫টি গিয়ার । এর সামনের চাকার সাইজ ১০০/৮০ এবং পেছনের চাকার সাইজ ১৪০/৬০। এতে সামনে ও পেছনে উভয়ই দেয়া হয়েছে ডিস্ক ব্রেক, যা আপনাকে ব্রেকিং সময় আরো বেশি কনফিডেন্ট করে তুলবে।
Suzuki Gixxer 155 DD বাইকে আছে পাইপ হ্যান্ডেল এবং ডিজিটাল মিটার। এক কথায় অতুলনীয়। ১২ লিটার ফুয়েল ট্যাংক এর জন্য মাইলেজ ব্যাকাপ ভালো পাওয়া যায়। এর ওজন ১৩৯ কেজি। খুব একটা বেশি মনে হবে নাহ। সকল দিক মিলিয়ে বাইকটি খুব ভালো। রাইডিং টাইমে নিজেকে একজন সার্থক ব্যক্তি মনে হয়। যে আমি একটি সঠিক বাইক বাছাই করেছি আমার জন্য।
বাইক কেনার সময় আমি অফারে ৬টি ফ্রি সার্ভিস পেয়েছিলাম আমি নিয়ম মেনে সঠিক সময়ে সার্ভিস গুলো করিয়েছি । এবং সবগুলো সার্ভিস শো-রুম এর সার্ভিস সেন্টার থেকে করিয়েছি। বাইকে যখন যে সকল সমস্যা হয়েছে আমি দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করেছি । সার্ভিস সেন্টার আমার সকল সমস্যা গুলোর সমাধান করে দিয়েছে। পরবর্তীতে আমি প্রতি এক হাজার কিলোমিটারে একটি করে সার্ভিস করাই।
Suzuki Gixxer 155 DD বাইকের মাইলেজে নিয়ে আমি যথেষ্ট সেটিস্ফাই । ২০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ব্রেকইন পিরিয়ড মেনেছি। সময় মত সার্ভিস গুলো করিয়েছি। ইঞ্জিন অয়েল সঠিক সময়ে পরিবর্তন করেছি। যার ফলে মাইলেজ এখন আলহামদুলিল্লাহ ৫০+ কিলোমিটার প্রতি লিটার হাইওয়েতে এবং সিটিতে ৪০+ কিলোমিটার প্রতি লিটার। ২৫০০ কিলোমিটার এর আগে একটু কম পেতাম ৩৫+ থাকতো, তবে এখন আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো মাইলেজ পাচ্ছি ।
বাইক চালানো সম্পূর্ণ ঠান্ডা মস্তিষ্কের কাজ। যে বাইক চালানো ফিল করতে পারে সেই একজন বাইকার। অতি যত্ন সহকারে পিকাপ দেই। ইঞ্জিন হাই রেভ করি নাহ। যতটুকু সম্ভব পরিস্কার রাখার চেষ্টা করি। ইঞ্জিন অয়েল ১০০০ কিলোমিটার হলেই পরিবর্তন করি। এবং চেকাপ করাই । লোকাল মেকানিক এর দ্বারা কোন কিছু পরিবর্তন অথবা লাগাতে আমার পছন্দ না। মেজর প্রব্লেম হলে শো-রুমে যাই। কিছু কিছু সমস্যা নিজেই সমাধান করি ।
আমি Suzuki Gixxer 155 DD বাইকে ইঞ্জিল অয়েল হিসেবে পেট্রোনাস ইঞ্জিল অয়েল ব্যবহার করি। গ্রেড 23W40 । দাম ৪০০ টাকা। আমি ভালো পারফরমেন্স পেয়েছি তাই আমি এটাই ইউজ করি। বার বার ইঞ্জিন অয়েল ব্রান্ড পরিবর্তন করা বাইকের জন্য ভালো না। বাজেট হিসেবে পেট্রোনাস এ আমি খুব ভালো পারফরমেন্স পেয়েছি। এবং পাচ্ছি। ইনশাল্লাহ সামনেও পাবো। এটা সম্পূর্ণ আমার মতামত।
তেমন কিছুই পরিবর্তন করতে হয়নি এখন পর্যন্ত আল্লাহর রহমতে শুধু ইঞ্জিন অয়েল ফিল্টার পরিবর্তন করেছিলাম আর কিছু পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়নি। মডিফাই করার মতো এখন পর্যন্ত কিছুই চোখে পরেনি। শুধু একটি বাম্পার লাগিয়েছি ।
অনেকের মুখে শুনেছি Suzuki Gixxer 155 DD বাইকের টপ স্পিড ১৩০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা ওঠে। বন্ধু বান্ধব এর প্রশ্ন টপ কত টপ কত? আমার টপ ৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা আমার জীবন একটাই। বাবা মা বাইক দিয়েছে ছেলের মুখে হাশি দেখার জন্য। হসপিটালের চিকিৎসার টপ বিলের লিষ্ট দেখার জন্য নাহ। গতি আমি ভয় পাই। আমি ৪৫/৫০ স্পিড এই হ্যাপি।
Suzuki Gixxer 155 DD বাইকটির কিছু ভালো দিক-
- এই সিগমেন্ট এ লুকের দিক থেকে কোন অংশে কম নয়।
- পাইপ হ্যান্ডেল থাকায় কন্ট্রোলিং অনেক ভালো
- ডিজিটাল মিটারে গিয়ার এন্টিকেডর থাকায় বাইকারের রাইডকে আরো সহজ করে তোলে।
- যত দিন যাবে স্মুথ জিনিসটা বেশি ফিল হবে।
- এয়ার কুলড ইঞ্জিন হওয়ায় বাইক বেশিক্ষণ গরম থাকে নাহ।
- মেইনটেন্স এর দিকে ভালো খেয়াল দিলে মাইলেজ আলহামদুলিল্লাহ।
- মনোসক সাসপেনসন অফ রোড টাইমে ভালো ব্যাকাপ পাওয়া যায়।
Suzuki Gixxer 155 DD বাইকটির কিছু খারাপ দিক-
- হেড লাইটের আলো খুবই কম।
- সিটিং পজিসন ভালো লাগে না।
- লং টুর এ ব্যাক পেইন হয়।
- পিলিয়নের ও পিলিয়ন সিট নিয়ে খুব কষ্ট করতে হয়।
- একটি ইঞ্জিন গার্ড এর অনুপস্থিতি অনুভব করেছি।
- বিল্ড কোয়ালিটি বেশ ভালো,তবে কিছু কিছু যায়গায় অফ রাইডিং এ কিট থেকে আওয়াজ পেয়েছি।
- গিয়ার ইজি হতে অনেক টাইম নেয়। গিয়ার সিফটিং খুব হার্ড থাকে।
Suzuki Gixxer 155 DD বাইকটি নিয়ে লং টুর এর অভিজ্ঞতা খুব কম।যত টুকু অভিজ্ঞতা হয়েছে এক কথায় অসাধারন। হাইওয়েতে ৫৫/৬০ এ বাইক রাইড করলে খুব স্মুথ থাকে বাইকটা । বাইকটিতে আমি কোন ভাইব্রেশন ফিল করিনি । কোন বাজে সাউন্ড নেই।
সব দিক মিলিয়ে চিন্তা করলে আমার জন্য Suzuki Gixxer 155 DD বাইকটি পারফেক্ট। সবাইকে বলবো যারা সিটি+হাইওয়ে রাইডার, মাইলেজের দিক ভাবেন তাদের জন্য এটা একটি পারফেক্ট বাইক। আমি আমার মতামত শেয়ার করছি। অনেকের অনেক চয়েস থাকতে পারে।
কিন্তু আমার দিক দিয়ে আমি কোন ভুল করিনি আমার রাইডিং পার্টনার হিসেবে Suzuki Gixxer 155 DD কে বেছে নিয়ে। ধন্যবাদ Suzuki Bangladesh আমার লেখায় কোন ভুল ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আমি আপনাদের আদরের একটি ছোট ভাই। হেলমেট পরবেন সবাই। সাবধানে বাইক চালাবেন। ভালোবাসা রইলো সবার জন্য।ধন্যবাদ।
লিখেছেনঃ রাসেদুল হাদী
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।
T
Published by Raihan Opu Bangla