Shares 2
Suzuki Gixxer 155 বাইক নিয়ে ২৫০০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ - নাসিম
Last updated on 01-Aug-2024 , By Shuvo Bangla
আমি মোঃ নাসিম মাহমুদ। আমি বর্তমানে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করছি। আপনাদের সাথে আমার প্রথম বাইক Suzuki Gixxer বাইকটির রাইডিং অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো।
Suzuki Gixxer 155 বাইক নিয়ে ২৫০০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ - নাসিম
আমার শখ ভ্রমন করা, ছবি তোলা। বাসা গাজীপুর জেলায়। আমি আমার জীবনের প্রথম বাইকের অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে তুলে ধরবো। আমার জীবনে আমি প্রথম বাইক চালাই ২০১১ সালের শেষের দিকে যা ছিলো আমার এক নানার TVS Apache বাইক। এরপর টুকটাক অন্য কাজিনদের বাইক চালিয়েছি সুযোগ হলেই। এরপর ২০২০ সালের কোন একদিন এক ফ্রেন্ডের Gixxer Monotone বাইক চালিয়ে তার প্রেমে পরে যাই। তখন থেকেই জিক্সারের প্রতি আমার ভাললাগা শুরু হয়।
পরে অনেকগুলো বছর পার হয়ে গেছে। আসলে মধ্যবিত্ত পরিবাবারে সন্তান হওয়ার জন্য বাইক কিনতে কিনতে অনেক সময় লেগে গেছে। তবে বলতে পারি নিজের টাকায় বাইকটি কিনতে পেরে অনেক আনন্দিত আমি। অবশেষে ২০২১ সালের ২৩ আগস্ট আমার জীবনের প্রথম বাইকটি কিনতে পারি তবে অবশ্যই আমার বাবা- মা এর মতামত নিয়ে বাইকটি ক্রয় করেছি। বাসা থেকে আমার অফিসের দূরত্ত আসা যাওয়া মিলিয়ে প্রায় ৩৮ কিলোমিটার । অফিসে যাতায়েতের জন্য এবং সময় সুযোগ পেলে যেন ট্যুর করা যায় তার জন্যই বাইকটি মূলত ক্রয় করা হয়েছে ।
আমি কালো কালার জিক্সার প্রি-অর্ডার করেছিলাম কিন্তু বাইক তখন মার্কেটে এভেলএভেল ছিলো না। তারা কয়েকদিন পরে ৩টি মেরুন কালা জিক্সার এনেছিলো । তখন আম্মুকে এই কালারটি দেখানোর পর আম্মুর পছন্দ হয়ে যায় এবং মেরুন কালার যা আম্মুর পছন্দের কালারের মধ্যে একটি এবং তখন বাইকটির দাম ছিলো ১,৭৪,৯৯০ টাকা।
বাইকটি সুজুকির অথরাইজড ডিলার গাজীপুরের সালমা অটোমোবাইলস থেকে কিনেছি যেখানে আমার সাথে আমার আব্বু, আমার দুই বন্ধু ও চাচাতো ভাই গিয়েছিলো। আমার বাসা থেকে শোরুম ২.৫ কি.মি দূরত্তে ছিলো। আসার সময় আমার এক বন্ধু অল্প রাইড করেছে এরপর বাকিটুকু পথ রাইড করে আমি বাসায় নিয়ে আসি। প্রথম দিন প্রায় ৪৫ কিলোমিটার রাইড করি সব মিলিয়ে।
সত্যি বলতে ওই দিনটার অনুভূতি বলে বোঝানো সম্ভব না। বাইকটির প্রথম ২৪০০ কিলোমিটার ব্রেক ইন পিরিয়ড মেইন্টেন করি খুব সুন্দর ভাবে। ৫ বার ইঞ্জিন অয়েল চেঞ্জ করেছি এবং প্রতিবার ই অয়েল ফিল্টার চেঞ্জ করেছি এবং ৪৫০০- ৫০০০ আর পি এম এ রেখে বাইক চালিয়েছি। ব্রেই ইন পিরিয়ড এ ৩৮-৪০ মাইলেজ পেয়েছি কিন্তু তার পরে ৫০০০- ৬০০০ আর পি এম এ রেখে ৪৫+ মাইলেজ পেয়েছি। বর্তমানে ২৫০০০+ কিলোমিটার রানিং ঠিক আগের মতো পারফর্মেন্স পাছি সাথে মাইলেজ ও।
বাইক নিয়ে ডে লং ট্যুর দিয়েছি গাজীপুর টু কিশোরগঞ্জের মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম, আসা যাওয়ায় প্রায় ২৫০ কিলোমিটার পিলয়ন সহ। এরপরে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে কুয়াকাটা ট্যুর দিয়েছি সেখানে প্রায় ৪০০-৪৫০ কিলোমিটার এর মতন চালানো হয়েছিল। তবে আমি যাওয়ার সময় সদরঘাট থেকে লঞ্চে করে পটুয়াখালী নেমেছি পরে সেখান থেকে কুয়াকাটা ২ দিন ঘুরেছি পরে আসার সময় আবার লঞ্চে বেক করছি।
সাগর কন্যা কুয়াকাটার পাশ দিয়ে বাইক চালিয়ে খুব মজা পেয়েছি। আমার রাইড করতে তেমন কোন খারাপ না লাগলেও পিয়িয়নের বসে থাকাটা কষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। তবে বাইকের পারফর্মেন্স এ আমি সন্তুষ্ট, একটি বারের জন্যও কোথাও নিরাশ করেনি আমাকে।
সিটিতে সর্বদা ৪০+ মাইলেজ পাই এবং হাইওয়েতে ৪৫+ মাইলেজ পাই এখনো। বাইকের টপ স্পিড পিলিয়ন সহ মাওয়া এক্সপ্রেস ওয়েতে ১১৬ পেয়েছি এবং সিংগেল রাইডে ঢাকা - ময়মনসিংহ হাইওয়ে তে ১১৮ পেয়েছি। বাইকে এই পর্যন্ত লাগিয়েছি ইমারজেন্সি সুইছ, ফ্লাস ইন্ডিকেটর লাইট, মিনি ড্রাইভিং ফগ লাইট, এক্সটা হর্ন, নতুন জিক্সারের ক্লাস রিলিজার, শাড়ি গার্ড এবং বাইকের ব্রেকিং পিরিয়ডের পরে চাকায় জেল দিয়েছি। এছাড়াও বাইকের সেফটির জন্য বাম্পার, সাইলেন্সর গার্ড লাগিয়েছি।
এখন পর্যন্ত সামনের চেইন স্পোকেট দুইবার চেইঞ্জ করা হয়েছে- একবার ১৪,৫০০ কিলোমিটার এ এবং আরেকবার ২৪,৩০০ কিলোমিটারে । বল রেসার পালটানো হয়েছে ১৫,৫০০ কিলোমিটার চলার পরে। ফর্ক সিল অয়েল ডান পাশের টা ২৩,০০০ কিলোমিটার পর চলার পরে কেটে গিয়েছিলো যা সাথে সাথে চেঞ্জ করেছি।
সকালে বাইক বের করে সবসময় কিক স্টার্ট করে ৪- ৫ মিনিট আইডল আর পি এম রেখে দেই তারপরে আল্লাহর নাম নিয়ে রোডে বের হই। বাইকের পারফর্মেন্স আমাকে দিন দিন মুগ্ধ করে তুলছে।
বাইকে এখন পর্যন্ত বড় কোন ধরনের সমস্যার সুম্মুক্ষীন হতে হয়নি এই ২৫,০০০ কিলোমিটার চলাচলে। বাইকের ব্রেকিং খুব স্মুথ এবং পারফেক্ট। বাইকে কাদা লাগলে বাসায় যেয়ে ইঞ্জিন ঠান্ডা হওয়ার পর সাথে সাথে ধুয়ে ফেলি, সপ্তাহে এক বার ফোম ওয়াশ করে পলিশ করি। সব সময় অকটেন ব্যাবহার করি। বাইকে প্রথম ১০,০০০ কিলোমিটার Motul Mineral 10w40 ব্যাবহার করেছি তখন এটির দাম ছিলো ৫০০ টাকা তবে ১০,০০০ কিলোমিটার এর পর থেকে Shell Mineral 20w40 ব্যাবহার করছি এখনো যার বর্তমান মুল্য ৪৭০ টাকা ৯০০ মিলি। এই ইঞ্জিন অয়েল টি ব্যাবহার করে আমি খুব সন্তুষ্ট।
বাইকে অফিসিয়েল ভাবে ৪ বার সার্ভিস করিয়েছি সুজুকি সার্ভিস সেন্টার থেকে ৫০০- ৭০০ কিলোমিটার পর পর। ১.৫ থেকে ২ মাস পর পর ব্রেক সু পরিষ্কার করি সাথে সামনের চেইন স্পোকেটের আশে পাশেও। এই পর্যন্ত ৩ বারের মতন সামনের ও পেছনের ব্রেক সু চেঞ্জ করেছি, সাথে প্রতি ১৫০০ কিলোমিটার পর পর এয়ার ফিল্টার টাও হাওয়া মেরে পরিষ্কার করেছি এবং প্রতি ৮০০০ কিলোমিটার পর পর এয়ার ফিল্টার চেঞ্জ করেছি। সবসময় চেইন ঠিকঠাক টাইট আছে কিনা তা চেক করি এবং মাঝে মধ্যে চেইন লুব ও করি। বাইক নিয়ে ছোট হোক বা বড় হোক যে কোন জায়গায় যাওয়ার সময় সব সময় সার্টিফাইড হেলমেট ব্যাবহার করি যা কিনা নিজের সেফটির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
Suzuki Gixxer বাইকের কিছু ভালো দিক -
- পারফেক্ট ব্রেকিং এবং কন্ট্রোলিং ।
- মাইলেজ ।
- কনফিডেন্স সহ কর্নারিং করা যায় ।
- স্পোর্টি লুকিং ।
- বাইকের ডিজিটাল মিটার, লুকিং গ্লাসে ভালো ভিও এবং এর হেন্ডেল বার খুবই কমফোর্ট ।
Suzuki Gixxer বাইকের কিছু খারাপ দিক -
- গিয়ার শিফটিং এখনো হার্ড ।
- পিলিয়ন সিট কম্ফোর্টেবল না, ব্রেক করলেই পিলিয়ন সামনের দিকে ঝুকে যায় ।
- পিছনের ব্রেক টা ড্রাম ব্রেক না হয়ে ডিস্ক ব্রেক হলে আরেকটু বেশি কনফিডেন্স পাওয়া যেত ।
- হেড লাইটের আলো অনেক কম , যদি তারা এল ই ডি লাইট দিতো তাহলে খুব ভালো হতো ।
- এই কয়েকটা খারাপ দিক ছাড়া আর কোনো খারাপ দিক আমার নজরে পরে নি ।
আসলে এই বাইক নিয়ে বলতে গেলে শেষ হবে না যদি কারও বাইক নেওয়ার চিন্তা থাকে তাহলে অবশ্যই আপনাকে এই বাইকটি নেওয়ার জন্য রি-কমান্ড করবো কারন এর পারফর্মেন্স খুব চমৎকার। তবে বাইকটি নেওয়ার পূর্বে পরিচিতো কারো এই বাইক থাকলে তা দিয়ে ট্রায়াল দিয়ে নিবেন এবং অবশ্যই সবসময় ধীরে সুস্থে রাইড করবেন। সবসময় সেফটি গিয়ার পরে বাইক চালানোর চেষ্টা করবেন এবং পরিবারের কথা চিন্তা করবেন এবং বাইক নিয়ে রেস করার মন মানসিকতা পরিহার করবেন। সকলেই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ মোঃ নাসিম মাহমুদ
T
Published by Shuvo Bangla