আমি মেহেদী হাসান, আজ আমি আমার ব্যাক্তিগত জীবনের New TVS Apache RTR 160 4V বাইক প্রসঙ্গে বাস্তব অভিজ্ঞতা নিম্মে তুলে ধরছি।
বাহন হিসেবে মোটরসাইকেল এর ভূমিকা অপরিসীম। করোনার এই বৈশ্বিক দুঃসময়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সাধারণ মানুষ গণপরিবহন পরিহার করে দুই চাকার বাহনকে বেছে নিয়েছে। মোটরসাইকেলের যেহেতু সম্পূর্ণ শরীরটাই খোলা থাকে সেহেতু শারীরিক নিরাপত্তার প্রয়োজন সর্বপ্রথমে।
একটা সময় ছিল যখন বাইকাররা হেলমেট পড়তে চাইতো না। সময় বদলেছে এখন সবাই সচেতন হচ্ছেন।বাইকাররা শুধু হেলমেটই না শারীরিক অন্যান্য নিরাপত্তা সেফটি গিয়ার ব্যবহার করে থাকেন। আজ আপনাদের কিছু সেফটি গিয়ারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিব। যা আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারেন নিজের নিরাপত্তার জন্য।
জীবনের প্রথম বাইক চালানোর অভিজ্ঞতা ও অনূভুতিঃ
আমার জীবনে সর্বপ্রথম বাইক চালিয়েছি ক্লাস থ্রি তে পড়াকালীন, ফরজ আলী ভাইয়ের বাইক হাসান ভাইয়ের হাত ধরে, আমার স্পষ্ট মনে আছে সে দিন অনেক রোদ ছিলো মাঠের মধ্যে ঘেমে যাচ্ছিলাম কিন্ত আমার খুব বেশি ভালো লাগছিলো যার কারনে হাসান ভাই ও আমার সাথে ছিলেন আমি আগে থেকে সাইকেল চালাতে পারতাম সে জন্য আমার মোটরসাইকেল চালাতে তেমন বেগ পোহাতে হয়নি ।
আমি মাঠের চারদিকে থেকে ঘুরে আসার সময় বাইকটি দুইটি পাশাপাশি আম গাছের মাঝ খানে ঢুকিয়ে দেই এবং পরে যাই উঠে বাইক আর বন্ধ করতে পারছি না বাইকে একটু সমস্যা ছিলো পিকাপ অটো বেরে গিয়ে অনেক শব্দ করতে ছিলো তখন মনে হয়েছে আর জীবনে বাইক চালাবো না আল্লাহ এই বার এর মতো মাফ করে দাও, পরে এক ভাই রে ডাকদিলাম হাসান ভাই কে ডাকার জন্য পরে সে এসে বাইকের ইঞ্জিন বন্ধ করেন।
এই স্মৃতি আমি কখনো ভুলতে পারি নাই, জীবনের প্রথম বাইকটি ছিলো ৮০ সিসি আর এক্স ইয়ামাহা কোম্পানির যা সে সময় খুব কম মানুষই ব্যাবহার এর যোগ্যতা রাখতেন তাই আমার বাইকের প্রতি ভালোবাসা শুরু থেকেই তাই তার বাইক চালিয়ে আমার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
New TVS Apache RTR 160 4V বাইক নিয়ে কিছু কথা
যে ভাবে আমার বাইকটি পছন্দ করেছিলামঃ
আমি একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান, সে ক্ষেত্রে আমার বাজেট অনুযায়ী আমার বাইকটি পছন্দ করতে হয়, আমার বাজেট ছিলো ২ লক্ষ টাকা কিন্ত আমার যে বাইক গুলো চয়েস লিস্টে ছিলো তার মধ্যে অন্যতম পছন্দের ছিলো TVS Apache RTR 160 4v যার বাজার মূল্য ছিলো ২ লক্ষ ৫ হাজার টাকা যার ফলে আমার তেমন সমস্যা হয় না বাজেট বারাতে এবং আমি আমার পছন্দের বাইকটি টিভিএস শোরুম থেকে ক্রয় করি।
আমার বাইকটি একটা নেকেড স্পোর্টস বাইক যার ইঞ্জিন ক্ষমতা ১৬০ সিসি এবং ৪ ভাল্বের একটা ইঞ্জিন, আমার পছন্দের বাইকের স্টাইল আমার চয়েসের বেস্ট । লাল কালো মিশ্রনে রেসিং লুক আমার মন কেরেছে, বাইকটি আধুনিক যুগের নজরকাড়া একটি বাইক।
ডিজাইনঃ
বাইকের গ্রাফিকস ডিজাইনে রেসিং গ্রাফিকস দিয়ে বাইকের লুক আরো বেশি সুন্দর করে তুলেছেন, বাইকের ডিজাইন টিভিএস অফিসিয়াল ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা প্রভাবিত করা হয়েছে। আধুনিক ডিজাইনের ফলে বাইকটির লুক ফুটিয়ে তুলেছেন।
ফিচার ও স্পেসিফিকেশনঃ
আধুনিক যুগে দারুণ সব ফিচার ও স্পেসিফিকেশন নিয়ে TVS বাইকটিকে দারুন পারফরম্যান্স দিয়েছেন ডাবল ডিস্ক বেক, ৪ বাল্বের ইঞ্জিন ও ডিজিটাল মিটার, এল ই ডি হেড লাইট ব্যাক লাইট, সাইলেন্সার পাইপ একটি, দুটি চাকার সামনে ৭০/৯০/১৭ সাইজ এবং পিছনে ১৩০/৯০/১৭ সাইজের চাকা ব্যাবহার করা হয়েছে, ১২ লিটার ফুয়েল ট্যাংক ও রিজার্ভ ফুয়েল সিস্টেম রয়েছে কিক ও সেল্ফ দ্বারা বাইকটি চালু করার সিস্টেম রয়েছে। এটি বাংলাদেশের লো বাজেটের একটি রেসিং নেকেড স্পোর্টস বাইক।
বাইকে আমার তোলা সবোর্চ্চ গতিঃ
আমার বাইকটি দিয়ে আমার সবোর্চ্চ গতি হলো 138k.m/h যেটি আমার 4v 160cc দিয়ে ঢাকা টাংগাইল মহাসড়কে তোলা হয়েছে আজ থেকে প্রায় দুই বছর আগে, যত গতি তত ক্ষতি এই কথায় বিশ্বাস করে আর টপ গতি তোলার চেষ্টা করি না।
শহরে ও হাইওয়েতে পাওয়া মাইলেজঃ
স্পোর্টস বাইক হওয়াতে এ বাইকে অন্য অন্য বেশ কিছু বাইকের চেয়ে বেশি তেল পুরে থাকে, বাইকের সঠিক নিয়ম মেনে বাইক রাইড করলে কিছুটা তেল কম খরচ হয় আমি ৪ভি বাইক দিয়ে শহরে সব সময় ৩২ থেকে ৩৪ এবং হাইওয়ে তে ৩৮ থেকে ৪০ মাইলেজ পেয়েছি ।
মেইনটেন্যান্স করার ব্যাপারে আমার মতামতঃ
এটি নেকড স্পোর্টস বাইক যার ফলে এটি মেইনটেন্যাইন্স করার জন্য সর্বদা সার্ভিস করাতে হবে প্রতি ১ হাজার কিলোমিটার পর পর রেগুলার চেকাপ করতে হবে। রোদ থেকে দূরে রাখতে হবে, ভালোমানের ইঞ্জিন ওয়েল ও অকটেন ব্যবহার করতে হবে, পারকিং এ ডাস্ট কবার ব্যাবহার করতে হবে এবং পরিস্কার রাখলে ভালো পারফরম্যান্স পাওয়া যাবে এই বাইকটি থেকে এবং ভালো ফলাফল আশা করা যায়।
বাইকের ৫ টি উপকারিতাঃ
বাইক দিয়ে সহজে কাংখিত গন্তব্যে পৌছানো যায়।
বাইক পাব্লিক টান্সপোর্ট খরচ কমায়।
বাইকে কঠিন পথ সহজ ভাবে পারি দেওয়া যায়।
সময় বাচায় চলার পথে বাইকে সহযোগী হিসেবে কাজ করেন।
দৈনন্দিন জীবন যাত্রার মান সহজ ও উন্নয়ন করতে বাইকের গুরুত্ব অপরিসীম।
বাইকের ৫ টি অপকারিতাঃ
বাইক অতিরিক্ত ব্যাবহার সাস্থের জন্য ক্ষতিকর
অতিরিক্ত বাইকে ব্যবহারে তেল খরচ বাড়ায়।
বাইক থাকলে অপ্রয়োজনীয় বেশ কিছু খরচখাত বৃদ্ধি পায়।
সড়ক দূর্ঘটনা সৃস্টি করে।
নিরাপদ বিহীন মোটরবাইক অকাল মৃত্যুর কারন বাড়ায়।
বাইক চালানোর ক্ষেত্রে সেফটি বিষয়টি সর্বোপ্রথম নিশ্চিত করতে হবে নিচে চালোকের সেফটি বিষয়ক কিছু গিয়ার ও এর কাজ সম্পর্কে দেওয়া হলো -
হেলমেট:
একজন বাইকারের জন্য প্রথম এবং প্রধান হলো সেফটি গিয়ার,একজন বাইকার অন্য যেকোনো সেফটি গিয়ারসের কথা না ভাবলেও হেলমেটের কথা ভুলা সম্ভব নয়। বাইকের ইঞ্জিন চালুর পূর্বে মাথায় হেলমেট পরা উচিত, মানের ধরনভেদে বিভিন্ন ধরনের হেলমেট হয়, যেমন হাফ-হেলমেট, ফুল-ফেস হেলমেট, ওপেনফেইস হেলমেট ইত্যাদি।
হাতমোজা:
হাতমোজা বা গ্লাভস হচ্ছে ২য় নিরাপত্তা গিয়ার। বাইকারদের জন্য বিভিন্ন কাজের উপযোগী ভিন্ন ভিন্ন গ্লাভস রয়েছে। গ্লাভস গুলোর হাতের তালুর অংশে পাতলা থাকে এবং হ্যান্ডেলবার ধরার জন্য ভালো গ্রিপিং এর ব্যবস্থা থাকতে পারে। হাতের বাইরের দিকে উচু প্যাড এর মাধ্যমে আংগুল বা অন্যান্য অংশগুলোকে সুরক্ষা দেয়া হয়ে থাকে। গ্লাভসগুলোতে নরম ফোম বা প্যাডের পাশাপাশি কাপড়, চামড়া রাবার ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
জ্যাকেট ও ভেস্ট:
শরীরের উর্ধাংশ সুরক্ষায় বিভিন্ন ধরনের জ্যাকেট ব্যবহার করা হয়। আর ভেস্ট হলো হাতবিহীন পাতলা জ্যাকেট বা জামা। যেটি সাধারনত অন্য পোশাকের উপরে পরা হয়। কখনও বাতাস থেকে বাচার জন্য, কখনও ঠান্ডা থেকে বাচার জন্য ব্যবহার করা হয়। অনেক ভেস্ট উজ্বল রং এর হয়ে থাকে অন্য রাইডারের চোখে দৃশ্যমান থাকার জন্য।
প্যান্ট:
কোমর থেকে নিম্নাংশ সুরক্ষার জন্য প্যান্ট ব্যবহার করা হয়। শীতের হাত থেকে রক্ষা পেতে গরম প্যান্ট রযেছে। এছাড়াও পড়ে গিয়ে ঘষা খাওয়া বা অন্যান্য ছোটখাটো দুর্ঘটনা থেকে রক্সা পেতে বিশেষধরনের প্যান্ট ব্যবহৃত হয়।
জুতা:
প্রথমতই নিরাপত্তার জন্য জুতা পরতে হয়। এছাড়াও রেসিং এর জন্য বা স্টান্ট এর জন্য ভিন্ন ধরনের বুট/জুতা পাওয়া যায়। রাইডারের পা এর সুরক্ষায় এগুলো অবশ্যই ব্যবহার করা উচিত। জুতো গুলো কখনও চামড়া, কখনও রাবার বা নরম ফোম, কাপড় ইত্যাদি দিয়ে তৈরী হয়ে থাকে।
বাইকটি দিয়ে আমার ট্যুরে বাইকটির কন্ডিশনের বিস্তারিত বর্ননাঃ
আমি এই বাইকটি দিয়ে একদিনে ৪৮৬ কিলোমিটার রাইড করেছি দিনটি ছিলো বৃস্টিময় যার ফলে আমি সারাদিন ধরতে গেলে ভিঝে রাইড করি, আমার খুব বেগ পোহাতে হয় চাকা নিয়ে ও হেড লাইট নিয়ে যার ফলে আমি খুব বেশি স্পীডে বাইক চালাতে পারছিলাম না এবং ভালো ভাবে দেখতে পারছিলাম না, বাইকের ইঞ্জিন ক্ষমতা ভালো থাকায় আমি খুব কম সময়ে কাংখিত লক্ষে পৌঁছে যেতে পেরেছিলাম ।
বাইকটির মাইলেজ পেয়েছিলাম ৪০km/h এবং দু বার যাত্রা বিরোতি দেই বাইকটি দিয়ে বেশ ভালো ভাবে রাইড শেষ করে বাসায় ফিরছিলাম ভাবছিলাম ব্যাক পেইন হবে কিন্ত হয় নাই সেই এবং তারপর দিন ও এর কন্ডিশন বেশ ভালো ছলো চাকা চেঞ্জ করার পরে এর সব কন্ডিশন ভালো ভাবে সার্ভিস এর মাধ্যমে ভালো করা হয়েছিলো, এই বাইকের কন্ডিশন বেশ ভালোই আমার কাছে মনে হয়েছে।
বাজেট এর দিক দিয়ে আমার বাইক স্বয়ংসম্পুর্নঃ
মধ্যবৃত্ত সমাজের স্বপ্নের বাইক হলো আমার পছন্দের Apache বাইক, লো বাজেটে আধুনিক ডিজাইনে নেকেড স্পোর্টস লুকে বাজারের সেরা পারফর্মেন্স বাইকটির তালিকা আমার বাইক স্বয়ংসম্পুর্ন।
এই বাইকটি যে ধরনের রাইডারের জন্য পারফেক্ট বা ভালো হবেঃ
আধুনিক যুগের রুচিসম্মত রাইডারের জন্য এটি একটি পারফেক্ট বাইক স্পোর্টস লুকের রেসিং বাইক যার গতি, ব্রেকিং,দূরান্ত লুক নজর কারা, যারা সিটি ও হাইওয়ে তে রাইড করতে পছন্দ করেন এবং ৫ ফিট ৪ এর উপরে উচ্চতা তাদের জন্য বেস্ট বাইক এটি এর মেনটেনেন্স খরচ অন্য বাইকের তোলনায় কম,আমি বিগত ৪ বছরের রাইডিং অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি সব দিক বিবেচনায় আমার এই বাইকটি সব বয়সের মানুষের জন্য উপযোগী বিশেষ করে যুবকদের জন্য পারফেক্ট।
প্রত্যেক ছেলের স্বপ্ন একটি বাইক আধুনিক যুগে মেয়েদের পছন্দের লিস্টে বাইক বৃদ্ধি পাচ্ছে, দুই চাকার একটি বাহন যার মধ্যে হাজারো স্বপ্ন লুকিয়ে থাকে।
সাবধানে চালাবো গাড়ি
নিরাপদে ফিরবো বাড়ি
বাইক বিডির সাথে আছি
সবাই ভালো থাকবেন আল্লাহ হাফেজ। ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ তামিম আহমেদ
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।