Shares 2

Motrac M3 রিভিউ,বৈশিষ্ট্য,দাম সহ বিস্তারিত

Last updated on 06-Jul-2024 , By Shuvo Bangla

Motrac M3 বাইকটিকে প্রথম দেখায় আপনার মনে হতে পারে এইটুকুন বাইক কি-ই বা করতে পারে? এটা আসলেই যথেষ্ট ছোট আর চমৎকার দৃষ্টিনন্দন একটা বাইক। হয়তো আপনার মনে হতে পারে আসলেই কি এটা কাউকে একস্থান থেকে অন্য স্থানে বয়ে নিয়ে যেতে পারবে? কিন্তু আত্মবিশ্বাসের সাথে জোড়ালোভাবে বলা যায় উত্তরটি হ্যাঁ। এটাকে হয়তোবা বলা যেতে পারে একটা পকেট রকেট! সুতরাং আনন্দের সাথে আপনাদের সবাইকে আমন্ত্রন জানাচ্ছি বর্তমান সময়ের অন্যতম আকর্ষনীয় ও দৃষ্টিনন্দন বাইক Motrac M3 বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা তে।

Motrac M3 রিভিউ,বৈশিষ্ট্য,দাম সহ বিস্তারিত

আমি যখন প্রথম এই বাইকটি দেখি তখন মনে হয়েছিল যেন একটা ছোটখাট চিতাবাঘ দ্রুত গতিতে আমার চোখের সামনে দিয়ে ছুটে চলে গেল । সেমুহুর্তে আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি যে এটা আসলে কী ছিল! নিশ্চিত হবার জন্য আমি পথের পাশে দাড়িয়েই আমার দলের অন্যদের ফোন দিলাম, আর তারা আমাকে নিশ্চিত করলো যে এটা Motrac M3 ছিল, যা কিনা প্রথমবার ঢাকা মোটরবাইক প্রদর্শনী ২০১৫ তে ম্যাক্স মোটরস লিমিটেড এর পক্ষ থেকে প্রদর্শিত হয়েছিল। 

বাইকটি দেখতে ছোটখাট আর ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে মনে হতে পারে এটা কেবলমাত্র অল্প বয়সি ছেলেদের জন্য, বয়স্কদের জন্য নয়। কিন্তু আপনি যখন বাইকটিকে আপনার সামনে দাড়িয়ে থাকা অবস্থায় দেখবেন তখন আপনি উপলব্ধি করবেন যে যেকোন চালকই এটা তাঁর প্রাত্যহিক প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারে। এবং এটা যে চালককে একটা অতুলনীয় আনন্দ দেবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

দৃশ্যমান প্রতিচ্ছবি:

Motrac M3 দৃশ্যত অত্যন্ত আড়ম্বড়পূর্ণ ও আঁটসাঁট গঠনের একটি ছোট বাইক, যেটা একই সাথে চৌকস ও দৃষ্টিনন্দন বটে। আকারে ছোট হলেও একটা বাইকের সকল বৈশিষ্ট্য এর অবয়বে বিদ্যমান। প্রথম দর্শনে হয়তো এর মোটা চাকা আপনার নজর কাড়বে যা কিনা অপেক্ষাকৃত ছোট এ্যলয় রিমে মোটা টায়ার যুক্ত আর বড় হাইড্রলিক ডিস্ক সমৃদ্ধ। এতে আপনি একটি নগ্ন পেশী-বহুল চেহাড়া পাবেন। এর পেছনের সুয়িং-আর্ম টাও উম্মুক্ত, আর ফাঁপানো আচ্ছাদন দেয়া একজস্ট পাইপটা বসার সীটের ধার বরাবর তোলা।

ফুয়েল ট্যাংকটাও বিস্তৃত আচ্ছাদন দেয়া, আর ইজ্ঞিনের নীচের আচ্ছাদনও যথেষ্ট বিস্তৃত আর ফোলানো যেটা এর পেশী-বহুল আঁটসাঁট গঠনের সাথে খুব মিলে যায়। আপনি লক্ষ্য করলে আরো দেখবেন যে এর ফোলানো হেডল্যাম্পটিতে দুটো প্রজেকশন লাইট বসানো আছে। আর এর পেছনের মোটা চাকার উপর বসানো বাড়তি কাদা প্রতিরোধক সহ LED বার লাগানো পেছন দিকটাও বেশ দৃষ্টিনন্দন। আরো উপরি হিসেবে এর সামনের মোটা টেলিস্কোপিক সাসপেনশন ও পেছনের মনো সাসপেনশন আপনাকে একটা সন্তুষ্টির অনুভুতি দেবে যেটা ক্ষমতা সম্পন্ন বিশেষশ্রেনীর বাইকের মধ্যে দেখা যায়।

ইঞ্জিন:

Motrac M3 বাইকটি একটি ১২৫ সিসির একক সিলিন্ডার বিশিষ্ট ফোর-ষ্ট্রোক এয়ার-কুলড ইঞ্জিন দ্বারা পরিচালিত, যা কিনা ৯.১ বিএইচপি শক্তি ও ৯.৫ এন, এম ঘূর্ণন  উৎপন্ন করতে পারে । আর আপনি অবাক হবেন যে এটার ফুয়েল সরবরাহ EFI দ্বারা পরিচালিত যা কিনা Electronic Fuel Injection হিসেবে পরিচিত। সুতরাং বুঝতেই পারছেন যে যখন একটি ছোট ক্ষমতাসম্পন্ন বাইক যার ইঞ্জিন আনুভুমিকভাবে বসানো আর তাতে EFI এর মাধ্যমে তেল সরবরাহ করা হয়, ফলশ্রুতিতে এতে প্রতি ফোটা তেলের সর্ব্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতের মাধ্যমে দক্ষতার সাথে সর্বোচ্চ শক্তি উৎপন্ন করা হয়। সুতরাং এখানে এখানে শক্তির উৎপাদন বা তেল ব্যবহার কোনটারই অবচয় ঘটার সম্ভাবনা কম।

আরো লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে এটার  ইঞ্জিন আনুভুমিকভাবে বসানো, যা কিনা এর মতো অল্প ক্ষমতা সম্পন্ন বাইকের মসৃন ইঞ্জিন চালনা আর দক্ষতার সাথে তেলের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে। আর  ইঞ্জিনের এই আনুভুমিক অবস্থথান এর সুষম ভর-কেন্দ্র বৈশিষ্ট্যও নিশ্চিত করতে সাহায্য করে যা কিনা এইধরনের ছোট বাইকের জন্য আরো বেশী উপযোগী। আর আপনারা নিশ্চয়ই জানেন সুষম ভর-কেন্দ্র বৈশিষ্ট্য একটি বাইকটির নিয়ন্ত্রন ও কর্নারিং ক্ষমতাকেও আরো বাড়িয়ে তোলে।

বিশেষ বৈশিষ্ট্যসমূহ:

Motrac M3 বাইকটিতে কিছু আকর্ষনীয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে যার অনেকটা আমরা পূর্বেই আলোচনা করে ফেলেছি। আপনি লক্ষ্য করে দেখবেন যে বাইকটির আকার ঢাকা শহরের মতো অতি ব্যস্ত শহরে চালানোর জন্য যথার্থই বটে। এর ৭৫৪মিমি উচ্চতার সিটের অবস্থানের কারনে এটা ব্যস্ত শহরের ভীড়ের মধ্যে দিয়ে চালানো সহজ। আর ৫’-৫’.৬” উচ্চতার চালক খুব সহজেই ভীড়ের মধ্যে মাটিতে পা রেখে ঠেলে ঠেলে এগিয়ে যেতে পারবে। কিন্ত ৫’.৬” উচ্চতার বেশী লম্বা চালকের জন্য এটা চালানো কষ্টকর, যেখানে মোঁড় নেয়া আর বাঁক ঘোরাতে গেলে তাদের হাটুতে হাত ও হ্যান্ডেল আটকে যাবে। এই উচ্চতাজনিত সমস্যা ছাড়া এটা চালানো আসলেই যথেষ্ট উপভোগ্য। আর এটা আসলেই এমন ধরনের একটা বাইক যেরকমটা আপনি আগে কখনো আমাদের দেশের রাস্তায় দেখেননি।

Motrac M3 বাইকটির দুটো চাকাই বিস্তৃত আর চমৎকারভাবে খাঁজকাটা যেটা সহজেই এর রাস্তা আঁকড়ে ধরে রাখার সক্ষমতা প্রকাশ করে। আর মোটা টায়ার দুটোই টিউবলেস, ফলে অযথোচিত আচমকা টায়ার লিক হবার দুশ্চিন্তা বা ঝামেলা নেই। M3 বাইকটির দুটো চাকাতেই হাইড্রলিক ডিস্ক সংযুক্ত ফলে আত্যন্ত কার্যকরী ব্রেকিং আশা করা যায়।

লক্ষ্য করে দেখবেন Motrac M3 বাইকটির সামনে রয়েছে টেলিস্কোপিক সাসপেনশন যা অন্যান্য উন্নতমানের বাইকের মতো যথেষ্ট মোটা আর উল্টানো ধরনের, আর পেছনে মনো সাসপেনশন সহ সব মিলিয়ে চমৎকার আরামপ্রদতা আর নিয়ন্ত্রনযোগ্যতা আশাই করাই যায়। এই M3 বাইকটি বাহ্যিক নিরীক্ষার সময় যদিও আমরা মাত্র ১০কিমি চালানোর সুযোগ পেয়েছিলাম তবু আমরা টিম বাইক-বিডি এই বাইকটি আমাদের বিস্তৃত টেষ্ট-রাইডের মাধ্যমে পরীক্ষা করতে খুবই আগ্রহী, যাতে আমরা বাস্তব নিরীক্ষামুলক পর্যালোচনা আমাদের পাঠকদের মুল্যায়নের জন্য তুলে ধরতে পারি। তবে এর বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য বিচারে আপাতদৃষ্টিতে আশা করা যায় এটা একটা কার্যকরী ব্রেকিং, নিয়ন্ত্রন ও আরামপ্রদতার এক চমৎকার সমন্বয় হতে পারে।

Motrac M3 এর নিয়ন্ত্রন ডিসপ্লে সম্পুর্ণ ডিজিটাল, আর অনেকটা Honda CB Trigger  এর মতো। আর এর অন্যতম অবাক করে দেবার মতো বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর প্রজেকশন হেডলাইট যেটা খুব কম মোটরবাইকেই দেখা যায়। আরো অনন্য বিষয় হচ্ছে এর নিচু ও উচু আলোর ফোকাসের জন্য আলাদা আলাদা প্রজেকশন লাইটের ব্যবহারের বিষয়টা। আর M3 এর হ্যান্ডেলবারে পজিশন অনেকটা দেহের আনুভুমিক, ফলে চালককে তার কনুই স্বাভাবিক ভাঁজ করে রাখতে হয়, যেটা কিনা লম্বা পথে দীর্ঘ সময় সহজে ক্লান্তিহীনভাবে চালানোর উপযোগী।

আমরা Motrac M3 বাইকটি চালিয়ে দেখার সময় লক্ষ্য করেছি যে এর একজষ্ট এর শব্দটা যথেষ্ট কর্কশ, অনেকটা স্পোর্টস বাইকের মতো। তবে যদিও আমরা নিজেরা পরীক্ষা করে দেখতে পারিনি তবু কোম্পানী দাবী করেছে যে M3 বাইকটি ১১০কিমি/ঘন্টা গতি তুলতে পারে আর ঢাকা শহরের মতো ভীড়বহুল পথে ৫৫-৬০কিমি/লিটার মাইলেজ দেবে। আমরা ধারনা করতে পারি যে এরকম গতি ও মাইলেজ কেবল EFI এর কারনেই নিশ্চিত করা সম্ভব যেখানে ECU তেলের যোগান নিয়ন্ত্রন করে। এখানে আপনাদের আবারো বলতে হয় যে Motrac M3 বর্তমানে একমাত্র বাইক যাতে EFI ব্যবহার করা হয়েছে যা কিনা লক্ষ্য করার মতো গতি ও মাইলেজ দিতে পারে।

লক্ষ্যনীয় বিষয়:

Motrac M3 বাইকটি কার্যত একটি আঁটেসাঁটো ছোট বাইক যা গ্রামে-গঞ্জে, শহরে যেকোনখানে একা চালানোর জন্যই ডিজাইন করা; অনেকটা Café Racer  বাইকগুলোর মতো। যদিও এতে দুজন বসার মতো পেছনের সিট ও আছে, তবু দুজন স্বাস্থ্যবান মানুষ এতে বসে ঘুরে বেড়ানো আরামদায়ক হবে না। বরং প্রাত্যহিক কাজে একা চালানোরই উপযোগী।

এছাড়াও একটা পকেট বাইকের আকার বিচারে M3 বাইকটি যথেষ্ট ভারী। বরং ওজনে আরো একটু হালকা হলে ওজন অনুপাতে শক্তি উৎপাদনের মাত্রা আরো ফলদায়ক হতো।

এবার দেখা যাক Motrac M3 বাইকটির Technical Specifications এর দিকে

EngineSingle Cylinder, Four Stroke, Air Cooled Engine
Displacement125cc
Compression Ratio9.5:1
Maximum Power9.1 BHP @ 7000 RPM
Maximum Torque9.5 NM @ 5000 RPM
Fuel SupplyEFI Controlled
IgnitionCDI
StartingElectric only
Transmission4 Gear
Dimension (Length x Width x Height)1620mm x 560mm x 880mm
Wheelbase1204mm
Saddle Height754mm
Suspension (Front/Rear)Inverted Telescopic/ Mono shock absorber
Tire (Front/Rear)Front 120/70-12, Rear 120/70-12; Both Tubeless
Brake (Front/Rear)220mm disk / 190mm disk; Both hydraulic
Fuel Capacity:5.5 Liters
Net Weight127 Kg
Max. Load Capacity150 Kg
Max. Speed+/- 110Kmph
Fuel Efficiency+/-  55-60
Country of originHongkong
Distributed byMax Motors Limited

পরিবেশক কর্তৃক প্রদত্ত সুবিধা সমূহ: 

ম্যাক্স মোটরস লিমিটেড তাদের Motrac M3 বাইকটির বিক্রয় মূল্য রেখেছে ১,৮৫,০০০ টাকা। আর এই বাইকটি ক্রয়ের ক্ষেত্রে তারা ডাচ্ বাংলা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও ব্রাক ব্যাংকের মাধ্যমে ০% সুদে কিস্তিতে কেনার সুযোগ দিচ্ছে। আর সবকটি ব্যাংকই এক্ষেত্রে ৩-২৪ মাসের কিস্তি সুবিধা দিচ্ছে।

এছাড়াও প্রতি Motrac M3 বাইক ক্রেতা তাদের বাইকে ৩ বৎসরের অথবা ১২,০০০কিমি পর্যন্ত ইঞ্জিন ওয়ারেন্টি পাবেন। আর ঢাকা শহরের ক্ষেত্রে প্রথম বছর অথবা প্রথম ১০,০০০কিমি পর্যন্ত ক্রেতা ৫টি ফোন কলের মাধ্যমে ফ্রি সার্ভিস পাবেন। আর সব ক্ষেত্রে গ্রাহক ওয়ারেন্টি সময়ে ৮টি পর্যন্ত ফ্রি সাভিস পাবেন।

তো বন্ধুরা এই ছিল আমাদের Motrac M3 বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা । আশা করছি আপনারা অন্তত M3 বাইকটা সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারনা পেয়েছেন। আপনারা M3 বাইকটা নিয়ে আপনাদের ভাবনা ও পরামর্শ নীচের মন্তব্যের মাধ্যমে আমাদের জানাতে পারেন। ধন্যবাদ সবাইকে।

Showroom Address:

Max Motors LTD. 218/B Tejgaon Industrial Area, Dhaka. Hotline:019 6666 2626

Published by Shuvo Bangla