Shares 2
Lifan KPR 165R টেস্ট রাইড রিভিউ - টীম বাইকবিডি
Last updated on 08-Jul-2024 , By Saleh Bangla
বাংলাদেশে কম বাজেট বা কম দামে সবচেয়ে জনপ্রিয় স্পোর্টস বাইক হচ্ছে লিফান কেপিআর ১৫০ । যদিও বাইকটি চাইনিজ বাইক তবে লিফান এ ক্ষেত্রে তাদের ডিজাইন খুবই ইউনিক রাখার চেষ্টা করা হয়েছে । তাদের নিজস্ব আর এন্ড ডি ডিপার্টমেন্ট সব সময় চেষ্টা করে যাচ্ছে ইউনিক ও গুড লুকিং ডিজাইনের স্পোর্টস বাইক তৈরি করার । তাই আজ আমরা চেষ্টা করেছি ১৬০সিরিজের অন্যতম স্পোর্টস বাইক যা এসেছে ১৬৫সিসি ইঞ্জিন বিশিষ্ট হয়ে । চলুন শুরু করা যাক Lifan KPR 165R টেস্ট রাইড রিভিউ বাই টিম বাইকবিডি।
Lifan KPR 165R টেস্ট রাইড রিভিউ - টীম বাইকবিডি
Lifan KPR 165R - ইঞ্জিন এই বাইকটির ইঞ্জিন হচ্ছে সিঙ্গেল সিলিন্ডার, দুই ভালভ , লিকুইড কুল্ড ইঞ্জিন । ইঞ্জিনের সাথে ৬ স্পিড গিয়ার বক্স যুক্ত করা হয়েছে গিয়ার ট্রান্সমিশনের জন্য । এই ইঞ্জিন থেকে প্রায় ১৬.৮ বিএইচপি শক্তি এবং ১৭ এনএম টর্ক উৎপন্ন করে থাকে।
যদিও ইঞ্জিন থেকে হালকা ভাইব্রেশন আসে, তবে সেটা মানিয়ে নিতে কষ্ট হয় না। বাইকটির ইঞ্জিনে যুক্ত করা হয়েছে ইএফআই, তাই এর ইঞ্জিন কেপিআর১৫০ থেকে অনেক বেশি স্মুথ হয়েছে । ব্যক্তিগত ভাবে আমার কাছে ইঞ্জিনের সাউন্ড বেশ ভাল লেগেছে । প্রথম দিকে গিয়ারবক্স একটু হার্ড হবে, তবে ২০০০ কিলোমিটার এরপর এটি নরম হয়ে যাবে ।
Lifan KPR 165R - ডিজাইন ও লুকস বাইকের লুকস এর ক্ষেত্রে সেভাবে লিফান কোন চেঞ্জ নিয়ে আসেনি । লিফান কেপিআর ১৫০ এর মতই লুকস দেয়া হয়েছে । বাইকের সবচেয়ে আকর্ষনীয় দিক হচ্ছে এর এলইডি প্রোজেকশন হেডলাইট । এই হেডলাইটের কারনেই বাইকটিকে এই সেগমেন্টের অন্যান্য বাইক থেকে আলাদা ভাবে চেনা যায় ।
এই বাইকটির সবচেয়ে সুন্দর দিক হচ্ছে এর এগ্রেসিভ লুকস । এছাড়া বাইকটির স্যাডেল হাইট মাত্র ৭৭৫মিমি হওয়াতে সব ধরনের রাইডারদের জন্য কমফোর্টেবল । এমনকি যাদের হাইট ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি বা ৬ ফিট এর মত তারা সবাই কমফোর্টেবল ভাবে রাইড করতে পারবেন । কেপিআর ১৬৫আর এর টেইল লাইট হচ্ছে পুরোপুরি এলইডি । তবে হতাশাজনক ভাবে কথা হচ্ছে যে তারা ইন্ডিকেটর লাইটস গুলো চেঞ্জ করেনি । আগের মতই ইন্ডিকেটর গুলো দেয়া হয়েছে, তবে তারা এলইডি ইন্ডিকেটর যুক্ত করতে পারতো । স্পিডোমিটার ডিজিটাল মিটার সাথে এনালগ আরপিএম কাউন্টার দেয়া হয়েছে । স্পিড ইন্ডিকেটর এর ফন্ট খুবই ছোট, এটা আর একটু বড় ফন্টের হতে পারতো ।বাইকের ফুয়েল ট্যাঙ্ক পুরোপুরি মেটাল, অপরদিকে যে কিট গুলো যুক্ত করা হয়েছে সেসব হচ্ছে প্লাস্টিক । তবে প্লাস্টিক এর কোয়ালিটি নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই, এটি যথেষ্ট শক্ত । বাইকটি কমপ্যাক্ট এবং স্লিম হওয়ার কারনে লো হাইটের ও কম স্বাস্থ্য সম্পন্ন মানুষ বাইকটি প্রতিদিনের রাইডের জন্য ব্যবহার করতে পারবেন ।
Lifan KPR 165R - চাকা, ব্রেক, টায়ার ও সাসপেনশন টায়ারের সাথে ১৭ ইঞ্চি এর এলয় হুইল গুলো ভাল ভাবেই ফিডব্যাক দেয় । বাইকের দুটো চাকাই টিউবলেস টায়ার । হ্যান্ডেল বারের পজিশন এগ্রেসিভ না হলেও , একটা স্পোর্টি ফিল দেয় ।
বাইকটির সামনের দিকে ৯০ সেকশন টায়ার এবং পেছনের টায়ার হচ্ছে ১২০ সেকশন । এখানেই লিফান কিছুটা হতাশ করেছে, তারা ১৩০ সেকশন টায়ার যুক্ত করতে পারত । এতে রিয়ার টায়ারের গ্রিপ আরো ভাল হতো । বর্তমানে ধুলাবালি ও নুড়ি পাথড় বিছানো পথে সেভাবে গ্রিপ দেয় না । তবে, বর্তমানে যেসব লিফান কেপিআর ১৬৫আর বাংলাদেশে আসছে তার সবগুলোতেই সিএসটি টায়ারের পরিবর্তে টিমসান এর টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে। বাইকটি ১৫০ কেজি হওয়া সত্ত্বেও লিফান বাইকটিতে বেশ ভালো পরিমানে শক্তি টর্ক প্রদান করেছে । এর সাথে লিফান যুক্ত করেছে ফ্রন্টে ৩০০মিমি ডিস্ক ব্রেক এবং স্ট্যান্ডার্ড সাইজের রইয়ার ডিস্ক ব্রেক । তবে বলতেই হচ্ছে বাইকটির ব্রেকিং তারা দারুন করেছে । মার্কেটে অনেক ক্ষমতা সম্পন্ন বাইকই রয়েছে, যাদের অনেকেইবে ব্রেকিং এর ক্ষেত্রে গিয়ে একটু নড়বড় করে ফেলে, আর এখানেই লিফান কেপিআর ১৬৫আর অন্যদের চেয়ে এগিয়ে আছে ।
লিফান ফ্রন্টে ব্যবহার করেছে ৩৭মিমি টেলিস্কোপিক সাসপেনশন এবং পেছনে ব্যবহার করেছে মনোশক । ফ্রন্ট সাসপেনশন ভাল ফিডব্যাক দিলেও রিয়ার সাসপেনশন পিলিয়ন নিয়ে রাইড করলে একটু সমস্যা হতে পারে । তবে রিয়ার সাসপেনশন অনেক বেশি হার্ড তাই এটি খারাপ রাস্তায় খুব কমই ফিডব্যাক দেয় ।
Lifan KPR 165R - রাইডিং অভিজ্ঞতা বাইকটির রাইডিং পজিশন ভাল হওয়ার কারনে, রাইড করার সময় বা পরে ব্যাক পেইন হয় না । তবে পিলিয়ন সিট কমফোর্টেবল নয় কারন রিয়ার টায়ার একটু হার্ড, তবে ফ্রন্ট সাসপেনশন ভাল ফিডব্যাক দেয় । বাইকটি স্লিম হওয়ার কারনে বাইকটি পার্ক ও মুভ করা অনেক সহজ, তবে এর টার্নিং রেডিয়াস মোটামুটি।বাইকটি ০-১১০ কিলোমিটার গতি খুব দ্রুত তুলতে পারে। এর গতি খুব দ্রুত ১১০কিলোমিটার এ উঠে যায়, তবে এরপর গতি তুলতে একটু কষ্ট হয় । তারপরও আমরা স্পিডোমিটারে সর্বোচ্চ ১৩৮কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় স্পিড তুলতে সক্ষম হয়েছি । বাইকটি ফাস্ট এক্সেলারেশন এর অন্যতম কারন হচ্ছে এর টর্ক, এই টর্কের কারনে বাইকটির ১৫০ ওজনের হওয়া সত্ত্বেও খুব সহজেই রাইড করা যায় । বাইকের ব্রেকিং নিয়ে সন্তুষ্ট । তারা এই ব্রেকিং এর দিকটা অনেক বেশি উন্নত করেছে, তবে আমার মনে হয় যদি তারা ১৩০ সেকশন টায়ার যুক্ত করত তাহলে কর্নারিং এর ক্ষেত্রে অনেক বেশি ভাল হতো । অপর দিকে রিয়ার টায়ারের গ্রিপ এতোটা ভালো নয়, আপনি অনুভব করতে পারবেন যখন বাইকটি এক্সেলারেট করবে তখন অনেক সময় ইঞ্জিন থেকে বের হওয়া টর্ক এর শক্তি রেয়ার টায়ার তার লোড নিতে একটু কষ্ট হয় ।
বাইকের ইঞ্জিন মাঝে মাঝে ওভারহিট হয়ে পরে, তবে সেটি কিছু ক্ষেত্রে এটি কমফোর্টেবল নাও হতে পারে । তবে এটি বাইকের পারফর্মেন্স এর ক্ষেত্রে তেমন কোন প্রভাব ফেলবে না । অন্যদিকে মাঝে মাঝে চেইন লুজ হয়ে যেতে পারে । আমরা বাইকের মাইলেজ পেয়েছি ৩৮ - ৪০ কিমি/লিটার ঢাকা সিটিতে, অপর দিকে ৪২ - ৪৪ কিমি/লি পেয়েছি ঢাকা সিলেট হাইওয়েতে। যেহেতু বাইকটির ইঞ্জিন EFI ইঞ্জিন তাই আপনাকে সব সময় মনে রাখতে হবে যে ভাল কোয়ালিটির ফুয়েল ব্যবহার করবেন । টেস্ট রাইড এর সময় আমরা এর টপ স্পিড পেয়েছি ১৩৮ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা, তবে এটিও দুঃখজনক । কারণ লিফান কেপিআর ১৫০ এর ক্ষেত্রেও আমরা টপস্পিড পেয়েছি ১৩২ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা ।
আমরা যে বাইকটি টেস্ট করেছি সে বাইক গুলো হচ্ছে লিফান কেপিআর ১৬৫আর এর প্রথম ভার্সন বা প্রথম দিকে যে বাইক গুলো এসেছিল । বর্তমানে বাংলাদেশে যেসব বাইক নিয়ে আসা হচ্ছে তাদের বেশির ভাগ বাইকেই টিমসান টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে সিএসটি টায়ার এর বদলে । রাসেল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড বলছে যে, তারা নতুন ভাবে ECU ম্যাপিং করবে Lifan KPR 165R বাইকে, যাতে করে বাইকাররা আরপিএম লিমিট আনলক করতে পারে। এবং, এরফলে বেটার টপ স্পিড পাবে বলে ধারনা করছি ।
রাসেল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড সকল লিফান কেপিআর ১৫০ এবং কেপিআর ১৬৫আর ব্যবহারকারীদের পরামর্শ দিচ্ছে । যাতে তারা ১০০০ কিমি এর পরে ই বাইকের কুলেন্ট পরিবর্তন করেন । মটুল বা ক্যাস্ট্রোল এর কুলেন্ট ব্যবহার করাই ভালো । আমাদের টেস্ট রাইডের সময় আমরা সিন্থেটিক ওয়েল ব্যবহার করেছি এবং ২০০০ কিমি এর পর গিয়ার স্মুথ হতে শুরু করেছিল । Lifan KPR 165R - সারকথাভালদিক
- ০ - ১১০ খুব দ্রুত এক্সেলারেট করে থাকে
- হেডলাইটের পাওয়ার অনেক ভাল
- উচ্চ গতিতে ব্রেকিং ও কন্ট্রোলিং অনেক ভাল
- কর্নারিং এবিলিটি দারুন, তবে ১৩০ সেকশন টায়ার হলে আরো ভাল হতো
- EFI প্রযুক্তি বাইকটিকে অনেক স্মুথ করেছে
খারাপ দিক
- ইঞ্জিন ওভারহিট করে, যা পুরো ফুয়েল ট্যাংক পুরোপুরি গরম করে তোলে
- রিয়ার সাসপেনশন পিলিয়ন নিয়ে রাইড করার জন্য ভাল নয়
- বাইকের চেইন তাড়াতাড়ি লুস হয়ে যায়
- টর্ক এর শক্তি সামলানোর জন্য ১৩০ সেকশন টায়ার প্রয়োজন
- টপ স্পিড কিছুটা হতাশাজনক
লিফান কেপিআর ১৫০ টেস্ট করে আমরা বুঝতে পারি যে ৭ বছর চাইনিজ বাইকগুলো আগে যেমন ছিল তেমন নেই, লিফান কেপিআর ১৬৫আর সেই উন্নতির ধারা বজায় রেখেছে । যদিও বাইকটির মুল্য ধরা হয়েছে ২১৯,৯০০/- টাকা, যা একটু হাই তবে রেডি পিক আপ থাকার কারনে থ্রটল টুইষ্ট করার সাথে সাথে আপনি সারপ্রাইজ হবেন । আমরা ধন্যবাদ জানাতে চাই গিয়ারএক্স আমাদের এক্সেসরিজ পার্টনার, নিটল ইন্স্যুরেন্স আমাদের ইন্স্যুরেন্স পার্টনার এবং টুরিনো টায়ার আমাদের টায়ার পার্টনার যারা পুরো টেস্ট রাইড রিভিউতে আমাদের সাথে ছিল ।
T
Published by Saleh Bangla