Shares 2
Lifan KPR 165R EFI NBF2 ৩০০০ কিলোমিটার রাইড - তিতুমীর আরাফাত
Last updated on 15-Jul-2024 , By Ashik Mahmud Bangla
Lifan KPR 165R EFI NBF2 ৩০০০ কিমি রাইড
আমি তিতুমীর আরাফাত। আমার নিজের এলাকা জয়পুরহাট, চাকরির জন্য সাভারে থাকি। আমার প্রথম বাইক Lifan KPR 165R EFI NBF2 আজ আমি আমার এই বাইকটির ব্যাপারে কিছু কথা বলবো। বাইকটি এখন পর্যন্ত আমি ৩০০০ কিলোমিটার রাইড করেছি। এই ৩০০০ কিলোমিটার চালানোর পর আমার কাছে বাইকটি যেমন মনে হয়েছে ঠিক তেমন উপস্থাপন করলাম।
আমার বাবা পেশায় একজন চিকিৎসক তিনি তার পেশার জন্য এবং ব্যাক্তিগত কাজের জন্য বাইক ব্যবহার করেন আর সেটা আমি আমার ছোটবেলা থেকেই দেখতেছি। ছোটবেলা থেকেই বাবার বাইকের ট্যাংকে বসে অনেক ঘোরাফেরা করছি। আর সেইখান থেকেই আমার বাইকের প্রতি ভালোবাসা জন্ম নেয়। মনের মধ্যে স্পোর্ট বাইক কেনার ইচ্ছেটা প্রায় অনেক ছেলেদের ই থাকে আমিও তাদের ব্যাতিক্রম না।
কিন্তু বাজেট বলে কিছু একটা বাধা থেকেই যায়। তো ইউটিউব ফেসবুক সবকিছু অনেক ঘাটাঘাটি করে Lifan KPR বাইক আমার নজরে পরে। তারপর পেলাম Club KPR Bangladesh গ্রুপ, বাইক কেনার আগের ৩মাস ইউটিউবে KPR নিয়ে এমন কোন ভিডিও নেই যেটা আমি দেখিনি। প্রতিদিন ইউটিউবে KPR নিয়ে সার্চ করতাম। আর ফেসবুক প্রতিদিন যতবার ওপেন করি ঠিক ততবার ই Club KPR Bangladesh গ্রুপে একবার করে পোস্ট চেক করি।
পজেটিভ নেগেটিভ সবকিছুই KPR সম্পর্কে জানলাম। নেগেটিভ এর চেয়ে পজেটিভ দিক গুলো ই আমার মন কেড়ে নেয় এই KPR। সবকিছু মিলিয়ে ইঞ্জিন পাওয়ার, কম্ফোর্ট, লুকস KPR ছাড়া অন্য কোন বাইক আমার চাহিদাটা মেটাতে সক্ষম ছিলোনা তাই KPR আমার বেছে নেওয়া। আমি যখন বাইকটি কিনি তখন Lifan KPR 165R EFI NBF2 এর বাজার মুল্য ছিল ২,১০,০০০ টাকা, বাইকটি কিনেছিলাম Gearx Bangladesh থেকে।
বাইকটি যেদিন আমি কিনতে যাই সেদিন আমার অফিস খোলা ছিলো আমি ছুটি পেলেও আমার রুমমেট ছুটি পায়নি তাকে সাথে নিয়ে যাবার ইচ্ছেটা অনেক ছিলো তো আমি আর আমার এক কলিগ রওনা হই বাইক নেবার উদ্দেশ্যে। বাইক কেনার পর প্রথম চালানোর অনুভূতি টা আসলে কখনোই বলে বোঝানো যাবেনা এইটা আপনি বাইক না কেনা পর্যন্ত কখনোই উপলদ্ধি করতে পারবেন না। বলে রাখা ভালো আমি বাইক কেনার আগে কখনোই এই KPR বাইক টেস্ট রাইড দেবার সুযোগ পাইনি। এমনকি বসেও দেখার সুযোগ পাইনি যে সিটিং পজিশনটা কেমন আমার জন্য।
শোরুমে বাইক রেডি করার পর নিজের বাইকে নিজেই প্রথম টেস্ট রাইড দিলাম। এটার একটা আলাদা অনুভূতি আছে এটা বলতেই হয়। বাইক কিনতে যাবার আগে ভাবছিলাম একবার টেস্ট রাইড ও দিলাম না কি যে হয় এই চাইনিজ কে নিয়ে যেহেতু চাইনিজ মানেই মুড়ির টিন অনেকেই বলতো। তবে Lifan KPR 165R EFI NBF2 টেস্ট রাইড দেবার পর সব দ্বিধা ক্লিয়ার হয়ে যায় বাইকে বসে প্রথম অবস্থায় ইঞ্জিন ব্যাতিত বাকি সবকিছু আমার চাহিদা পুরুন করতে সক্ষম।
(ইঞ্জিন ব্যাতিত বলার কারন তখন আমার বাইকের ব্রেকিং পিরিয়ড শুরু তখন ইঞ্জিনের পার্ফরমেন্স কেমন সেটা চেক করার সময় না ।) আমার বাইক চালানোর পেছনে মুল কারন হলো আমি বাইক রাইডিং অনেক ভালোবাসি আর KPR চালানোর পেছনে মুল কারন হলো এই বাজেটে এর থেকে আর বেশিকিছু পাওয়া যায়না। KPR না থাকলে এই বাজেটে এই বাইক কেউ হয়ত কল্পনাও করেনি। KPR এর সব ফিচারের মধ্যে একটা হলো এর প্রজেকশন হেড লাইট, এক কথায় দুর্দান্ত আলো দেয় এই হেডলাইট, হাইওয়েতে রাতে রাইডিং এর সময় আমার কখনো আলো শুন্যতায় ভুগতে হয়নি।
বাইক কেনার পর প্রত্যেক বাইকেই ব্রেকিং পিরিয়ড থাকে। ব্রেকিং পিরিয়ডে যখন চালাতে ছিলাম তখন আমি বুঝতে পারিনি যে আমার বাইক ব্রেকিং পিরিয়ডে। ব্রেকিং পিরিয়ডে প্রায় যে কোন বাইকে যেটা দেখা যায় ক্লাচ হার্ড, গিয়ার শিফটিং স্মুথ না। কিন্তু আমি ব্রেকিং পিরিয়ডে এইটা কখনো ফিল করিনি যে আমার বাইকের ক্লাচ হার্ড কিংবা গিয়ার শিফটিং হার্ড। প্রতিনিয়ত অফিস শেষে ৫কিলোমিটার হলেও প্রতিদিন বাইক রাইড করি। Lifan KPR 165R EFI NBF2 রাইড করার সময় এই বাইক মাখন ছাড়া আর কিছু মনে হয়না। একটা চাইনিজ বাইক এইরকম স্মুথ হয় আগে জানা ছিলোনা। এখন এমন ও হয় মাঝে মাঝে বাইক কত rpm এ কত গিয়ারে আছে এইটা বুঝতে পারিনা ওডো মিটারে না দেখলে। এর কারন nbf2 ইঞ্জিনের স্মুথনেস। কিছু কিছু বাইক আছে প্রথম গিয়ারে rpm বেশি দিলে ভাইব্রেশন হয় তবে KPR এর ডিকশনারিতে হয়তো ভাইব্রেশন নামক শব্দটি নেই।
Lifan KPR165R NBF2 Test Ride Review
আমার বাইক এই ৩০০০ কিলোমিটারে দুই বার সার্ভিস করিয়েছি। ৫০০ কিলোমিটারে একটা ফুল সার্ভিস করিয়েছি আর ১৩০০ তে সাধারণ একটা সার্ভিস করিয়েছি। ১৩০০তে এত দ্রুত সার্ভিস করেছিলাম কারন ৮০০ কিলোমিটারে ছোট একটা ট্যুর দিয়েছিলাম। ১ম সার্ভিস অপরিচিত একটা সার্ভিস সেন্টার থেকে করিয়েছিলাম আর ২য় সার্ভিস Moto tech, Savar থেকে করিয়েছিলাম। আমি আমার বাইকের ফ্রি সার্ভিস গুলো করাতে পারিনা কারন সপ্তাহের শুক্রবার লিফান এর অফিসিয়াল সার্ভিস সেন্টার বন্ধ থাকে সাথে আমার অফিস ও। রাসেল ইন্ড্রাস্টির উচিত শুক্রবার সার্ভিস সেন্টার খোলা রেখে সপ্তাহের অন্যান্য যে কোন এক দিন বন্ধ রাখা।
২৫০০ কিলোমিটার এর আগে ৮০০কিলোমিটার জরুরি কাজে বাসায় যাবার পথে ব্রেকিং পিরিয়ডেই হাইওয়েতে আমি মাইলেজ পাই ৪৭+ কিলোমিটার প্রতি লিটার। আর এখন পাচ্ছি ৪৪+ কিলোমিটার প্রতি লিটার। মাইলেজ কমে যাবার কারন হলো ফ্রি ফ্লো এক্সহস্ট ইন্সটল করেছি। বাইক চাইনিজ হোক বা জাপানিজ অথবা ইন্ডিয়ান একটা বাইকের টেকসই এবং পারফরম্যান্স ডিপেন্ড করে আপনি আপনার বাইকের প্রতি কেমন যত্নবান। আমি আমার বাইকের প্রতি অনেক যত্নশীল সবসময় বাইক পরিষ্কার পরিছন্ন রাখতে ভালোবাসি।
Lifan KPR 165R EFI NBF2 যেহেতু লিকুইড কুলড ইঞ্জিন তাই ৫০০কিলোতে আমি আমার স্টকের কুলেন্ট পরিবর্তন করে Motul Motocool expert ব্যবহার করি। এতে ইঞ্জিনের হিটিং কিছুটা কমে যায়।
আমি Motul 3000 20w40 গ্রেডের মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যাবহার করি। এই ৩০০০ কিলোমিটারে আমি ৮বার ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করি। তবে খুব শীঘ্রই সিন্থেটিক ব্যাবহার করবো। এখনো বাইকের কোন পার্টস পরিবর্তন এর প্রয়োজন হয়নি তবে দুইটা জিনিষ মডিফাই করেছি -
- বাইকের হর্ন
- এক্সহস্ট
তবে স্টকে থাকলেও পারতাম। স্টক হর্নে একটু শব্দ কম যেটা হাইওয়েতে ট্যুরে একটু প্রব্লেম করে। স্টক এক্সহস্ট এ কোন সমস্যা নেই। হর্ন লাগিয়েছি Denso এবং এক্সহস্ট লাগিয়েছি KP moto exhaust। ঈদে বাসা থেকে ফেরার পথে যমুনা সেতুতে টপ স্পিড তোলার চেষ্টা করেছিলাম সেখানে আমি টপ স্পিড পেয়েছি ১২৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। আরো উঠবে তবে চেষ্টা করিনি কারন তখন ২৩০০ কিলোর মত চলছিলো তাই ভাবলাম ইঞ্জিনে প্রেশার দেয়া ঠিক হবেনা। প্রত্যেকের উচিত ৪০০০ কিলোমিটার চালানোর পর টপ স্পিড চেক করা।
কোন বাইক পরিপূর্ণ না আবার খারাপ ও না । তাই এই Lifan KPR 165R EFI NBF2 এ রয়েছে ভালো দিক এবং খারাপ দিক। চলুন আলোচনা করি কিছু ভালো খারাপ দিক নিয়ে । বাইকটির কিছু ভালো দিক -
- ইঞ্জিনের স্মুথনেস
- কন্ট্রোলিং
- ইঞ্জিন পাওয়ার
- ব্রেকিং
- সিটিং পজিশন
- অয়েল ফিল্টার
- লুকস
বাইকটির কিছু খারাপ দিক -
- হিটিং ইস্যু। লিকুইড কুলড ইঞ্জিন হবার স্বত্ত্বেও এর ইঞ্জিন হিট হয় ।
- হর্ন। ব্যাক্তিগত ভাবে KPR এর স্টকে আসা হর্ন তেমন কাজের না। হাইওয়েতে খুব ভালো সাপোর্ট দেয়নি আমাকে।
- স্টক টায়ার এর গ্রিপ শুকনো রাস্তায় ভালো দিলেও ভেজা কিংবা কাদা রাস্তায় ভালো গ্রিপ দেয়না।
- রেয়ার সাসপেনশন। পিলিয়ন হিসেবে সিটে যেই ই বসেছে রাস্তা একটু খারাপ হইলে রেয়ার সাসপেনশন থেকে ভালো ফিডব্যাক পাইনি।
- স্টক লুকিং গ্লাস আরেকটু ভালো করতে পারতো।
- স্টক চেইন ৪০০ - ৫০০ কিলোমিটার পর লুজ হয়।
ব্যক্তিগত ভাবে 3part হ্যান্ডেলবারে বাইক রাইড করতে আমার ভালো লাগে। Lifan KPR 165R EFI NBF2 এ বসে যখন হ্যান্ডেলবার ধরি আর চালাই তখন আমি অনেক বেশি কনফিডেন্ট পাই। একটু বেশিই স্মুথ, ভাই না রাইড করলে কখনো বুঝতে পারবেন না।
Lifan KPR 165R EFI NBF2 তে ১৭ বিএইচপি এবং ১৭ নিউটনমিটার টর্ক শক্তি উৎপন্ন করে থাকে। এই পাওয়ারফিগার আপনি বেশ ভালোভাবে ফিল করবেন যখন আপনি হাইওয়েতে বাইক রাইড করবেন। সামনে ৩০০মিমি এর ডিস্ক ব্রেক, যেটা আমাকে সত্যিই ABS এর অভাব পূরন করছে। আমার হাইট ৫" ৫। সিটিং পজিশন আমার হাইট অনুযায়ী অনেক কম্ফোর্ট। ৮০০কিলোমিটারে এবং ১৬০০ কিলোমিটারে ২৫০ কিলোমিটারের একটা টুর দিয়েছিলাম আমি বসে থাকতে বিরক্তবোধ করিনি এই ২৫০ কিলোমিটারে ৪বার রেস্ট দিয়েছি ইঞ্জিন ঠান্ডা হবার জন্য যেহেতু নতুন ইঞ্জিন। KPR 165R EFI NBF2 এর অয়েল ফিল্টার কখনো পরিবর্তন করা লাগেনা এইটা শুধু পরিষ্কার করলেই হয়। KPR 165R EFI NBF2 এর ফুয়েল ট্যাংকে ১৬.৮ লিটার ফুয়েল ধরে। সুতরাং ছোটখাটো ট্যুর দিলে ফিরে এসে একই পাম্প থেকে ফুয়েল নিতে পারবেন। লিফান কেপিআর এর লুকস একদম ইউনিক ডিজাইন লাগে আমার কাছে।
লিকুইড কুলড ইঞ্জিন হবার সত্যেও এর ইঞ্জিন হিট হয়। প্রথম ৫০০ কিলোমিটার এর মধ্যে যেই হিটিং ইস্যু ফেইস করছি সেইটা এখন আর নেই অনেক কমে গেছে আশাকরি ৩০০০কিলোমিটার এর পর আর থাকবেনা। জ্যামে ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে রাখলে অনেক বেশি হিট ফিল করবেন। কিন্তু হাইওয়েতে চালালে পাবেন না।
টায়ার,স্টকে এর সাথে সামনে ৯০সেকশন এবং পিছনে ১৩০সেকশনের রেডিয়াল টায়ার দেয়া হইয়েছে যেটার গ্রিপ শুকনো রাস্তায় ভালো দিলেও ভেজা কিংবা কাদা রাস্তায় ভালো গ্রিপ দেয়না। যদিও স্পোর্টস বাইক কাদায় চালানোর জন্য না। পিলিয়ন সিটে আজ অব্দি আমার বসা হয়নি তাই নিজের ব্যাক্তিগত কোন অভিজ্ঞতা নেই। তবে পিলিয়ন হিসেবে সিটে যেই ই বসেছে রাস্তা একটু খারাপ হইলে রেয়ার সাসপেনশন থেকে ভালো ফিডব্যাক পায়নি। স্পোর্টস বাইক পিলিয়নের চিন্তা করে কখনো তৈরি করা হয়না। ১৭ বিএইচপি এবং ১৭ নিউটন মিটার টর্কের অনুভূতি আপনাকে চাকায় পৌঁছে দেবার জন্য চেইনের উপর অনেক বেশি প্রেশার পরে তাই স্টক চেইন অনেক বেশি লুজ হয়।
এই বাইকের ৩০০০ কিলোমিটারের মধ্যে ১০০০কিলোমিটার আমার লং রাইড করা। নতুন ইঞ্জিন হবার স্বত্ত্বেও কোন দিক দিয়ে লং রাইডে আমাকে হতাশ করেনি। সবশেষে, এই বাজেটে KPR আপনাকে যা যা দিবে ঠিক এই বাজেটে অন্য কোন বাইক নেই যেইটা আপনাকে এতকিছু দিতে পারবে। Lifan KPR 165R EFI NBF2 এর বিকল্প বলতে বাংলাদেশের বাজারে কিছু নেই। একটা সময় চাইনিজ মানেই খারাপ ছিলো কিন্তু রাসেল ইন্ডাস্ট্রিজ Lifan KPR series এনে সবার এই ভুল ধারনাটা ভেঙে দিয়েছে। আপনার বাজেট যদি কম হয় আর যদি স্পোর্টস বাইক আপনার চাহিদার তালিকাই থাকে তবে অবশ্যই নির্দ্বিধায় Lifan KPR 165R EFI NBF2 নিয়ে নিন। ধন্যবাদ।
লিখেছেন - তিতুমীর আরাফাত
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।
T
Published by Ashik Mahmud Bangla