Shares 2

Lifan KPR 165 কার্বুরেটর ১০,০৫০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - শুভ মিয়া

Last updated on 13-Jul-2024 , By Ashik Mahmud Bangla

আমি কামরুজ্জামান শুভ মিয়া । বর্তমানে আমি ঢাকা ফার্মগেট এলাকায় থাকি । আমার গ্রামের বাড়ি বরিশাল বিভাগের বরগুনা জেলার বেতাগী থানায় । এখন আপনাদের সাথে আমি আমার ব্যবহার করা Lifan KPR 165 মডেলের বাইকটি নিয়ে আমার ১০ হাজার কিলোমিটার চালানোর পরে কিছু কথা শেয়ার করবো । 

চলুন শুরুটা কখন হয়েছে তা দিয়েছ শুরু করি। আজ থেকে ১১ বছর আগে যখন ক্লাস ৫ এর বার্ষিক পরীক্ষা শেষে আব্বুর সাথে ক্লাস ৬ এ ভর্তি হতে গেলাম তখন। ভর্তি শেষে বাসায় যাওয়ার সময় হঠাৎ আব্বু বলল "নে আজ তুই চালা" । ঠিক ওই সময়ে আব্বু বাইক চালাবো বলার সাহস ছিল না । কিছু না ভেবে সাথে সাথে বাইকের সামনের সিটে বসে পরি। নিয়ম গুলো আগে থেকেই জানা ছিল। আর হ্যান্ডেলের সাথে তো ছোট বেলা থেকেই বাইকের ট্যাংকের উপরে যখন বসতাম তখনই পরিচিত। সাইকেল চালানো শিখেছিলাম তারঅ দুই বছর আগে। হ্যান্ডেলের উপরে হাত রাখলাম আমার হাতের উপরে আব্বুর হাত আব্বু ক্লাচে চাপ দিয়ে আমায় বললো আস্তে আস্তে এক্সেলারেশন দিতে থাকো এবং সামনের দিকে তাকিয়ে ক্লাচ ছাড়ো কিছু দূর সামনে যাওয়ার পর আব্বু হাত সরিয়ে নিল আর এভাবেই বাবার হাতে হাত রেখে শুরু হলো বাইকের সাথে পথ চলা। বাইক বাইকিং এগুলোর প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টির কারন বলতে গেলে বলতে হবে ফ্যামিলি থেকে পাওয়া এবং পুরোটাই আব্বুর অবদান। বুঝতে শিখেছি থেকেই বাইকের সাথে পরিচয় বাইকে যাতায়াত। ভালোবাসাটা এভাবেই তৈরি হয় । তার থেকে উৎসাহ না পেলে এত কিছু সম্ভব হতোনা । ছোট থেকেই বাইকে যাতায়াত করা হয় । স্কুলে যেতাম মার্কেটে যেতাম ঘুরতে যেতাম সবই বলতে গেলে বাইকে করেই যাওয়া হতো । আর বাইকের প্রতি আগ্রহটা এভাবেই তৈরি হয় । 

যখন চিন্তা আসলো নিজের পার্সোনাল একটা বাইক দরকার ঠিক তখন ই মাথায় একটা চিন্তা চলে আসে আমার জন্য কোন বাইকটা ভালো হবে? মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির সন্তান চাইলেও সব ইচ্ছে পূরন করা সম্ভব হয়ে উঠেনা। সাধ আছে সাধ্য নাই বলতে একটা কথা আছেনা। আমার সব সময়ই স্পোর্টস বাইকের প্রতি আকর্ষণ ছিল। কিন্তু আমাদের দেশের অধিকাংশ স্পোর্টস বাইক গুলোর দাম আকাশ ছোঁয়া। যা আমার সাধ্যের বাইরে । Lifan KPR 165 বাইকটির সাথে খুব বেশি পরিচিত ছিলাম না। একদিন ঝালকাঠি সরকারি কলেজের সামনে Team BikeBd থেকে ২ জন ভাইকে দেখছিলাম বাইকটি নিয়ে, কাছে গিয়ে কথা বলার পরে একটা লিফলেট দিয়েছিল। আর পরের পরিচয়টা ছিল ঢাকা ৩০০ ফিটে Club KPR Bangladesh এর গেট টুগেদার এ। যেখানে ছিল কয়েক শত Lifan KPR বাইক। ওইদিন বাসায় গিয়ে চিন্তা করি বাইকটি হয়তো ভালো হবে। কিছুদিন এর মধ্যে বাড়িতে যাই ছোট ভাই শোভন বসু ততদিনে কেপিয়ার কিনে ফেলে। দেখা হতেই বলে ভাই চলেন ট্যুর এ যাই কোথাও। সুযোগ পেয়ে হাতছাড়া করলাম না । রাজি হয়ে গেলাম । যাত্রা শুরুতেই বাইকের চাবি হাতে দিয়ে বললো আজ আপনি রাইড করেন।

Lifan KPR165R NBF2 Test Ride Review

আমাদের ট্যুর ছিল বরগুনার বেতাগী থেকে স্বরূপকাঠি আটঘর কুরিয়ানা পেয়ারা বাজার। টোটাল ১৮০ কিলোমিটার একটা রাইড ছিল সম্পুর্ন রাইড ই আমি করি এবং বাইক থেকে নেমে ছোট ভাইকে বলি "লাইফে কখনো বাইক কিনলে Lifan KPR ই কিনবো " বাসায় এসে ইউটিউবে সার্চ দিয়ে BikeBD ইউটিউব চ্যানেলে শুভ্র সেন দাদার Lifan KPR 150 বাইকের টেস্ট রাইড রিভিউটা ৪-৫ বার দেখি এবং ওইদিন ই সিধান্ত নেই "আমার জন্য পার্ফেক্ট বাইকটি হচ্ছে Lifan KPR"।

আরও পড়ুন>> বাংলাদেশের সব বাইকের বর্তমান দাম

বাইকে ট্যুর করা আমার শখ। একটা স্পোর্টস বাইক এর মালিক হওয়া আমার স্বপ্ন। আকর্ষণীয় একটি বাইক আমার পছন্দ । লাইফটা সুন্দর করে কাটানো আমার ইচ্ছে, যা একটা বাইক থাকলে অনেক সহজ হয়ে যায়। এসব কারন বিবেচনা করেই বাইক কেনার সিধান্ত নেওয়া। বাইকটি আমি কিনেছিলাম সরাসরি Rasel industries limited এর কাছ থেকে যারা বাংলাদেশে Lifan বাইকের একমাত্র অফিশিয়াল ডিস্ট্রিবিউটর। তখন বাইকটির বাজার মুল্য ছিল ১ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা রেজিস্ট্রেশন ছাড়া।

বাইকটি যখন বাংলাদেশে লঞ্চ করা হবে তার প্রায় ৩ মাস আগে প্রি-বুকিং দিয়ে রেখেছিলাম। তাই ৩ মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে বাইকটির জন্য। একদিন সকালে হঠাৎ অর্ক ভাই কল করে বললো চলো ফ্যাক্টরিতে যাবো দিনটি ছিল হঠাৎ বৃষ্টির একটি দিন রওনা হওয়ার পর থেকে প্রচুর বৃষ্টি শুরু হয়। তার সাথে ফ্যাক্টরিতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত যানতাম না যে ওইদিন বাইক ডেলিভারি পাবো । দিনটি ছিল ২০ জুন ২০১৯ । বাইক ডেলিভারি পেলাম ততক্ষনে আব্বুকে বললাম ফ্যাক্টরিতে আসতে আব্বুর জন্য অপেক্ষা করতেছিলাম কারন আমার ইচ্ছে ছিল বাইকটি আমার আগে আব্বু চালাবে আব্বু আসলো টেস্ট রাইড দিলো এরপরে আমি বাইকে বসলাম। অনুভূতির কথা যদি বলতে যাই লাইফে এমন স্মরনীয় দিন গুলো খুব কমই থাকে। যে দিন গুলোর কথা চোখ বন্ধ করলেই মনে করা যায় ।

প্রথম নিজের ড্রিম বাইকের থ্রটলের উপর হাত রাখলাম এ যেন এক অন্যরকম ভালো লাগা । সব থেকে অবাক হলাম ক্লাচে হাত রেখে গিয়ার সিফট করে যেটা ছিল আগের Lifan KPR এর সব মডেল গুলো থেকে সম্পুর্ন ভিন্ন ।যখন চালানো শুরু করলাম স্মুথনেস টা আমাকে অবাক করে দিল এ যেন এক অন্যরকম ফিল পাচ্ছি । স্বপ্ন কে সত্যি করে খুশি মনে বাসায় চলে আসলাম । এরপর থেকে শুরু হয় Lifan KPR 165 এর সাথে পথ চলা। প্রথমে আমি নিয়ম মেনে ২,০০০ কিমি ব্রেকিং পিরিয়ড শেষ করার চেষ্টা করি । আর আস্তে আস্তে যত দিন যেতে থাকে ততই এর পারফর্মেন্স আমাকে মুগ্ধ করতে থাকলো । যতই দিন যায় ততই তার প্রেমে পড়ি ৷ আসলে কেপিআর ভালো লাগার কারন, এটা একটা স্পোর্টস বাইক আর আমার ছোট বেলা থেকেই স্পোর্টস বাইক পছন্দ তাই সাধ্যের মধ্যে কেপিআর ছিল আমার প্রথম পছন্দ । 

Lifan KPR 165 বাইকটিতে আছেঃ

  • ১৬৫ সিসির একটি পাওয়ারফুল ইঞ্জিন
  • লিকুইড কুলিং সিস্টেম
  • ডুয়েল ডিস্ক
  • পাওয়ারফুল প্রজেকশন হেডলাইট
  • 17 NM টর্ক এবং 17 BHP
  • টিউবলেস টায়ার
  • ৬ গিয়ার
  • নতুন nbf2 (New Blance shift functional engine) টেকনলজি সমৃদ্ধ ইঞ্জিন 
  • ১৭ লিটার আয়তন বিশিষ্ট ফুয়েল ট্যাংক
  • সামনের টায়ার ৯০/৯০-১৭
  • পেছনের টায়ার ১৩০/৭০-১৭ সাইজের

সার্ভিসিংঃ এখন পর্যন্ত আমি ২ বার সার্ভিস করিয়েছি ৩২০০ কিলোমিটার এবং ৬৮০০ কিলোমিটার। আমি মিরপুর লিফান সার্ভিস সেন্টার থেকে সার্ভিস গুলো করিয়েছি । সার্ভিস এর মান খুব ভালো ছিল । আমার বাইকের তেমন কোন প্রব্লেম ছিলনা, ছোট খাটো কিছু সমস্যার কথা বলেছিলাম সঠিক সমাধান পেয়ে গিয়েছি। সার্ভিস ২টা ফ্রি সার্ভিস ছিল। লিফান থেকে ৮ টা ফ্রি সার্ভিস এবং ২০ হাজার কিলোমিটার ইঞ্জিন ওয়ারেন্টির কথা বলেছে। এ ছাড়া আমি ছোট ছোট প্রয়োজনে যে কয়বার সার্ভিস সেন্টারে গিয়েছি আমার সমস্যা সঠিক ভাবে সমাধান করে দিয়েছে । 

মাইলেজঃ আমি ১৮০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাইকের ব্রেকিং পিরিয়ড মেনে চলি। প্রথম ২৯০০ কিলোমিটার পর্যন্ত আমি বাইকটি আমার গ্রামের বাড়িতে ব্যবহার করি তখন আমি মাইলেজ পেয়েছি ৩৬কিলোমিটার পার লিটার। এরপরে আমি ঢাকা সিটিতে যাওয়ার পরে মাইলেজ চেক করে পেলাম ৩০ কিলোমিটার পার লিটার ।

কিছুদিন পরে সার্ভিস সেন্টার থেকে বলে কার্বুরেটর কিছু চেঞ্জ করে দিবে আমি বাইক নিয়ে যাই এবং তারা কার্বুরেটর চেঞ্জ করে দেয় এরপর থেকে আমি মাইলেজ পাচ্ছি সিটিতে ৩২-৩৩ কিলোমিটার প্রতি লিটার এবং হাইওয়েতে ৩৮+ কিলোমিটার প্রতি লিটার। আসলে বাইকটির থ্রটল রেস্পন্স এর কথা চিন্তা করলে মাইলেজ নিয়ে না ভাবাই ভালো। তবুও স্টুডেন্ট লাইফ সিটির মাইলেজটা ৩৫+ কিলোমিটার হলে পার্ফেক্ট হতো। হাইওয়ের মাইলেজ নিয়ে কোন প্রব্লেম নাই মাঝে মাঝে ৪০ কিলোমিটার প্রতি লিটার ও পাই । কিন্তু সিটিতে মাইলেজটা আমি মনে করি কম পাই। 

ব্রেকিংঃ বাইকটির ব্রেকিং নিয়ে বলতে গেলে আমি মনে করি এই সেগমেন্টের অসাধারন ব্রেকিং এর একটি বাইক । ডুয়েল ডিক্স সামনে ৩০০ মিমি এর ডিক্স এর ব্রেক কখনো আমাকে ব্রেক স্বল্পতা ফিল করিনি। আর এ জন্যই নিশ্চিন্তে টপ স্পিড তুলতে পারি কারন আমি জানি আমার স্পিড যে কোন টাইমে কন্ট্রোল করার জন্য আমার বাইক প্রস্তুত ।

বাইকের যত্ন ও মেইনটেন্যান্সঃ বাইকের যত্ন ও মেইনটেন্যান্স এর কথা বলতে গেলে আমি যতটুকু কাজ নিজে করতে পারি ততক্ষনে মেকানিক এর কাছে যাইনা । নিয়মিত ইঞ্জিন ওয়েল চেঞ্জ, এয়ার ফিল্টার ক্লিন, ওয়েল ফিল্টার ক্লিন,চেইন ওয়াস, চেইন লুব,ক্যাবেল ওয়াস, ক্যাবেল লুব, নাট চেক এগুলো বাসায় নিজেই করি । এর বাইরে এখন পর্যন্ত খুব বেশি কিছুর প্রয়োজন পরেনা । এছাড়া কোন প্রয়োজন পরলে সরাসরি সার্ভিস সেন্টারে চলে যাই ।

 ইঞ্জিন ওয়েলঃ শুরু থেকে আমি আমার বাইকে পেট্রনাস ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করছি। প্রথম দিকে আমি পেট্রনাস মিনারেল 20w40 ইঞ্জিন ওয়েলটি ৫০০ কিলোমিটারে ২ বার, এরপর ৫০০ - ২০০০ কিলোমিটারে পর্যন্ত ৫০০ কিলোমিটার পর পর ৩ বার চেঞ্জ করেছি । ২০০০ কিলোমিটার পর থেকে ৫০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রতি ৮০০ কিলোমিটার পর পর চেঞ্জ করেছি। ৫০০০ কিলোমিটার পর থেক এখন পর্যন্ত পেট্রনাস সেমি সেন্থেটিক 10w40 ইঞ্জিন ওয়েল টি ব্যবহার করছি। প্রতি ১২০০-১৪০০ কিলোমিটারের মধ্যে চেঞ্জ করি। প্রাইস ও বেশ কম আর জিনিষ ও বেশ ভালো। মিনারেল এর দাম ছিল ৪০০/- টাকা আর সেমি সেন্থেটিক ৫৫০/- টাকা ।

পার্ফমেন্স এত ভালো পাচ্ছি যে ইঞ্জিন ওয়েল এর ব্রান্ড চেঞ্জ করার ইচ্ছে হচ্ছেনা । বাইক বেশ স্মুথ এবং বেশ ভালো পার্ফমেন্স দেয় মজার ব্যাপার হলো ইঞ্জিন ওয়েলের যত কিলো বাড়তে থাকে তত ইঞ্জিন আরো স্মুথ মনে হতে থাকে । আর হিটিং ইস্যু ও তুলনামূলক কম মনে হয় । ১২০০ এম এল ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করি এবং আমি সবসময় ফুয়েল হিসেবে অকটেন ব্যাবহার করি । 

এ পর্যন্ত যা যা চেঞ্জ করতে হয়েছেঃ এই ১০ হাজার কিলোমিটারের মধ্যে আমি আমার বাইকের শুধুমাত্র ৯৮০০ কিলোমিটার তে সামনের স্প্রোকেট চেঞ্জ করেছি । সাজেক না গেলে হয়তো সেটাও ১০ হাজার কিলোমিটার পরেই চেঞ্জ করতাম । এ ছাড়া আমি আমার বাইকের কোন কিছু চেঞ্জ করিনি । অথবা কোন প্রব্লেম ফিল করিনি । হর্নের স্প্রিং কেটে যায় সার্ভিস সেন্টার থেকে ফ্রি চেঞ্জ করে দেয়,মিটার ক্যাবেলে প্রব্লেম হয়েছিল সার্ভিস সেন্টার থেকে ফ্রি চেঞ্জ করে দিয়েছে । কার্বোরেটরের কাজ ও সার্ভিস সেন্টার থেকে ফ্রি করে দিয়েছে । এর বাইরে এ পর্যন্ত আমার বাইকে কোন প্রব্লেম হয়নি । 

মোডিফিকেশনঃ অনেক কিছু মডিফাই বা চেঞ্জ করার ইচ্ছে আছে আস্তে আস্তে করবো। আপাতত চেঞ্জ এর মধ্যে সামনের উইনশিল্ডটা চেঞ্জ করে বাবল উইনশিল্ড লাগিয়েছি। এ ছাড়া সব কিছুই স্টক আছে।

টপ স্পিডঃ আমার কাছে বাইকটির সব থেকে পছন্দের দিক হচ্ছে এর রেডি পিকাপ এবং থ্রটল রেস্পন্স, যা আমাকে অবাক করে তুলে। এই বাজেটের যে কোন বাইক কে হার মানতে বাধ্য করবে এর থ্রটল রেস্পন্স। ০-১০০ পেয়েছি ১২ সেকেন্ড এ। এখন পর্যন্ত টপ স্পিড পেয়েছি ১৩২ । আমি এই স্পিডে সন্তুষ্ট না কারন আমি আশাকরেছিলাম বাইকটির টপ স্পিড ১৪০+ হবে । টপ স্পিডে বাইকটির স্মুথনেস এবং ব্যালেন্সিং প্রশংসাযোগ্য । স্পিড উঠলেই তো হবেনা থামতেও হবে টেস্ট করেছিলাম ১২৫ থেকে ব্রেক করে ১৭ স্পিডে আসতে সময় লেগেছিল ৫ সেকেন্ড । ১৫২ কেজি ওজন হওয়া সত্তেও বাইকটি রানিং এ আমি কখনো কোন সমস্যা অনুভব করিনি । বরং এই ওয়েট আমাকে স্পিডিং এ এবং ব্যালেন্সিং এ কনফিডেন্স দেয় । 

বাইকটির ভালো কিছু দিকঃ

  • আমি মনে করি ১৬৫ সি সি সেগ্মেন্ট এর সব থেকে পাওয়ারফুল ইঞ্জিন এই বাইকে । লিকুইড কুলিং সিস্টেম, যার কারনে আমি এখন পর্যন্ত ৮ ঘন্টায় টানা ৪৫০ কি.মি. কক্সবাজার-ঢাকা এসেও কোন প্রকার পার্ফমেন্স ড্রপ পাইনি ।
  • থ্রটল রেস্পন্স যা আমার রাইডের কনফিডেন্স বাড়িয়ে দেয় । এবং একটি স্পোর্টস বাইকের প্রকৃত ফিল এনে দেয় ।
  • বাইকটির ব্রেকিং সিস্টেম আমাকে মুগ্ধ করেছে । অসাধারণ ব্রেকিং সিস্টেম । ১২৫-১৭ স্পিডে আসতে আমার টাইম লেগেছিল ৫ সেকেন্ড । টপ স্পিডে যথেষ্ট কনফিডেন্স নিয়ে ব্রেক করা যায় ।
  • কম্ফোর্ট, আমি বাইকটি রাইড করে কখনো ব্যাক পেইন পাইনি সিটিং পজিশন যথেষ্ট ভালো লেগেছে । এবং আমি যথেষ্ট কম্ফোর্ট নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা রাইড করতে পারি ।
  • প্রজেকশন হেড লাইট টি যথেষ্ট পাওয়ারফুল ।
  • ৬ টি গিয়ার, যার ৬ নং গিয়ারের রেস্পন্স ও প্রশংসনীয় ।
  • ডুয়াল ডিক্স ব্রেক কখনো আমাকে ব্রেক সল্পতা অনুভব করায়নি ।

বাইকটির কিছু খারাপ দিকঃ

  • বাইকটির স্টক টায়ার টি ভেজা রাস্তা কাদার রাস্তার জন্য ভালো লাগেনি
  • রেয়ার সিটটি নিচু, যেটা একটা স্পোর্টস বাইকে পছন্দ হয়নি
  • সাসপেনশন ভালো লাগেনি
  • টার্নিং রেডিয়াস বিরক্তিকর
  • সিটি রাইডে অতিরিক্ত জ্যামে হিটিং ইস্যু ফিল করি,বাইকের ট্যাংক গরম হয়ে যায় যেটা পায়ে লাগে
  • মাইলেজ টা আর একটু বেশি হওয়ার দরকার ছিল
  • ১৩২ টপ স্পিড নিয়ে আমি সন্তুষ্ট না
  • চেইন খুব তাড়াতাড়ি লুজ হয়ে যায়, ৫০০-৭০০ কি.মি. পর পর চেইন টাইট দিতে হয়

বাইকের যত্নের ক্ষেত্রে কয়েকটি টিপসঃ

  • ইঞ্জিন ওয়েল সময়মত ড্রেইন দেওয়া উচিৎ।
  • ব্রেক প্যাড সময়মত পরিবর্তন করা উচিৎ।
  • স্পার্ক প্লাগ, ক্লাচ ক্যাবল, এক্সিলারেশন ক্যাবল, এয়ার ফিল্টার, ব্রেক-ফ্লুইড, টায়ার প্রেসার ইত্যাদি সর্বদা তদারকি এবং সময়মত পরিবর্তন করা উচিৎ।
  • বাইক সবসময় ওয়াস করে পরিষ্কার রাখা উচিৎ ।
  • সময়মত চেইন লুব করা উচিৎ ।
  • ভালো পাম্প থেকে তেল নেওয়া উচিৎ ।

Lifan KPR 165 লং ট্যুরঃ এই ১০ হাজার কিলোমিটার মধ্যে এখন পর্যন্ত আমার লং ট্যুর হচ্ছে ঢাকা-সাজেক-খাগড়াছড়ি-রাংগামাটি-চট্রগ্রাম-কক্সবাজার-টেকনাফ-ঢাকা। ৫ দিনে ১৫০০ কিলোমিটার ট্যুর। পাহাড়, হাইওয়ে,সমুদ্র কোন যায়গায় একবারের জন্যও কেপিআর কে দুর্বল মনে হয়নি। আমি ক্লান্ত হয়ে গেলেও আমার বাইক ক্লান্ত হয়নি একবারের জন্যও । একবারের জন্যও হতাশ করেনি ।

এছাড়া আমি অনেক ট্যুর করেছি Lifan KPR 165 বাইকটি নিয়ে । হাইওয়েতে এর পারফর্মেন্স, থ্রটল রেস্পন্স, ব্রেকিং, কম্ফোর্ট আমাকে শত শত কিলোমিটার রাইড করার আগ্রহ এনে দেয়। এখন প্রযন্ত এই বাইকটি নিয়ে আমি বাংলাদেশ এর ২৫ টি জেলা ভ্রমন করেছি । ইচ্ছে আছে ৬৪ জেলা ভ্রমন করবো এই বাইকে করে। চায়না বেশিদিন যায়না কথাটি ভুল প্রমাণিত করার জন্য এই একটা কেপিয়ার ই যথেষ্ট । ২ লক্ষ টাকায় এই রকম একটা স্পোর্টস বাইক আমাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য রাসেল ইন্ডাট্রিজ লিমিটেড কে অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং সেই সাথে ক্লাব কেপিয়ার বাংলাদেশ এর সকল এডমিন মডারেটর ভাইদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ। এত হেল্পফুল ক্লাব পাওয়ার কারনেই কখনো পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। ছোট খাটো সব সমস্যার সমাধান পেয়েছি হেল্পফুল কেপিয়ার ইউসারদের কাছ থেকে। আমি আমার বাইকটি ব্যবহার করে যথেষ্ট সেটিস্ফাই । অনেকে অনেক কথা বলছে বাইকটি কিনার আগে বা পরে কিন্তু আমি সবসময় নিজের মন যেটা বলে সেটাই করি । ইচ্ছে আছে মিটারে ৯৯৯৯৯ ডিজিটটি দেখার বাইকটি আমি ১ লক্ষ কিলোমিটার চালাবো দেখি চায়না কত দিন চলে ।

আপনার বাজেট যদি থাকে ২ লক্ষ টাকা তবে আমি বলবো লিফান কেপিআর আপনার জন্য হবে প্রথম পছন্দ। যাদের বাজেট ২ লক্ষ টাকা তারা ইনশাআল্লাহ্‌ এই বাইকটি কিনলে কোন দিক থেকে আপনাকে নিরাশ করবে না। অন্তত আমার এই ১০হাজার কিলোমিটার পার করার অভিজ্ঞতা আমাকে এটাই বলে । যেতে হবে বহুদূর সাথে থাকবে ভালোবাসার Lifan KPR 165 । জীবন উপভোগ করতে বেশি টাকা লাগে না, জাস্ট একটা বাইক হলেই হয়। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত অনেকের মত ভিন্ন থাকতে পারে। তবে ভালো যেমন আছে তেমন খারাপ ও থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সবাইকে এতক্ষন ধরে আমার রিভিউটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।   লিখেছেনঃ শুভ মিয়া   আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।

Published by Ashik Mahmud Bangla