Shares 2
Lifan KPR 150cc মালিকানা রিভিউ লিখেছেন আসিফ মাহমুদ।বাইকবিডি
Last updated on 13-Jul-2024 , By Ashik Mahmud Bangla
সালটা ছিলো ২০১৭, আমি হিরো হোন্ডা হাংক ১৫০ সিসি বাইকটি ব্যবহার করতাম। একদিন এক বন্ধুর সাথে দেখা, সে নতুন একটি কোম্পানির বাইক নিয়ে এসেছে । কথা বলে জানতে পারলাম বাইকটার নাম KPR,এটি লিফানের একটি চাইনিজ মোটরসাইকেল । আমি বাইকটি টেস্ট রাইড করি, টেস্ট রাইড দেয়ার পর আমার মনে বাইকটি কেনার আগ্রহ জাগে । ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে আমি নিয়ে নিলাম আমার পছন্দের Lifan KPR 150cc Version 2 ।
Lifan KPR 150cc মালিকানা রিভিউ লিখেছেন আসিফ মাহমুদ।বাইকবিডি
তখন থেকে টানা এখন পর্যন্ত আমি বাইকটি ব্যবহার করে যাচ্ছি । অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম আমি বাইকটির ইউজার রিভিউ লিখবো । কিন্তু সময় হয়ে ওঠেনি । দুই বছর তিন মাসে আমি বাইকটি চালিয়েছে ২৫০০০ কিঃমিঃ । যে কোন পরিস্থিতিতে বাইকটি আমাকে সম্পূর্ণ সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে । এটা এমন একটা বাইক যেটি শুধু চালাতেই মন চাই, এর কারন হচ্ছে বাইকটি কিনে আমি এখনো নিরাশ হয়নি।
Lifan KPR 150cc V2 কেনার পর অনেকেই আমাকে বলেছে চায়না বাইক বেশি প্রেসার দেয়া যাবে না আরো অনেক কিছু। কিন্তু আমি বাইকটি অনেকভাবে পরীক্ষা করেছি । আমি হতাশ হয়নি । যারা আমাকে বলেছিলেন টাকা গুলো নষ্ট করলি তারা নিজেরাই এখন অবাক। যে যাই বলুক আমি আমার নিজের মতকেই প্রাধান্য দিয়েছি । আমি খুব সন্তুষ্ট বাইকটি কিনে ।
প্রতিটা বাইকের ভালো খারাপ দিক আছে। কোন কিছুই ১০০% সঠিক হতে পারে না, এই বাইকটিও ঠিক তাই । আমি এই বাইকটির আগেও আরও ৫ টি বাইক ব্যবহার করেছি, সেগুলো সব বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্রান্ডের ছিলো। কিন্তু সেই বাইকগুলোতেও ভালো খারাপ দিক ছিলো।
Lifan KPR 150cc V2 - ফিচার্স এবং ডিজাইন
ডিজাইনঃ প্রথমে আমি বলতে চাই বাইকটির ডিজাইন নিয়ে,বাইকটির ডিজাইন আমার কাছে দারুন লেগেছে । বাইকটির ডিজাইন আপনি অন্য কোন বাইকের সাথে মেলাতে পারবেন না । অনেক বাইক একে অপরের ডিজাইন কপি করলেও কেপিয়ারের রয়েছে নিজস্ব ডিজাইন । আমার কাছে মনে হয়েছে বাইকটির একটি স্মার্ট লুকস, এবং স্পোর্টি লুকসের ডিজাইন দেয়া হয়েছে ।
বিল্ড কোয়ালিটিঃ বাইকটির বিল্ড কোয়ালিটি নিয়ে বেশি কিছু বলবো না। তবে আমার মতে এটি সেরা বিল্ড কোয়ালিটির বাইকগুলোর মধ্যে অন্যতম। বাইকটির প্রতিটা অংশ খুব শক্তিশালী মনে হয়েছে আমার কাছে। অনেকেই মনে করেন চাইনা বাইকের বিল্ড কোয়ালিটি ভালো হয় না। কিন্তু আপনি এই বাইকটি ব্যবহার করলে আপনার ধারনা পরিবর্তন হয়ে যাবে।
ইঞ্জিনঃ এবার বলি এই বাইকের ইঞ্জিন নিয়ে,বাইকটি যেহেতু স্পোর্টস বাইক তাই বাইকটির ইঞ্জিন স্পোর্টস কোয়ালিটির। বাইকটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ১৫০সিসি, ফোর স্ট্রোক সিংগেল সিলিন্ডার ওয়াটার কুলড ইঞ্জিন । এই ইঞ্জিন থেকে যে পাওয়ার উৎপন্ন হয় সেটার রেসিও ১১.১.১। আমার কাছে ইঞ্জিন কোয়ালিটি সেরা মনে হয়েছে । ২৫০০০ কি.মি তে আমি কোন সমস্যার সম্মুখীন হইনি। প্রতি ১০০০ হাজার কি.মি পর আমি আমার বাইকের ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করেছি। প্রথম ২০০০ কি.মি আমি খুব ভালোভাবে মেইটেইন করেছি। ইঞ্জিনে এখন পর্যন্ত কোন কাজ করাতে হয় নি। শুধু একবার ট্যাপিড মিলাতে হয়েছে।
কন্ট্রোলিংঃ আমি বাইকটি নিয়ে বিভিন্নভাবে কর্নারিং করেছি, এবং বাইকটি অনেক ভাবে ব্রেক করে দেখেছি । কিন্তু আমার কখনো মনে হয়নি ব্রেকিং অথবা কন্ট্রোলিং জনিত কারনে বাইকটি আমার পরিবর্তন করা প্রয়োজন । এককথায় যদি বলতে হয় তাহলে বলবো অসাধারন। স্লো রাইড স্পীড রাইড কোন কিছুতেই আমার কখনো কোন প্রকারের সমস্যা হয় নি। তবে রাস্তায় যদি কাদা বেশি থাকে অথবা বালি তবে বাইকটি স্কীড করে, আর প্রায় সব বাইকেই করে।
Lifan KPR 150 Review Team BikeBD
মাইলেজ এবং টপ স্পীডঃ বাইকটি থেকে আমি নতুন অবস্থায় মাইলেজ পেতাম ৩০-৩৪ কিন্তু পরবর্তীতে সিটি রাইডে পাচ্ছি ৩৪-৩৮ এবং হাইওয়েতে ৪২ পাচ্ছি। আমি আমার বাইকের মাইলেজ নিয়ে সন্তুষ্ট। নতুন অবস্থায় যখন বাইকটির টপ স্পীড চেক করেছিলাম তখন আমি টপ পেয়েছিলাম ১৪১, এরপর নরমালি ১৩৫ থেকে ১৪০ স্পীড পাই।
কম্ফোর্ট এবং স্থায়িত্বকালঃ বাইকটি সিটি এবং হাইওয়েতে রাইড করে আমার কখনো ব্যাক পেইন হয় নি। আমার কাছে ভালোই লেগেছে। কিন্তু রেয়ার সাসপেনশনটা কিছুটা সমস্যা করে। বাইকটি আমি দুই বছর যাবত ব্যবহার করছি এখন পর্যন্ত আমার কাছে কোন সমস্যা হয় নি। তাই আশা করা যাচ্ছে বাইকটি ভালো লাস্টিং করবে।
হেডলাইটের কোয়ালিটিঃ অধিকাংশ বাইকের সাথে যে হেডলাইট থাকে তার কোয়ালিটি খুব বেশি ভালো হয় না,কিন্তু এই বাইকের হেডলাইটের আলো দারুন। আপনাকে এক্সটা ভাবে কোন লাইট ব্যবহার করতে হবে না। বাইকটির ভালো দিকগুলা বললাম এবার বলবো বাইকটির খারাপদিক সর্ম্পকেঃ
- বাইকটির টার্নিং রেডিয়াস অনেক কম, তাই জ্যামের মধ্যে বাইকটি ঘুরাতে কিছুটা সমস্যা হয় কারন জায়গা অনেক বেশি লাগে।
- বাইকটির চেইন ঘন ঘন লুস হয়ে যায়,এটি আপনাকে কিছুটা সমস্যায় ফেলে দিতে পারে।
- পেছনের সাসপেনশন নিয়ে আমি সন্তুষ্ট না, ভাংগা রাস্তায় পিলিয়ন নিয়ে রাইড করতে কিছুটা সমস্যা হয়।
- টায়ারে পেসার সঠিক না থাকলে কিছুটা অস্বাভাবিক আচরন করে।
- বাইকটির ওয়াটার পাম্প ভালো দেয়নি,এটি আরো ভালো দেয়া উচিৎ ছিলো। তবে কেপিয়ারের সব বাইকে এই সমস্যা হয় না ।
বাইকের পেছনের দিকটা আরেকটু উচু হলে বেশি ভালো লাগতো। ভারী পিলিয়ন নিয়ে রাইডে আমার কিছুটা সমস্যার স্মমুখীন হতে হয়। এই ২ বছর ৩ মাসে আমার বাইকে কি কি পরিবর্তন করতে হয়েছে?
- ২২ হাজার কি.মি তে এসে ব্যাটারি পরিবর্তন করেছি।
- ফ্রন্ট এবং রেয়ার ব্রেক প্যাড ২/৩ বার পরিবর্তন করেছি।
- চেইন সেট ১ বার পরিবর্তন করেছি।
- ওয়াটার পাম্প ১ বার পরিবর্তন করেছি।
- ক্লাচ ক্যাবলের তার ১ বার পরিবর্তন করেছি।
পরিশেষে বলতে চাই তাদের নিয়ে , যারা ভাবেন চায়না বাইক মানেই ভালো না তাদের এই ধারনাটা সম্পূর্ণ ভুল । যদি আপনার বিশ্বাস না হয় তাহলে আপনি নিজে Lifan KPR 150cc V2 বাইকটি ব্যবহার করে দেখতে পারেন আপনার ধারনা বদলে যাবে । রিভিউটি সম্পূর্ন পড়ার জন্য ধন্যবাদ সবাইকে ।
লিখেছনঃ আসিফ মাহমুদ
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন।
মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।
T
Published by Ashik Mahmud Bangla