Shares 2
Lifan KPR 150 ১০,০০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ - মাশফিক
Last updated on 30-Jul-2024 , By Shuvo Bangla
আমি মাশফিক । আমি একটি Lifan KPR 150 বাইক ব্যবহার করি । আজ আমি আমার এই বাইকটি নিয়ে ১০ হাজার কিলোমিটার রাইডিং অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো ।
আমি ময়মনসিংহ নাসিরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ২য় বর্ষের একজন ছাত্র। বাইক রাইড করি বিগত ১১ বছর যাবত। আমি প্রায় ১১ টি বাইক পরিবর্তন করেছি। আজকে আমি আপনাদের সাথে আমার বাইকটি নিয়ে কিছু কথা শেয়ার করবো ।
আমার জীবনের ১১ তম বাইক হলো এই Lifan KPR 150। এটি আমি ক্রয় করেছিলাম আমার এক ছোটভাই এর কাছ থেকে তখন বাইকটি মাত্র ২৫০০+ কিলোমিটার রানিং ছিল । বর্তমানে বাইকটি ১০,৬২৭ কিলোমিটার চলেছে। বাইকটি রাইড করে ব্যক্তিগত ভাবে যথেষ্ট হ্যাপি আমি । ব্রেকিং ,কন্ট্রোলিং এর তুলনা হয়না এক কথায় অসাধারণ যদিও চায়না কোম্পানির বাট স্পেশাল।
ব্যাপার টা হলো যার সাথে বাইকটি এডজাস্ট হয়ে যায় তার কাছে আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো লেগে যাবে । আমাদের দেশের রাস্তাগুলো যেমন - উঁচুনিচু, পাহাড়ি, লালমাটি, কাচা রাস্তা, পাকা রাস্তা সহ মোটামুটি প্রায় সকল রাস্তায় রাইড করেছি। আজকে সেই রাইডগুলোর পরে নিজস্ব অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে বাইকটির প্রায় সবগুলো ভালো আর খারাপ দিকগুলো আপনাদের মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
কেন এই বাইকটি কিনলাম -
আমাকে অনেকে বলেছে যে এটা চায়না বাইক, এটার পার্টস বা আরো নানান সমস্যা করে, বেশিদিন চালানো যাবে না গাড়ি টিকবে না, তবুও কেন নিলে? তখন আমি উত্তর দিয়েছি - সব কিছুরই স্বাদ নেয়া ভালো, এই বাইক টার চেয়েও ভালো বাইক কেনার সামর্থ্য আছে কিন্তু এই বাইক এর মজা যে একবার পেয়েছে সে কখনো এই বাইক পরিবর্তন করে অন্য বাইকে যেতে পারবে না ।
হ্যা মোটামুটি প্যারা নেয়া লাগে বাট প্যারা না নিলেই চলবে। আমরা যখন কোন বাইক কিনি বা কিনার জন্য লক্ষ্য স্থির করি তখন আমরা সেই বাইকের পার্ফরমেন্স নিয়ে আগে কথা বলি। পরবর্তীতে আউটলুক, ব্রেকিং সিস্টেম, বিল্ড কোয়ালিটি, মাইলেজ, হেডলাইট এবং ব্যাটারী, পার্টস, সার্ভিস এবং আরো অনেক কিছু নিয়েই কথা বলে থাকি। আজ এই বাইকের ব্যাপার এ সকল কিছু শেয়ার করবো ধীরে ধীরে।
পারফর্মেন্স -
একটি বাইকের মুখ্য বিষয় বলতে আমরা বুঝি বাইকের পার্ফরমেন্স । বাইকটিতে রয়েছে 149 CC 4-Stroke, Single Cylinder, SOHC এর ইঞ্জিন যার থেকে সর্বোচ্চ পাওয়ার 11.03 kW (14.7 bhp) @ 8000 RPM কিলোওয়াট এবং সেই সাথে এটি 14.8 NM @ 6500 RPM টর্ক উৎপন্ন করতে পারে।
আউটলুক -
এই বাইকের আউটলুক আমার কাছে অসাধারণ ভালো লেগেছে। এই বাইকের লুকটা আমার কাছে বেশ ড্যাশিং আর স্পোর্টি মনে হয়েছে যেহেতু প্রিমিয়াম স্পোর্টস বাইক। তবে এই বাইকটির স্পিড অনুযায়ী এটি বাংলাদেশের ১৫০ বা ১৬৫ সিসি বাইকের সাথে তুলনা করা যায়। এমনকি স্পিড অনুযায়ী এই বাইকটি ১৮০ সিসি বাইকের সাথেও তুলনা করা যেতে পারে। কেননা আমি এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ পেয়েছি ১৩১ প্রতি ঘন্টায়।
ব্রেকিং -
এই বাইকের সামনে এবং পিছনে ডিস্ক ব্রেক । অন্য রাইডাররা বলেছে যে - এই বাইক চালাইলে ভাল্লাগবে না এই সেই। আমি যে ৮ হাজার কিলোমিটার চালালাম আমি ব্রেকিং এ পুরো সন্তুষ্ট। সামনে দিয়েছে 300mm ডিস্ক ব্রেক এবং পিছনে 240mm ডিস্ক ব্রেক। বৃষ্টি আর কাদা বা পাকা নেই, আমি সব জায়গায় অসাধারণ ব্রেকিং পেয়েছি তবে চাকা টা ১৩০ সাইজ করলে আরো বেশি প্রিমিয়াম ফিল পাওয়া যেতো।
বিল্ড কোয়ালিটি -
বিল্ড কোয়ালিটি আমি অনেক বেশি ভালো পেয়েছি। বাইকের কালার এবং ফিনিশিং থেকে শুরু করে পুরো বাইকের লুকটা আমাকে আকৃষ্ট করেছে। আমি ছোটাখাটো কিছু কারনবশত ২-৩ বার পড়ে গিয়েছিলাম কিন্তু তেমন কোন ক্ষতি হয়নি বাইকের। এক কথায় বিল্ড কোয়ালিটির প্রেম এ পড়েছি।
মাইলেজ -
TVS Apache RTR 160 বাইকে আছে ১৪ লিটার ক্যাপাসিটিভ ফুয়েল ট্যাংক (রিজার্ভ-২.৫লিটার)। এই বাইকের মাইলেজ নিয়ে আমি সন্তুষ্ট না। সিটি রাইড এ আমি পাই ৩২-৩৪ কিলোমিটার প্রতি লিটার এর মতো এবং হাইওয়ে তে পাই ৩৬-৩৮ কিলোমিটার প্রতি লিটার এর মত। আসলে মাইলেজ এর ব্যাপারটা কিছুটা বাইক মেইনটেইন এর ওপর নির্ভর করে থাকে। তবুও আমি প্রপার মেইনটেইন করেও কম পেয়েছি।
লাইট এবং ব্যাটারি -
এই বাইকের ব্যাটারি Maintenance Free 12v, 5.3Ah, ব্যাটারি পার্ফরমেন্স মোটামুটি ভালো পেয়েছি। এই কিছুদিন আগে ব্যাটারি বদলেছি, ব্যাটারি নষ্ট হয়েছিলো। LED হেডলাইট , ব্যাকলাইট, এবং সিগনাল লাইট। এই লাইটগুলো নিয়ে আমি মোটামুটি অনেকটা ই সন্তুষ্ট। রাতে চলাফেরা করার সময় মোটামুটি ভালো সাপোর্ট পেয়েছি এই লাইটগুলো থেকে।
সার্ভিস এবং পার্টস -
এই বাইকের কিছু পার্টস ব্যতীত প্রায় সব পার্টস গুলো আমি পেয়েছি। আমি আমার বাইক নিয়মিত সার্ভিস করিয়েছি এবং সময়মত ব্রেক প্যাড, এয়ার ফিল্টার, মবিল ফিল্টার, চেইন স্পোকেট ইত্যাদি সহ আরো নানান পার্টস চেঞ্জ করেছি। কিন্তু আমার কাছে বাইকের কিছু পার্টস এর দাম একটু তুলনামূলকভাবে বেশি মনে হয়েছে। তাছাড়া বাইক এ রয়েছে ডিজিটাল স্পিডোমিটার, 3 Part Handle, সামনে টেলিস্কোপিক সাসপেনশন এবং পিছনে মনোশক সাসপেনশন।
টিউবলেস চাকা, সামনে ৯০/৯০ এবং পিছনে পেয়েছি ১২০/৮০ সাইজের টায়ার যা এই বাইক এর সবকিছুর সাথে মিল খায়নি। বাইকটির ওজন ১৫০কেজি। ক্লিয়ার লুকিং গ্লাস, পিলিয়ন গ্র্যাভ রিল।
Lifan KPR 150 বাইকটির কিছু ভালো দিক -
- ইঞ্জিন পারফর্মেন্স
- বিল্ড কোয়ালিটি
- এক্সহস্ট সাউন্ড
- রেডি পিকাপ
Lifan KPR 150 বাইকটির কিছু খারাপ দিক -
- পার্টস
- চাকা চিকন
- সার্ভিস
- গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স
- সিটিং পজিশন
- মাইলেজ
বাইকটি নিয়ে আমি প্রায় ৮-৯ টি জেলায় রাইড করেছি , কোন প্রকার হতাশ বা কোনরকম বিপদে এখন ও পরতে হয়নি। আমি যখন হাইওয়েতে রাইড করি তখন বাইকটির রেডি পিকাপ আমাকে অনেক ভালো সাপোর্ট দেয় । বিশেষ করে ওভারটেকিং এ মোটামুটি খুব অল্প সময়ে ভালো স্পিড এর মাধ্যমে ওভারটেক করে ফেলতে পারি।
চাকার সাইজ আরেকটু বড় দিলে পার্ফেক্ট হতো। সিটিং পজিশন আমার জন্য ইজি না। সব পার্টস নিজের শহরেই পাওয়া যায় না, অর্ডার করে অপেক্ষা করে আনা লাগে। সার্ভিস টা আরেকটু উন্নত করতে হবে। বাকি সব কিছু চলে মোটামুটি।
ইঞ্জিন অয়েল হিসেবে আমি - Motul 3100V SYNTHETIC ব্যবহার করি, যা আমাকে শোরুম থেকে বলা হয়েছে ১৮০০-২০০০ কিলোমিটার এর মধ্যে পরিবর্তন করতে। কিন্তু আমি ১৩০০-১৫০০ এর মধ্যেই পরিবর্তন করে ফেলি । নতুন বাইক কিনার পর আমি ৪টা ফ্রি সার্ভিস করিয়েছি নিয়ম মত এবং একটা পেইড সার্ভিস করিয়েছি । বাসার পাশেই শো-রুম তাই আমার তেমন কোন সমস্যা হয়নি এখন পর্যন্ত । শো-রুম এর মেকানিক ছোটখাটো সমস্যা গুলো সমাধান করে দেয় ।
সর্বশেষে একটা কথা বলতে পারি - সব জিনিস এর ভালো এবং খারাপ দিক ছিলো আছে এবং আজীবন থাকবেই, একেবারে ১০০% ভালো করে কোন কিছু হয়না । তবে যারা মধ্যম বাজেট এ এই বাইক কিনতে চান তারা কিনতে পারেন, আমি মনে করি না খারাপ হবে । সকলের উদ্দেশ্যে আমার একটি কথা - সকলে সর্বদা হেলমেট পড়ে বাইক চালাবেন। কোন ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার চোখে দেখবেন। ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ মাশফিক
T
Published by Shuvo Bangla