Shares 2
RKS 150 sports v1 ১৪,০০০কিমি মালিকানা রিভিউ-মোহাম্মদ সিহাব
Last updated on 08-Jul-2024 , By Saleh Bangla
Keeway RKS 150 Sports রিভিউঃ আমি মোহাম্মদ সিহাব ইসলাম পেশায় চাকুরীজিবী। ছোট বেলা থেকেই মোটর বাইকের প্রতি আমার বিশেষ টান ছিল, ২০০৫ সালে প্রথমে ইয়ামাহা আর এক্স দিয়ে হাতে খড়ি হলেও ২০১১ সালে প্রথম বাইক কিনা হয় ছোট ভাইয়ের জন্য সেই থেকেই বিভিন্ন সময়ে পার্ট টাইম বাইক চালানোর সুযোগ হয়। ২০১৬ সালে হঠাৎ আমি সিদ্ধান্ত নেই বাইক কিনার সেই সুত্রে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের উপর আমার স্টাডি করা শুরু হয় Keeway bike ও ছিল আমার সেই লিস্টে কারন মোঃপুর আমার ২টা ছোট ভাই কিওয়ের ১০০ সিসি বাইক ব্যবহার করত, একদিন আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু মোঃ মহিউদ্দিন ভূঁইয়া কিওয়ের ১২৫সিসি বাইকটি কিনতে আমাকে সাথে করে নিয়ে যায় তখন Keeway RKS 150 Sports V1 বাইকটি আমার খুব পছন্দ হয়ে যায় রীতিমত স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম।
Keeway RKS 150 Sports V1 ১৪,০০০ কিমি মালিকানা রিভিউ
আমি স্টাডি করতে পছন্দ করি টেকনোলজি নিয়ে যেহেতু বাইকটি বাংলাদেশে নতুন তাই এটি নিয়ে বিষদ পড়াশোনা শুরু করলাম আর আমার যেহেতু ১ম বাইক তাই কোন রকম যাতে ভুল সিদ্ধান্ত না হয় সেই দিকে খেয়াল করলাম। তারপর ২৮/১২/১৬ তারিখে মহাখালী শো-রুম থেকে Keeway RKS 150 sports বাইকটি কিনলাম এই পর্যন্ত প্রায় ১ বছরে ১৪০০০ কিঃমিঃ পথ অতিক্রম করলাম আর আপনাদের মাঝে এই ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা শেয়ার করার চেষ্টা করছি ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করব। কেন Keeway RKS 150 sports v1 বাইকটি পছন্দ হলঃ কিওয়ে একটি বহুজাতীক কোম্পানী। বর্তমানে কিওয়ের স্বত্যাধিকারী চায়নার কিউ জে কর্পোরেশন যারা ইতালীর বেনেলীর সাথেও প্রডাকশনে রয়েছে। এই মোটর সাইকেলের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ইতালী, রাশিয়া, চায়না, ভিয়েতনাম, দঃ কোরিয়া, তাইওয়ান এবং ইউনাইটেড কিংডোম এ কিওয়ের ফ্যাক্টোরীতে তৈরী করা হয়। ডিজাইন করা হয় মুলত ইতালী এবং জার্মানীতে, আর ডিজাইনার হিসাবে আছেন জার্মান, আর্জেনটাইন ও ইতালীয় ডিজাইনার।
ইতালীতে নিজস্ব গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র রয়েছে যেখানে বেনেলী এবং কিওয়ের গবেষণা ও উন্নয়ন এর কাজ করা হয়। কিওয়ে বাইক বিশ্বে ৮০টির ও বেশি দেশে রপ্তানী হচ্ছে। এশিয়া জোনের বাইকগুলোর যন্ত্রাংশ চায়নাতে ম্যানুফেকচার ও এসেম্বল করা হয় এবং বাংলাদেশে সহ এশিয়ার অন্যান্য দেশে রপ্তানী হয়। Keeway RKS 150 sports v1 ডিজাইন এবং বিল্ড কোয়ালিটিঃ বাইকটির ডিজাইন এতটাই আকর্ষণীয় যেকোন যায়গায় মানুষের কৌতুহলী প্রশ্নের স্বীকার হতে হয় বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের নিকট খুবই জনপ্রীয় বাইকটির ডিজাইন, এতে রয়েছে আন্ডার ট্যাংক কিট, ইন্জিন গার্ড কিট যা অত্যান্ত আকর্ষনীয়, বিশেষ করে আমি হেড ল্যাম্পের ডিজাইনের ভক্ত। বিল্ড কোয়ালিটি সম্পর্কে বলতে এক কথায় অসাধারন, প্লাস্টিক কিট গুলো উন্নত মানের শক্ত প্লাস্টিক দ্বারা তৈরী যা খুব সহজে ভাংবে না বা ফাটবে না আমার কয়েকটি ছোট বড় গর্তে পড়ার খারাপ অভিজ্ঞতা রয়েছে কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ বাইকের কোন ধরনের ক্ষতি হয় নি।
Keeway RKS 150 sports v1 বিশেষ ফিচারর্স সমুহঃ এটির সামনে ২৩০ মিঃমিঃ ডিস্ক ও পিছনে ড্রাম ব্রেক যা আমাকে অসাধারন ব্রেকিং দিচ্ছে, এতে আছে ডিজিটাল স্পিডও এবং এনালগ রেভ কাউন্টার, গিয়ার সিফটিং ইন্ডিকেটর, ক্লক, ফুয়েল ইন্ডিকেটর, ট্রিপ ও ওডো কাউন্টার। সামনে টেলিস্কোপিক শক আর পিছনে মোনো শক (এডজাস্টেবল) এবজোরভার যা আরাম দায়ক, সিটিং পজিশন আমার উচ্চতা অনুয়ায়ী সঠিক এবং হাইওয়ে বা লং ট্যুরিংয়ে কোন ব্যাকপেইন হয় না। পিলিয়ন সিটটি সুপ্রসস্ত ও স্প্লিটিং টাইপ সিট হওয়ায় পিলিয়ন অত্যান্ত আরামে বসতে পারে, এর ১৬ লিটারের বড় ফুয়েল ট্যাংক লং ট্যুরিংয়ে অনেক কন্ফিডেন্ট দেয়, এর আরেকটি মজার বিষয় হল গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স এত বেশী (১৮০ মিঃমিঃ) যে আমি ভারী পিলিয়ন (অতিরিক্ত যাত্রী ঝুকিপুর্ন) নিয়েও কখনো কোন স্পিড ব্রেকারে ইন্জিন কিট লেগে যায়নি, এটার সামনে ৯০/৯০/১৭ আর পিছনে ১২০/৮০/১৭ সাইজের টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে যা ভেজা, শুকনা বা অফরোডে রাইড করেছি কোন সমস্যা ছাড়াই, কর্নারিং এবং ব্রেকিং এ আত্মবিশ্বাস দিয়েছে।
Keeway RKS 150 sports v1 ইঞ্জিনের শক্তি, গতি ও স্থায়ীত্বঃ এর ইঞ্জিন থেকে ১২.৮ এন.এম টর্ক ৭৫০০ আর.পি.এম ও ১৪.০ বি.এইচ.পি ৯৫০০ আর.পি.এম উৎপাদিত হয় যা আমাকে অনেক আত্মবিশ্বাস দিয়েছে সিটি কিংবা হাইওয়েতে ওভারটেকিং বা স্মুদলি চালানোর জন্য। এর ইঞ্জিন অনেক স্মুদ এবং সাউন্ডটা ইউনিক। আমি এই বাইকদিয়ে অসংখ ছোট বড় ট্যুর দিয়েছি। আমি এই বাইকটি দিয়ে ৩য় গিয়ারে ৯৩ কিমি প্রতি ঘন্টা, ৪র্থ গিয়ারে ১০৬ কিমি প্রতি ঘন্টা (শুধু রাইডার) এবং ৫ম গিয়ারে ১১৮ কিমি প্রতি ঘন্টা (পিলিয়ন সহ) সর্বচ্চো গতি তুলতে সক্ষম হয়েছি, তবে কিওয়ে গ্রুপের একজন রাইডার সর্বচ্চো ১২৯ কিমি প্রতি ঘন্টা (পিলিয়ন ছাড়া) তুলতে সক্ষম হয়েছেন। আমার এই ১ বছরে আলহামদুলিল্লাহ ইঞ্জিন এ কোন কাজ করাতে হয় নাই। ইঞ্জিন এর রং এর স্থায়ীত্বও অনেক বেশী। আমি সিটিতে ৪২+ ও হাইওয়েতে ৪৮+ মাইলেজ পেয়েছি। আমি আমার বাইকের জন্য মতুল ১০/৪০ ফুল সিন্থেটিক ব্যবহার করছি ও প্রয়োজনে নিয়োমিত সার্ভিসিং করাচ্ছি। বাইকটির ইঞ্জিন ৬-৭ হাজার আর.পি.এম এ খুবই স্মুদ যেকোন গিয়রেই, আর বাকিটা কিছুটা এগ্রেসিভ কিন্তু কোন ভাইব্রেশন ফিল হয় না।
Keeway RKS 150 sports v1 নিয়ে ভ্রমণঃ আমি একজন ভ্রমণ পিয়াসি মানুষ, আমি এই বাইক কেনার আগেও সাইকেল এ চড়ে অনেক যায়গা ভ্রমণ করেছি। কিওয়ে আর.কে.এস. ১৫০ স্পোর্টস আমার এই সখে আরো নতুন মাত্রা যোগ করেছে, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কিওয়ে গ্রুপের সাথে বেশ কয়েকটি বড় ছোট ট্যুরে অংশগ্রহন করার সুযোগ হয়, তাছাড়াও আমি নিজেও ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলা ঘুরে বেড়িয়েছি, এইসকল ট্যুরে এই বাইক আমাকে অনেক আত্মবিশ্বাস যুগিয়েছে। আমার এই বাইকটি দিয়ে উল্লেখযোগ্য ভ্রমণ গুলোর মধ্যে রয়েছে- ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা, ঢাকা-কুমিল্লা, কুমিল্লা-বি-বাড়িয়া, কুমিল্লা-ভৈরব-ঢাকা, ঢাকা-মাওয়া-মৈনট, ঢাকা-মানিকগন্জ, ঢাকা-নাঃগন্জ ইত্যাদি।
Keeway RKS 150 sports v1 কিছু খারাপ লাগাঃ সব কিছুরই ভাল খারাপ দিক থাকে এই বাইকটিও ভিন্ন নয়, এর সব থেকে খারাপ লেগেছে সাইড স্ট্যান্ড যেটি একটু খাড়া, মিটার কেবলটার কোয়ালিটি ভাল না আমাদের লটের বাইক গুলার সমস্যা ছিল (যদিও বর্তমানে সমস্যা সমাধান করেছে), হ্যান্ডলটা বেশী আপ রাইট মনে হয়েছে আমি বদলিয়ে নিয়েছি, চেইন স্প্রোকেট এর কোয়ালিটি আর একটু ভাল করা উচিৎ, টায়ার টিউবলেস ছিলনা আমি করে নিয়েছি (ভি-২ তে টিউবলেস), হর্ন আওয়াজ কম ছিল (অবশ্য এটা ইউরোপের প্রক্ষাপটে তৈরী) আমি পি-৭০ লাগিয়েছি।
উপসংহারঃ সব কিছু বিবেচনা করলে আমি রিতিমত Keeway RKS 150 sports v1 ফ্যান হয়ে গেছি, দিন যতই যাচ্ছে ততই বোধই এই মেশিনটাকে ভালবেশেই যাচ্ছি। অনেক নামি দামি বাইকের মধ্যে আমার সাধ্যের মধ্যে এর থেকে ভাল অপশন বোধয় আমার কাছে ছিল না। আমার সবগুলো মত হয়ত সবার সাথে মিলবে না মিলারও কথা নয় তবে আমি শুধুমাত্র আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম যা আমি এই বাইকটি থেকে অর্জন করলাম, পরিশেষে সবার দীর্ঘায়ু কামনা করি, রাস্তায় আইন মেনে হেলমেট ও সেফটি গিয়ার পরে বাইক চালানোর পরামর্শ দিয়ে শেষ করছি।
T
Published by Saleh Bangla