Shares 2
Kawasaki KLX 150BF ইউজার রিভিউ – ৭০০০কিমি বাই সালেহ
Last updated on 31-Jul-2024 , By Ashik Mahmud Bangla
আমার দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় আমি সবসময়েই উল্লেখযোগ্য অফ-রোডিং সক্ষমতাসহ একটি ভালোমানের ডুয়েলস্পোর্ট মোটরসাইকেল চালাতে চেয়েছি। সেইসূত্রে আমি কয়েকটি অফ-রোড মোটরসাইকেল ব্যবহারও করছি। তবে কাওয়াসাকি যখন আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের বাজারে আসে তখন আমার সুপ্ত ইচ্ছাটুকু পূরনের একটি সুযোগ চলে আসে। তো আজ আমি এখানে Kawasaki KLX 150BF বাইকটি ব্যবহার করে নিজস্ব অভিজ্ঞতাগুলি আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। চলুন তবে আমার কাওয়াসাকি কেএলএক্স১৫০বিএফ ইউজার রিভিউ এ।
Kawasaki KLX150BF - ইউজার রিভিউ
বন্ধুরা, আমি বাংলাদেশের উত্তরের জেলা রংপুরের সালেহ; সাধারণ একজন মোটরসাইকেল ইউজার। ছেলেবেলার দিনগুলিতে আমি আমার বাবার Honda H100S CDI মোটরসাইকেলটি নিয়ে গ্রামের পথঘাটে সাধারন অফ-রোডে চড়ে বেড়াতে খুবই পছন্দ করতাম। বাইকটি কোনো অফ-রোড বাইক না হলেও সেই টু-স্ট্রোক মেশিনটি আমাকে চমৎকার কিছু ধূলিধুসরিত সোনালি মূহুর্ত উপহার দিয়েছিল।
ফলে প্রথমবয়স থেকেই সবসময়েই আমি একটি দুর্দান্ত অফ-রোড বাইক পেতে চেয়েছি। সময়ের সাথে সাথে আমি বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলই হাতে পেয়েছি। তবে শেষ অবধি ২০১৮ সালে আমি একদম নতুন Kawasaki KLX150BF বাইকটি আমার হাতে পাই। আমার রাইডিং ভলিউম তেমন বিস্তৃত নয়; অর্থাৎ আমি সাধারণ একজন ডেইলি কমিউটার।
তবে Kawasaki এই অফরোড বাইকটি হাতে পাবার পর ইতিমধ্যে এর ওডোমিটারে প্রায় ৭০০০কিমি উঠে গেছে। এই মাইলেজের মধ্যে আমি বেশ কয়েকটি সিম্পল ও রাফ ট্রেইল, পাহাড়ী ট্রেইল, সিঙ্গেল ট্রেইল, এবং বেশ কিছু সিটি হাইওয়েতে বাইকটি চালিয়েছি। বিচিত্র এইসব পথে বাইকটি চালানোর অভিজ্ঞতাটা আমার কাছে খুবই অনবদ্য। সুতরাং সেই অভিজ্ঞতাটুকু আপনাদের সাথে শেয়ার করতে আমার ভালোই লাগবে।
রাইডিং ইরগনোমিক্স, কন্ট্রোল এন্ড কম্ফোর্ট
শুরুতেই আমার মনেহয় এই বাইকটির রাইডিং ইরগনোমিক্স তথা কন্ট্রোল ও কম্ফোর্ট সম্পর্কে কয়েকটি বিষয় শেয়ার করা উচিত। KLX150BF সম্পূর্ণরূপে একটি ডার্ট-প্রোফাইলযুক্ত ডুয়েলস্পোর্ট বাইক। মোটরসাইকেলটির প্রোফাইল একদম স্লিক ও স্লেন্ডার, যাতে মূলত: সলিড ডার্ট বা মটোক্রস বাইকের সাধারন বৈশিষ্ট্যগুলো প্রতিফলিত হয়েছে। ফলে এটিকে সলিড এনড্যুরো স্টাইলের ট্রেইল-বাইক বলাই যুক্তিযুক্ত।
বাইকটি অত্যন্ত হালকা ওজনের আর বেশ চটপটে ধরনের। রাইডিং এবং কন্ট্রোলিং মোড সম্পূর্ণ আপরাইট। এর সামনের 21" এবং পিছনের 18" সাইজের এনড্যুরো স্ট্যান্ডার্ড বড় হুইল অফ-রোডিংয়ে খুবই ভালো সুবিধা দেয়। আর লং-ট্রাভেল সাসপেনশনগুলো যেকোনও ধরনের সারফেসে দুর্দান্ত সাপোর্ট দেয়। আর সামনের USD-Suspension খারাপ রাস্তাতো বটেই, এমনকি সমান পিচ-রাস্তায় এবং আকষ্মিক ব্রেকিংয়েও অত্যন্ত ভালো পারফর্মেন্স দেয়।
সুতরাং, বাইকটি সলিড স্ট্রিট ও রাফ অফ-রোড যেকোন ধরনের পথেই নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত সহজ। এছাড়াও ব্যস্ত শহরের টাইট-ট্র্যাফিকে চলাচল খুবই মজার। শহরের বিজি ট্রাফিক মোকাবেলায় আমাকে তেমন কোনও ঝামেলাই পোহাতে হয়না।
তবে একটি জিনিস অনেককেই বিরক্ত করতে পারে, আর তা হলো এর হাইয়ার স্যাডল-হাইট আর নবি-টায়ারের টায়ারের ঝাঁকুনি। তো কেউ যদি অফ-রোড বাইকের এসব বৈশিষ্ট্যের সাথে অভ্যস্ত না হয় তবে অবশ্যই এটি তার রাইডিং-প্লেজার নষ্ট করে দিতে পারে।
কম্ফোর্ট লেভেলের বিচারে আমি KLX150BF এর সাথে অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। তবে প্রথমদিকে এটি এখনকার মতো আরামদায়ক ছিল না। ইঞ্জিনের ভাইব্রেশন, বিশেষত থ্রটল বাড়ানো ও কমানোর সময় বলতে গেলে অত্যন্ত অসহনীয় ছিলো। এছাড়াও সেময়ে এর সাসপেনশনের রিজিডিটি ফ্ল্যাট-সারফেসে বাইকটি চালানো মজাটি কিছুটা হলেও নষ্ট করে দিতো।
তবে পরবর্তীতে ৩০০০ কিলোমিটার বয়স পার হবার পর পিরিয়ডিক মেইনটেন্যান্সের সাথে সাথে পর্যায়ক্রমে ইঞ্জিনের-নকিং ও ভাইব্রেশন অনেকটাই কমে যায়। সেইসাথে এর টায়ার-নবগুলির ধার কিছুটা ক্ষয়ে যায় ও সাসপেনশনগুলো আমি কিছুটা এডজাষ্ট করে নেই। ফলে এখন আমি আমার কেএলএক্স এর কম্ফোর্ট-লেভেল নিয়ে অত্যন্ত খুশি। তবে হ্যাঁ, আর একটি জিনিস যা অনেককেই বিরক্ত করতে পারে সেটি হলো এর হার্ড-কুশনড ফ্ল্যাটেনড স্ট্রেইট সিট; এটুকই।
রাইডিং এন্ড কমিউটিং এক্সপেরিয়েন্স
KLX150BF বাইকটি প্রায় ৭০০০ কিলোমিটার চালিয়ে আমার মনে হয় বাংলাদেশের বেশিরভাগ চালকের জন্যে এটি আহামরি কোন বাইক নয়। এটি খুব সাধারন একটি কমিউটার বাইক যাতে চমৎকারভাবে এন্ট্রি-লেভেল অফ-রোডিং ফিচারগুলি সমন্বয় করা হয়েছে।
তবে বাংলাদেশের মোটরসাইকেল ইঞ্জিন-ক্যাপাসিটি লিমিটেশন আইন সাপেক্ষে এন্ট্রি-লেভেল বাইক ব্যবহার ছাড়া আমাদের আর কোন উপায়ও নেই। তবে অফ-রোড-ফোকাসড ইউজারদের জন্য কেএলএক্স১৫০বিএফ একটি ভাল প্যাকেজ।
এই বাইকটি স্ট্রিট ও হাইওয়েতে চালাতে বেশিরভাগ স্ট্রিট-ফোকস্ড রাইডার অত্যন্ত বিরক্ত বোধ করতে পারেন। কেউ কেউ এর হার্ড-কুশনড সিট আর লোয়ার টপ-স্পিড নিয়ে অবশ্যই অভিযোগ করতে পারেন। তবে আমার কাছে এটি একটি রোমাঞ্চকর বাইক যা আমাকে যে কোনও জায়গায় যাওয়ার স্বাধীনতা দেয়।
সবচেয়ে খারাপ ট্র্যাফিক জ্যামেওে আমি বাইকটি নিয়ে এগিয়ে যেতে পারি। কেবল একটি ছোট সরু জায়গাই আমার জন্যে যথেষ্ট। এছাড়াও এর উল্লেখযোগ্য হালকা ওজন ও সহজ ম্যানুয়েভারিং এটিকে সহজে নিয়ন্ত্রণ করার মতো একটি দুর্দান্ত প্রোফাইল দিয়েছে।
আর অফ-রোডের ক্ষেত্রে KLX150BF আমার কাছে একটি সলিড ব্যালান্সড ও ওয়েল-ডিজাইনড ট্রেইল-মেশিন। সত্যিই এটি তেমন আহামরি পারফর্মেন্সের কোনো বাইক নয়। তবে আমার কাছে এটি স্মার্ট অফ-রোডিং ফিচারের সক্ষম একটি মোটরসাইকেল। লো-আরপিএম এ এর পাওয়ার ডিষ্ট্রিবিউশন যথেষ্ট দুর্দান্ত।
এটি আক্ষরিক অর্থেই ফান-ফ্যাক্টর তৈরি করতে পারে। মিড আরপিএম পর্যন্ত এর টর্ক এর ধাক্কা অনুভব করা যায়। তবে এরপরে এটি অনেকটাই খটখটে শুকনো। আর হাই এলিভেশনে টেকনিক্যাল হিল ক্লাইম্বে এটির ব্যালান্স-ফ্যাক্টর ও লো-আরপিএম ক্যাপাবিলিটি দিয়ে উৎরানো গেলেও আন্ডার-পাওয়ার যথেষ্টই ভোগায়।
ওভারঅল পারফর্মেন্স
সামগ্রিক মূল্যায়নে, আমার কাছে, KLX150BF সাধারন পরিসরে চালানোর জন্যে যথেষ্ট ভাল একটি বাইক। এতে আমি খুব সহজেই যাতায়াত করতে পারি, ঝামেলা-মুক্তভাবে চলতে পারি, আর আমার যেখানেই ইচ্ছা যেতে পারি। আর আরো উপভোগ্য বিষয় হল এর মেইনটেন্যান্স খুব সহজ ও সাধারন। ইঞ্জিন পারর্ফম্যান্সের ক্ষেত্রে আমি কেবল টেকনিক্যাল ট্রেইল-রাইডে খাড়া ঢাল ও বেশি উচ্চতায় ইঞ্জিন পাওয়ারের ঘাটতি পেয়েছি।
বাইকটি আপার মিড-আরপিএমের কাছাকাছি একদমই সাধারন আচরন করে। আর এই রেঞ্জে এটি চরম কিছু মোকাবেলা করতে মোটামুটি ব্যর্থই বলা যায়। তবে মজার বিষয় হলো এর লোয়ার আরপিএম ক্যাপাবিলিটি দিয়ে এই ঘাটতি অনেকটাই পুষিয়ে নেয়া যায়। আর এক্ষেত্রে ফাইনাল-ড্রাইভ স্প্রোকেট রেশিওর পরিবর্তনে আমি এর ঘাটতি পুষিয়ে অনেকটাই কার্যকর ফলাফল পেয়েছি।
তবে এখানে একটি বিষয় আমার পরিস্কারভাবে উল্লেখ করা উচিত যে, বাইকটির পেছনের ব্রেকিং সিস্টেমটি এর সবচেয়ে খারাপ একটি অংশ। এর পেছনের ব্রেক-ডিস্কটি খুবই ছোট, ফলে এটি সামনের ব্রেকের মতো ভালো কাজ করে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমি ব্রেক চেপে রিয়ার-হুইল লক করতে ব্যর্থ হয়েছি। এই মজাটা আমি সবসময়েই মিস করি। সোজাভাবে বলতে গেলে আমি এর পেছনের ব্রেক নিয়ে একদমই হতাশ।
ইঞ্জিন পারফরম্যান্সের বিচারে আমার কাছে বাইকটির পাওয়ার ডেলিভারি ও ইনিশিয়াল এক্সিলারেশন বেশ ভালো মনে হয়। এটি মিড-আরপিএম পর্যন্ত বেশ দ্রুতই এক্সিলারেট করে। এর থ্রটল রেসপন্স বেশ চমৎকার। আমি সলিড স্ট্রিটে এতে সর্বোচ্চ 105kmph গতি তুলতে পেরেছি। আমার কাছে এতে 85-90kmph গতিতে সাচ্ছন্দে রাইডিং খুবই মিষ্টি মনে হয়। তবে এর ওপরে গতি তুললে বলা যায় এটি নরকের মতো ভাইব্রেশন দেয়।
ফুয়েল ইকোনমির ক্ষেত্রে বাইকটি বেশ চমৎকার এবং স্ট্যাবল 32kmpl ফুয়েল-মাইলেজ দেয়। খুব রাফ ও কন্টিনিউয়াস থ্রটলেও এটি 28kmpl এর নিচে যায় না। তবে খুব স্মুথি কমিউটিংয়ে এটি ভালোভাবেই 36kmpl এর ফুয়েল মাইলেজ দেয়। আর যাইহোক আমি কেএলএক্স এর ফুয়েল-ট্যাঙ্কের লো-ক্যাপাসিটিতে কিছুটা হলেও বিরক্ত। তবে বাইকটির বাকি বিষয়গুলি আমার কাছে ভালোই লেগেছে।
Kawasaki KLX150BF এর দোষ-ত্রূটি
আমি বেশ কয়েকবারই উল্লেখ করেছি যে কাওয়াসাকি কেএলএক্স১৫০বিএফ তেমন আহামরি পারফর্মেন্সের কোন বাইক নয়। তবে এটি এর সীমার মধ্যে একটি ক্যাপাবল ট্রেইল মেশিন। বাইকটির উচ্চমূল্যের বিপরীতেও এর এডভান্সমেন্টেগুলোতে আমি খুশি। তবে চালানোর অভিজ্ঞতা থেকে আমি বাইকটির বেশ কিছু ত্রূটি ও দুর্বলতা পেয়েছি। ত্রূটি ও দুর্বলতাগুলি নিচে দেয়া হলো।
- ১৫০সিসি সেগমেন্টের মোটরসাইকেল হিসেবে এটি একটি আন্ডার-পাওয়ারড মেশিন।
- মিড-আরপিএমের পরে টর্কের অনুভুতি একদমই কম।
- ইঞ্জিনটি শুরুতে প্রথম ৩০০০ কিলোমিটারের দিকে প্রচুর ভাইব্রেশন দেয়।
- ইঞ্জিনের ভাইব্রেশন পরবর্তীতে এক্সিলারেশন বাড়ানো কমানোর সাথে সাথে ও গিয়ার ট্রানজিশনের সময়ও অব্যাহত থাকে।
- রিয়ার-ইন্ডিকেটর ও প্যানেল মাউন্টিং বেশ খারাপ।
- সিটটি একদমই ফ্ল্যাট, স্ট্রেইট, ও হার্ড-কুশনড।
- ফুয়েল-ট্যাঙ্কের ক্যাপসিটি বেশ কম।
- পেছনের ব্রেকটি কোন কাজেরই না। এটি আমাকে মোটেও খুশি করতে পারেনি।
- বাইকটির দাম বাংলাদেশের বাজার অনুযায়ী একটু বেশি। স্পেয়ার পার্টসের দামও অনেক বেশি।
Kawasaki KLX150BF ইউজার রিভিউ
তো বন্ধুরা মোটামুটি এই ছিলো আমার কাওয়াসাকি কেএলএক্স১৫০বিএফ ইউজার রিভিউ। আমি চেষ্টা করেছি আমি প্রায়শই যেসব প্রশ্নের সম্মুখীন হই সেই বিষয়গুলো আলোকপাত করতে। পরিশেষে আরও একবার বলতে চাই যে, এটি উচ্চমূল্য এবং অল্প পাওয়ার নিয়ে তেমন আহামরি কোন বাইক নয়। তবে যাই হোক, আমার মতো এন্ট্রি-লেভেলের ইউজারদের সন্তুষ্ট করার জন্য এটি নি:সন্দেহে একটি দুর্দান্ত প্যাকেজ। আমি এটি নিয়ে অনায়াসে যে কোনও রাস্তায় নেমে যেতে পারি। সলিড রোড বা অফরোড নির্বিশেষে কেএলএক্স আমাকে সহজেই আমার ফ্রি স্পেসে নিয়ে যায়। এটাই আমার কাছে সবচেয়ে আনন্দের বিষয়!
T
Published by Ashik Mahmud Bangla