Shares 2

Honda XBlade 4500 কিলোমিটার রাইড রিভিউ - ইমতিয়াজ উদ্দিন

Last updated on 13-Jul-2024 , By Ashik Mahmud Bangla

আমি মোঃ ইমতিয়াজ উদ্দিন । আজ আমি আমার হোন্ডা এক্স ব্লেড বাইকটি নিয়ে আপনাদের কিছু কথা শেয়ার করবো । আমার Honda Xblade 160 বাইকটি বর্তমানে ৪৫০০ কিলোমিটার রাইড করেছি। আমি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) বিবিএ তে অধ্যায়নরত আছি । আমি চট্টগ্রাম হালিশহর জি ব্লক বসবাস করি ।

ছোটবেলা থেকে আমার সাইকেল এবং বাইকের প্রতি খুবই আগ্রহ । আমি যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি তখন আমার বাবা আমার জন্য একটি সাইকেল নিয়ে আসেন বাবার হাত ধরেই আমার সাইকেল চালানো শিখা। ক্লাস টেনে যখন পড়ি তখন এলাকার আমার এক বন্ধু (তামিম) তার বাবার হিরো হোন্ডা বাইকটি চালাতে । বিকালে খেলতে গেলে তামিম মাঝে মাঝে আমাকে বাইক দিয়ে আমার বাসা পর্যন্ত নামিয়ে দিয়ে যেত । আমারও খুব ইচ্ছা হতো বাইক চালানোর কিন্তু আমি বাইক চালাতে পারতাম না তখন । কলেজে যখন উঠি তখন মনের মধ্যে জেদ ধরে বসে ছিলাম বাসা থেকে যদি বাইক কিনে না দেয় নিজেই নিজের জমানো টাকা দিয়ে বাইক কিনে ফেলব । যদিও বাইক বাসা থেকে না দেয়ার পেছনে যে মূল বাধা ছিল সেটি হল বয়স । তাও মন কি আর বয়সের কথা শুনে ।

কলেজে উঠার পর থেকে‌ টাকা জমানো শুরু হয়ে যায় আমার । দীর্ঘ দুই বছর স্কুল কোচিং এ যাওয়ার সময় বাসা থেকে যে টাকা নিতাম এবং আরো অন্যান্য টাকা মিলে সর্বমোট আমার কাছে ৩০,০০০ টাকা জমা হয়েছিল । তখন আমি আমার এক এলাকার বড় ভাই থেকে তার পুরনো Yamaha RX100 বাইকটি কিনি। এটাই ছিল আমার জীবনের প্রথম বাইক। যদিও বাইক চালাতে পারতাম না তাই বাইক কেনার পরে বাইক চালানো শিখি। 

Also Read: Honda XBlade 160 নিয়ে ভ্রমন কাহিনী

বাইকের সম্পর্কে আমার মোটামুটি অনেক ভালো ধারনাই ছিল কিভাবে কিভাবে চালাতে হবে। তাই শেখার সময় আমার তেমন কোনো অসুবিধা হয়নি। প্রায় এক বছরের মতো বাইকটি চালাই আমি। অনেক ভালো আয়ত্ত্ব করে নিয়েছিলাম বাইক চালানো । কলেজ শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় উঠার পর একটা ভালো বাইক কিনার মনের মধ্য অনেক আগ্রহ জাগে। বাসায় অনেক বাবা মাকে বোঝানোর পর ২ লক্ষ টাকা বাজেট করি বাইক কেনার জন্য।

   

বাংলাদেশের বাজারে অনেক ধরনের বাইক আছে ২ লাখ টাকার বাজেটের। আমি সারাদিন কোন বাইকের কোন দিকটি ভালো এবং কোন বাইকের স্পেসিফিকেশন কেমন তা দেখে বাইক কোনটা কেনা যায় তা খুজতাম । 

আমি সাধারণত বাইকের মধ্যে যা খুজতাম তা হলো বাইকেরঃ

  • লুক
  • কমফোর্ট
  • রেডি পিকআপ
  • মাইলেজ

অনেক খোঁজাখুঁজির পর Honda XBlade 160 কেনার ইচ্ছা জাগে। অবশেষে ২০১৯ এর ডিসেম্বর এর ৩১ তারিখে আমি চট্টগ্রামের হালিশহর সাহা কর্পোরেশন হোন্ডা ডিলারশিপ থেকে হোন্ডা এক্স ব্লেড বাইকটি কিনি। বাইক কিনার সময় আমার বাবা-মা আমার এক বন্ধু যায়। আমার বাবা-মা রিসিপশনে টাকা জমা দিচ্ছিল এবং আমার কাগজপত্র গুলো জমা দিচ্ছিল। আর আমি আর আমার বন্ধু সার্ভিস সেন্টার ছিলাম আমার বাইকের নতুন ব্যাটারি এবং যাবতীয় সব কাজ ঠিক করে দিচ্ছিল আমি আনন্দের সাথে তা দেখছিলাম।

সব কাজ শেষে আমি বাইক নিয়ে একটা রাউন্ড দিয়ে আসি তখন আমার বাবা মা আমাকে একটা কথাই বলল সাবধানে বাইক চালাতে এবং সব সময় হেলমেট পরতে। আমার বাইকটির বয়স ২ মাস ২০ দিন হতে চলেছে যদিও এটি খুবই অল্প সময়। আর এই অল্প সময়টুকুতে আমি আমার বাইকটি‌ প্রায় ৪৫০০ কিলোমিটার অতিক্রম করেছি।৪৫০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করার সময় এখন পর্যন্ত বাইকের কোন কিছু পরিবর্তন করতে হয়নি।

Honda XBlade 160 এর স্পেসিফিকেশন যদি বলিঃ

হোন্ডা এক্স ব্লেড এ দেয়া হয়েছে ১৬০সিসি এর ইঞ্জিন। ইঞ্জিনটি ১৬২.৭১ সিসি এইচইটি সিংগেল সিলিন্ডার, এয়ার কুল্ড ইঞ্জিন যেটা ম্যাক্স পাওয়ার ১৩.৯৩ বিএইচপি@ ৮৫০০ আরপিএম এবং ম্যাক্স টর্ক ১৩.৯ এনএম@৬০০০ আরপিএম উৎপন্ন করতে পারে।

আরও পড়ুনঃ হোন্ডা সিবি হর্নেট ১৬০আর ভার্স হোন্ডা এক্সব্লেড ফিচার কম্পারিজন

এছাড়া MRF ব্রান্ডের টিউবলেস টায়ার ব্যবহৃত হয়েছে। সামনে ৮০ সেকশন এবং পিছে ১৩০ সেকশনের টায়ার ব্যবহৃত হয়েছে। সামনের দিকে টেলিস্কোপিক সাস্পেনশন এবং পিছে মনোশক সাস্পেনশন ব্যবহৃত হয়েছে। ভালো কন্ট্রোলিং ও সেফটির জন্য সামনের চাকায় ২৭৬ মিমি এর ডায়ামিটার ডিস্ক প্লেট এবং পেছনের চাকায় ১৩০ মিমি ড্রাম ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে। 

এই বাইকের আকর্ষণীয় নতুন ফিচারসগুলো হচ্ছে -

  • রোবো ফেস এলিডি হেডল্যাম্প
  • স্ট্রিট টেক ডিজিটাল মিটার
  • ডুয়াল আউটলেট মাফলার
  • র‍্যাজর এজ এলইডি টেল ল্যাম্প
  • এগ্রেসিভ ও মাস্কুলার ফুয়েল ট্যংকার
  • আরামদায়ক সিট এবং গ্রাবরেল
  • হ্যাজারড সুইচ
  • লো মেইন্টেনেন্স সিল চেইন
  • সার্ভিসিং

বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেড রিকোমেন্ড করে ৪ টি ফ্রি সার্ভিস গ্রহন করতে । আমি ইতোমধ্যেই ২ টি ফ্রি সার্ভিস গ্রহন করেছি , প্রতিটিই হোন্ডার ডিলারশিপ থেকে নিয়েছি । প্রতিটি সার্ভিস নিয়ে আমি বেশ সন্তুষ্ট। প্রতিবারই আমি ছোটখাটো যেসব সমস্যার কথা বলেছি , তারা প্রতিটি সমস্যার সমাধান করে দিয়েছে । 

ইঞ্জিন অয়েলঃ ইঞ্জিন লুব্রিকেন্ট এর কথা যদি বলি, প্রথম থেকে আমি Motul 10w30 গ্রেডের ইঞ্জিনে অয়েল ব্যবহার করে আসছি । প্রথমদিকে আমি মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি এরপর সেমি সিন্থেটিক ব্যবহার করি বর্তমানে আমি ফুল সিন্থেটিক ব্যবহার করছি । আশা করছি ফুল সিন্থেটিক ইঞ্জিন অয়েল আমাকে ২৫০০/৩০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত সাপোর্ট দিবে । বর্তমানে ফুল সিন্থেটিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করে আলহামদুলিল্লাহ ভালো সার্ভিস পাচ্ছি ।

 মাইলেজঃ চট্টগ্রামের ব্যস্ত রাস্তার জ্যাম এর মধ্যে চলাচলের পরেও আমি ৪৩/৪৪ কিলোমিটার মাইলেজ পাই এবং হাইওয়েতে আমি প্রায় ৫০ কিলোমিটার মাইলেজ পেয়ে থাকি । যদিও মাইলেজের ব্যাপারটা যার যার বাইক চালানোর ধরনের ওপর নির্ভর করে থাকে । 

টপ স্পিডঃ চট্টগ্রামের হালিশহর থেকে সি-বিচ যাওয়ার জন্য একটি রোড রয়েছে । সাধারণত রাস্তাটি সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত না হওয়ার কারণে গাড়ি চলাচল তেমন একটা হয় না । আমি এ রাস্তায় আমার বাইকের টপ স্পিড তুলে দেখি । সর্বোচ্চ ১৩০ কিলোমিটার/ঘন্টা বেগে বাইকটি চালাতে আমি সক্ষমহই ।

  

আমার চোখে দেখা হোন্ডা এক্স ব্লেড এর কিছু মন্দ দিকঃ

  • সামনের চাকার মার্ড গার্ড টি বৃষ্টিতে তেমন একটা সাপোর্ট দেয় না ,অনেক কাদা উঠে আসে যা ইঞ্জিনের গার্ড পর্যন্ত চলে যায় ।
  • শারি গার্ডটি খুবই সুন্দর কিন্তু তাতে বর্ধিত ফুট রেস্ট থাকলে আরেকটু ভালো হতো। মহিলা পিলিয়নদের বসতে কষ্ট হত না ।
  • সামনের চাকার সাইজ ৯০ সেকশনের দিলে ভালো হতো ।
  • সামনের ফর্ক দুটা আরো একটু মোটা হলে ভালো হতো ।
  • ইঞ্জিন সাউন্ডটা আরেকটু উন্নত হওয়ার দাবি রাখে।
  • সাইড স্ট্যান্ডটি খুবই খারাপ , মনে হয় বাইক পার্কিং করে রাখলে এখনই পড়ে যাবে ।

আমার চোখে দেখা হোন্ডা এক্স ব্লেড এর পাঁচটি ভালো দিকঃ

  • কম্ফর্ট এর দিক দিয়ে খুবই ভালো।
  • অসাধারণ রেডি পিকআপ।
  • বেটার মাইলেজ এবং হাইস্পিড স্টেবিলিটি।
  • সব ধরনের রাস্তায় ভালো সাপোর্ট দিয়েছে।
  • স্টাইলিশ লুক এবং মাসকুলার বডি তার সাথে রয়েছে অসাধারণ মিটার।

এখন পর্যন্ত Honda XBlade 160 বাইকে আমার কোন লং রাইড দেয়া হয়নি । কিন্তু ভবিষ্যতে লং রাইড দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে । আশা করছি বাইকটি আমাকে লং রাইডে কোন প্রকার হতাশ করবে না। পরিশেষে বলতে পারি হোন্ডা এক্স ব্লেড বাইকটি বর্তমানের সব ধরনের বাইক রাইডারদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে । সাবধানে বাইক রাইড করবেন। সবসময় বাইক চালানোর সময় হেলমেট পরিধান করুন। ট্রাফিক আইন মেনে চলুন। ধন্যবাদ।   লিখেছেনঃ ইমতিয়াজ উদ্দিন   আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।

Published by Ashik Mahmud Bangla