Shares 2
Honda XBlade 160 ৪,৫০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - মোহাম্মদ নিপুণ
Last updated on 11-Jul-2024 , By Ashik Mahmud Bangla
আমি মোহাম্মাদ নিপুন । আমি দিনাজপুর সদরে থাকি । আজ আমি আমার Honda XBlade 160 বাইকটি নিয়ে ৪৫০০ কিলোমিটার রাইড নিয়ে আপনাদের সাথে কিছু কথা শেয়ার করবো। বর্তমানে আমি একজন ছাত্র। আমি আমার বাইকটি দিনাজপুর থেকে কিনেছি।
ছোট বেলায় আমি আব্বুকে বাইক চালাতে দেখে খুব ছোট থেকেই আমার বাইক চালানোর ইচ্ছা হতো । আব্বুর সাথে বাইকে বসে হ্যান্ডেল ধরতাম। হটাৎ একদিন ডিস্কোভার ১৩৫ দিয়ে আব্বুর কাছে বাইক চালানো শিখি। প্রথম দিনেই শিখে ফেলেছিলাম পরে ৭/৮ দিন মাঠে চালিয়েছি। তারপর ফাকা রাস্তায় এভাবেই আস্তে আস্তে রোডে উঠেছি বাইক নিয়ে। আমি যখন বাইক চালানো শিখেছি তখন আমি ঠিকমত বাইকে বসলে মাটিতে পা পৌছাতো না। XBlade 160 এর আগে আমার পার্সোনাল বাইক ছিল Bajaj Discover 135 । বাইক আমার ছোট থেকেই খুব ভালো লাগতো আমার বাবাও বাইক ভালোবাসেন আর আমি ছোট থেকেই আব্বুর সাথে বাইকে ঘুরতাম এবং খুব কম বয়সেই বাইক চালাতে শিখেছিলাম।
Click To See - Honda X Blade First Impression
আমি ২০০৯ সালে বাইক চালানো শিখি। আমার জন্য আব্বু পরে Discover 135 বাইকটি কিনে দেয়। এটা নেওয়ার কারন ওই সময় বাজাজ ডিস্কভার ১৩৫ এর বেশ সুনাম করা বাইক ছিল কম খরচে বেশ ভালো টেকসই একটি বাইক ছিল।
হোন্ডা এক্স ব্লেড ১৬০ বাইকটি প্রথম বার স্টার্ট দিয়ে নিজের অনুভুতি প্রকাশ করার মত ভাষা আমার জানা নেই। অনেক ভালো লাগছিল। আমি খুবই এক্সাইটেড ছিলাম। যেদিন কিনেছি সারাদিন কিছু খাইনি বলতে গেলে পানি ছাড়া। আনন্দে আমার ঘুম আর খাওয়ার কথা মনে আসছিল না। রাত হলেই মনে হত কখন সকাল হবে আর বাইক চালাবো। অনেক ভালো লাগে বাইক চালাতে। আমি বাইক ভালোবাসি ছোট বেলা থেকেই ।
চলুন এবার Honda XBlade 160 গল্প বলি -
আসলে এক্স ব্লেড কেনার কোন উদ্দেশ্য আমার ছিল না। কারন আমার বাইক ছিল Yamaha FZS Fi V3। হটাৎ শহরে নতুন বাইক আসছে দেখতে গিয়েছি সবাই যেমন যায়। প্রথম দেখায় বেশ ভালো লেগে গেলো এবং আমার কাছে এর দাম পারফেক্ট মনে হয়েছে । আমার সাথে কিছু বাইকার ভাই ব্রাদার গিয়েছিল শোরুমে তাদের কথায় আর থাকতে পারলাম না, কিনে ফেললাম রাতেই। ব্যাপারটা আমারও সিনেমার মত মনে হয় কেমন করে বাইকটা কিনে ফেলি নিজেও জানি না এমন একটা ব্যাপার। এভাবেই হটাৎ করে আমি Honda XBlade 160 বাইকটি কিনে ফেলি লঞ্চ হওয়ার সাথে সাথেই।
শুরুতেই বলবো ব্রেকিং পিরিয়ড নিয়ে কিছু কথা । আমার কাছে বাইকের ব্রেকিং পিরিয়ডটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয় । আপনার বাইকের ব্রেকিং পিরিয়ডের উপর নির্ভর করবে এর পারফর্মেন্স মাইলেজ এন্ড ডিউরিব্লিটি । আমি আমার বাইকে ১৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ৫ হাজার আরপিএম এ রাইড করেছি। ১৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত নিয়ম মেনে স্মুথলি এক্সেলারেশন করেছি। প্রথম ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করেছি ২০৭ কিলোমিটারে এবং ২য় ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করেছি তখন ওডো ৬৮০ কিলোমিটার। এরপর ওডো ১৩৭৩ কিলোমিটার হলে ৩য় ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করি। ৪র্থ ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করিয়েছিলাম যখন, তখন আমার ওডো ছিল ১৮৭৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১ম সার্ভিস করিয়েছিলাম ওডো ৭৬৩ কিলোমিটার হবার পর। ১ম সার্ভিসের আগে আমার গিয়ের সিফটিং এ সময় সমস্যা হত। গিয়ার হার্ড ছিল। পরে সার্ভিস সেন্টারে তাদের কে বলার পর তারা গিয়ার লিভার খুলে গ্রিজ ও অয়েল দিয়ে ফ্রি করে দেয় ।
১ম সার্ভিসে যা যা করেছেঃ
আমি আমার বাইকটি দিনাজপুর থেকে কিনেছি । ১ম সার্ভিস দিনাজপুরেই করিয়েছি।
- হ্যান্ডেল এডজাস্টমেন্ট ।
- গিয়ার সিফটিং হার্ড ছিল কিছুটা ফ্রি করে দিয়েছিল ।
- বাইকের চেইন ক্লিন এডজাস্ট ও লুব করে দিয়েছিল।
- বাইকের ক্লাচ এডজাস্ট আছে কিনা চেক করেছে। ফ্রি প্লে এডজাস্ট করে দিয়েছে ।
- বাইকের সামনে পিছনের ব্রেক পেড চেক করেছে।
- টায়ার পেশার চেক করে দিয়েছে ম্যানুয়াল অনুযায়ী সামনের চাকায় ২৫ এবং পেছনের চাকায় ৩৩ হাওয়া দিয়ে দিয়েছে ।
- বাইকের সামনে পেছনের চাকা জাম আছে কিনা চেক করেছে ।
বাইকটা একজন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন টেকনিশিয়ান টেস্ট রাইড করে আমাকে দিয়েছে। ফ্রি সার্ভিস গুলো ছিল প্রশংসা করার মত ।হোন্ডা বাইকের ইঞ্জিন অয়েলের গ্রেড 10w30। শোরুম থেকে বলেছিল হোন্ডার ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করতে কিন্তু আমি ব্রেকিং পিরিয়ডে Motul 3000 10w30 প্রিমিয়াম মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি। ব্রেকিং পিরিয়ডের পরে Motul 7100 10w30 ফুল সিন্থেটিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি ।
বাইকের ব্যপারে কিছু বলিঃ
বাইকের সামনের চাকা বাইকের লুক অনুযায়ী কিছুটা চিকন হওয়ায় বাইকের ব্রেকিং নিয়ে আমার একটু চিন্তা হচ্ছিলো। ব্রেকিং কেমন হবে স্কিড করবে কিনা মনে অনেক চিন্তাই আসছিল। বাইকের ব্রেকিং পিরিয়ড চলছিলো বলে হাই স্পিডে ব্রেক টেস্টও করতে পারছিলাম না। পরে ওডো ১৬০০ কিলোমিটার পার করে যথাক্রমে ৬০/৭৫/৮০ কিঃমিঃ/ঘন্টা বেগে চালিয়ে ব্রেক করে ব্রেকিং টেস্ট করেছিলাম। প্রথম ৪/৫ বার ব্রেক করতে ভয় ভয় লাগছিল বাট এখন কিছুই মনে হয়না ব্রেকিং অনেক ভালোই লেগেছে আমার কাছে। চাকার সর্বোচ্চ গ্রিপ পেতে হলে আপনাকে ম্যানুয়াল অনুযায়ী টায়ার প্রেশার রাখতে হবে। চাকায় কম বেশি হাওয়া দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন। অন্তত সপ্তাহে ১ বার করে টায়ার প্রেশার চেক করাবেন। ম্যানুয়াল অনুযায়ী হাওয়া দেয়া থাকলে বাইকের ব্রেকিং কন্ট্রোল ব্যালেন্স মাইলেজ এবং টপ স্পিড সবই ভালো পাবেন।
আমি আমার বাইকের মাইলেজ পেয়েছি ৫০ কিলোমিটার প্রতি লিটার কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেয়েছি ৪৭ কিলোমিটার প্রতি লিটার। ৫০০০ কিলোমিটার পরে আবার একবার টেস্ট করবো। আমার মতে ৩ থেকে ৪ হাজার কিলোমিটার না চালিয়ে বাইকের মাইলেজ এবং টপ স্পিড চেক করা উচিৎ না। একটা বাইক সম্পুর্ন ভাবে ফ্রি হতে ৪০০০ থেকে ৫০০০ কিলোমিটার লেগেই যায় এতে কোন সন্দেহ নেই। ব্রেকিং এ আমি আমার বাইকের টপ স্পিড চেক করিনি তবে ৪ গিয়ারে একবার ১১৪ তুলেছিলাম আর পিলিয়ন নিয়ে ১০৫ তুলেছি । ৪০০০ কিলোমিটার পর টপ স্পিড চেক করি এবং এখন পর্যন্ত টপ স্পিড পেয়েছি ১২৩।
Honda XBlade 160 বাইকের কিছু ভালো দিকঃ
- ১,৭২,৯০০ টাকা দাম হিসাবে আমার কাছে মনে হয়েছে বাইকটি ভ্যালু ফর মানি।
- এই রেঞ্জের বাইকগুলো (বাজাজ পালসার,টিভিএস আর টি আর,হিরো হাংক) এর থেকে অনেক ভালো।
- বাইকের হেড লাইট LED এবং অন্ধকার রাস্তায় বেশ ভালোই সাপোর্ট দেয়। সামনে থেকে বাইকটি দেখতে বেশ ভালো লাগে যদিও সামনের চাকা একটু মোটা হলে আরও বেশি ভালো হতো বলে আমার মনে হয়।
- বাইকের ইঞ্জিন অনেক বেশি রিফাইন করা কোন বাজে সাউন্ড আসে না ইঞ্জিন থেকে। খুব স্মুথ সাউন্ড স্মুথ পার্ফমেন্স। আমার কাছে হোর্নেটের থেকে অনেক স্মুথ অনেক রিফাইন মনে হয়েছে যদিও স্পিড আর পাওয়ার হোর্নেটের বেশি ।
- এই বাইকের মাইলেজ বেশ ভালো বাজারের অন্যান্য কার্ব ১৬০সিসি বাইকের তুলনায় ।
- বাইকের সিট বেশ আরামদায়ক বলে আমার মনে হয়েছে ,আমি বেশ কম্ফোর্ট ফিল পাই এবং এর পিলিয়ন সিটও অনেক আরামদায়ক।
- বাইকের স্পিডো মিটারটা যেকোন বাইকারের নজরে পরার মতোই । Honda CBR 150R এর মিটার দেওয়া হয়েছে ।
- বাইকের ওভার অল লুক অনেক সুন্দর এবং আকর্ষণীয় বলে মনে হয় আমার কাছে।
- এই বাইকে আর একটি ফিচার দিয়েছে সেটা হলো হেজার্ড। যা হাইওয়েতে কিংবা ইমারজেন্সি সময়ে অনেক কার্যকর। বিশেষ করে যারা বাইক নিয়ে ট্যুরে যায় তাদের জন্য খুব ভালো হবে।
- এই বাইকের সুইচ কোয়ালিটি বেশ ডেভেলপ করেছে হোন্ডা কোম্পানি।
এত কিছু ভালোলাগার মধ্যে কিছু খারাপ লাগাও আছেঃ
- সামনের চাকা চিকন । সামনে পিছনের চাকার মিল পাইনি সামনে ৯০ সেকশনের টায়ার দিলে মানানসই হত ব্যপারটা।
- বাইকের ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করার সময় আন্ডার ইঞ্জিন কাউলটা খুলে ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করতে হয় এটা আমার কাছে বিরক্তি লাগে ।
- বাইকের ওয়েট ব্যালেন্স আরও একটু ভালো হতে পারত বলে আমার কাছে মনে হয়েছে । বিশেষ করে যারা ফুল ট্যাংক ফুয়েল রেখে বাইক চালান তারা আমার সাথে একমত হবেন ।
- বাইকের ইনিশিয়াল পাওয়ার নেই তবে খুব বেশি কম বলা যাবেনা । আমার মতে আর একটু হলে ভালো হত । ১ম/২য়/৩য় গিয়ারে বাইকের যে শক্তি পায় তার পরের ২টা গিয়ারে তেমন শক্তি ফিল করা যায়না ।
- ৪/৫ গিয়ারে থাকলে ইমারজেন্সি ব্রেক করলে গিয়ার কমানোর সময় সমস্যা হয় সহজে কমতে চায়না । গিয়ার পরিবর্তন করা সহজ মনে হলেও ইমারজেন্সি ব্রেক করলে গিয়ারের সমস্যাটা আমার কাছে প্যারা মনে হয়েছে ।
- বাইক কিনে মজা পাওয়া শুরু হয়েছে ১৮০০ কিলোমিটার এর পর থেকে প্রথমে সমস্যা মনে হলেও দিন দিন ইঞ্জিন ফ্রি হচ্ছে স্মুথ হচ্ছে।
নিজের মত করে লেখার চেষ্টা করলাম । ভুল গুলো ক্ষমা করবেন । তবে শুরুতেও বলেছি শেষেও বলছি বর্তমানে ১,৭৫,০০০ টাকা বাজেটের মধ্যে সবথেকে ভালো বাইক কিন্তু Honda XBlade 160 । ভবিষ্যতে হয়ত আরো ভালো ভালো বাইক আসবে এই প্রাইজ রেঞ্জের ভিতরে তবে বর্তমানে বাজারের ও এই বাজেটের প্রেক্ষাপটে Honda XBlade সেরা কোন সন্দেহ নেই। ধন্যবাদ। লিখেছেনঃ মোহাম্মদ নিপুন আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।
T
Published by Ashik Mahmud Bangla